নঈম নিজাম:মুম্বাইয়ের কামাঠিপুরা পতিতালয়ের যৌনকর্মী ছিলেন গাঙ্গুবাই কোটাওয়ালি। আসল নাম গঙ্গুবাই হরজীবনদাস। একটি ভালো পরিবারে ১৯৩৯ সালে জন্ম তাঁর। বাবা ছিলেন ব্যারিস্টার। জীবন চলার পথের ট্র্যাজেডি তাঁকে নিয়ে আসে কামাঠিপুরায়। সেখানে মারা যান ২০০৮ সালে। তাঁর মৃত্যুর খবর ভারতীয় সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয় ভালোভাবে। হবে না কেন, গাঙ্গুবাই নিজেই একটা অধ্যায় সৃষ্টি করেছিলেন। সে ইতিহাস অন্ধকার থেকে আলোয় প্রবেশের। কামাঠিপুরার অন্ধকার গলির নারীদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে নেহরু যুগে সাড়া জাগিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য খোদ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কানে গিয়ে পৌঁছে। সেসব ইতিহাস নিয়েই ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক বানসালি। তারও আগে তাঁকে নিয়ে লিখেছিলেন হুসেন জাহেদি। তাঁর ‘মাফিয়া কুইন্স অব মুম্বাই’ বইতে তিনি গাঙ্গুবাইকে তুলে আনেন। আর সে কাহিনি নিয়ে সিনেমা করেন, চিত্ররূপ দেন সঞ্জয় লীলা বানসালি। বাস্তবতা নিয়ে চলচ্চিত্র সবাই তৈরি করতে পারেন না। করলেও সাড়া জাগাতে পারেন না। কিন্তু বানসালির বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি আলিয়া ভাটকে নিয়ে আসেন মূল চরিত্রে। অনেকে ভেবেছিলেন এ রকম একটি সিরিয়াস চরিত্রে আলিয়া পারবেন না। কিন্তু সবাইকে হার মানিয়ে আলিয়া মিশে যান গাঙ্গুবাই চরিত্রে। আর পরিচালক ছবির প্রতিটি ফ্রেমকে সফল করেন আলাদাভাবে যত্ন নিয়ে।
ভারতের কাথিয়াওয়ারের একটি ভালো পরিবারে জন্ম নেওয়া গাঙ্গু ছোটবেলা থেকে একটু ডানপিটে ছিলেন। হইচই করে বেড়াতেন। বাবার আদরের মেয়ে ছিলেন। বাবা আদর করে ডাকতেন গঙ্গা। সেই গঙ্গা বদলে গেলেন পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে। কম বয়সে একজনের প্রেমে পড়েন। সে প্রেমই কাল হলো তাঁর জীবনে। রূপবতী ছিলেন। প্রেমিক বলত গঙ্গু, এমন চেহারা নিয়ে নায়িকা হতে পারিস। বোম্বে গেলেই হবে। অভিনয় করতে পারবি দেবানন্দের মতো নায়কের সঙ্গে। প্রেমিকের কথায় বিশ্বাস রেখে বাড়ি থেকে সোনা, নগদ টাকা নিয়ে বের হলেন গঙ্গু। পরিবারের কাউকে বলে আসার সুযোগ পাননি। প্রেমিক বোঝালেন, একদিন বিখ্যাত হলে পরিবারের সবাই জানবে। তখন সবাই খুশি হবে। এখন বলতে গেলে আটকে দেবে। যেতে দেবে না। বিশ্বাস রাখলেন এ কথার ওপর। কিন্তু হায়! প্রেমিকের ভয়াবহ প্রতারণার বিষয়টি একটুও বুঝতে পারেননি একবারের জন্যও। ট্রেনে চড়ে বসলেন প্রেমিকের হাত ধরে। এলেন বোম্বে। দুই চোখজুড়ে শুধুই স্বপ্ন। প্রেমিক তাঁকে নিয়ে গেলেন কামাঠিপুরা পতিতালয়ে। বললেন, এটা তার মাসির বাড়ি। মাসির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বিক্রি হয়ে যান গঙ্গু। নতুন নাম হয় গাঙ্গুবাই। এ নামেই চলতে শুরু করেন।
প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। ভাবতেও পারেননি বিশ্বাস ও আস্থার মানুষটি এমন করবে। তারপর সব মেনে নিলেন। পতিতালয়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলেন। প্রতিবাদী ছিলেন। অন্য রূপজীবিনীদের বললেন, একদিন এ কামাঠিপুরার নিয়ন্ত্রণ নেব। সত্যি তা-ই নিলেন। তাঁর ওপর নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পরিচয় হয় বোম্বের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক রহিম লালার সঙ্গে। এই মুসলিম মাফিয়া সাধারণ মানুষের উপকার করতেন। দাপিয়ে বেড়াতেন বোম্বে। লালা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন গাঙ্গুবাইয়ের প্রতি। বোন বলে সম্বোধন