বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম: মুসলিম জাহানের সবচাইতে বড় মূল্যবান রহমত-বরকতের মাস রমজান শেষ হতে চলেছে। মাহে রমজানে যে আল্লাহর কাছ থেকে পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন করতে পারে না তার চাইতে মহাদুর্ভাগা আর কেউ নেই। রমজান সংযমের মাস। অন্যায়-অবিচার-নির্যাতন-কুকর্ম থেকে প্রকৃত মুসলমানের বিরত থাকার মাস। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকার সবচাইতে বড় মাধ্যম হলো রমজান। রোজা থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূরে রাখতে না পারলে, চরম সংযমের পরিচয় দিতে না পারলে মাহে রমজানে রোজা রাখার কোনো মানে হয় না। জানি না আমরা বাংলাদেশের মানুষ কতটা কি সংযমের পরিচয় দিতে পারলাম। এর মধ্যেই নিউমার্কেট এলাকায় এক মহাতান্ডব হয়ে গেল। যা মোটেই হওয়ার কথা ছিল না। উদাসীন পুলিশের ভূমিকায় দেশবাসী স্তম্ভিত। নাকের ডগায় এমন ঘটনা দেখে যদি পুলিশ উদাসীন থাকে তাহলে সে তো এক ভয়াবহ অশনিসংকেত। প্রকাশ্য রাজপথে পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিম্নতর কর্মচারীর গালে যদি থাপ্পড় মারে তাহলে সে বাহিনীর শৃঙ্খলা কোথায় থাকে? তা-ও আবার প্রকাশ্য ‘গুলি আছে গুলি আছে’ চিৎকার করে অসভ্যতা, অমানবিকতার পরাকাষ্ঠা যে কর্মকর্তা দেখায় জানি না তার কোনো বিচার হয়েছে কি না, আদৌ হবে কি না। এসব উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো দিনই দেশের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। মনে প্রশ্ন জাগে, পুলিশের এমন আচরণ কোনো ষড়যন্ত্র নয় তো? নিউমার্কেটের ঘটনায় বিএনপির এক মাঝারি নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এর সঙ্গে আদৌ জড়িত কি না, দেশের মানুষের দৃষ্টি রাজনৈতিকভাবে অন্যত্র সরাবার এ অপপ্রয়াস কি না ভেবে দেখার সময় এসেছে। যাদের হাতে যখন ক্ষমতা থাকে তারা আগে-পিছে না তাকিয়ে যা খুশি তা করলে বিচারকের বিচারক জগৎস্রষ্টা কখনো চুপ করে বসে থাকেন না। পরকালে নয়, আমার অভিজ্ঞতা বলে চরম সীমা লঙ্ঘনকারীর বিচার এপারেই হয়। তাই একেবারে বিনা প্রশ্নে বিনা শাস্তিতে বা বিনা বিচারে পার পেয়ে যাবেন, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। পত্রপত্রিকায় ছাত্রলীগ সম্পর্কে যেভাবে খবরাখবর আসছে তা মোটেই ভালো নয়। এখন ছাত্রলীগের দুষ্কর্মের খবর যখন চারদিকে ছড়ায় তখন নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়। কারণ একসময় আমি নিজেও ছাত্রলীগ করতাম। শুধু আমি কেন, এ দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যত উদাহরণ আছে তার সবকটিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা সূর্যের মতো জ্বলজ্বলে উজ্জ্বল। এমন কোনো ভালো কাজ নেই যেখানে ছাত্রলীগের ভূমিকা নেই। কৃষক-শ্রমিক-ছাত্রদের অবদানে, তাদের ত্যাগ-রক্ত-ঘামে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোনো বিত্তশালী কোনো ক্ষমতাবান তৈরি করেনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কোনো বিত্তশালীর ভূমিকা ছিল না, অংশগ্রহণ ছিল না। ছিল অতি সাধারণ মানুষের। রক্তও ঢেলেছে ভুখা-নাঙ্গা মানুষ। নিম্নমধ্যবিত্তের ওপর উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদেরও তেমন প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। তাহলে যে ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা একটা দেশের জন্মের বেদনায় ভূমিকা রাখতে পারে তারা আজ এমন কুকর্মের ভাগিদার কেন হচ্ছে? এটা কি শুধু তাদেরই দোষ, নাকি তাদের যারা পরিচালনা করে তাদের চরম স্খলনের কারণে এমনটা হয়েছে? আমরা যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করেছি তখন ছাত্র-যুবকরা ছিল সমাজের কাছে সন্তানের মতো। স্কুল-কলেজের কোনো ছাত্র কোথাও গেলে সাধারণ মানুষ ভরসা পেত ছাত্র-যুবক থাকতে কোনো অন্যায় হবে না, লুটতরাজ হবে না, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আমরা যখন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী নিয়ে রাজপথে মিছিল করেছি আশপাশের কেউ ভাবেনি তাদের বাড়ি-গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দোকানপাট ভাঙচুর হবে, পথিক মারা যাবে। এখন মিছিল বেরোলেই সাধারণ মানুষ হয়ে পড়ে শঙ্কিত, ভয়ে ভীত। নিরীহ পথচারী নাহিদ ছয় মাস আগে ডালিয়া নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। তার সোনার সংসার ভেঙে খানখান হয়ে গেল। আরেক পথচারী মুরসালিনের দুই সন্তান। তার স্ত্রী এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? তাদের অপরাধ কী? কে জবাব দেবে? জবাব দেওয়ার কেউ নেই। যে কোনো আন্দোলনের সবচাইতে বড় শক্তি তার ওপর নিয়ন্ত্রণ। ব্রিটিশ ভারতে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক ভারতের স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের একটি ঘটনা দেখে খবর পাঠিয়েছিলেন- ভারত স্বাধীন হয়ে গেছে। পত্রিকার পক্ষ থেকে যখন তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কীভাবে স্বাধীন হলো? এখনো তো সেখানে ব্রিটিশরাজ চলছে!’ সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘ভারত নেতা মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে যে দেশের মানুষ বুকে হাত বেঁধে সারা দিন ব্রিটিশরাজের অত্যাচার সহ্য করছে। যেখানে একজন অসহযোগী তাদের হাত খুলে বুকের ওপর তোলেনি, অত্যাচারী বাহিনীর আঘাত ফেরাবার চেষ্টা করেনি সে জাতি স্বাধীন নয় তো কী? যারা একজন নেতার আহ্বানে বুকের ওপর হাত তুলছে না, সেই নেতা যদি হাত তুলতে বলেন, শক্তিপ্রয়োগ করতে বলেন তাহলে ৩৩ কোটি ভারতবাসীর কয়েক লাখ ইংল্যান্ডবাসীকে হাত-পা ভেঙে বস্তায় ভরে ইংল্যান্ড পাঠাতে কত সময় লাগবে?’ কথাটা মিথ্যা ছিল না। কোনো কিছুর ওপর আদর্শ, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব, ভালোবাসার প্রভাব কামানের গোলার চাইতেও শক্তিশালী। বঙ্গবন্ধুর আহ্বান ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’ পাকিস্তানিরা কামান-বন্দুক-বোমা মেরেও প্রতিহত করতে পারেনি। যে হানাদার পাকিস্তান বাহিনী আমাদের ওপর চরম নির্যাতন চালিয়েছে সেই পাকিস্তানি বাহিনী ঐক্যবদ্ধ না থাকলে পাকিস্তান তিন খন্ড হবে এটা আমার কথা নয়, এটা সদ্য বিদায়ী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কথা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের চেয়ে, বিশ্ববিজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খানের চেয়ে পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান অনেক বেশি শক্তিশালী। আজ আমেরিকা কেন, সারা পৃথিবী একত্র হয়েও ইমরান খানকে পরাজিত করতে পারবে না যদি পাকিস্তানের জনগণ ইমরান খানকে বুকে আগলে রাখে, ইমরান খানের প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকে। আমাদের দেশে যদি কোনো দল বা নেতার পক্ষে সাধারণ মানুষের অমন ঢল নামত তাহলে কোনো সরকারের কোনো পুলিশের ক্ষমতা থাকত না সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়? বর্তমানে কোনো দলের প্রতি সাধারণ মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই, ভালোবাসা নেই। যা মিটিং-মিছিল হয় সবই দলীয় সমর্থক ও কর্মী নিয়ে। সাধারণ মানুষ তাকিয়ে দেখে না। তাই নতুন করে আমাদের ভাবতে হবে সাধারণ ছাত্রদের, যুবসমাজকে প্রতি পদে পদে হীনবল, সম্মানহানি করলে আর যা কিছুই হোক দেশের কোনো কল্যাণ হবে না। মর্যাদাবান বিবেকবান মানবতাবাদী ভালোবাসায় ভরপুর যুবসমাজ না থাকলে কোনো কল্যাণ চিন্তা করা যায় না। যার মধ্যে কোনো মানবতা নেই, ভালোবাসা নেই, আত্মমর্যাদাবোধ নেই এমন মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার অর্থ শুধু কালো অক্ষর পেটে দেওয়া নয়, প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে আত্মমর্যাদাশীল করে গড়ে তোলা শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিটি ছাত্রছাত্রী মানবিক হবে, নৈতিকতাবোধে ভরপুর হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সিনা টান করে দাঁড়াবে, চুরি-চামারি-লুটতরাজ তাকে স্পর্শ করবে না এই হওয়া উচিত আদর্শ শিক্ষা, আদর্শ সমাজ গঠনের মূলমন্ত্র। সরকার, সমাজ যদি যুবসমাজকে প্রতি পদে পদে চরিত্রহীন, নীতি-নৈতিকতাহীন বানাতে চেষ্টা করে তাহলে ছাত্র-যুবকদের ক্ষতির চাইতে অনেক বেশি দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে। কোনো কোনো ছাত্র সংগঠনের নীতিহীনতার কারণে বা বিশৃঙ্খলার কারণে সাধারণ ছাত্রদের দায়ী করা উচিত নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বা তার পরে যেসব বাচ্চাদের কোলে নিয়েছি তারাও এখন ডিসি-এসপি-সেক্রেটারি-জয়েন সেক্রেটারি। জয়-পুতুলও তো কোলে উঠেছে। আজ কত বড় বড় নেতা, যারা দেখা হলে মিষ্টি খাওয়ার জন্য পকেট ছিঁড়ত। তাই আজকের শিশুরাই ভবিষ্যৎ সমাজপতি। তাদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে না পারলে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে দেশ ও জাতিরই সব থেকে বেশি ক্ষতি।
দেশের সর্বত্র দুর্বার গতিতে চাঁদাবাজি চলছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির প্রাদুর্ভাব সীমাহীন। নিউমার্কেটের ঘটনায় চাঁদাবাজির ব্যাপারটা আরও উলঙ্গভাবে বেরিয়ে এসেছে। সরকারের এদিকে অবশ্যই দৃষ্টি দেওয়া উচিত। না হলে একসময় এ চাঁদাবাজিই বুমেরাং হবে। আমাদের সবচাইতে বড় দোষ, আমরা সময়ের কাজ সময়ে করি না। আমি নিজেও অনেক কাজ করিনি। এখন বলতে লিখতে গিয়ে অনেক কিছু হারিয়ে যায়। তাই কিছু কিছু লিখে রাখলে যেমন আমার জন্য ভালো হতো তেমনি অনেক কাজ আছে যা সময়ের কাজ সময়ে করলে তার ফল অনেক ভালো হয়। বিহারের লোকেরা বলে, ‘ক্ষিরা সুবেমে হীরা, দোপেরকো ক্ষিরা ক্ষিরা, সামকো ক্ষিরা পীড়া’। মানে- সকালে যে কোনো ফল সোনার মতো, দুপুরে ফল ফলের মতো আর রাতে অসুখের মতো। তাই সময়ের কাজ সময়ে করা উচিত।
এবার রমজানে কোথাও তেমন কোনো ইফতার মাহফিলে যাইনি। টাঙ্গাইলে গিয়েছিলাম জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনির আন্তরিক আমন্ত্রণে এবং একদিন পর পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের আমন্ত্রণে পুলিশ লাইনসে আর রাজধানী ঢাকায় জাতীয় পার্টির বিশেষ অনুরোধে ২৩ এপ্রিল হোটেল রেডিসনে। পাঁচ তারা হোটেলে ইফতার কোনোমতেই সাধারণের জন্য নয়। একটা জাতীয় রাজনৈতিক দলের জন্য উপযুক্তও নয়। জাতীয় পার্টির দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম বাড়িতে এসে নিজের হাতে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে গিয়েছিল। জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি এসে কথা বলেছিল, ইফতার করেছিল। তাই তাদের ইফতারে রেডিসনে গিয়েছিলাম। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, যুগ্মসম্পাদক অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী, ফরিদ আহমেদ, আলমগীর হোসেন, মো. কাউসারসহ আরও কয়েকজন সহকর্মী ইফতারিতে শরিক হয়েছিল। আলাদা কোনো আসন ছিল না। রোজাদারের জন্য সবকটি গোলটেবিল। হলের একেবারে দক্ষিণ পাশে বসেছিলাম। ডানে ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব আমার প্রিয় রুহুল আমিন হাওলাদার। রুহুল আমিন হাওলাদার স্বাধীনতার পর শেখ ফজলুল হক মণি ভাইয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। হাওলাদারের পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, তারপর ভারতীয় হাইকমিশনের এক মিনিস্টার, তারপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, তারপর