ভারতের আসাম রাজ্যের তিন কোটির কিছু বেশি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মুসলমান রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশকে রাজ্যের মূল নিবাসী হিসেবে মেনে নিয়েছে আসাম সরকার।
আসামে বসবাসকারী মুসলমানরা ওই অঞ্চলের বাসিন্দা, নাকি বাইরে থেকে এসেছেন—ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই তা নিয়ে রাজ্যটির রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এই বিতর্ক মুখ্য হয়ে উঠেছিল। আপাতত এই বিতর্কের অবসান ঘটছে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকার গঠিত একটি প্যানেলের সুপারিশ এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির মধ্য দিয়ে।
২১ এপ্রিল আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় ওই প্যানেল। সেখানে তারা আসামের মুসলমানদের স্বতন্ত্র সত্তা ও আদিনিবাসী সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং তাদের জাতীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে একটি আদমশুমারি করার সুপারিশ করেছে।
রাজ্য সরকারের করা সাতটি সাবকমিটি নিয়ে গঠিত এই প্যানেল আসামের মুসলমানদের তালিকাভুক্ত করা এবং প্রত্যেককে পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর বা কর্তৃপক্ষ গঠন করার সুপারিশ করেছে। এর লক্ষ্য হলো আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের যেন ‘অবৈধ অভিবাসী’ বা ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা না হয়। আসামের মুসলমানদের পাঁচ গোষ্ঠী সৈয়দ, গোরিয়া, মোরিয়া, দেশি ও জুলহাদের মূল নিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে প্যানেল।
তাদের সুপারিশ মেনে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা বলেছেন, রাজ্যের মূল নিবাসীদের মধ্যে মুসলমানরা রয়েছেন এবং তাঁদের অস্তিত্ব রাজ্য সরকার মেনে নিচ্ছে। মূল নিবাসী মুসলমানদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে করা এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আসাম হাইকোর্টের একজন আইনজীবী বলেছেন, রাজ্যে বসবাসকারী অনেক মুসলমানকে ভারতের নাগরিকপঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) অনুসারে নাগরিকত্বের বৈধতা প্রমাণ করতে হচ্ছে। যাঁদের নাম নাগরিকপঞ্জিতে নেই, তাঁদের চূড়ান্ত হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এ ঘোষণার পরে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো তুলে নেওয়া হবে কি না।
এ বিষয়ে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং প্রায় এক কোটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। এ রকম একটি বিষয় নিয়ে কীভাবে মন্ত্রিসভার সাবকমিটি কাউকে কিছু না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সরকার তা গ্রহণ করতে পারে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে সরকার কীভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হলো, সে সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তাঁর মনে হচ্ছে, নাগরিকপঞ্জির বিষয়টি ব্যর্থ হওয়ার পরে একটা নতুন সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বা মুসলমান সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।