তেলাপিয়া ও টুনা মাছ দিয়ে চিপসসহ ৯ ধরনের খাদ্যদ্রব্য উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষক। তিন বছরের চেষ্টায় এইসব পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করণে সফল হয়েছেন তারা। এই গবেষক দলের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক।
মাছের চিপসসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য তৈরির গবেষণা দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তরিকুল ইসলাম। এছাড়াও তার সহযোী গবেষক ছিলেন বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন এবং ড. সৈয়দা নুসরাত জাহান।
মাছ থেকে উৎপাদিত এই পণ্যগুলো দুই ক্যাটাগরির। যার মধ্যে তেলাপিয়া ও টুনা মাছের চিপস হলো ‘রেডি-টু-ইট’ আইটেম। অর্থাৎ এগুলো খাওয়ার উপযোগী করেই তৈরি করা। এগুলো মূলত বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে তৈরি করা।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাচ্চারা মাছ খেতে চায় না। তাদের চিপস খাওয়ার প্রতি একটা বিশেষ ঝোঁক থাকে। আমরা মাছ থেকে এই চিপস তৈরি করেছি, যাতে বাচ্চাদের চিপস খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়। সেইসঙ্গে তাদের মাছের প্রোটিনও গ্রহণ করা হয়ে যায়।
অন্যটি হলো ‘রেডি-টু-কুক’ আইটেম। যেটি সংরক্ষণ করা যাবে এবং প্রয়োজনমতো রান্না করে খাওয়া যাবে। এই আইটেমের মধ্যে রয়েছে, ফিশ মেরিনেডস, ফিশ বল, বাটারড অ্যান্ড ব্রেডেড ফিশ, ফিশ সসেজ প্রভৃতি। পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, টুনা, ম্যাকরেল ও সার্ডিন মাছ থেকে এই পণ্যগুলো উৎপাদন করা হয়েছে।
অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম আরো বলেন, এই প্রকল্পে মোট তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। সেগুলো হলো- স্বাদুপানি ও সামুদ্রিক মাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা এবং মডিফাইড এটমোস্ফিয়ার প্যাকেজিং করে তা বিভিন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে এসব খাবারের গুণাগুণ ও স্থায়িত্বকাল নির্ণয় করা। প্যাকেটজাত মৎস্যজাত দ্রব্য স্বল্প পরিসরে বিক্রি করার মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে এগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয় করা।
এই গবেষণার মূল একটি বিষয় হলো ম্যাপ প্যাকেজিং, যেখানে একটি নির্দিষ্ট গ্যাস অথবা গ্যাসের মিশ্রণ দ্বারা খাবার সংরক্ষণ করা হয়। ম্যাপ প্যাকেজিং নিয়ে দেশে এটাই প্রথম কোনো গবেষণা কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় ৫ ধরনের ৯টি প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়েছে এবং শিগগিরই সেগুলো বাজারজাত নিশ্চিত করা হবে।
সহ-গবেষক অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন বলেন, অনেকেই মাছ কাঁটার জন্য বা গন্ধের কারণে খেতে পারেন না। মূলত তাদের জন্য আমাদের তৈরি দ্রব্যগুলো অনেক উপকারে আসবে বলে মনে করি। প্রাথমিকভাবে স্বল্প পরিসরে অল্প কিছুদিনের জন্য আমরা পণ্য বাজারজাত করছি এবং ভালো রেসপন্স পেলে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ভবনে আয়োজিত এক সেমিনার শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাজারজাতকরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তারা। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
তিনি বলেন, গবেষণার সমাপ্তি একটি গবেষকের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মানে যা বুঝি তা হলো সেখানে বৈশ্বিক গবেষণা হবে, নিত্য নতুন আবিষ্কার হবে। আপনারা ফিশারিজ বিভাগ তাই করেছেন। মানব কল্যাণে গবেষণা করেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। এই উদ্ভাবনকে ছড়িয়ে দিতে হবে। তার জন্য বাজার ধরতে হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এই উদ্ভাবন দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।
যেখানে পাওয়া যাবে পণ্যগুলো: তেলাপিয়া ও টুনা মাছের চিপসসহ ৯টি পণ্য ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাবে। সেগুলো হলো- রাজশাহীর আমানা বিগ বাজার, রাবির স্যুভেনিয়র শপ এবং ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত বিএআরসি ক্যান্টিনে এই পণ্যগুলো পাওয়া যাবে।
সূএ: ডেইলি বাংলাদেশ