আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও মধুমতি ব্যাংকে শক্ত অবস্থানে শেখ পরিবার

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বেসরকারি মধুমতি ব্যাংকে এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে শেখ পরিবার। ব্যাংকটির পরিচালক পদে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও মামাতো ভাইয়ের ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস।

 

সরকার পতনের পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা ব্যাংকের কোনো বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো পরিচালক টানা তিনটি বোর্ড সভায় বা তিন মাসের বেশি সময় অনুপস্থিত থাকলে তার পদ শূন্য হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির পরও ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর বারবার তাদের ছুটি বাড়িয়ে পরিচালক পদে বহাল থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, হুমায়ূন কবীর আবার তাপসের স্ত্রীর আত্মীয় (বোনজামাই)।

 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বহু ব্যাংকের পরিচালক আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বিদেশে চলে গেছেন। এসব পরিচালক নানা কৌশলে ব্যাংকের পর্ষদে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বিদেশে বসে অনলাইনে সভায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর অনলাইনে অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে ছুটি নিয়ে মাসের পর মাস পার করে দিচ্ছেন।

 

মধুমতি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত ১৩ মাস ধরে ব্যাংকের পরিচালক শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও শেখ ফজলে নূর তাপস বোর্ড সভায় অংশ নিচ্ছেন না। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পরিচালক পরপর তিনটি সভায় বা তিন মাস অনুপস্থিত থাকলে তার পদ বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর তাদের ছুটি অনুমোদনের মাধ্যমে পদে বহাল রাখছেন। দুই পরিচালক ছুটির আবেদন ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠান। কখনো কখনো ছুটির আবেদন ছাড়াই তাদের ছুটি বাড়ানো হয়।

 

ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকা মানেই তারা ব্যাংকের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। তবুও তারা পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন। এটা যদি নিয়ম হয়ে যায়, তবে ভবিষ্যতে অন্যরাও এভাবে মাসের পর মাস ছুটি নিয়ে পদ আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করবেন। এতে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

 

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীরের এক কোটি ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৫০০টি শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের রয়েছে দুই কোটি ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৫টি এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের চার কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৫০০টি শেয়ার।

 

জানতে চাইলে মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বোর্ড থেকে তাদের ছুটি অনুমোদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা পদে বহাল আছেন। ছুটির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক কি ব্যবস্থা নেয়, তা তারাই জানে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী তারা ছুটি নিয়ে পদে রয়েছেন ঠিকই, তবে এত দীর্ঘ সময় ছুটি গ্রহণ অনৈতিক। ব্যাংক কোম্পানি আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাদের অপসারণ সম্ভব হচ্ছে না। আইনে শুধু ছুটি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু ছুটি গ্রহণের সর্বোচ্চ সময়সীমা উল্লেখ নেই।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বিধি লঙ্ঘন করে কেউ পরিচালক পদে রয়েছেনÑএমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

মধুমতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ছাড়াও ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে শেখ পরিবারের আরো সদস্য এবং আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনার মামাতো ভাইয়ের আরেক ছেলে ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও দিদারুল আলম।  সূএ: বার্তা বাজার ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ক্ষমতার লোভে একের পর এক ভুয়া ভোট করেছিল আওয়ামী লীগ – ড. মঈন খান

» সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ডাকসুতে বিজয়ী হবে ছাত্রদল : রিজভী

» শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আটজন গ্রেপ্তার

» নির্বাচনের আগে ২ হাজার এএসআই নিয়োগ, ২ হাজার জনকে পদোন্নতি : আইজিপি

» নুরের ওপর হামলা প্রমাণ করে হাসিনা ও তার দোসররা এখনও সক্রিয়: দুদু

» বিএনপি ও জামায়েত মিলে অন্তর্বর্তী সরকার চালাচ্ছে: সামান্তা শারমিন

» জুলাই গণহত্যা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়কার বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের তথ্য তুলে ধরলেন সারজিস

» সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ ২২ আসামির ভার্চুয়ালি হাজিরা গ্রহণ

» কিশোর-কিশোরীদের জন্য মেটার এআই চ্যাটবট নীতিতে পরিবর্তন

» পর্তুগালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও মধুমতি ব্যাংকে শক্ত অবস্থানে শেখ পরিবার

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বেসরকারি মধুমতি ব্যাংকে এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে শেখ পরিবার। ব্যাংকটির পরিচালক পদে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও মামাতো ভাইয়ের ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস।

 

সরকার পতনের পর থেকেই তারা পলাতক রয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা ব্যাংকের কোনো বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন না। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো পরিচালক টানা তিনটি বোর্ড সভায় বা তিন মাসের বেশি সময় অনুপস্থিত থাকলে তার পদ শূন্য হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির পরও ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর বারবার তাদের ছুটি বাড়িয়ে পরিচালক পদে বহাল থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, হুমায়ূন কবীর আবার তাপসের স্ত্রীর আত্মীয় (বোনজামাই)।

 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বহু ব্যাংকের পরিচালক আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই বিদেশে চলে গেছেন। এসব পরিচালক নানা কৌশলে ব্যাংকের পর্ষদে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ বিদেশে বসে অনলাইনে সভায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর অনলাইনে অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ ও ই-মেইলে ছুটি নিয়ে মাসের পর মাস পার করে দিচ্ছেন।

 

মধুমতি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত ১৩ মাস ধরে ব্যাংকের পরিচালক শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও শেখ ফজলে নূর তাপস বোর্ড সভায় অংশ নিচ্ছেন না। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো পরিচালক পরপর তিনটি সভায় বা তিন মাস অনুপস্থিত থাকলে তার পদ বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর তাদের ছুটি অনুমোদনের মাধ্যমে পদে বহাল রাখছেন। দুই পরিচালক ছুটির আবেদন ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠান। কখনো কখনো ছুটির আবেদন ছাড়াই তাদের ছুটি বাড়ানো হয়।

 

ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকা মানেই তারা ব্যাংকের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। তবুও তারা পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন। এটা যদি নিয়ম হয়ে যায়, তবে ভবিষ্যতে অন্যরাও এভাবে মাসের পর মাস ছুটি নিয়ে পদ আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করবেন। এতে ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

 

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীরের এক কোটি ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৫০০টি শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের রয়েছে দুই কোটি ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৫টি এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের চার কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৫০০টি শেয়ার।

 

জানতে চাইলে মধুমতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘বোর্ড থেকে তাদের ছুটি অনুমোদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা পদে বহাল আছেন। ছুটির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানানো হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক কি ব্যবস্থা নেয়, তা তারাই জানে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী তারা ছুটি নিয়ে পদে রয়েছেন ঠিকই, তবে এত দীর্ঘ সময় ছুটি গ্রহণ অনৈতিক। ব্যাংক কোম্পানি আইনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় তাদের অপসারণ সম্ভব হচ্ছে না। আইনে শুধু ছুটি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু ছুটি গ্রহণের সর্বোচ্চ সময়সীমা উল্লেখ নেই।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বিধি লঙ্ঘন করে কেউ পরিচালক পদে রয়েছেনÑএমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

মধুমতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ছাড়াও ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে শেখ পরিবারের আরো সদস্য এবং আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন শেখ হাসিনার মামাতো ভাইয়ের আরেক ছেলে ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও দিদারুল আলম।  সূএ: বার্তা বাজার ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com