মরার পরও যেসব সাপ কামড়াতে পারে

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  সাপের কামড়ে বছরে গড়ে ৬-৭ হাজার মানুষ মারা যায়। সাপ আসলে তখনই মানুষকে কামড়ায় যখন যে মানুষকে নিজের জন্য বিপজ্জনক মনে করে। এমনকি মরার পরও কিছু প্রজাতির সাপ আছে যা কামড়াতে পারে। শুনে অবাক লাগলেও সম্প্রতি এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে।

 

ঘটনা সবগুলোই ভারতের। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ২০২২ ও ২০২৩ সালে তিনটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। তিনটি ক্ষেত্রেই মরা সাপ কয়েক ঘণ্টা পরে মানুষকে কামড় দিয়েছিল। মোনোকোল্ড কোবরা আর ব্ল্যাক ক্রেট প্রজাতির সাপও ছিল। এই দুই প্রজাতির সাপই ভারতে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত সাপ বলে বিবেচিত।

 

সাপ যে মরার পরও কামড়াতে পারে এবং সেই বিষে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এটি কিন্তু মনগড়া কোনো গল্প নয়। একাধিক গবেষণায় এর প্রমাণ মিলেছে। সাপ মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পরও কামড়াতে পারে। তাই এতদিন সাপ মেরে ফেলে যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেন তা আর হয়তো সম্ভব নয়।

মরার পরও যেসব সাপ কামড়াতে পারে

সাপ মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বিপদও শেষ হয়ে যায় না। আসামের জীববিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দল তাদের গবেষণায় একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন। বিবিসি বাংলার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মরার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে সাপের শরীরে যে বিষ প্রয়োগ করার প্রণালী থাকে, সেটি অক্ষত থাকে।

 

ভারতের ওই ঘটনাগুলোর পর ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন ট্রপিকাল ডিজিসেস’ নামক গবেষণা জার্নাল একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সেখানে আলোচনা করা হয়েছে যে, মারা যাওয়ার পরে অথবা মাথা কেটে ফেলার পরেও সাপের কামড় দেওয়ার আশঙ্কা কেন থেকে যায়।

 

আসুন ঘটনাগুলো আগে জেনে নেওয়া যাক-প্রথম ঘটনাটি শিবসাগর জেলায়, যেখানে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তার মুরগির খামারে একটি কোবরা দেখতে পান। যেটি তার মুরগিগুলোকে খেয়ে ফেলছিল। তিনি কিছু না ভেবেই কোবরাটির মাথায় কোপ বসান। মরা ভেবে দূরে ফেলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কোবরার কাটা মাথা তার হাতে কামড়ে দেয়। এরপর তার হাত থেকে পুরো শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ হোন তিনি।

দ্বিতীয় ঘটনাটিও ওই একই এলাকার, একজন কৃষকের ট্র্যাক্টরের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে একটি কোবরা মারা যায়। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি ট্র্যাক্টর থেকে নেমে যখন দেখতে যান মৃত সাপটি তার পায়ে কামড় দেয়। পায়ের যেখানে ওই সাপটি কামড় দিয়েছিল, সেই অংশটি ফুলে যায় আর ওই কৃষকের বমি হতে শুরু করে। তাকে অ্যান্টি-ভেনম আর অ্যান্টিবডি দিতে হয়। ২৫ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 

তৃতীয় ঘটনাটি বোকো (পশ্চিম আসাম) থেকে, যেখানে একটি কালো ক্রেট তার মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পরেও তার কাছে আসা একজন ব্যক্তিকে কামড়াতে সক্ষম হয়েছিল। একদিন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ছটার দিকে কয়েকজন একটা ব্ল্যাক ক্রেট সাপ মেরে বাড়ির পেছনে ফেলে দেন।

