ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর শাহবাগের বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে খোশ মেজাজে দিন কাটাচ্ছেন ফ্যাসিস্টের দোসর ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা মামলার আসামিরা। তাদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি ও চিকিৎসক নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
সবশেষ গত ২৫ আগস্ট তাদের দলে যোগ দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তারা বাইরের খাবার খাচ্ছেন, মজছেন খোশগল্পে। আত্মীয়স্বজন পরিচয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করছেন নেতাকর্মীরা। শলাপরামর্শ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন শাহজাহান খান। বিষয়টি নজরে আসায় তাদের সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল বুধবার সরেজমিন হাসপাতালের ডি ব্লকের দ্বিতীয় তলায় সিসিইউ-২ (করোনারি কেয়ার ইউনিট)-এ দেখা যায়, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন সশস্ত্র আনসার সদস্যরা। যে কেউ ঢুকতে চাইলে রোগীর নাম জানতে চাওয়া হয়। আরেকটু এগোলে পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হয়। সেখান থেকে গলি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে ডানদিকে আছে সিসিইউ-২-এর নতুন ইউনিট। অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা আছে সেখানে। ভেতরে সোজা ডিউটি ডাক্তারদের ডেস্ক। এর ঠিক ডানদিকে পর্দা দেওয়া অবস্থায় পাঁচটি শয্যা পাশাপাশি পাতা। এর মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খান ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং আরেকটিতে খায়রুল হক। বাইরের অংশ থেকে ভেতরের কিছু বোঝা না গেলেও পাশাপাশি শয্যা হওয়ায় নিয়মিতই কথাবার্তা, খোশগল্প ও আড্ডায় মেতে থাকেন তারা। মাঝেমধ্যে পত্রিকাও পড়েন। পাশাপাশি বেড হওয়ায় এ সুবিধা পেয়েছেন তারা।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, দুই-তিনদিন আগে আত্মীয় পরিচয়ে শাজাহান খানদের বিধিবহির্ভূতভাবে বাইরের খাবার দেওয়া হয়। সতর্ককতার সঙ্গে শাজাহান খানের অনুসারীরা দেখা-সাক্ষাৎ করছিলেন। এসব ঘটনা জানাজানি হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। বদলি করা হয় দায়িত্বরত কারারক্ষীদের। নির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া যে কারোরই প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করতে বলা হয়েছে।
হাসপাতালে অন্য রোগীদের স্বজনরা বলেন, হঠাৎ করে সিসিইউ-২ ইউনিটে ঢোকার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর আগে তারাও মাঝেমধ্যে দেখেছেন শাজাহান খানসহ ওই তিনজনের কাছে বিভিন্ন সময়ে লোকজন এসে দেখা করেছিলেন। কিছুক্ষণ অবস্থান করে কথাবার্তা বলে চলে গেছেন। একসঙ্গে পাশাপাশি বেড থাকার কারণে এখানে তিনজন বসে আড্ডায় মেতে ওঠা, খোশগল্প করা খুবই সহজসাধ্য। কিন্তু তিনজনকে আলাদা স্থানে না রাখলে এটা রোধ করা সম্ভব নয়।
ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এর আগে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি থেকে শাজাহান খানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রায় নিয়মিত তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকছেন। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর কারাগারে। আবার হাসপাতাল। সবশেষ জুলাই থেকে বিএমইউ হাসপাতালে আছেন। সেখানে থেকে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং করছেন।
অভিযোগ ওঠে, আত্মীয়স্বজন পরিচয়ে শ্রমিক লীগের ভাড়া করা খুনিরা শাজাহান খানের সঙ্গে দেখা করছে এবং সরকারবিরোধী তৎপরতাসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করছে তার ভাই শিবু খানের ছেলে জয় খান। গত ১৬ এপ্রিল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ওঠানোর সময় শাজাহান খান বলেন, ‘মন খারাপ নেই, বাইরের থেকে ভেতরেই ভালো আছি।
খায়রুল হককে গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তার নামে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার এবং জেল সুপার একেএম মাসুমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর পরও সাড়া মেলেনি। এছাড়া বিএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আবু নোমানের সঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করা হয়, তবে সাড়া মেলেনি।