ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্য কিনতে গিয়ে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিতে করা পৃথক তিন রিট শুনানির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কজলিস্টে (কার্যতালিকায়) রয়েছে।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য কজলিস্টে কার্যতালিকায় রয়েছে। বিষয়টি ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকমের ১৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬৭টি হিসাবের আনুষাঙ্গিক দলিলাদি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। হিসাবগুলোতে লেনদেনের বিবরণী থেকে জানা গেছে, ইভ্যালি ডটকম লিমিটেড ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নামে প্রাপ্ত ৩৬টি হিসাবে (সঞ্চয়ী চলতি) মোট ৩৮৯৮ দশমিক ৮২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
এর মধ্যে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমা প্রায় ১৯৫৬ দশমিক ১৯ কোটি টাকা ও উত্তোলন হয়েছে প্রায় ১৯৪ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেলিম রেজা, ফরিদ হোসোইন, তারিক রহমান রাকিবুর ৫০ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করেছেন। ৩৬টি অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পলিসি কী, তা জানার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে সংশ্লিষ্টরা এ প্রতিবেদন জমা দেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) এ বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হয়। ওইদিন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছিলেন।
এর আগে আদেশ অনুযায়ী শুনানিতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি গত ১৬ নভেম্বর উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের গঠিত বেঞ্চ।
ওইদিন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পলিসি কী, তাও জানাতে হবে আদালতকে। আজ সে বিষয়ে প্রতিবেদন এর ওপর শুনানি হতে পারে।
এছাড়া ই-কমার্স খাতের স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের করা ১৬ সদস্যের কারিগরি কমিটির কার্যপরিধি কী, তাও সেদিন জানাতে হবে।
আগের আদেশ অনুযায়ী, শুনানিতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন না পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি গত ১৬ নভেম্বর উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আদালত বলেন, ‘নোটিশ জারির পরেও তারা রেসপন্স করবে না? বিষয়টি আমরা কিন্তু সিরিয়াসলি নেবো।’
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিপুল বাগমারকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, আপনি অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তাকে জানান। এসব আমরা কিন্তু টলারেট করবো না।
এরপর আদালত আগামী মঙ্গলবারের (২৩ নভেম্বর) মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়ে ওইদিন পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন।
দেশের ই–কমার্স খাতের ভোক্তাদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক তিনটি রিট করা হয়। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই তিন বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন আকারে জানাতে নির্দেশ দেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ই-কমার্সের গ্রাহকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পলিসির ম্যান্ডেট অনুসারে একটি স্বাধীন ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
২৩ সেপ্টেম্বর ই-অরেঞ্জে কোটি কোটি টাকা আটকে থাকা ৩৩ জন গ্রাহক ডিজিটাল বা ই-প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরির জন্য অর্থনীতিবিদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী ও অন্য অংশীজনদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন। তাদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
২২ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন, ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের দুজন গ্রাহকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব আরেকটি রিট করেন।
রিটে কোন ব্যক্তি বা সরকারি কর্তৃপক্ষের অবহেলা বা ব্যর্থতায় ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, দারাজ, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ ও দালাল প্লাসের মতো পরিচিত বাজার থেকে পণ্যের জন্য লাখ লাখ গ্রাহকের ক্ষতি ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ণয়ে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারকের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই তিন রিট একত্রে শুনানি নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর আদালত এসব আদেশ দেন।
ওইদিন রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও অ্যাডভোকেট মো. আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার, তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম আজাদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. দেলুয়ার হোসেন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সিরাজুল আলম ভুইয়া।