মরার পরও যেসব সাপ কামড়াতে পারে

ঘণ্টা তিনেক পরে এদের একজন উৎসাহের বশে মারা যাওয়া সাপটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। মৃত সাপটিকে তিনি হাত দিয়ে ধরেছিলেন। ওই মৃত সাপটি তার ডান হাতের আঙ্গুলে কামড় দেয়। প্রথমে তার পরিবার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়নি কারণ কামড় দেওয়ার জায়গায় কোনো ব্যথাও ছিল না, জায়গাটি ফুলেও ওঠে নি। এছাড়া ওই ব্যক্তি বলেছিলেন যে, সাপটিকে আগেই মেরে ফেলা হয়েছে।

কিন্তু রাত প্রায় দুটার দিকে ওই ব্যক্তির শরীরে নিউরো-টক্সিন প্রভাব ফেলতে থাকে। নিউরো-টক্সিন হল অর্থাৎ যে বিষ মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করে। ওই ব্যক্তির শরীরে যন্ত্রণা হতে থাকে, অসাড় হয়ে আসতে থাকে। তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

এই ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করেন গবেষকদল। তাদের ওই গবেষণা অনুযায়ী, কিছু সাপের ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার তিন ঘণ্টা পরেও তার কামড়ানোর ক্ষমতা থাকে। সাপের শরীরে যে বিষ-তন্ত্র থাকে, সেটা কয়েক ঘণ্টা সক্রিয় থেকে যায় আর এর প্রভাব মানুষের ওপরে পড়তে পারে।

ইউনিভার্সাল স্নেকবাইট এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক ডা. এনএস মনোজ বলছেন যে, বিষদাঁত আছে, এমন ফ্রন্ট-ফ্যাঙ্গড প্রজাতির সাপের মধ্যে এ ধরনের ক্ষমতা বেশি থাকে। সাপের বিষ আসলে মানুষের লালার মতো। বিষ-গ্রন্থির সঙ্গে সাপের বিষদাঁতের যোগসূত্র থাকে। এই প্রণালী অনেকটা সিরিঞ্জের মতো কাজ করে। যখন একটা সাপ একজন মানুষকে কামড় দেয়, তখন বিষ ওই গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে বিষদাঁতের মাধ্যমে মানুষের শরীরে পৌঁছায়।

গবেষণা পত্রটিতে সাপের ‘ফলস বাইট’ -এর প্রসঙ্গেও লেখা হয়েছে। কখনো কখনো বিষাক্ত সাপ নিজের শত্রুকে কামড় তো দেয়, কিন্তু তার শরীরে বিষ হয়তো ঢালে না। এ ধরনের ‘ফলস বাইট’ দিয়ে সাপ নিজের শত্রুকে সাবধান করে দেয়।

তবে এইভাবে বিষ প্রয়োগ করা না করার ওপরে নিয়ন্ত্রণটা মৃত সাপের থাকে না। তাই মারা যাওয়ার পরেও সাপের শরীরে কোনো আঘাতের ফলে যদি তার বিষদাঁত কোথাও লেগে যায়, সেক্ষেত্রে বিষদাঁতের মাধ্যমে বিষ বেরিয়ে আসতে পারে। এর ওপরে সাপটির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এক্ষেত্রে বিষ-গ্রন্থিতে থেকে যাওয়া বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

ডা. মনোজ বলেন যে র‍্যাটল স্নেকের (যা একধরনের ভাইপার সাপ) ক্ষেত্রে এরকম উদাহরণ আছে। এ ধরনের সাপের প্রজাতি আমেরিকায় ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় এবং এগুলো ভীষণ বিষাক্ত প্রজাতি।

কর্ণাটকে অবস্থিত কলিঙ্গ ফাউন্ডেশনে গবেষণা পরিচালক ডা. এসআর গণেশ বলছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় যে বাদামী সাপ দেখা যায় বা চীনে যে কোবরা পাওয়া যায়, সেগুলোর ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ আছে।

ভারতে যেসব প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়, তার মধ্যে রাসেল ভাইপার, শ স্কেল্ড ভাইপার, ব্যাম্বু-পিট ভাইপার, মালাবার পিট ভাইপার, কোরাল স্নেক আর ব্যান্ডেড পিট ভাইপার প্রজাতিগুলোর থেকে এই বিপদ সবচেয়ে বেশি। এমনকি পানিতে থাকে যেসব সাপ, যেমন কন্ডা কন্ডাই আর নীরকোলি যেগুলোকে দেখে মনে হবে এরা ক্ষতি করবে না, তাদের ক্ষেত্রেও এই ঘটনা হতে পারে।

সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সাবধান এবং সচেতন থাকা। ডা. মনোজ বলেন, অনেকে মরা সাপ উঠিয়ে নিয়ে ছুঁয়ে দেখতে চান। এটা বিপজ্জনক। মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে, তবে সাপ বা অন্য সরীসৃপের ব্যাপারে সে ধরনের কোনো সংজ্ঞা নেই। আমরা মনে করি, যদি কোনো সাপ কাটা পড়ে বা সেটির মাথা কেটে ফেলা হয় অথবা দীর্ঘক্ষণ ধরে সেটি নড়াচড়া না করে পড়ে রয়েছে, তাহলে সেটি মৃত। আপনি সাপটিকে জীবিত অবস্থায় দেখুন বা মৃত, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যারা এ বিষয়ে জানেন, তাদেরকে খবর দেওয়া। তারাই যা ব্যবস্থা নেবেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালালেও ভারতে গিয়ে শয়তানি করছেন: মির্জা ফখরুল

» খালের মধ্যে কুমিরটা ১৭ বছর যন্ত্রণা দিয়ে দিল্লিতে পালিয়ে আছে: গয়েশ্বর

» ‘দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা দিয়েছে, তারেক রহমানকেও দিতে পারবে’: হান্নান মাসউদ

» বিএনপি জাতীয় পার্টির দায়িত্ব নেবে কেন, আপনারা কারা?: জাপা মহাসচিবকে রিজভী

» নুরের সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

» প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাত রাজনৈতিক দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত

» ভবিষ্যতে সরকারপ্রধানের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত : ফারুকী

» ব্র্যাক ব্যাংকের নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেন তারেক রেফাত উল্লাহ খান

» ইউসিবিডিতে মোনাশ ফাউন্ডেশন ২০২৫ প্রোগ্রামের তৃতীয় ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

» পুলিশ বাহিনীতে গড়ে উঠেছিল ২ গ্রুপ, নেতৃত্বে ছিলেন হাবিব-মনির

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মরার পরও যেসব সাপ কামড়াতে পারে

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  সাপের কামড়ে বছরে গড়ে ৬-৭ হাজার মানুষ মারা যায়। সাপ আসলে তখনই মানুষকে কামড়ায় যখন যে মানুষকে নিজের জন্য বিপজ্জনক মনে করে। এমনকি মরার পরও কিছু প্রজাতির সাপ আছে যা কামড়াতে পারে। শুনে অবাক লাগলেও সম্প্রতি এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে।

 

ঘটনা সবগুলোই ভারতের। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ২০২২ ও ২০২৩ সালে তিনটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। তিনটি ক্ষেত্রেই মরা সাপ কয়েক ঘণ্টা পরে মানুষকে কামড় দিয়েছিল। মোনোকোল্ড কোবরা আর ব্ল্যাক ক্রেট প্রজাতির সাপও ছিল। এই দুই প্রজাতির সাপই ভারতে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত সাপ বলে বিবেচিত।

 

সাপ যে মরার পরও কামড়াতে পারে এবং সেই বিষে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এটি কিন্তু মনগড়া কোনো গল্প নয়। একাধিক গবেষণায় এর প্রমাণ মিলেছে। সাপ মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পরও কামড়াতে পারে। তাই এতদিন সাপ মেরে ফেলে যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেন তা আর হয়তো সম্ভব নয়।

