ধর্ষণের ঘটনা টাকার বিনিময়ে মীমাংসার অভিযোগ, এসআই ক্লোজড

আশুলিয়ার ধর্ষণের ঘটনা বিবাদীর সাথে আতাত করে সেই বিষয়টি থানায় বসে আড়াই লাখ টাকায় মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক এসআই’র বিরুদ্ধে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারী এমন অভিযোগ তুলেছেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এ ঘটনায় মামলা হয়। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত আসামিকে। 

 

জানা গেছে মো. ফরিদুল আলম নামের পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে প্রাথমিক ভাবে আশুলিয়া থানা থেকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ক্লোজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম।

 

এর আগে, আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় স্থানীয় সাকিব ভূইয়া (২৮) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে ওই নারী পোশাক শ্রমিককে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত সাকিব ভুইয়া আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার শাহ আলম ভুইয়ার ছেলে। তিনি ঘোষবাগে ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচারের ব্যবসা করতেন।

 

জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই নারী আশুলিয়া থানায় শাকিবের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ করলে সেই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পরে থানার এসআই মো. ফরিদুল আলমের উপর। পরে অভিযুক্তের সাথে আতাত করে আড়াই লাখ টাকায় ঘটনাটি মীমাংসা করেন তিনি।

 

ভুক্তভোগীর এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৩-৪ মাস আগে তার দোকানে গিয়ে অভিযুক্তের সাথে পরিচয় হয় ভুক্তভোগীর। এরপরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। পরে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গত ৬ মার্চ সর্বশেষ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে বিয়ের কথা বললে সেই নারীকে টালবাহানা করে ঘুরাতে থাকে ওই যুবক।

 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, এর আগেই এ ঘটনার মীমাংসা করা হয়েছিল। এসআই ফরিদ ও আরও কয়েকজন স্থানীয় লোক থানায় বসেই আমাকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসা করায়। তারা বলে মামলায় গেলে অনেক ঝামেলা অনেক খরচ, তুমি মীমাংসা করে নাও। এ বিষয়ে আমার আর কোনও অভিযোগও ছিলনা। সেই টাকা থেকে আমার কাছে বিভিন্ন খরচাপাতির কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে উপস্থিতরা। আমি ৪০ হাজার টাকা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে আসি। এরপর থেকে আমি আমার মত এলাকায় বসবাস করে আসছিলাম। আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমি এ বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ নিতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎ করে এসআই ফরিদ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, বোন আমার চাকরিটা বাঁচাও। তুমি থানায় এসে একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে যাও। পরে আমাকে থানায় নিয়ে মামলা গ্রহণ করে। আমি যখন মামলা করতে চেয়েছি তখন আমার মামলা নেয়া হয়নি। আর পরে আমি যখন সব ভুলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চেয়েছি তখন আমাকে এই পথে আনা হলো। আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি সাকিবকে এখনো ভালবাসি তাই আর চাইনি সে ঝামেলায় থাকুক। কিন্তু এখন তো তাদের পথে এসে আমাকে মামলা পরিচালনা করতে হবে। আমি তো এখন এসব চাইনি। আমি এ টাকা নিয়েও খুব অস্বস্তিতে আছি। আমি এ টাকা ফেরতও দিতে চেয়েছিলাম।

 

তবে এমন অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা দাবি করে এসআই ফরিদুল আলম বলেন, আজ (মঙ্গলবার) থেকে আমি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছি। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমি, টাকা পয়সা নিয়ে কোন মীমাংসা করা হয়নি। তাহলে কেন আপনাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার সিনিয়র কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।

 

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা সংক্রান্ত একটি জটিলতার নিয়ে এসআই ফরিদুল আলমকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শেওড়াপাড়ায় জোড়া খুন : মাস্ক-ক্যাপ পরা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

» আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ সব দলের সিদ্ধান্তে হয়েছে : প্রেস সচিব

» যুদ্ধ নয়, অজ্ঞতাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ করবে : কঙ্গনা

» ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু ২১ মে

» ‘ফেসবুক-ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললেই গ্রেপ্তার’

» আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আড়ালে দেশে নাটকীয়তা চলছে : মির্জা আব্বাস