করতেন গাঙ্গুকে। এ সম্পর্ক ঘিরে ধীরে ধীরে নিজেকে শক্ত অবস্থানে নেন গাঙ্গু। একদিন গাঙ্গুর কোটাওয়ালির সেই মাসি মারা যান। অন্য যৌনকর্মীরা দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেন গাঙ্গুকে। রাজি হন গাঙ্গু। সাধারণ যৌনকর্মী থেকে বনে যান ম্যাডাম। যৌনকর্মীদের পাশাপাশি লালার আশীর্বাদে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন। নতুন ম্যাডাম নিজের অতীত ভোলেননি। তাই মন দিয়ে শুনতেন যৌনকর্মীদের দুঃখের কথা। অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ পতিতালয়ে এলে তাকে নিজের অর্থ দিয়ে ফেরত পাঠাতেন। সংকটের সমাধানের চেষ্টা করতেন। থানা, পুলিশ, এলাকার রাজনীতিবিদের শত ঝামেলা সামলাতেন। নিজের এলাকায় স্থানীয় ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ীও হন। পতিতালয়ের অধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পরিচিত হন ফইজি নামে এক সাংবাদিকের সঙ্গে। সাংবাদিকদের সহায়তায় নিজের কথাগুলো তুলে ধরেন মিডিয়ায়। বক্তব্য দেন সভা-সেমিনারে। ধীরে ধীরে গাঙ্গুবাই সামনে চলে আসেন। নজরে পড়েন দিল্লির। গাঙ্গুর কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতে। একদিন চিঠি লিখে গাঙ্গু সাক্ষাৎ চান প্রধানমন্ত্রীর। সবাই ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সময় দেবেন না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে নেহরু সময় দিলেন। বোম্বে থেকে দিল্লি গেলেন গাঙ্গু। প্রধানমন্ত্রী মন দিয়ে শোনেন গাঙ্গুর সব কথা। আশ্বাস দেন সমাধানের। সে যুগে একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এত সহজ ছিল না সমাজের অন্ধকার গলির একজন নারীর পক্ষে। কিন্তু গাঙ্গু সফল হলেন।
ছবিটি দেখতে দেখতে ভাবছিলাম ইতিহাসভিত্তিক সিনেমা বাংলাদেশ কেন তৈরি করতে পারছে না? আমাদের দেশে ষাট ও সত্তর দশকে বেশ কিছু ভালো ছবি নির্মিত হয়েছিল। খান আতাউর রহমান দুর্দান্ত অনেক ছবি নির্মাণ করেছেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা, জীবন থেকে নেয়া তেমন দুটি ছবি। খান আতার আরও কিছু ছবিতে দেশের কথা রয়েছে। তবে সে সময়ের মাইলফলক ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলা। এখনো কানে বাজে আনোয়ার হোসেনের দরাজ গলার সংলাপ। সিরাজ চরিত্রের সঙ্গে আনোয়ার হোসেন মিশে গিয়েছিলেন। এ ছবিতে আনোয়ারাও দুর্দান্ত অভিনয় করেন। আনোয়ার হোসেন পরে যাত্রাপালায়ও সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রে অংশ নিতেন। শক্তিমান এ অভিনেতার বলিষ্ঠ কণ্ঠ শুনে মানুষ জাগ্রত হতো। বাংলার শেষ নবাবের করুণ পরিণতি গ্রাম বাংলার মানুষের চোখের জল আনত। সিরাজ চরিত্রে আনোয়ার হোসেনের সংলাপ শুনে মানুষ কাঁদত। বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। নানা নবাব আলীবর্দী খাঁর উত্তরাধিকারী ছিলেন। ছোটবেলা থেকে নানার সঙ্গে ঘুরতেন। এ নাতিকে তিনি যোগ্য করেই গড়ে তোলেন। এ কারণে তাঁর মৃত্যুর পরই সিরাজই হন বাংলার নবাব। কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরেই ষড়যন্ত্র শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে। আপনজনেরা মেনে নিতে পারছিলেন না তাঁর উত্থান। শুরু হয় অসত্য প্রচারণা। তাঁকে হত্যার পরও সেই মিথ্যার ধারাবাহিকতা ছিল। সব মিথ্যা আর কুৎসার উদ্দেশ্য ছিল প্রজাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি।
