ঈদে বেশি খাওয়া এড়াতে করণীয়

নাহিদা আহমেদ:  রোজার এক মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালিতে যে পরিবর্তন আসে সেটাতেই অনেকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ ঈদের দিনে তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া হয়। অতিভোজনের ফলে পাকস্থলীর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কারণ অধিক চাপে পাকস্থলীর এনজাইম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিস, ডায়রিয়া, মাথাধরা, বমি, পেটফাঁপা, পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি, বারবার ঢেঁকুর ওঠা এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।

 

ঈদের দিনে মাত্রা জ্ঞান রেখে নিজ নিজ স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাবার হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজপাচ্য। ছোট থেকে বড় সবার কাছে ঈদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক, বাড়িতে বাড়িতে পড়ে যায় নানা খাবারের ধুম।

 

ছোটরা সাধারণ রমজানে তেমন একটা রোজা থাকেন না বাদ দিয়ে দিয়ে ২ বা ৩টা থাকেন, ঈদের খাবারগুলো গ্রহণে তাদের যে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে তা হলো পরিমাণ, অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবে না। তরুণ যারা আছেন তাদের যদি কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকে তাহলে তারাও সব খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু তরুণরা এক মাস রোজায় দীর্ঘ সময় পানি ও অন্যান্য তরল খাবার সাধারণত কম খায়। আবার ইফতার ও সাহরিতে ছোলা, পিঁয়াজু, অধিক মসলাযুক্ত খাবার ইত্যাদি খেয়ে অভ্যস্ত হওয়ায় শাকসবজি বা আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া হয়। ফলে অনেক রোজাদারেরই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। মধ্যবয়সী এবং বয়স্কদের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাইপারকোলেস্টারলেমিয়া, কিডনি বা লিভারের রোগে ভোগেন, তাদের অবশ্যই ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। রান্না করার ক্ষেত্রে ও খাবার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানা জরুরি। এতে করে শারীরিক জটিলতা মুক্ত থাকতে পারবেন :

 

* মাংস রান্নায় দৃশ্যমান জমানো চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করতে হবে। কম তেলে রান্না করতে হবে।
* মাংস রান্নার আগে সম্ভব হলে মাংস ৫-১০ মিনিট মাংস সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিলে চর্বির অংশ অনেকটা কমে যায়। উচ্চতাপে রান্না করতে হবে।

* মাংস রান্নার সময় ভিনেগার, টকদই, পেঁপে বাটা ও লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন এতে চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
* যাদের উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা আছে বা কো-মরবিডিটি আছে তারা একেবারেই না এড়াতে পারলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ১-২ টুকরো খেতে পারেন সেক্ষেত্রে মাংস রান্নায় সবজি ব্যবহার করতে হবে যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, টমেটো কিংবা মাশরুম।

কিংবা তারা মাংসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে কাটলেট বা চপ করে খেতে পারেন।
* প্রতিবেলায় খাবারের সাথে এক কাপ পরিমাণ শসা, লেবু, টমেটো ইত্যাদির সালাদ রাখতে হবে।
* তিনবেলা ভারি খাবার না খেয়ে যে কোনো একবেলা হালকা খাবার যেমন সবজির স্যুপ, সবজি ও রুটি রাখতে পারেন।
* প্রত্যেক প্রধান খাবারের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন যা বিপাক ক্রিয়ার হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

* খাবার কিছু সময় পর তালিকায় লেবু পানি বা টকদই রাখলেও তা হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
* ঈদে কোমল পানীয়র পরিবর্তে চিনি ছাড়া নানা মৌসুমি ফলের জুস, বোরহানি গ্রহণ উত্তম ।
* প্রত্যেক দিন অবশ্যই মধ্য সকাল বা বিকালের নাশতায় টকজাতীয় মৌসুমি ফল রাখতে হবে যা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।