» বিশেষ অভিযানে রাজধানীসহ সারা দেশে ১৮২১ জন গ্রেফতার

» ‌‌‘সূর্য উঠলে দেখতে পাবেন’, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল প্রসঙ্গে সিইসি

» শহীদ কন্যা লামিয়া ধর্ষণ ও আত্মহত্যা: আলোচিত আসামি ইমরান গ্রেপ্তার

» সিভিল সার্জনরা চাইলে সেবার মান ২৫ শতাংশ উন্নতি সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ধর্ষণের ঘটনা টাকার বিনিময়ে মীমাংসার অভিযোগ, এসআই ক্লোজড

আশুলিয়ার ধর্ষণের ঘটনা বিবাদীর সাথে আতাত করে সেই বিষয়টি থানায় বসে আড়াই লাখ টাকায় মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক এসআই’র বিরুদ্ধে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারী এমন অভিযোগ তুলেছেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এ ঘটনায় মামলা হয়। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত আসামিকে। 

 

জানা গেছে মো. ফরিদুল আলম নামের পুলিশের ওই কর্মকর্তাকে প্রাথমিক ভাবে আশুলিয়া থানা থেকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ক্লোজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম।

 

এর আগে, আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় স্থানীয় সাকিব ভূইয়া (২৮) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে ওই নারী পোশাক শ্রমিককে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত সাকিব ভুইয়া আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার শাহ আলম ভুইয়ার ছেলে। তিনি ঘোষবাগে ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচারের ব্যবসা করতেন।

 

জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই নারী আশুলিয়া থানায় শাকিবের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ করলে সেই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পরে থানার এসআই মো. ফরিদুল আলমের উপর। পরে অভিযুক্তের সাথে আতাত করে আড়াই লাখ টাকায় ঘটনাটি মীমাংসা করেন তিনি।

 

ভুক্তভোগীর এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৩-৪ মাস আগে তার দোকানে গিয়ে অভিযুক্তের সাথে পরিচয় হয় ভুক্তভোগীর। এরপরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। পরে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গত ৬ মার্চ সর্বশেষ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে বিয়ের কথা বললে সেই নারীকে টালবাহানা করে ঘুরাতে থাকে ওই যুবক।

 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বলেন, এর আগেই এ ঘটনার মীমাংসা করা হয়েছিল। এসআই ফরিদ ও আরও কয়েকজন স্থানীয় লোক থানায় বসেই আমাকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে মীমাংসা করায়। তারা বলে মামলায় গেলে অনেক ঝামেলা অনেক খরচ, তুমি মীমাংসা করে নাও। এ বিষয়ে আমার আর কোনও অভিযোগও ছিলনা। সেই টাকা থেকে আমার কাছে বিভিন্ন খরচাপাতির কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে উপস্থিতরা। আমি ৪০ হাজার টাকা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে আসি। এরপর থেকে আমি আমার মত এলাকায় বসবাস করে আসছিলাম। আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমি এ বিষয়ে আর কোন পদক্ষেপ নিতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎ করে এসআই ফরিদ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, বোন আমার চাকরিটা বাঁচাও। তুমি থানায় এসে একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে যাও। পরে আমাকে থানায় নিয়ে মামলা গ্রহণ করে। আমি যখন মামলা করতে চেয়েছি তখন আমার মামলা নেয়া হয়নি। আর পরে আমি যখন সব ভুলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চেয়েছি তখন আমাকে এই পথে আনা হলো। আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি সাকিবকে এখনো ভালবাসি তাই আর চাইনি সে ঝামেলায় থাকুক। কিন্তু এখন তো তাদের পথে এসে আমাকে মামলা পরিচালনা করতে হবে। আমি তো এখন এসব চাইনি। আমি এ টাকা নিয়েও খুব অস্বস্তিতে আছি। আমি এ টাকা ফেরতও দিতে চেয়েছিলাম।

 

তবে এমন অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা দাবি করে এসআই ফরিদুল আলম বলেন, আজ (মঙ্গলবার) থেকে আমি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছি। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমি, টাকা পয়সা নিয়ে কোন মীমাংসা করা হয়নি। তাহলে কেন আপনাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার সিনিয়র কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।

 

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা সংক্রান্ত একটি জটিলতার নিয়ে এসআই ফরিদুল আলমকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।  সূএ:বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com