চাঁদপুর শহর জেলার বিভিন্ন স্থানে ভেজাল ও অনুমোদনহীন বিএসটিআইয়ের নকল সিল ব্যবহারের মাধ্যমে চাঁদপুরে মাঠায় বাজার সয়লাভ হয়ে পড়েছে।
এক জরিপকালে দেখা যায়, চাঁদপুর শহর তথা জেলার বিভিন্নস্থানে ও উপজেলাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে মাঠা। এ মাঠা পান করে পবিত্র রমজান মাসে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যদিয়ে রোজাদার তাদের প্রতিদিনে সিয়াম সাধনা রোজা রেখে পবিত্র রমজানের রোজা রাখতে হচ্ছে। এতে করে রোজাদারর যেমন অসুস্থ হয়ে পড়ছে তেমন বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা তাদেও মতামত দিয়েছেন। অধিকাংশ মাঠার বোতলে নেই বিএসটিআই অনুমোদন, নেই পণ্যেও সঠিক ল্যাভেল।
পবিত্র মাহে রমজানে সারাদিন কষ্ট করে রোজা রেখে একজন রোজাদার ইফতারে পান করছেন নোংরা আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হওয়া ভেজাল মাঠা দিয়ে। রোজাদার ব্যক্তিদের ক্লান্তি আর চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর এসব ভেজাল মাঠা বাজারজাত করে প্রচুর পরিমাণে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। তবে এ বছর প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় বুঝে না বুঝেই সস্তায় পাওয়া ভেজাল মাঠা পান করছে রোজাদাররা। যা খেয়ে রোজাদাররা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন বলে জানান চিকিৎসকরা। অস্বাস্থ্যকর কারখানাগুলো বন্ধে প্রশাসনের এ বছর নেই তেমন কোনো নজরদারি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন বস্তির মধ্যেই অস্বাস্থ্যকর এবং দুর্গন্ধ যুক্ত নোংরা পরিবেশে বানানো হচ্ছে এসব অভিজাত সিলমারা মাঠা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের ঘোষপাড়া, পুরাণবাজার এলাকার ঘোষপাড়া ও মৈশালবাড়ি এলাকা, পুরানবাজার লোহার পুল, শহরের বকুলতলা এলাকা, পালবাজার, আদালত পাড়াসহ চাঁদপুর, শহরতলীসহ বিভিন্ন উপজেলায় এ সব ভেজাল মাঠার উৎপাদন বেশি হয়। এছাড়া চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন দোকানঘরসহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক এলাকায় বিএসটিআই এর অনুমোদন বিহীন মাঠা বাসা-বাড়িতে কারখানা গড়ে তুলে ভেজাল মাঠা তৈরি হয়। পরে ভেজাল মাঠা বিভিন্ন দোকান, পাড়া-মহল্লা ও রাস্তার মোড়ে বিক্রি করা হয়। মাঠার বোতলের গায়ে ল্যাভেলে নেই কোনো উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের নষ্ট দুধ, চিনি, লবণসহ আরোও নানা উপাদান মিশিয়ে বানানো হচ্ছে এ সব অস্বাস্থ্যকর মাঠা। এ ব্যবসার সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এর আগে অবৈধভাবে বিএসটিআইএর সিল ও অনুমোদন না থাকায় কয়েকটি মাঠা কারখানাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়। এছাড়া বড় বড় মিষ্টান্নের দোকানে মাঠার কারখানাগুলো থেকে অল্পদামে ক্রয় করে এ সব নিন্মমানের মাঠা বিক্রি করা হচ্ছে। বড় বড় মিষ্টান্নের দোকানি তাদের নিজস্ব দোকানের নামে স্টিকার লাগিয়ে রমরমা রমজান মাসের বেশি পান হয় বলে এ ব্যবসাটি জমজমাটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অনেক সচেতন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে।
শহরের ওয়্যারলেস মোড় এলাকা, কালিবাড়ি এলাকায় মাঠা বিক্রেতা রঞ্জন ঘোষ, হারাধনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ১ লিটার ৮০ টাকা, ৫০০ মি.লি. ৪৫ টাকা ও ২৫০ মি.লি. ৩০ টাকা বিক্রয় করা হয়। মাঠার মেয়াদের বিষয় জানতে চাইলে তারা জানায়, বাপ-দাদার সময় থেকে আমাদের এই ব্যবসা। আমরা ২ থেকে ৩ মন দুধ দিয়ে মাঠা তৈরি করি। আর এইগুলো বিক্রয় করেই আমাদের সংসার চলে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের (আরএমও) ডা. সূজাউদ্দোলা রুবেল বলেন, নিম্নমানের মাঠা পান করলে বদহজম, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে ইফতারে পচা, বাসি খাবার না খাওয়াই ভালো।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নূর হোসেন রুবেল বলেন, মেয়াদ ও ল্যাভেল ছাড়া মাঠা বিক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। পুরানবাজারসহ কয়েকটি স্থানে বাড়িতে বাড়িতে মাঠা তৈরি করে বিক্রয় করা হয়। বাড়িগুলো চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করা হবে।