* দিনে দুই-একবার আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচ ইত্যাদি মসলা চা যেমন ক্লান্তিভাব কাটাতে সাহায্য করবে তেমনি শরীরের বিপাক হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
* পানীয় হিসেবে ডিটক্স ওয়াটার ঈদের এ সময় খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
* মাংস খাওয়ার সময় ঝোল বাদে খাওয়া ভালো। আবার ভুনা মাংসের পরিবর্তে কম তেলে গ্রিল, বারবিকিউ করে বা কাবাব করেও মাংস খাওয়া যায়।
* অসম্পৃক্ত উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করুন রান্নায়। ঘিয়ের ব্যবহার বাদই দিয়ে দিন একেবারে। ঘ্রাণটুকু রাখতে একেবারে শেষে সামান্য একটুখানি ঘি ওপরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। ঘিয়ে ভাজা পরোটার পরিবর্তে, সেঁকা রুটি খেতে হবে।
* ঈদে বাড়িতে নানা রকম খাবার থাকে তাই বাইরের সব খাবার এড়িয়ে চলুন।
* ঈদে তুলনামূলক বেশি খাওয়া হয় সে জন্য অবশ্যই সকাল বিকালে ব্যায়াম করে বা হেঁটে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার চেষ্টা করুন।

লেখক: পুষ্টিবিদ, গুলশান ডায়াবেটিক কেয়ার  । সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» পাগলা মসজিদে অনলাইনেও দান করা যাবে

» আ.লীগের দমন-পীড়ন ছিল এজিদ বাহিনীর সমতুল্য: তারেক

» সাবেক সিইসি শামসুল হুদা মারা গেছেন

» দুই বাসের সংঘর্ষে একজন হেলপার নিহত

» আলজেরিয়ার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে জামায়াতের অংশগ্রহণ

» জিয়াউর রহমানের দর্শনকে আওয়ামী লীগও অস্বীকার করতে পারেনি: মঈন খান

» আর কত জীবন দেবে এ দেশের মানুষ: নজরুল ইসলাম

» ‘ভালো নির্বাচন’ করতে পারাও একটা বড় সংস্কার: মান্না

» মবের ভয়ে আতঙ্কিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুও : রনি

» চার দফার ভিত্তিতে অনলাইন-অফলাইনে জনসংযোগ চালান নাহিদ-আসিফরা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঈদে বেশি খাওয়া এড়াতে করণীয়

নাহিদা আহমেদ:  রোজার এক মাসে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালিতে যে পরিবর্তন আসে সেটাতেই অনেকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ ঈদের দিনে তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া হয়। অতিভোজনের ফলে পাকস্থলীর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কারণ অধিক চাপে পাকস্থলীর এনজাইম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে পেট ব্যথা, গ্যাস্ট্রাইটিস, ডায়রিয়া, মাথাধরা, বমি, পেটফাঁপা, পেটে অস্বস্তিকর অনুভূতি, বারবার ঢেঁকুর ওঠা এমনকি বুকে ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।

 

ঈদের দিনে মাত্রা জ্ঞান রেখে নিজ নিজ স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাবার গ্রহণ করতে হবে। খাবার হবে স্বাস্থ্যসম্মত ও সহজপাচ্য। ছোট থেকে বড় সবার কাছে ঈদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক, বাড়িতে বাড়িতে পড়ে যায় নানা খাবারের ধুম।

 