মরার পরও যেসব সাপ কামড়াতে পারে

সাপ মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বিপদও শেষ হয়ে যায় না। আসামের জীববিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দল তাদের গবেষণায় একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন। বিবিসি বাংলার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মরার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে সাপের শরীরে যে বিষ প্রয়োগ করার প্রণালী থাকে, সেটি অক্ষত থাকে।

 

ভারতের ওই ঘটনাগুলোর পর ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন ট্রপিকাল ডিজিসেস’ নামক গবেষণা জার্নাল একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। সেখানে আলোচনা করা হয়েছে যে, মারা যাওয়ার পরে অথবা মাথা কেটে ফেলার পরেও সাপের কামড় দেওয়ার আশঙ্কা কেন থেকে যায়।

 

আসুন ঘটনাগুলো আগে জেনে নেওয়া যাক-প্রথম ঘটনাটি শিবসাগর জেলায়, যেখানে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তার মুরগির খামারে একটি কোবরা দেখতে পান। যেটি তার মুরগিগুলোকে খেয়ে ফেলছিল। তিনি কিছু না ভেবেই কোবরাটির মাথায় কোপ বসান। মরা ভেবে দূরে ফেলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কোবরার কাটা মাথা তার হাতে কামড়ে দেয়। এরপর তার হাত থেকে পুরো শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ হোন তিনি।

দ্বিতীয় ঘটনাটিও ওই একই এলাকার, একজন কৃষকের ট্র্যাক্টরের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে একটি কোবরা মারা যায়। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি ট্র্যাক্টর থেকে নেমে যখন দেখতে যান মৃত সাপটি তার পায়ে কামড় দেয়। পায়ের যেখানে ওই সাপটি কামড় দিয়েছিল, সেই অংশটি ফুলে যায় আর ওই কৃষকের বমি হতে শুরু করে। তাকে অ্যান্টি-ভেনম আর অ্যান্টিবডি দিতে হয়। ২৫ দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

 

তৃতীয় ঘটনাটি বোকো (পশ্চিম আসাম) থেকে, যেখানে একটি কালো ক্রেট তার মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পরেও তার কাছে আসা একজন ব্যক্তিকে কামড়াতে সক্ষম হয়েছিল। একদিন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ছটার দিকে কয়েকজন একটা ব্ল্যাক ক্রেট সাপ মেরে বাড়ির পেছনে ফেলে দেন।

মরার পরও যেসব সাপ কামড়াতে পারে

ঘণ্টা তিনেক পরে এদের একজন উৎসাহের বশে মারা যাওয়া সাপটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। মৃত সাপটিকে তিনি হাত দিয়ে ধরেছিলেন। ওই মৃত সাপটি তার ডান হাতের আঙ্গুলে কামড় দেয়। প্রথমে তার পরিবার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়নি কারণ কামড় দেওয়ার জায়গায় কোনো ব্যথাও ছিল না, জায়গাটি ফুলেও ওঠে নি। এছাড়া ওই ব্যক্তি বলেছিলেন যে, সাপটিকে আগেই মেরে ফেলা হয়েছে।

কিন্তু রাত প্রায় দুটার দিকে ওই ব্যক্তির শরীরে নিউরো-টক্সিন প্রভাব ফেলতে থাকে। নিউরো-টক্সিন হল অর্থাৎ যে বিষ মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করে। ওই ব্যক্তির শরীরে যন্ত্রণা হতে থাকে, অসাড় হয়ে আসতে থাকে। তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

এই ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করেন গবেষকদল। তাদের ওই গবেষণা অনুযায়ী, কিছু সাপের ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার তিন ঘণ্টা পরেও তার কামড়ানোর ক্ষমতা থাকে। সাপের শরীরে যে বিষ-তন্ত্র থাকে, সেটা কয়েক ঘণ্টা সক্রিয় থেকে যায় আর এর প্রভাব মানুষের ওপরে পড়তে পারে।

ইউনিভার্সাল স্নেকবাইট এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক ডা. এনএস মনোজ বলছেন যে, বিষদাঁত আছে, এমন ফ্রন্ট-ফ্যাঙ্গড প্রজাতির সাপের মধ্যে এ ধরনের ক্ষমতা বেশি থাকে। সাপের বিষ আসলে মানুষের লালার মতো। বিষ-গ্রন্থির সঙ্গে সাপের বিষদাঁতের যোগসূত্র থাকে। এই প্রণালী অনেকটা সিরিঞ্জের মতো কাজ করে। যখন একটা সাপ একজন মানুষকে কামড় দেয়, তখন বিষ ওই গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে বিষদাঁতের মাধ্যমে মানুষের শরীরে পৌঁছায়।

গবেষণা পত্রটিতে সাপের ‘ফলস বাইট’ -এর প্রসঙ্গেও লেখা হয়েছে। কখনো কখনো বিষাক্ত সাপ নিজের শত্রুকে কামড় তো দেয়, কিন্তু তার শরীরে বিষ হয়তো ঢালে না। এ ধরনের ‘ফলস বাইট’ দিয়ে সাপ নিজের শত্রুকে সাবধান করে দেয়।

তবে এইভাবে বিষ প্রয়োগ করা না করার ওপরে নিয়ন্ত্রণটা মৃত সাপের থাকে না। তাই মারা যাওয়ার পরেও সাপের শরীরে কোনো আঘাতের ফলে যদি তার বিষদাঁত কোথাও লেগে যায়, সেক্ষেত্রে বিষদাঁতের মাধ্যমে বিষ বেরিয়ে আসতে পারে। এর ওপরে সাপটির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এক্ষেত্রে বিষ-গ্রন্থিতে থেকে যাওয়া বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

ডা. মনোজ বলেন যে র‍্যাটল স্নেকের (যা একধরনের ভাইপার সাপ) ক্ষেত্রে এরকম উদাহরণ আছে। এ ধরনের সাপের প্রজাতি আমেরিকায় ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় এবং এগুলো ভীষণ বিষাক্ত প্রজাতি।

কর্ণাটকে অবস্থিত কলিঙ্গ ফাউন্ডেশনে গবেষণা পরিচালক ডা. এসআর গণেশ বলছিলেন, অস্ট্রেলিয়ায় যে বাদামী সাপ দেখা যায় বা চীনে যে কোবরা পাওয়া যায়, সেগুলোর ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ আছে।

ভারতে যেসব প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়, তার মধ্যে রাসেল ভাইপার, শ স্কেল্ড ভাইপার, ব্যাম্বু-পিট ভাইপার, মালাবার পিট ভাইপার, কোরাল স্নেক আর ব্যান্ডেড পিট ভাইপার প্রজাতিগুলোর থেকে এই বিপদ সবচেয়ে বেশি। এমনকি পানিতে থাকে যেসব সাপ, যেমন কন্ডা কন্ডাই আর নীরকোলি যেগুলোকে দেখে মনে হবে এরা ক্ষতি করবে না, তাদের ক্ষেত্রেও এই ঘটনা হতে পারে।

সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সাবধান এবং সচেতন থাকা। ডা. মনোজ বলেন, অনেকে মরা সাপ উঠিয়ে নিয়ে ছুঁয়ে দেখতে চান। এটা বিপজ্জনক। মানুষের মৃত্যুর ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে, তবে সাপ বা অন্য সরীসৃপের ব্যাপারে সে ধরনের কোনো সংজ্ঞা নেই। আমরা মনে করি, যদি কোনো সাপ কাটা পড়ে বা সেটির মাথা কেটে ফেলা হয় অথবা দীর্ঘক্ষণ ধরে সেটি নড়াচড়া না করে পড়ে রয়েছে, তাহলে সেটি মৃত। আপনি সাপটিকে জীবিত অবস্থায় দেখুন বা মৃত, সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যারা এ বিষয়ে জানেন, তাদেরকে খবর দেওয়া। তারাই যা ব্যবস্থা নেবেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com