ক্রেডিট কার্ডে এ কেমন বৈষম্য

আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ক্রেডিট কার্ডের প্রবর্তন এক অনন্য সংযোজন। উন্নত বিশ্ব এর যথাযথ ব্যবহার অনেক আগেই নিশ্চিত করেছে। তবে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অতীতের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও এর প্রসার খুব একটা ঘটেনি। মূলত আর্থসামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকায় দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশেরই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সামর্থ্য হয়নি। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আর্থিকভাবে সচ্ছল এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা সেভাবে গড়ে উঠছে না। পেশাগত দিক ও বয়স বিবেচনাসহ নানা মানদণ্ডের বেড়াজালে আটকে আছে দেশে ক্রেডিট কার্ডের বাজার। আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বয়স ৬০ বছরের উপরে হলে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড দেয় না দেশের ব্যাংকগুলো। অথচ বয়সে তরুণ কিংবা সবেমাত্র কর্মজীবনে পা রেখেছেন, সেসব গ্রাহকদের আর্থিক সামর্থ্য কম থাকলেও তাদেরকে কার্ড দেয়া কিংবা ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কার্ড নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়।

এতে সময়মতো অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের ফাঁদে পড়ে যান অনেকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকগুলোতেই ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্রেডিট কার্ড দেয়া হয় না। বয়স্ক মানুষের আয়ু বিবেচনায় এমনটি করে থাকে ব্যাংকগুলো। তারা মনে করে থাকে বয়স্কদের কার্ড দিলে ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এমনটি মনে করেন না সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন। তার ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের বয়স বিবেচনা করা হয় না; বরং আর্থিক সামর্থ্য থাকলে যে কেউ সাউথইস্ট ব্যাংকের কার্ড পেতে পারে বলে জানান এম কামাল হোসেন। বলেন, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্রেডিট কার্ড দিলে অসুবিধা কোথায়? এটা একেবারেই উচিত না। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্রেডিট হিস্ট্রি আরও ভালো। এ ক্ষেত্রে আমি কোনো অসুবিধা দেখি না। একটা অসুবিধার কথা বলা হয় সেটা হলো- বয়সের কারণে গ্রাহকের মৃত্যু হলে ক্রেডিট ডিফল্ট করবে। কিন্তু মৃত্যু ঝুঁকিতো সবারই আছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের বয়স বিবেচনা করে ক্রেডিট কার্ড না দেয়ার কোনো যুক্তি আমি দেখি না। তিনি বলেন, ক্রেডিট কার্ড নিয়ে খুব কম মানুষই ডিফল্ট করে। হাজারে দু’-একজন থাকতে পারে। তারপরও বয়স বিবেচনা করে যদি কার্ড ডিফল্টারের হিসাব করেন তাহলে দেখবেন সবগুলোর বয়স ৬০ বছরের নিচে। তাদের বেশির ভাগই ২৫ থেকে শুরু করে ৫০ বছরের মধ্যে।

বর্তমানে অনলাইন কিংবা শোরুমে গিয়ে কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন; বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখের উপরে। তবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় তা খুবই কম। এখনো দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ ব্যক্তিগত লেনদেন নগদ টাকায় করে থাকে। কার্ডের মাধ্যমে দেশে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। যদিও তা আর্থিক খাতের মোট লেনদেনের তুলনায় খুবই সামান্য।

 

আধুনিক বিশ্বে ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় প্লাস্টিক মানি। তারা পেপার মানি বা নগদ টাকার পরিবর্তে ক্রেডিট কার্ডই ব্যবহার করে থাকে বেশি। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন। নগদ টাকা বহন করা অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ নয়। তাছাড়া কার্ড দিয়ে সহজেই কেনাকাটা সম্পন্ন করা যায় বলে সব ধরনের আর্থিক লেনদেনে উন্নত বিশ্ব অনেক আগে থেকেই ক্রেডিট কার্ডে অভ্যস্ত। সেখানে বয়স বিবেচনা করা হয় না। ন্যূনতম আর্থিক সামর্থ্য থাকলেই তাকে ক্রেডিট কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা হয়। অথচ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ৬০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহকদের কার্ড না দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের বাজার আরও সংকুচিত করেছে। ফলে ক্রেডিট কার্ডের প্রবর্তনের ৫০ বছর পরও দেশে এর প্রসার ঘটছে না।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গ্রাহকের চাকরি আছে কিনা এবং মাসিক ইনকাম কত সেটা দেখা হয়। মাসে বেতন ২৫ কিংবা ৩০ হাজার হলে তাকে কার্ড নিতে উৎসাহ দেয়া হয়। অন্যদিকে আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও কেবল বয়স বেশি হওয়ায় তাদেরকে কার্ড দেয়া হয় না। অথচ মানুষ শুধু চাকরি করে না; তার অন্য কোনো আয় থাকতে পারে, ব্যবসা কিংবা বাড়ির মালিক হতে পারে। বয়স ৬০ বছরের বেশি হওয়ায় ক্রেডিট কার্ড না দিয়ে বয়স্ক মানুষের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কম। দেশে সাধারণ গরিব মানুষই বেশি। ফলে বড় একটা অংশেরই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সামর্থ্য নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো ক্যাশনির্ভর। কেনাকাটায় সবাই নগদ টাকা দিয়ে করে থাকে। ফলে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের বাজারও সেভাবে প্রসার লাভ করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ  বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নেই যে, বয়স বেশির জন্য ক্রেডিট কার্ড দেয়া হয় না। সামর্থ্য থাকলে এটি যেকেউ নিতে পারে। তিনি বলেন, বিদেশে বর্তমানে নগদ টাকার ব্যবহার একেবারে কমে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে খুবই কম। বেশির ভাগ মানুষই এতে অভ্যস্ত না। যারা একটু সচ্ছল তাদের কেউ কেউ এটা ব্যবহার করে থাকে। শুধুমাত্র একটা শ্রেণির মানুষ এটি ব্যবহার করছে। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন নগদ টাকা ব্যবহার নেই বললেই চলে। সব ধরনের কেনাকাটা, বিল পরিশোধ সবকিছু তারা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে করছে। এমনকি পেট্রোল পাম্পের বিল পরিশোধও তারা কার্ডের মাধ্যমে করে। আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা নেই। আর বিদেশে কার্ড ছাড়া চলেই না। তাদের সব ধরনের দোকানে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়ে থাকে। আর আমাদের শুধুমাত্র কিছু সুপার শপ, বড় রেস্টুরেন্ট এবং কিছু শোরুম ছাড়া অন্য কোনো দোকান বা রেস্টুরেন্টে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নেই। তাহলে এর প্রসার কীভাবে ঘটবে? তাছাড়া আমাদের দেশে ক্রেডিট কার্ডের চার্জও বেশি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম  বলেন, ক্রেডিট কার্ড মানেই তো বাকি দেয়া। তাই ব্যাংক এখানে কাস্টমারের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতেই পারে। এখন তার বয়স হয়েছে ৬০-৭০, কোনো সার্ভিস সে করে না, বা তার ইনকাম সোর্স কী আছে এগুলো দেখেশুনেই তো তারা এটা দেবে। সুতরাং এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের নিয়ম নেই যে, তোমাকে কার্ড দিতেই হবে অথবা তুমি দেবে না। এটা শুধু কাস্টমার এবং ব্যাংকের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। এখানে ব্যাংক দেখে তার কাস্টমারের ইনকাম কেমন। বয়স কোনো বিষয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ লাখ ৩ হাজার ১২৩। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ২০২। ২০২০ সালের জুনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৮৯৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের জুনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। ২০১৯ সালের জুনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন শেষে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের স্থিতি ছিল ৬ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ওয়ানশুটার গান ও দেশীয় অস্ত্রসহ তিনজন আটক

» রাজনৈতিক দলের বিচারে ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ

» নিজের আকিকা করা যাবে?

» যুবককে কুপিয়ে হত্যা

» হাতিয়ায় ইলিশসহ দুই ট্রলারের ৩০ জেলেকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড

» সুস্থ খালেদা জিয়াকে কাছে পেয়ে উৎফুল্ল স্বজনরা

» প্রেম বিয়ে সংসার নিয়ে মুখ খুললেন জয়া আহসান!

» অনলাইনেও নিষিদ্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বন্ধ হবে সব পেজ

» নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে অনেক সময় লাগবে : আইন উপদেষ্টা

» যারা মানুষ মা’রে, তাদের অনলাইনেও থাকার অধিকার নেই: রাফি

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ক্রেডিট কার্ডে এ কেমন বৈষম্য

আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ক্রেডিট কার্ডের প্রবর্তন এক অনন্য সংযোজন। উন্নত বিশ্ব এর যথাযথ ব্যবহার অনেক আগেই নিশ্চিত করেছে। তবে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অতীতের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও এর প্রসার খুব একটা ঘটেনি। মূলত আর্থসামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকায় দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশেরই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সামর্থ্য হয়নি। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আর্থিকভাবে সচ্ছল এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা সেভাবে গড়ে উঠছে না। পেশাগত দিক ও বয়স বিবেচনাসহ নানা মানদণ্ডের বেড়াজালে আটকে আছে দেশে ক্রেডিট কার্ডের বাজার। আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বয়স ৬০ বছরের উপরে হলে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড দেয় না দেশের ব্যাংকগুলো। অথচ বয়সে তরুণ কিংবা সবেমাত্র কর্মজীবনে পা রেখেছেন, সেসব গ্রাহকদের আর্থিক সামর্থ্য কম থাকলেও তাদেরকে কার্ড দেয়া কিংবা ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে কার্ড নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়।

এতে সময়মতো অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের ফাঁদে পড়ে যান অনেকে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকগুলোতেই ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্রেডিট কার্ড দেয়া হয় না। বয়স্ক মানুষের আয়ু বিবেচনায় এমনটি করে থাকে ব্যাংকগুলো। তারা মনে করে থাকে বয়স্কদের কার্ড দিলে ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এমনটি মনে করেন না সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন। তার ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের বয়স বিবেচনা করা হয় না; বরং আর্থিক সামর্থ্য থাকলে যে কেউ সাউথইস্ট ব্যাংকের কার্ড পেতে পারে বলে জানান এম কামাল হোসেন। বলেন, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্রেডিট কার্ড দিলে অসুবিধা কোথায়? এটা একেবারেই উচিত না। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্রেডিট হিস্ট্রি আরও ভালো। এ ক্ষেত্রে আমি কোনো অসুবিধা দেখি না। একটা অসুবিধার কথা বলা হয় সেটা হলো- বয়সের কারণে গ্রাহকের মৃত্যু হলে ক্রেডিট ডিফল্ট করবে। কিন্তু মৃত্যু ঝুঁকিতো সবারই আছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের বয়স বিবেচনা করে ক্রেডিট কার্ড না দেয়ার কোনো যুক্তি আমি দেখি না। তিনি বলেন, ক্রেডিট কার্ড নিয়ে খুব কম মানুষই ডিফল্ট করে। হাজারে দু’-একজন থাকতে পারে। তারপরও বয়স বিবেচনা করে যদি কার্ড ডিফল্টারের হিসাব করেন তাহলে দেখবেন সবগুলোর বয়স ৬০ বছরের নিচে। তাদের বেশির ভাগই ২৫ থেকে শুরু করে ৫০ বছরের মধ্যে।

বর্তমানে অনলাইন কিংবা শোরুমে গিয়ে কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন; বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখের উপরে। তবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় তা খুবই কম। এখনো দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ ব্যক্তিগত লেনদেন নগদ টাকায় করে থাকে। কার্ডের মাধ্যমে দেশে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। যদিও তা আর্থিক খাতের মোট লেনদেনের তুলনায় খুবই সামান্য।

 

আধুনিক বিশ্বে ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয় প্লাস্টিক মানি। তারা পেপার মানি বা নগদ টাকার পরিবর্তে ক্রেডিট কার্ডই ব্যবহার করে থাকে বেশি। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন। নগদ টাকা বহন করা অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ নয়। তাছাড়া কার্ড দিয়ে সহজেই কেনাকাটা সম্পন্ন করা যায় বলে সব ধরনের আর্থিক লেনদেনে উন্নত বিশ্ব অনেক আগে থেকেই ক্রেডিট কার্ডে অভ্যস্ত। সেখানে বয়স বিবেচনা করা হয় না। ন্যূনতম আর্থিক সামর্থ্য থাকলেই তাকে ক্রেডিট কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা হয়। অথচ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ৬০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহকদের কার্ড না দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের বাজার আরও সংকুচিত করেছে। ফলে ক্রেডিট কার্ডের প্রবর্তনের ৫০ বছর পরও দেশে এর প্রসার ঘটছে না।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গ্রাহকের চাকরি আছে কিনা এবং মাসিক ইনকাম কত সেটা দেখা হয়। মাসে বেতন ২৫ কিংবা ৩০ হাজার হলে তাকে কার্ড নিতে উৎসাহ দেয়া হয়। অন্যদিকে আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও কেবল বয়স বেশি হওয়ায় তাদেরকে কার্ড দেয়া হয় না। অথচ মানুষ শুধু চাকরি করে না; তার অন্য কোনো আয় থাকতে পারে, ব্যবসা কিংবা বাড়ির মালিক হতে পারে। বয়স ৬০ বছরের বেশি হওয়ায় ক্রেডিট কার্ড না দিয়ে বয়স্ক মানুষের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কম। দেশে সাধারণ গরিব মানুষই বেশি। ফলে বড় একটা অংশেরই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সামর্থ্য নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো ক্যাশনির্ভর। কেনাকাটায় সবাই নগদ টাকা দিয়ে করে থাকে। ফলে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের বাজারও সেভাবে প্রসার লাভ করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ  বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নেই যে, বয়স বেশির জন্য ক্রেডিট কার্ড দেয়া হয় না। সামর্থ্য থাকলে এটি যেকেউ নিতে পারে। তিনি বলেন, বিদেশে বর্তমানে নগদ টাকার ব্যবহার একেবারে কমে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে খুবই কম। বেশির ভাগ মানুষই এতে অভ্যস্ত না। যারা একটু সচ্ছল তাদের কেউ কেউ এটা ব্যবহার করে থাকে। শুধুমাত্র একটা শ্রেণির মানুষ এটি ব্যবহার করছে। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন নগদ টাকা ব্যবহার নেই বললেই চলে। সব ধরনের কেনাকাটা, বিল পরিশোধ সবকিছু তারা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে করছে। এমনকি পেট্রোল পাম্পের বিল পরিশোধও তারা কার্ডের মাধ্যমে করে। আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা নেই। আর বিদেশে কার্ড ছাড়া চলেই না। তাদের সব ধরনের দোকানে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়ে থাকে। আর আমাদের শুধুমাত্র কিছু সুপার শপ, বড় রেস্টুরেন্ট এবং কিছু শোরুম ছাড়া অন্য কোনো দোকান বা রেস্টুরেন্টে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নেই। তাহলে এর প্রসার কীভাবে ঘটবে? তাছাড়া আমাদের দেশে ক্রেডিট কার্ডের চার্জও বেশি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম  বলেন, ক্রেডিট কার্ড মানেই তো বাকি দেয়া। তাই ব্যাংক এখানে কাস্টমারের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতেই পারে। এখন তার বয়স হয়েছে ৬০-৭০, কোনো সার্ভিস সে করে না, বা তার ইনকাম সোর্স কী আছে এগুলো দেখেশুনেই তো তারা এটা দেবে। সুতরাং এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের নিয়ম নেই যে, তোমাকে কার্ড দিতেই হবে অথবা তুমি দেবে না। এটা শুধু কাস্টমার এবং ব্যাংকের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। এখানে ব্যাংক দেখে তার কাস্টমারের ইনকাম কেমন। বয়স কোনো বিষয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮ লাখ ৩ হাজার ১২৩। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ২০২। ২০২০ সালের জুনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৮৯৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের জুনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। ২০১৯ সালের জুনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন শেষে ক্রেডিট কার্ডের ঋণের স্থিতি ছিল ৬ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com