বাকরখানি: নামের পেছনে আছে করুণ ইতিহাস

বাকরখানি একটি রুটির নাম। যা পুরান ঢাকায় বেশ জনপ্রিয়। রুটিজাতীয় একটি সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী খাবারটি ছোট-বড় সবার কাছেই প্রিয়। পুরান ঢাকাবাসীর নাশতার খাবারে বাকরখানি অন্যতম। অতিথি আপ্যায়নে বাকরখানির স্থান প্রথম।  পুরান ঢাকার সব এলাকায়ই কম-বেশি রয়েছে বাকরখানির দোকান। এসব এলাকা দিয়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলার সময় রাস্তার দুইপাশে চোখে পড়বে ছোট দোকানগুলোতে বাকরখানি তৈরি ও বিক্রির ধুম।

 

পুরান ঢাকার এক-একটি খাবার বিখ্যাত হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে আলাদা আলাদা ঐতিহ্য। তবে বাকরখানি নামের পেছনেই আছে করুণ এক ইতিহাস।

জনশ্রুতি আছে, জমিদার আগা বাকের তথা আগা বাকির খাঁর নামানুসারে এই রুটির নামকরণ করা হয়েছে। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর দত্তক ছেলে আগা বাকের। প্রখর মেধার অধিকারী আগা বাকের যুদ্ধবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন।

 

আরামবাগের নর্তকী ছিল খনি বেগম। আগা বাকের ও খনি বেগম পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিন্তু উজির পুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খান ছিল পথের কাঁটা। সে খনি বেগমকে প্রেম নিবেদন করেন। খনি বেগম জয়নাল খানকে প্রত্যাখ্যান করেন।

 

প্রত্যাখ্যাত হয়ে জয়নাল খনি বেগমের ক্ষতির চেষ্টা করে। এমন খবর পেয়ে বাকের জয়নালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বাকের তলোয়ারবাজিতে জয়নালকে হারিয়ে দেয়।

 

অন্যদিকে জয়নালের দুই বন্ধু উজিরকে মিথ্যা খবর দেয়। জানায় যে, বাকের জয়নালকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। উজির ছেলের হত্যার বিচার চায়। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ পুত্র বাকেরকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। অবশেষে বাকেরের হাতে মারা যায় বাঘ।

 

ইতিমধ্যে জয়নালের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ফাঁস হয়ে যায়। ফাঁস হয়, সে জোর করে খনি বেগমকে দক্ষিণ বঙ্গে ধরে নিয়ে গেছে। বাকের খনি বেগমকে উদ্ধার করতে যান। পিছু নেন উজির জাহান্দার খান। ছেলে জয়নাল খান বাকেরকে হত্যার চেষ্টা করলে উজির নিজের ছেলেকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে। তলোয়ার বিদ্ধ অবস্থাতে জয়নাল খনি বেগমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে।

 

খনি বেগমকে সমাধিস্থ করা হয় বর্তমান বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জ এলাকায়। আর বাকের সবকিছু ত্যাগ করে রয়ে গেলেন প্রিয়তমার সমাধির কাছে। বাকের খাঁর নামানুসারেই বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চলের নাম হয় বাকেরগঞ্জ।

 

ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি রুটির নামের পেছনেও রয়েছে বাকের-খনির প্রেমের ইতিহাস। ঢাকায় এই রুটি প্রচলন করেছিলেন বাকের। আর নর্তকী খনি বেগম এ ধরনের রুটি পছন্দ করতেন।

 

খনি বেগমের প্রিয় খাদ্য ও এই প্রেমকাহিনীর উপর ভিত্তি করে এর নামকরণ করা হয়েছিল বাকের-খনি রুটি। পরবর্তীতে এই নাম কিছুটা অপভ্রংশ হয়ে বাকরখানি নাম ধারণ করে।

 

জনশ্রুতি মেনে নিলে ধরে নিতে হয়, বাখরখানির সৃষ্টি আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে। তবে বাকরখানির নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে তথ্য পাওয়া না গেলেও পুরান ঢাকার কেউ কেউ বলেন, নবাবরাই এর প্রচলন করেছেন। নবাবদের খুব পছন্দের খাবার ছিল বাকরখানি।

 

পুরনো ঢাকার লালবাগ, নাজিমুদ্দিন রোড, সিক্সা বাজার এবং চাঁনখারপুল এলাকা বাকরখানি রুটি তৈরীর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বংশাল, জিন্দাবাহার, কসাইটুলী, নাজিরা বাজার, নবাব বাড়ী, আওলাদ হোসেন লেন, নবরায় লেন, সূত্রাপুরসহ ঢাকার নাম না জানা অলিতে গলিতে বাকরখানি রুটির দোকান রয়েছে। তাইতো বাকরখানি রুটি পুরনো ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যারা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই : কাদের সিদ্দিকী

» সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলে ‘যেই লাউ, সেই কদু’ হবে: রেজাউল করীম

» জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

» ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা

» বগুড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে পরিচিতি সভা ও মত-বিনিময়কালে সাবেক এমপি লালু

» নরসিংদী পলাশে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ বদলের শপথ পাঠ

» প্রাইম ব্যাংকের উদ্যোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

» বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়াল ব্র্যাক ব্যাংক

» বড়াইগ্রামে পৃথক দুইটি সড়ক দুর্ঘটনায় এক ভ্যান চালক নিহত, আহত তিন

» বড়াইগ্রামে জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বাকরখানি: নামের পেছনে আছে করুণ ইতিহাস

বাকরখানি একটি রুটির নাম। যা পুরান ঢাকায় বেশ জনপ্রিয়। রুটিজাতীয় একটি সুস্বাদু ও ঐতিহ্যবাহী খাবারটি ছোট-বড় সবার কাছেই প্রিয়। পুরান ঢাকাবাসীর নাশতার খাবারে বাকরখানি অন্যতম। অতিথি আপ্যায়নে বাকরখানির স্থান প্রথম।  পুরান ঢাকার সব এলাকায়ই কম-বেশি রয়েছে বাকরখানির দোকান। এসব এলাকা দিয়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলার সময় রাস্তার দুইপাশে চোখে পড়বে ছোট দোকানগুলোতে বাকরখানি তৈরি ও বিক্রির ধুম।

 

পুরান ঢাকার এক-একটি খাবার বিখ্যাত হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে আলাদা আলাদা ঐতিহ্য। তবে বাকরখানি নামের পেছনেই আছে করুণ এক ইতিহাস।

জনশ্রুতি আছে, জমিদার আগা বাকের তথা আগা বাকির খাঁর নামানুসারে এই রুটির নামকরণ করা হয়েছে। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর দত্তক ছেলে আগা বাকের। প্রখর মেধার অধিকারী আগা বাকের যুদ্ধবিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন।

 

আরামবাগের নর্তকী ছিল খনি বেগম। আগা বাকের ও খনি বেগম পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিন্তু উজির পুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খান ছিল পথের কাঁটা। সে খনি বেগমকে প্রেম নিবেদন করেন। খনি বেগম জয়নাল খানকে প্রত্যাখ্যান করেন।

 

প্রত্যাখ্যাত হয়ে জয়নাল খনি বেগমের ক্ষতির চেষ্টা করে। এমন খবর পেয়ে বাকের জয়নালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বাকের তলোয়ারবাজিতে জয়নালকে হারিয়ে দেয়।

 

অন্যদিকে জয়নালের দুই বন্ধু উজিরকে মিথ্যা খবর দেয়। জানায় যে, বাকের জয়নালকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। উজির ছেলের হত্যার বিচার চায়। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁ পুত্র বাকেরকে বাঘের খাঁচায় নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। অবশেষে বাকেরের হাতে মারা যায় বাঘ।

 

ইতিমধ্যে জয়নালের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ফাঁস হয়ে যায়। ফাঁস হয়, সে জোর করে খনি বেগমকে দক্ষিণ বঙ্গে ধরে নিয়ে গেছে। বাকের খনি বেগমকে উদ্ধার করতে যান। পিছু নেন উজির জাহান্দার খান। ছেলে জয়নাল খান বাকেরকে হত্যার চেষ্টা করলে উজির নিজের ছেলেকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে। তলোয়ার বিদ্ধ অবস্থাতে জয়নাল খনি বেগমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করে।

 

খনি বেগমকে সমাধিস্থ করা হয় বর্তমান বাংলাদেশের বাকেরগঞ্জ এলাকায়। আর বাকের সবকিছু ত্যাগ করে রয়ে গেলেন প্রিয়তমার সমাধির কাছে। বাকের খাঁর নামানুসারেই বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চলের নাম হয় বাকেরগঞ্জ।

 

ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি রুটির নামের পেছনেও রয়েছে বাকের-খনির প্রেমের ইতিহাস। ঢাকায় এই রুটি প্রচলন করেছিলেন বাকের। আর নর্তকী খনি বেগম এ ধরনের রুটি পছন্দ করতেন।

 

খনি বেগমের প্রিয় খাদ্য ও এই প্রেমকাহিনীর উপর ভিত্তি করে এর নামকরণ করা হয়েছিল বাকের-খনি রুটি। পরবর্তীতে এই নাম কিছুটা অপভ্রংশ হয়ে বাকরখানি নাম ধারণ করে।

 

জনশ্রুতি মেনে নিলে ধরে নিতে হয়, বাখরখানির সৃষ্টি আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে। তবে বাকরখানির নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে তথ্য পাওয়া না গেলেও পুরান ঢাকার কেউ কেউ বলেন, নবাবরাই এর প্রচলন করেছেন। নবাবদের খুব পছন্দের খাবার ছিল বাকরখানি।

 

পুরনো ঢাকার লালবাগ, নাজিমুদ্দিন রোড, সিক্সা বাজার এবং চাঁনখারপুল এলাকা বাকরখানি রুটি তৈরীর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বংশাল, জিন্দাবাহার, কসাইটুলী, নাজিরা বাজার, নবাব বাড়ী, আওলাদ হোসেন লেন, নবরায় লেন, সূত্রাপুরসহ ঢাকার নাম না জানা অলিতে গলিতে বাকরখানি রুটির দোকান রয়েছে। তাইতো বাকরখানি রুটি পুরনো ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com