সিরাজের পতন ছিল বাংলার স্বাধীনতা সূর্যের অন্তিম প্রয়াণ। আর এর প্রভাব গোটা ভারতবর্ষে ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের শাসনভার তুলে নিতে থাকে ঠান্ডা মাথায়। ইতিহাসের খন্ডচিত্র উঠে এসেছিল সিরাজউদ্দৌলা সিনেমায়। যুদ্ধের মাঠে ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে সিরাজের পরাজয়ের কথা ছিল না। ব্রিটিশ বেনিয়াদের চেয়ে নবাবের সেনারা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী। অস্ত্র গোলাবারুদেরও অভাব ছিল না। তার পরও হারতে হয়েছিল নিজের লোকজনের বেইমানি আর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা চিনতে পারেননি মীর জাফরকে। বুঝতে পারেননি খালা ঘষেটি বেগমকে। ক্ষমতার নিষ্ঠুর লড়াইয়ে খালা, খালাতো ভাই হাত মিলিয়েছিলেন বেনিয়া আর বিশ্বাসঘাতকদের সঙ্গে। সেনাপতি আর মন্ত্রীরাও এ খেলায় জড়িয়ে পড়েন। আর সবকিছুর সুযোগ নেন ইংরেজ বেনিয়ারা। ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন সিরাজউদ্দৌলা। নানা আলীবর্দী খাঁর দেওয়া ক্ষমতা থাকল না তাঁর হাতে। আলীবর্দীর কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। ছিল তিন কন্যা। নাতি-নাতনির মধ্যে সিরাজকে তিনি বেশি ¯েœহ করতেন। এ কারণে ক্ষমতা দিয়েছিলেন।
যুদ্ধে হেরে জীবন বাঁচাতে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে পালান সিরাজ। কিন্তু খুনিরা তাঁর পেছনে ছুটতে থাকে তলোয়ার হাতে। সে ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর। মুর্শিদাবাদ থেকে ভগবানগোলা যান সিরাজ। বারবার পোশাক বদল করেন যাতে কেউ চিনতে না পারে। দুই দিন পর পৌঁছেন রাজমহলের কাছে। তিন দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া হয়নি। মেয়েটি খাবারের জন্য কান্না করছিল। মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারলেন না। লাইনে দাঁড়িয়ে মাজার থেকে খিচুড়ি সংগ্রহ করেন বাংলার শেষ নবাব! পোশাক বদল হলেও জুতা আগেরটাই ছিল। জুতা দেখে অনেকে বুঝে ফেলেন তিনিই নবাব। এ এলাকায় থাকতেন শাহ দানা নামে এক ফকির। এ ফকির খবর পাঠান মীর জাফর, মিরনদের কাছে। তৎক্ষণাৎ মীর জাফরের মেয়েজামাই মীর কাশিম পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেন। ১৭৫৭ সালের ২ জুলাই তাঁরা আটক করেন বাংলার শেষ নবাবকে। তারপর নিয়ে যান মুর্শিদাবাদে। ৩ জুলাই তাঁকে হত্যা করা হয়। মুর্শিদাবাদের কাছে খোশবাগে সিরাজউদ্দৌলাকে সমাধিস্থ করা হয়। মিরন তাঁর বিশ্বস্ত সহচর মোহাম্মদী বেগকে দায়িত্ব দেন সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার।
ইতিহাসবিদ সৈয়দ গুলাম হুসাইন লিখেছেন, মৃত্যুর আগে সিরাজউদ্দৌলা বুঝতে পারেন তাঁকে হত্যা করা হবে। তখন তিনি অজু করার জন্য সময় চান। তারা সে সুযোগ দেয়নি। এক ঘড়া পানি ঢেলে দেয় সিরাজের মাথায়। সিরাজ বুঝলেন তাঁকে অজু করতে দেবে না। তিনি পানি পান করতে চান। আর তখনই সিরাজের ওপর ছুরি নিয়ে আঘাত হানে মোহাম্মদী বেগ। সঙ্গে থাকা অন্যরাও বসে থাকল না। তারা আঘাত হানল তলোয়ার দিয়ে। মুহূর্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সিরাজ। খুনিদের নিষ্ঠুরতা এখানেই থেমে থাকল না। হাতির পিঠে চাপিয়ে মুর্শিদাবাদের অলিগলি ঘোরানো হলো ক্ষতবিক্ষত নবাবের দেহ। সৈয়দ গুলাম হুসাইন লিখেছেন, লাশ বহনকারী হাতিকে এনে থামানো হলো হুসাইন কুলি খাঁর বাড়ির সামনে। দুই বছর আগে হুসাইন কুলি খাঁকে হত্যা করেন সিরাজউদ্দৌলা। এখানে তাঁর মৃতদেহ থেকে কয়েক ফোঁটা রক্ত ঝরে পড়ে মাটিতে। মিরন ও মীর জাফরের নিষ্ঠুরতার আরও ভয়াবহ চিত্র মেলে আরও কয়েক দিন পর। আলীবর্দী খাঁর বংশের সব নারীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ৭০ জন বেগমকে মাঝগঙ্গায় নিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া হয় নৌকা। সবাইকে ডুবিয়ে মারা হয়। বাকিদের মারা হয় বিষপ্রয়োগে। সবাইকে দাফন করা হয় খোশবাগে। শুধু একজনকে হত্যা করা হয়নি তিনি লুৎফুন্নেসা। নবাব সিরাজের বেগম। মীর জাফর ও তাঁর পুত্র মিরন দুজনই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি দুজনের প্রস্তাব নাকচ করেন। একজন ইতিহাসবিদ লিখেছেন, প্রস্তাবের জবাবে লুৎফুন্নেসা বলেছিলেন, ‘হাতির পিঠে চড়েছি, গাধার পিঠে এখন চড়া সম্ভব নয়।’ লুৎফুন্নেসাকে প্রথমে মুর্শিদাবাদ পরে ঢাকার জিনজিরায় বন্দি করে রাখা হয়। সাত বছর বন্দিজীবন শেষে তিনি মুক্তি পান ১৭৬৫ সালে। ১৭৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। স্বামীর পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়।
নবাব সিরাজের মৃত্যু ট্র্যাজেডির সঙ্গে মিল রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। সিরাজকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা তুলে দেওয়া হয় ইংরেজদের কাছে। বাংলার বিলুপ্ত সেই স্বাধীনতা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম আর কারানির্যাতন ভোগ করে ফিরিয়ে আনেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সিরাজের মতোই বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের আরেক মহানায়ক। একজনের হাতে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। আরেকজনের হাতে হয়েছিল উদয়। কালের নিষ্ঠুর ইতিহাসে ষড়যন্ত্রকারীরা সিরাজের মতোই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ডেও ছিল দেশি-বিদেশিদের ষড়যন্ত্র। সেনাবাহিনীর বিচ্ছিন্ন অংশ ও মন্ত্রীদের ষড়যন্ত্র। ইতিহাসের সেসব নিষ্ঠুরতা নিয়ে ছবি করতে চেয়েছিলেন সদ্যপ্রয়াত বিখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ছবি নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা অনেকবার আমার সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন। একবার বললেন, বঙ্গবন্ধু চরিত্রে তাঁর পছন্দ অমিতাভ বচ্চনকে। আর বেগম মুজিব হিসেবে জয়া বচ্চনকে। তাঁর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, গাফ্ফার ভাই, অমিতাভকে কেন পছন্দ করছেন বঙ্গবন্ধু চরিত্রে? জ্যাকি শ্রফের একটি ছবি দেখেছিলাম কালো নেহরুকোট পরা। এ পোশাকে তাঁর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদল দেখেছি। গাফ্ফার ভাই বললেন, ছবিটি আমাকে দিও। তারপর তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব বাংলাদেশের মানুষের চোখে হিমালয় উচ্চতার মানুষ। তাঁর বজ্রকণ্ঠ শুনে মানুষ কল্পনার রাজ্যে বিশাল ব্যক্তিত্ব হিসেবে লালন করে জাতির পিতাকে। বাস্তবের বঙ্গবন্ধুকে তারা চলচ্চিত্রেও একইভাবে দেখতে চাইবে। যাকে তাকে এ চরিত্রে মানাবে না। উচ্চ কোনো ব্যক্তিত্বকে আনতে হবে বঙ্গবন্ধু চরিত্রে। না হলে মানুষ বিরক্ত হবে। তিনি বলেছিলেন, গান্ধী চরিত্রে হলিউড অভিনেতা বেন কিংসলে শতভাগ নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। মিশে গিয়েছিলেন। দীর্ঘ ছয় মাস না খেয়ে গান্ধীর আদল তৈরি করেছেন। ভারতে হেঁটে হেঁটে এখানকার কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে অনুভব করেছেন। তারপর অভিনয় করেছেন গান্ধী চরিত্রে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অমিতাভই মিশে যেতে পারবেন শক্তিমান অভিনয় দিয়ে। গাফ্ফার ভাইয়ের সে কথাগুলো তাঁর বিদায়ক্ষণে মনে পড়ছে। তিনি চলে গেলেন চিরতরে। আর আসবেন না। তাঁর শেষ জীবনের স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। ওপারে ভালো থাকুন গাফ্ফার ভাই।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন