অনলাইনে মোবাইল ফোন বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের মূলহোতা আসাদুল ইসলামকে (৩৪) গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। শুক্রবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মীর হাজীরবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১টি মোবাইল ও ২টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মো. সাহিদ (৩৫) এই মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী। তিনি অভিযোগ করেন মাহমুদ হাসান নামীয় একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওয়ান প্লাস-৭ প্রো-মোবাইল বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। সাহিদ তার ফেসবুক আইডি থেকে বিজ্ঞাপনটি দেখতে পান। পরে তিনি মাহমুদ হাসান নামে আইডির ব্যক্তির সঙ্গে বিজ্ঞাপনে দেয়া ইমু ও ম্যাসেঞ্জারে কথা বলেন। পরে সাহিদ মোবাইল ফোনটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য সূত্রাপুর থানার নবদ্বীপ বশাক লেনের প্লাস ডট কম নামের একটি দোকান থেকে ১৭ হাজার ৭০০ টাকা পাঠিয়ে দেন একটি বিকাশ নম্বরে। টাকা পাঠানোর পর অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি সাহিদকে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে মোবাইল পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানায়। কুরিয়ার সার্ভিসের বুকিং রশিদও সাহিদের মোবাইলে পাঠায়।
পরের দিন সাহিদ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে খোঁজ নিলে জানতে পারেন এটি ভুয়া বুকিং রশিদ। পরে ওই আইডিতে দেয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তখন সাহিদ বুঝতে পারেন তিনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। পরে তিনি সূত্রাপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ডিসি তারেক বিন রশিদের নির্দেশনায় এডিসি ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার এডিসি নাজমুল হক ও এসি জুয়েল রানার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ওই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়। মাহমুদ হাসান নামের ভুয়া আইডি দিয়ে প্রতারণা করলেও তার প্রকৃত নাম আসাদুল ইসলাম।
ডিবি সূত্র জানায়, প্রতারক আসাদুল প্রথমে অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম কার্ড সংগ্রহ করে। পরে ওই নম্বর ব্যবহার করে বিক্রয় ডট কমসহ এ জাতীয় অন্যান্য প্লাটফরম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন রকম মোবাইল আকর্ষণীয় দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়। পরে ওই বিজ্ঞাপন বা পোস্ট দেখে কেউ মোবাইল ক্রয় করতে চাইলে আসাদুল অল্প কিছু টাকা নিয়ে মোবাইল কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানোর আশ্বাস দেয়। বুকিং করা হয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসে এরকম একটি ভুয়া রশিদ ক্রেতার ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিয়ে বাকি টাকা দাবি করে। ক্রেতা কুরিয়ার সার্ভিসের রশিদ দেখে নিশ্চিত হয়ে সম্পূর্ণ টাকা আসাদুলকে দিয়ে দেয়। কিন্তু ক্রেতারা পণ্য আনার জন্য কুরিয়ার সার্ভিস অফিসে গেলে প্রতারণার বিষয়টি সামনে উঠে আসে।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল হক বলেন, আসাদুল দীর্ঘদিন ধরে নামিদামি প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে মোবাইল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছে। সে ভেবেছিল প্রতারণা করে মোবাইল বন্ধ রাখলে তাকে আর পাওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। এই চক্রে আরও কিছু সদস্য রয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অনলাইনে পণ্য কিনতে হলে ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে কিনতে হবে। স্বাভাবিক নয় এমন বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলতে হবে। সূএ: মানবজমিন