৫০০ বছরের ‘গায়েবি’ মসজিদ

হাম্মাদিয়া মসজিদ। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা গ্রামে এটির অবস্থান। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গোলাপি রঙের এক গম্বুজের মসজিদটি অনেকের কাছে ‘গায়েবি’ বা ‘অদৃশ্য’ মসজিদ নামে পরিচিত। সুলতানী আমলে নির্মিত এ মসজিদটিকে চট্টগ্রাম জেলার দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

 

জানা যায়, বাংলার শেষ হোসেন শাহী বংশের সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৫৩৩-১৫৩৮) সময়কালে চট্টগ্রামের শাসক হামিদ খান এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। হামিদ খানের নামানুসারে এটির নাম রাখা হয় হামিদিয়া মসজিদ। যা পরে স্থানীয়ভাবে বিকৃত হয়ে হাম্মাদিয়ার মসজিদ-এ রূপান্তরিত হয়।

 

মসজিদটি স্থাপনের পর গ্রামটির নাম রাখা হয় মসজিদিয়া গ্রাম। পরে স্থানীয়ভাবে উচ্চারণ বিকৃত হয়ে গ্রামের নাম হয়ে যায় মসজিদ্দা।

 

পূর্বে পাহাড় ও রেলপথ এবং পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও বঙ্গোপসাগর। এর মাঝেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে হাম্মাদিয়া মসজিদের অবস্থান। মসজিদের পাশেই রয়েছে ১০ দশমিক ৩৭ একরের একটি বিশাল দীঘি। যেটি হাম্মাদিয়া দীঘি নামে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে একটি কবরস্থান।

হাম্মাদিয়া মসজিদ।

হাম্মাদিয়া মসজিদ।

মসজিদটিতে রয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বর্গাকার ইমারত ও বাইরের চার কোণায় চারটি চোঙ্গাকৃতির গোলাকার বুরুজ। প্রত্যেকটি বুরুজ অভিক্ষিপ্ত ভিতসহ ছয় মিটার উঁচু। এছাড়া মেহরাবের বাইরের দিকে রয়েছে একটি গোলাকৃতির বৃহৎমিনার, এর ওপরে রয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির বুরুজ। চারপাশের মিনারগুলোর ব্যাস সমান হলেও মেহরাবের বাইরের মিনারটির ব্যাস বেশি। মসজিদের দেয়াল পৌনে চার হাত পুরো, যা পলেস্তার ও চুনকাম করা।

 

মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি খিলান দরজা এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রত্যেকটির মাঝে রয়েছে একটি করে জানালা। প্রতিটি দরজার বাইরে ও ভেতরে রয়েছে দুটি সূচ্যগ্র পাথরের খিলান-ফ্রেম এবং এ দুয়ের মধ্যে আছে টোলের মতো খিলান ছাদ।

হাম্মাদিয়া মসজিদ

হাম্মাদিয়া মসজিদ

৫০০ বছরের পুরোনো এ মসজিদ ঘিরে বর্তমানে গড়ে উঠেছে নতুন স্থাপনা। স্থানীয়দের মতে, সুলতানী আমলে নির্মিত প্রাচীন এ মসজিদটির ভেতর আগে অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারলেও বর্তমানে পাশেই গড়ে ওঠা মসজিদটিতে হাজারের বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

 

১৯৮৬ সাল থেকে মসজিদের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন একই এলাকার আবদুস শুক্কুর। তিনি জানান, মূলত মুসল্লিদের জায়গা সংকুলানের কথা ভেবেই মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে মূল মসজিদটি ঠিক রয়েছে বলে জানান তিনি।  সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডট কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আন্দোলন কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না : রিজভী

» হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন নুরুল হক নুর

» দোহায় তৌহিদ হোসেন-ইসহাক দার বৈঠক

» বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে প্রস্তুত ঢাকা

» যমুনা অভিমুখে প্রাথমিক শিক্ষকরা, পুলিশের জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

» জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ

» নবীর আদর্শ মনে প্রাণে ধারণ করে জীবন গঠন হবে ….. জেলা প্রশাসক নরসিংদী 

» ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশের উত্তরা ক্যাম্পাসে ইয়াং লার্নার ইংলিশ লার্নিং সেন্টার-এর নতুন শাখা চালু করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

» ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’-এর অধীনে ব্র্যাক ব্যাংকের দেশব্যাপী আর্থিক সাক্ষরতা প্রোগ্রাম আয়োজন

» নওগাঁয় ডিবি পুলিশের অভিযানে মাদক কারবারি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ আটক ৩

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

৫০০ বছরের ‘গায়েবি’ মসজিদ

হাম্মাদিয়া মসজিদ। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের মসজিদ্দা গ্রামে এটির অবস্থান। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গোলাপি রঙের এক গম্বুজের মসজিদটি অনেকের কাছে ‘গায়েবি’ বা ‘অদৃশ্য’ মসজিদ নামে পরিচিত। সুলতানী আমলে নির্মিত এ মসজিদটিকে চট্টগ্রাম জেলার দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

 

জানা যায়, বাংলার শেষ হোসেন শাহী বংশের সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৫৩৩-১৫৩৮) সময়কালে চট্টগ্রামের শাসক হামিদ খান এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। হামিদ খানের নামানুসারে এটির নাম রাখা হয় হামিদিয়া মসজিদ। যা পরে স্থানীয়ভাবে বিকৃত হয়ে হাম্মাদিয়ার মসজিদ-এ রূপান্তরিত হয়।

 

মসজিদটি স্থাপনের পর গ্রামটির নাম রাখা হয় মসজিদিয়া গ্রাম। পরে স্থানীয়ভাবে উচ্চারণ বিকৃত হয়ে গ্রামের নাম হয়ে যায় মসজিদ্দা।

 

পূর্বে পাহাড় ও রেলপথ এবং পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও বঙ্গোপসাগর। এর মাঝেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে হাম্মাদিয়া মসজিদের অবস্থান। মসজিদের পাশেই রয়েছে ১০ দশমিক ৩৭ একরের একটি বিশাল দীঘি। যেটি হাম্মাদিয়া দীঘি নামে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে একটি কবরস্থান।

হাম্মাদিয়া মসজিদ।

হাম্মাদিয়া মসজিদ।

মসজিদটিতে রয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বর্গাকার ইমারত ও বাইরের চার কোণায় চারটি চোঙ্গাকৃতির গোলাকার বুরুজ। প্রত্যেকটি বুরুজ অভিক্ষিপ্ত ভিতসহ ছয় মিটার উঁচু। এছাড়া মেহরাবের বাইরের দিকে রয়েছে একটি গোলাকৃতির বৃহৎমিনার, এর ওপরে রয়েছে ক্ষুদ্রাকৃতির বুরুজ। চারপাশের মিনারগুলোর ব্যাস সমান হলেও মেহরাবের বাইরের মিনারটির ব্যাস বেশি। মসজিদের দেয়াল পৌনে চার হাত পুরো, যা পলেস্তার ও চুনকাম করা।

 

মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি খিলান দরজা এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রত্যেকটির মাঝে রয়েছে একটি করে জানালা। প্রতিটি দরজার বাইরে ও ভেতরে রয়েছে দুটি সূচ্যগ্র পাথরের খিলান-ফ্রেম এবং এ দুয়ের মধ্যে আছে টোলের মতো খিলান ছাদ।

হাম্মাদিয়া মসজিদ

হাম্মাদিয়া মসজিদ

৫০০ বছরের পুরোনো এ মসজিদ ঘিরে বর্তমানে গড়ে উঠেছে নতুন স্থাপনা। স্থানীয়দের মতে, সুলতানী আমলে নির্মিত প্রাচীন এ মসজিদটির ভেতর আগে অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারলেও বর্তমানে পাশেই গড়ে ওঠা মসজিদটিতে হাজারের বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

 

১৯৮৬ সাল থেকে মসজিদের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন একই এলাকার আবদুস শুক্কুর। তিনি জানান, মূলত মুসল্লিদের জায়গা সংকুলানের কথা ভেবেই মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে মূল মসজিদটি ঠিক রয়েছে বলে জানান তিনি।  সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডট কম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com