গণফোরামের এক অংশের সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী। বাঁয়ে বসেছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার, তারপর আমেরিকা অথবা যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এক অর্থে জাতীয় পার্টির ইফতার যথেষ্ট ভালো হয়েছে। সরকারি এবং বিরোধী দল বিএনপিকেও দাওয়াত করা হয়েছিল। মনে হয় তারা আসেনি। জাতীয় পার্টি নেতাদের বলেছি, বটতলে কোনো গাছ তো দূরের কথা ঘাসও জন্মায় না। সরকারের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে সংসদে এসে সরকারবিরোধী দল কোনো সম্মানের নয়। বিরোধী দল দেশের প্রধান পাহারাদার, দেশের এবং জনগণের স্বার্থরক্ষক। প্রকৃত অর্থে তারা সততার সঙ্গে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন না করলে সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা বিরোধী দল কোনোকালেই সাধারণ মানুষের কাছে সম্মান বা বিশ্বাস পেতে পারে না। সত্যিই রাজনীতি করতে হলে প্রকৃত বিরোধী দল হতে হবে। প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেখিনি, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এমপিকে দেখেছি। তিনি বেশ কয়েকবার বলেছেন, ‘বঙ্গবীর, প্রেসিডেন্টের পদের চাইতে এমপির পদ কঠিন। এমপির দায়িত্ব পালন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের চাইতেও শক্ত।’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতেন। বিদিশাকে নিয়ে, এরিককে নিয়ে বেশ কয়েকবার আমার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাড়িতে এসেছেন, খেয়েছেন। বিদিশা আমাকে আগাগোড়াই বড় ভাইয়ের মতো দেখত, বিবেচনা করত। যে কারণে এরশাদ এবং বিদিশার ব্যক্তিগত বহু ব্যাপারে আমাকে বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে। জাতীয় পার্টির অনেকের হয়তো মনে নেই। আমরা অতীতের কিছুই মনে রাখতে চাই না। বছর বিশেক আগে জাতীয় পার্টি প্রাদেশিক সরকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে হোটেল শেরাটনে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পীড়াপীড়িতে সে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। লম্বা টেবিলে মুখোমুখি বসেছিলাম। মতবিনিময়ের শেষ পর্যায়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী বিদিশা অনেক দূর হেঁটে এসে আমায় পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছিল। বিদিশা ফিরে গিয়ে বসলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর সমাপনী ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে সব থেকে বড় দুর্ভাগ্য আমি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। তাই আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সবচাইতে বেশি সম্মান করি। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এক নম্বর, তিনি শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা। আমার স্ত্রী বিদিশা আমার অনুমতি নিয়েই বঙ্গবীরের পায়ে হাত দিয়ে সালাম জানিয়েছেন। এ সালাম শুধু বঙ্গবীরকে নয়, সব মুক্তিযোদ্ধার, সব বীর শহীদকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমার স্ত্রী বিদিশা এবং আমার সশ্রদ্ধ সালাম।’ আমি বিচলিত না হলেও শিহরিত হয়েছিলাম। আমাকে দেওয়া সম্মান আমি কখনো নষ্ট করিনি। সযত্নে সসম্মানে রক্ষা করতে চেষ্টা করেছি। আমার চেষ্টায় নিশ্চয়ই ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। কিন্তু সততায় কোনো খাদ ছিল না, এখনো নেই। আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে দেশের জনগণকে ভরসা করে জাতীয় পার্টি এগোতে পারলে এখনো তাদের ভবিষ্যৎ আছে।
লেখক : রাজনীতিক।
www.ksjleague.com সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন