বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম: জীবনে আর কখনো এমন কর্মহীন দিন কাটাইনি। করোনার পরে কেন যেন শরীরটা অন্যরকম হয়ে গেছে। কোনো কিছু করতে আগের মতো উৎসাহবোধ করি না। বসে থাকতে অস্বস্তি লাগে, বিছানায় গেলেও যে ঘুম আসে তা নয়। এ অবস্থায়ই চলছে অপারেশনের পর প্রায় তিন সপ্তাহ। ছয়-সাত দিন আগে কর্মহীন বারান্দায় ঘোরাফেরা করছিলাম। বারান্দায়ও ছোটখাটো দু-তিনটি বুকশেলফ আছে। তাতে হাজারখানেক বই হবে। প্রতিদিনই দু-এক বার বারান্দায় হাঁটাচলা করি। বুকশেলফের দিকে তেমন চোখ পড়ে না। হঠাৎই কেমন করে সেদিন চোখ পড়েছিল একটি বুকশেলফে। বারান্দার মধ্যে সেটাই বড় শেলফ। তিন-চার শ বই হবে তাতে। দাঁড়িয়ে চোখ বোলাই। বড় বড় বই পার হয়ে একেবারে নিচের তাকে দক্ষিণ পাশে ২০-৩০টি ছোট বই চোখে পড়ে। সেখান থেকে পাঁচ-ছয়টি বই তুলে নিই। সেখানে ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ ১১২ পৃষ্ঠার ওবায়দুল কাদেরের একটি ভাবানুবাদ হাতে নিই। বইটি পড়ে আমার মনে হলো কোথায় যেন পড়েছিলাম ছাই খুটলেও কোথাও না কোথাও মানিক পাওয়া যায়, পাওয়া যায় অমূল্য রতন। তেমনই শিখা প্রকাশনীর রবার্ট পেইনের লেখা ইংরেজি বইটি ১৯৯১ সালের ভাবানুবাদ। লেখাটা নিশ্চয়ই তারও আগের। একজন ইংরেজ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উপন্যাসের ধাঁচে এমন সত্যনির্ভর বই লিখতে পারেন আমার ধারণায় ছিল না। বই পড়া শুরু হয় দিল্লির জে-১৮৮১ চিত্তরঞ্জন পার্কে। শুরুটা ছিল প্রবোধকুমার সান্যালের তিন খন্ডের ‘হাসনু বানু’ দিয়ে। সবকিছুতেই গুরু
লাগে। আমার জীবনে গুরুহীন শুরু ‘ক খ গ ঘ অ আ ই’ কীভাবে হয়, কোথা থেকে লিখতে হয় খুব একটা ভালো করে কেউ শেখায়নি। সবকিছুতেই কারও না কারও উৎসাহ লাগে, উদ্দীপনা লাগে। বই পড়ায়ও উদ্দীপনা ছিল চিত্তরঞ্জন পার্কের এ সি সেনের। ড. শীলা সেন, গার্গী, শঙ্খকে নিয়ে এ সি সেনের চারজনের পরিবার। জয়প্রকাশ নারায়ণের এক চিঠি নিয়ে আমি সেই পরিবারের ৫ নম্বর সদস্য হয়েছিলাম। পুরো দেড় দশক কাটিয়েছি সেখানে। বর্ধমান-শিলিগুড়ি-কলকাতা এসবের বাইরে দিল্লির পুরো সময়টাই জে-১৮৮১ সি আর পার্কে কেটেছে আমার। বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের কত নেতা যে সে বাড়ি গেছেন, থেকেছেন, খেয়েছেন কোনো লেখাজোখা নেই। রাজ্জাক ভাই, সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত, মমতাজ, সিলেটের বাবুল আরও অনেকে দিনের পর দিন সি আর পার্কের বাসায় থেকেছেন। সেখানেই পড়া শিখি। আগে আমার হাঁটতে, লাউয়ের পাতা ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা খেতে ভালো লাগত। এখন খেতে আর পড়তেই ভালো লাগে। বইটি হাতে নিয়ে স্তম্ভিত হয়ে যাই। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি উৎসর্গকৃত। আমাদের প্রেরণার উৎস আওয়ামী যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির ছোট ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের উৎসাহে অথবা তাঁর নির্দেশনায় বইটি ওবায়দুল কাদের ভাষান্তর বা ভাবানুবাদ করেছেন। বইটিতে ভূমিকা লিখেছেন শফিকুল আজিজ মুকুল। শফিকুল আজিজ মুকুল এক অসাধারণ মানুষ। আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। আগেকার দিনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগে অনেক প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন এখন সেসব ভাবতেই অবাক লাগে। প্রিয় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যখন ধীরে ধীরে বড় হয়েছেন তখন আমি নির্বাসনে। ওবায়দুল কাদেরের তেমন কোনো লেখা পড়িনি। কিন্তু ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তাঁর প্রতাপ প্রভাবের কথা কতজনের কাছে যে শুনেছি। শুনে শুনে অভিভূত হয়েছি। পাকিস্তান আমলে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, কে এম ওবায়দুর রহমান, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, নোয়াখালীর খালেদ মোহাম্মদ আলী, নীলফামারীর আবদুর রউফ, লতিফ সিদ্দিকী, কবি আল মুজাহিদী, ফজলুর রহমান খান ফারুক, শাজাহান সিরাজ, আবদুল কুদ্দুস মাখন এঁদের পরে স্বাধীন বাংলাদেশে ওবায়দুল কাদেরের মতো অত জনপ্রিয় ছাত্রনেতার নাম তেমন খুব একটা শুনিনি। জালাল-জাহাঙ্গীর, ফজলু-চুন্নুদের নামও ব্যাপক আলোচিত হতো। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের মতো অতটা নয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব-পরবর্তী রাজনীতিতে শেখ হাসিনার পক্ষে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মতো আর কেউ অতটা আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেননি। ছাত্রদের ওপর তাঁর দুর্বার প্রভাব ২০০০-এর ১০-১২ সাল পর্যন্ত অটুট ছিল। এখন তো আর কারোর অতীত বিচার করা হয় না, সেটা সুুকর্মই হোক আর কুকর্ম। বঙ্গবন্ধুকে যা খুশি তাই বলে স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে এখনো আওয়ামী লীগ করা যায়। চাটু মারতে পারলেই হলো, কিছু টাকাপয়সা আর পোঁ ধরতে পারলেই নেতা। দু-চার বছরেই তারা পাখা মেলে আকাশে ওড়ে। মূল গ্রন্থটি পড়তে পারলে আরও স্বাদ পাওয়া যেত। তবে ওবায়দুল কাদেরের ৩০-৩২ বছর আগের লেখায় দারুণ মুনশিয়ানা ফুটে উঠেছে। তিনি ছাত্ররাজনীতির পর এক দিনের জন্যও রাজনীতিতে জড়িয়ে না থাকলেও শুধু লেখালেখি করলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম লেখকদের অন্যতম হতেন। ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ বইটি পড়ে ভীষণ অভিভূত ও মুগ্ধ হয়েছি। কতজনের কত লেখা পড়েছি- বিমল মিত্রের ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘লালকেল্লা’, ‘গন্না বেগম’, প্রবোধকুমার সান্যালের ‘হাসনু বানু’, অন্নদাশঙ্কর, মনোজ বসু কত লেখকের কত লেখা পড়েছি, নিরন্তর পড়ছি। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের এ ভাষান্তর আমাকে বিমোহিত করেছে। বঙ্গবন্ধুর ওপর উপন্যাসের আকারে সত্যনির্ভর লেখাটি হাজার হাজার কপি, লাখো লাখো কপি ছাপা হলেও কম হতো। শেখ ফজলুল করিম সেলিমের জীবনে ভাবীকালের ইতিহাসে ওবায়দুল কাদেরকে মূল লেখা থেকে বাংলা ভাষান্তর করার দায়িত্ব দেওয়া তাঁর জীবনের এক শ্রেষ্ঠ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। শফিকুল আজিজ মুকুলের ভূমিকা বইটির জন্য গজমতির হার হয়ে থাকবে। প্রিয় ওবায়দুল কাদের জীবনে আর কিছু যদি না-ও করতেন ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’ এ বইটি ভাষান্তরের কারণে প্রকৃত বাঙালি জাতির কাছে চিরস্মরণীয়- অমর হয়ে থাকতেন। মানুষের কোনো কোনো সময়ের কোনো কোনো কীর্তি তাকে কালোত্তীর্ণ করে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এটাও একটি কালোত্তীর্ণ অমর কীর্তি। দুর্ভাগ্য, কত কিছুর জন্য সরকার কত হাজার কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু এসব ভালো কাজের জন্য তেমন কিছুই করা হয় না। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের ওপর ‘স্বাধীনতা ’৭১’ লিখেছিলাম। কত মন্ত্রণালয়কে, কত মন্ত্রীকে কতবার বললাম, কয়েক হাজার বই নিয়ে আমাকে সাহায্য করুন। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অত্যন্ত ভালোবাসি, ¯ন্ডেœহ করি। তাঁকেও দু-তিন বার বলেছি, আপনাদের প্রত্যেক থানা, ক্লাব ও অন্যান্য লাইব্রেরিতে কিছু ‘স্বাধীনতা ’৭১’ নিতে পারেন। এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে দু-তিন বার বলেছি। কিন্তু ‘স্বাধীনতা ’৭১’ তাঁরা কেনেননি। দেশে ফেরার পর ‘স্বাধীনতা ’৭১’-এর কয়েক হাজার কপি নিজেরা ছাপলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা তখন বেশ কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। তারপর আর আওয়ামী পরিবারের কারও হাতের ফাঁসা দিয়ে কোনো কিছু পড়েনি। তাহলে বঙ্গবন্ধুর ওপর ওবায়দুল কাদেরের এমন চমৎকার অসাধারণ উপন্যাসধর্মী ভাষান্তর কেন কারও চোখে পড়বে! তবু ওবায়দুল কাদেরকে সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই। ভাবীকালে তাঁর সবকিছু মুছে গেলেও যত দিন বাংলাদেশ থাকবে বাঙালি জাতি থাকবে তত দিন বইটির জন্য তাঁর নাম থাকবে।
বইটির দারুণ বৈশিষ্ট্য মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে তেমন কোনো ঘটনাই বাদ পড়েনি। চমৎকার বর্ণনা আছে সবকিছুতেই। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. মালেক এবং রাও ফরমান আলীর ভারতীয় বিমান আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় বাঙ্কার থেকে মাটি মেখে বেরোনোর অভাবনীয় সুন্দর বর্ণনা। আরও আছে টিক্কা-নিয়াজি-রাও ফরমান আলীদের কাপুরুষতার বর্ণনা। এদিকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার এক হৃদয়গ্রাহী নিখুঁত ছবি এঁকেছেন লেখক। ৩২ নম্বর সড়কের ধানমন্ডির বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া, আদমজী কোট স্কুলে রাখা, সেখান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মিয়ানওয়ালি জেলখানায় স্থানান্তর। পরে জেল থেকে বের করে জেলার হাবিব আলীর বাড়িতে কয়েকদিন রাখা, তারপর শাল্লাল্লা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে জুলফিকার আলী ভুট্টোর অনুনয়-বিনয়-চমৎকার তুলে ধরা হয়েছে। সেখান থেকে লাহোর বিমানবন্দর পিআই-৭০৭ বিশেষ বিমানে পাকিস্তান ত্যাগ, সেখান থেকে হিথরোয় অবতরণ, তারপর লন্ডনের ক্যারিজ হোটেল। ছুটিতে থাকার পরও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের ছুটি বাতিল করে লন্ডনে ফিরে বাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ সে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। সেখান থেকে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানে দিল্লি হয়ে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে রামলীলা ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে স্বদেশের মাটিতে পা রাখার নিখুঁত বর্ণনা এক অভাবনীয় ব্যাপার। উপন্যাসের ধাঁচে বঙ্গবন্ধুর ওপর এমন সত্যনিষ্ঠ আর কোনো লেখা আমার চোখে পড়েনি। বইটি বহুল প্রচারিত হলে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের যেমন অনেক সমর্থক ও সহযোগী বাড়ত, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক প্রশ্নের অবসান হতো। বইটিতে কোথাও তেমন ত্রুটি চোখে পড়েনি। শুধু বঙ্গবন্ধুর মুক্তির পর তিনি যাঁকে কাছে ডেকেছিলেন তিনি হচ্ছেন ড. কামাল হোসেন- এ পর্বটা বাদ পড়েছে। তাতে লেখার অঙ্গহানি হয়নি। তাঁর নাম থাকলে ষোলকলা পূর্ণ হতো।
ইদানীং শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পতনের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেকে মিল খোঁজার চেষ্টা করছেন। সরকার খুবই দৃঢ়ভাবে বিরোধী দলসহ পন্ডিতদের এসব দুর্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছে। এখন তো আমরা সত্যনির্ভর কিছু করি না। সবকিছুতেই নিজেদের দিকে ঝোল টানি। তবে সরকারের কথাকে একেবারে অবহেলা করার সুযোগ নেই। এটাই সত্য, বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। এর সবচাইতে বড় কারণ আমাদের কোটি সন্তান বিদেশে রাতদিন ঘাম ঝরিয়ে দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠায়। তারা যত দিন কর্মক্ষম থাকবে তত দিন যতই লুট করা হোক বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হবে না। ব্রিটিশ ১৯০ বছর জাহাজের পর জাহাজ ভরে লুট করেও ভারতবর্ষকে অর্থনৈতিক দেউলিয়া করতে পারেনি। সোনা ফলা বাংলাকে কেউ দেউলিয়া করতে পারবে না। যত দিন বাংলাদেশে সোনার সন্তানরা আছে, বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেম আছে তত দিন সোনার বাংলা নানা দিক থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। কিন্তু নিঃশেষ হবে না, ধ্বংস হবে না।
অপারেশনের পর টাঙ্গাইল এসেছিলাম ডিসির ইফতারের দাওয়াতে। টাঙ্গাইলের ডিসি ড. মো. আতাউল গনি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ছিলেন মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী প্রায় অনেকটা তারই মতো। প্রধান সেনাপতির কথা যেমন ফেলা যায় না, তেমনি ডিসির কথাও ফেলতে পারিনি। তাই ইফতার মাহফিলে শরিক হয়েছিলাম। দেশটা একেবারে আওয়ামী লীগে ছেয়ে গেছে। ইদানীং সব কেমন যেন অস্তিত্বহীনেরা আওয়ামী লীগ করে। উপজেলা চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউএনও, এমপিদের ছড়াছড়ি। দাওয়াতে আন্তরিকতা থাকায় অংশ নিয়েছিলাম। বেশ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে আমার অত্যন্ত প্রিয় মিষ্টি মেয়ে লাভলীকে এমপি হিসেবে দেখে। ওরা সত্যিই ভীষণ পরিশ্রম করেছে। লাভলীর স্বামী সুভাষ সিংহ রায় খুবই ভালো মানুষ। লাভলীকে বলেছিলাম, তোর জামাই খুব ভালো। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন, ‘কেন দাদা, আমি ভালো না?’ বলেছিলাম, তুইও ভালো। ওরা ছাত্র থাকতে খুবই পরিশ্রম করেছে। ওকে সংরক্ষিত আসনে এমপি বানানো যথার্থই হয়েছে। একসময়ের সংস্কৃতি বা তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের চাইতে অনেক ভালো। ত্যাগের মূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে একটা বিষয় দেখে খুবই মর্মাহত হয়েছি, কাদের নিয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়েছে আল্লাহই জানেন, আমরা জানি না। মনে হয় ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের গেঞ্জি, টুপি, মাস্ক দিয়েছে। রঙের আর শেষ নেই। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জোকার বানিয়ে ছেড়েছে। এক অভাবনীয় টুপি-গেঞ্জি-মাস্ক। দেখলে রঙিলা রঙিলা মনে হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আর কত যে নিচে নামাবে বুঝতে পারছি না। মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত খেলো হলে রাষ্ট্রের কী হবে! বড় মর্মাহত হয়েছি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন ছেলেখেলা দেখে। ফজলুর রহমান খান ফারুককে বড় বেশি মুক্তিযোদ্ধা বলা হচ্ছিল। তিনি নাকি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পদকও পেয়েছেন। তিনি এমপি হিসেবে একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বীর যোদ্ধা নন, সম্মুখযোদ্ধাও নন। তাঁর রাজনীতিতে প্রচুর ভূমিকা আছে। সে হিসেবে তাঁকে পদক দেওয়াই যেতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক বিচারে পদক দিলে সবার আগে আসতেন মওলানা ভাসানী, শামসুল হক, ড. আলীম আল রাজী, আবদুল মান্নান, শামসুর রহমান খান শাজাহান, হাতেম আলী তালুকদার। বাছেত সিদ্দিকী তো প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁকে পদক না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ওপর ফজলুর রহমান খান ফারুককে পদক দেওয়া একেবারেই বেমানান। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো নেতা যদি পদক পান প্রথম পাবেন জননেতা আবদুল মান্নান, তারপর লতিফ সিদ্দিকী এবং বদিউজ্জামান খান তারপর অন্যরা।
লেখক : রাজনীতিক।
www.ksjleague.com সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন