থাই রাজার ‘পবিত্র পানি’ নিয়ে যত রহস্য!

বিষয়টা অনেকটা চলচ্চিত্রের মতো! নিজের দেহরক্ষী বাহিনীর একজন সদস্যকে বিয়ে করে তাকে থাইল্যান্ডের রানি হিসাবে স্বীকৃতি থাই রাজা ভাজিরালংকর্ন। বিয়ের আগে তাকে ‘পবিত্র পানির’ মাধ্যমে তাদের বারংবার পবিত্র করা হয়। তারপর থেকেই এই পানি নিয়ে ‘জল ঘোলা’ কম হচ্ছে না। শুধু তাই নয় সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে প্রথমেই মাহা ভাজিরালংকর্নের পুরো শরিরে এই পানি ঢেলে ‘শুদ্ধ’ করা হয়। এরপর আবারো ডুমুর কাঠের তৈরি অষ্টভুজ সিংহাসনে বসলে আট ব্যক্তি এসে পুনরায় তার হাতে পবিত্র পানি ঢালেন।

 

এই ‘পবিত্র পানি’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। কেন এই পানিকে পবিত্র বলা হয় ও এর ব্যবহারের রহস্য কী? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেকেই। উত্তর আছেও! তবে তারজন্য যেতে হবে অনেক গভীরে।

মন্দির থেকে ‘বিশুদ্ধ পানি’ পাত্রে ঢালা হচ্ছে

মন্দির থেকে ‘বিশুদ্ধ পানি’ পাত্রে ঢালা হচ্ছে

থাইল্যান্ডের সমাজব্যবস্থা অনেকটা নদীকেন্দ্রিক। এই কারণে তাদের সকল উৎসব পার্বনে পানির বিভিন্ন কার্যক্রম থাকেই। তবে এই পবিত্র পানি রাজ্যাভিষেকের কয়েক সপ্তাহ আগে বেলা ১১টা ৫২ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত শতাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। থাই জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী এই সময়টা শুভক্ষণ। ওই পানিগুলোকে আবার বিশেষ পদ্ধতিতে পবিত্র করা হয়। এর জন্য প্রথমেই এ পানি দেশটির প্রধান বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে পূজার কাজে ব্যবহার করা হয়। এরপর ব্যাংককের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির ওয়াত সুথাতে সব পানি জড়ো করা হয়। সেখানে পূজা শেষে রাজ্যাভিষেকের জন্য প্রস্তুত হয় পবিত্র এই পানি।

 

‘পবিত্র পানি’ মূলত দু-রীতিতে ব্যবহার করা হয়। প্রথমত, রাজাকে পবিত্র করার জন্য গোসল করানো হয় এই পানি ঢেলে। দ্বিতীয়ত, রাজা যখন প্রথমবারের মতো রাজকীয় পোশাক পরিধান করে ডুমুর কাঠের তৈরি অষ্টভুজ সিংহাসনে বসেন তখন নির্দিষ্ট ৮ জন ব্যক্তি তার হাতে সেই পবিত্র পানি ঢালেন। এই আট জনের মধ্যে রাজকুমারি মাহা চক্রী সিরিনধর্ন, রাজার ছোট বোন প্রযুত চাঙ ওচা এবং রাজসভার ব্রাহ্মণ ও পন্ডিতরা রয়েছেন।

রাজ দরবারে ‘পবিত্র পানি’ নেয়া হচ্ছে

রাজ দরবারে ‘পবিত্র পানি’ নেয়া হচ্ছে

দেশটির চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের থাই সংস্কৃতি বিষয়ের গবেষক অধ্যাপক টংথং চন্দ্রানসুর মতে, পবিত্র পানির রীতি অনেক যুগ ধরেই চলছে। প্রতীকী দায়িত্ব হিসেবে রাজা মুকুটের ওই ওজন বহন করেন। এ ছাড়া রাজকীয় তরবারি দেশ শাসনের প্রজ্ঞাকে প্রতিনিধিত্ব করে। সিএম রিপের টনেল স্যাপ হৃদে তরবারিটি পাওয়া গিয়েছিল। এটা রাজা প্রথম রামাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল কম্বোডিয়া। কথিত আছে, যখন এটি ব্যাংককে পৌঁছেছিল তখন শহরটিতে একযোগে সাতটি বজ্রপাত আঘাত হানে!

 

যাইহোক, সিংহাসনে বসার মধ্য দিয়ে মাহা ভাজিরালংকর্ন হলেন চক্রী রাজবংশের দশম রাজা। তিনি রাজা রামা এক্স নামেও পরিচিত। ১৭৮২ সাল থেকে দেশটিতে রাজত্ব করছে চক্রী রাজবংশ। দায়িত্বগ্রহণ শেষে রাজা ভাজিরালংকর্ন তার প্রথম রাজকীয় আদেশ উপস্থাপন করেন। তার বাবা ভূমিবল আদুলাদেজ ১৯৫০ সালে দায়িত্ব গ্রহণের সময় বলেছিলেন, থাই মানুষের সুখ ও সুবিধার জন্য ন্যায়ের সঙ্গে আমি রাজত্ব করব।

রাজার পুরো শরিরে পানি ঢেলে ‘শুদ্ধ’ করা হচ্ছে

রাজার পুরো শরিরে পানি ঢেলে ‘শুদ্ধ’ করা হচ্ছে

২০১৬ সাল থেকে রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনে রয়েছেন। তবে থাই ঐতিহ্য অনুযায়ী, তিনি পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কিংবা পৃথিবীর স্বর্গীয় প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হতে পারবেন না।

সূত্র: মালয় মেইল।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» রাজনীতিকে আমরা পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে দেখি : মামুনুল হক

» যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম রেকর্ড বেড়েছে যে কারণে

» জুলাই গণঅভ্যুত্থান রুখে দাঁড়াবার এক মহাকাব্য : সংস্কৃতি উপদেষ্টা

» রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবেশকে আনতে হবে : সৈয়দা রিজওয়ানা

» ওয়াকফ এস্টেটগুলোকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হচ্ছে: ধর্ম উপদেষ্টা

» যারা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছে তাদেরকে সাধুবাদ জানাই : কাদের সিদ্দিকী

» সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলে ‘যেই লাউ, সেই কদু’ হবে: রেজাউল করীম

» জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

» ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা

» বগুড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে পরিচিতি সভা ও মত-বিনিময়কালে সাবেক এমপি লালু

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

থাই রাজার ‘পবিত্র পানি’ নিয়ে যত রহস্য!

বিষয়টা অনেকটা চলচ্চিত্রের মতো! নিজের দেহরক্ষী বাহিনীর একজন সদস্যকে বিয়ে করে তাকে থাইল্যান্ডের রানি হিসাবে স্বীকৃতি থাই রাজা ভাজিরালংকর্ন। বিয়ের আগে তাকে ‘পবিত্র পানির’ মাধ্যমে তাদের বারংবার পবিত্র করা হয়। তারপর থেকেই এই পানি নিয়ে ‘জল ঘোলা’ কম হচ্ছে না। শুধু তাই নয় সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে প্রথমেই মাহা ভাজিরালংকর্নের পুরো শরিরে এই পানি ঢেলে ‘শুদ্ধ’ করা হয়। এরপর আবারো ডুমুর কাঠের তৈরি অষ্টভুজ সিংহাসনে বসলে আট ব্যক্তি এসে পুনরায় তার হাতে পবিত্র পানি ঢালেন।

 

এই ‘পবিত্র পানি’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। কেন এই পানিকে পবিত্র বলা হয় ও এর ব্যবহারের রহস্য কী? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন অনেকেই। উত্তর আছেও! তবে তারজন্য যেতে হবে অনেক গভীরে।

মন্দির থেকে ‘বিশুদ্ধ পানি’ পাত্রে ঢালা হচ্ছে

মন্দির থেকে ‘বিশুদ্ধ পানি’ পাত্রে ঢালা হচ্ছে

থাইল্যান্ডের সমাজব্যবস্থা অনেকটা নদীকেন্দ্রিক। এই কারণে তাদের সকল উৎসব পার্বনে পানির বিভিন্ন কার্যক্রম থাকেই। তবে এই পবিত্র পানি রাজ্যাভিষেকের কয়েক সপ্তাহ আগে বেলা ১১টা ৫২ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত শতাধিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। থাই জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী এই সময়টা শুভক্ষণ। ওই পানিগুলোকে আবার বিশেষ পদ্ধতিতে পবিত্র করা হয়। এর জন্য প্রথমেই এ পানি দেশটির প্রধান বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে পূজার কাজে ব্যবহার করা হয়। এরপর ব্যাংককের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির ওয়াত সুথাতে সব পানি জড়ো করা হয়। সেখানে পূজা শেষে রাজ্যাভিষেকের জন্য প্রস্তুত হয় পবিত্র এই পানি।

 

‘পবিত্র পানি’ মূলত দু-রীতিতে ব্যবহার করা হয়। প্রথমত, রাজাকে পবিত্র করার জন্য গোসল করানো হয় এই পানি ঢেলে। দ্বিতীয়ত, রাজা যখন প্রথমবারের মতো রাজকীয় পোশাক পরিধান করে ডুমুর কাঠের তৈরি অষ্টভুজ সিংহাসনে বসেন তখন নির্দিষ্ট ৮ জন ব্যক্তি তার হাতে সেই পবিত্র পানি ঢালেন। এই আট জনের মধ্যে রাজকুমারি মাহা চক্রী সিরিনধর্ন, রাজার ছোট বোন প্রযুত চাঙ ওচা এবং রাজসভার ব্রাহ্মণ ও পন্ডিতরা রয়েছেন।

রাজ দরবারে ‘পবিত্র পানি’ নেয়া হচ্ছে

রাজ দরবারে ‘পবিত্র পানি’ নেয়া হচ্ছে

দেশটির চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের থাই সংস্কৃতি বিষয়ের গবেষক অধ্যাপক টংথং চন্দ্রানসুর মতে, পবিত্র পানির রীতি অনেক যুগ ধরেই চলছে। প্রতীকী দায়িত্ব হিসেবে রাজা মুকুটের ওই ওজন বহন করেন। এ ছাড়া রাজকীয় তরবারি দেশ শাসনের প্রজ্ঞাকে প্রতিনিধিত্ব করে। সিএম রিপের টনেল স্যাপ হৃদে তরবারিটি পাওয়া গিয়েছিল। এটা রাজা প্রথম রামাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিল কম্বোডিয়া। কথিত আছে, যখন এটি ব্যাংককে পৌঁছেছিল তখন শহরটিতে একযোগে সাতটি বজ্রপাত আঘাত হানে!

 

যাইহোক, সিংহাসনে বসার মধ্য দিয়ে মাহা ভাজিরালংকর্ন হলেন চক্রী রাজবংশের দশম রাজা। তিনি রাজা রামা এক্স নামেও পরিচিত। ১৭৮২ সাল থেকে দেশটিতে রাজত্ব করছে চক্রী রাজবংশ। দায়িত্বগ্রহণ শেষে রাজা ভাজিরালংকর্ন তার প্রথম রাজকীয় আদেশ উপস্থাপন করেন। তার বাবা ভূমিবল আদুলাদেজ ১৯৫০ সালে দায়িত্ব গ্রহণের সময় বলেছিলেন, থাই মানুষের সুখ ও সুবিধার জন্য ন্যায়ের সঙ্গে আমি রাজত্ব করব।

রাজার পুরো শরিরে পানি ঢেলে ‘শুদ্ধ’ করা হচ্ছে

রাজার পুরো শরিরে পানি ঢেলে ‘শুদ্ধ’ করা হচ্ছে

২০১৬ সাল থেকে রাজা মাহা ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনে রয়েছেন। তবে থাই ঐতিহ্য অনুযায়ী, তিনি পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কিংবা পৃথিবীর স্বর্গীয় প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হতে পারবেন না।

সূত্র: মালয় মেইল।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com