ছোটরা সাধারণ রমজানে তেমন একটা রোজা থাকেন না বাদ দিয়ে দিয়ে ২ বা ৩টা থাকেন, ঈদের খাবারগুলো গ্রহণে তাদের যে বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে তা হলো পরিমাণ, অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবে না। তরুণ যারা আছেন তাদের যদি কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকে তাহলে তারাও সব খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু তরুণরা এক মাস রোজায় দীর্ঘ সময় পানি ও অন্যান্য তরল খাবার সাধারণত কম খায়। আবার ইফতার ও সাহরিতে ছোলা, পিঁয়াজু, অধিক মসলাযুক্ত খাবার ইত্যাদি খেয়ে অভ্যস্ত হওয়ায় শাকসবজি বা আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া হয়। ফলে অনেক রোজাদারেরই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। মধ্যবয়সী এবং বয়স্কদের খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাইপারকোলেস্টারলেমিয়া, কিডনি বা লিভারের রোগে ভোগেন, তাদের অবশ্যই ঈদের খাবারের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকা দরকার। রান্না করার ক্ষেত্রে ও খাবার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানা জরুরি। এতে করে শারীরিক জটিলতা মুক্ত থাকতে পারবেন :

 

* মাংস রান্নায় দৃশ্যমান জমানো চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করতে হবে। কম তেলে রান্না করতে হবে।
* মাংস রান্নার আগে সম্ভব হলে মাংস ৫-১০ মিনিট মাংস সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিলে চর্বির অংশ অনেকটা কমে যায়। উচ্চতাপে রান্না করতে হবে।

* মাংস রান্নার সময় ভিনেগার, টকদই, পেঁপে বাটা ও লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন এতে চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
* যাদের উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা আছে বা কো-মরবিডিটি আছে তারা একেবারেই না এড়াতে পারলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ১-২ টুকরো খেতে পারেন সেক্ষেত্রে মাংস রান্নায় সবজি ব্যবহার করতে হবে যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, টমেটো কিংবা মাশরুম।

কিংবা তারা মাংসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে কাটলেট বা চপ করে খেতে পারেন।
* প্রতিবেলায় খাবারের সাথে এক কাপ পরিমাণ শসা, লেবু, টমেটো ইত্যাদির সালাদ রাখতে হবে।
* তিনবেলা ভারি খাবার না খেয়ে যে কোনো একবেলা হালকা খাবার যেমন সবজির স্যুপ, সবজি ও রুটি রাখতে পারেন।
* প্রত্যেক প্রধান খাবারের ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন যা বিপাক ক্রিয়ার হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

* খাবার কিছু সময় পর তালিকায় লেবু পানি বা টকদই রাখলেও তা হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
* ঈদে কোমল পানীয়র পরিবর্তে চিনি ছাড়া নানা মৌসুমি ফলের জুস, বোরহানি গ্রহণ উত্তম ।
* প্রত্যেক দিন অবশ্যই মধ্য সকাল বা বিকালের নাশতায় টকজাতীয় মৌসুমি ফল রাখতে হবে যা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।

* দিনে দুই-একবার আদা, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচ ইত্যাদি মসলা চা যেমন ক্লান্তিভাব কাটাতে সাহায্য করবে তেমনি শরীরের বিপাক হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
* পানীয় হিসেবে ডিটক্স ওয়াটার ঈদের এ সময় খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
* মাংস খাওয়ার সময় ঝোল বাদে খাওয়া ভালো। আবার ভুনা মাংসের পরিবর্তে কম তেলে গ্রিল, বারবিকিউ করে বা কাবাব করেও মাংস খাওয়া যায়।
* অসম্পৃক্ত উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করুন রান্নায়। ঘিয়ের ব্যবহার বাদই দিয়ে দিন একেবারে। ঘ্রাণটুকু রাখতে একেবারে শেষে সামান্য একটুখানি ঘি ওপরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। ঘিয়ে ভাজা পরোটার পরিবর্তে, সেঁকা রুটি খেতে হবে।
* ঈদে বাড়িতে নানা রকম খাবার থাকে তাই বাইরের সব খাবার এড়িয়ে চলুন।
* ঈদে তুলনামূলক বেশি খাওয়া হয় সে জন্য অবশ্যই সকাল বিকালে ব্যায়াম করে বা হেঁটে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার চেষ্টা করুন।

লেখক: পুষ্টিবিদ, গুলশান ডায়াবেটিক কেয়ার  । সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com