ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : চলতি মাসের শুরুতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দেশটির সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, সাধারণ মানুষ এবং এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এমন লাখ লাখ ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘বিশাল কর ছাড়ের’ ঘোষণা আসছে।
দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় দিল্লির লাল কেল্লা থেকে সাধারণ মানুষ এবং সমর্থকদের সামনে একটি সমাবেশও করেছিলেন মোদি।
যেখান থেকে ছোট দোকান মালিক এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দোকানের বাইরে ‘স্বদেশী’ বা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ বোর্ড লাগানোরও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
মোদি বলেছিলেন, ‘আমাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত-হতাশা থেকে নয়, বরং গর্ব থেকে।
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমাদের অসুবিধাগুলো নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, অবশ্যই সামনে এগোতে হবে এবং কেউ যেন আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
এরপর থেকে গেল সপ্তাহে কমপক্ষে দু’টি জনসভায় এই মন্তব্যগুলো পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।
মোদির এই অবস্থানকে অনেকেই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবেই দেখছেন।
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন মার্কিন শুল্ক। ভারত থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করবে, সেসব পণ্যের উপর এই শুল্ক দিতে হবে। এর ফলে দেশটির রপ্তানি নির্ভর শিল্পের লাখ লাখ জীবিকা ব্যাহত হবে, যারা আমেরিকান গ্রাহকদের পোশাক থেকে শুরু করে হীরা এবং চিংড়ি পর্যন্ত সবকিছু সরবরাহ করে।
এমন পরিস্থিতিতে, দেশবাসীর প্রতি মোদির বার্তাও স্পষ্ট-‘ভারতে তৈরি করুন এবং ভারতে ব্যয় করুন।
যার প্রথমটি ইতোমধ্যে বেশ কঠিন বলেই প্রমাণিত হয়েছে। ভারতে বছরের পর বছর সরকারি ভর্তুকি এবং উৎপাদন প্রণোদনা চালু করার পরও দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১৫ শতাংশের আশপাশেই স্থবির হয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধাক্কা সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের জন্য কিছুটা সহায়ক হতে পারে, যদি দীর্ঘমেয়াদী কর সংস্কারকে উৎসাহিত করা সম্ভব হয়, যা অবিলম্বে জনগণের হাতে আরও বেশি অর্থ পৌঁছে দেবে।
আর তাই, এই বছরের শুরুতে বাজেটে ১২ বিলিয়ন ডলারের আয়কর ছাড় ঘোষণা করার পর, এখন ভারতের পরোক্ষ কর কাঠামোর একটি সংস্কারের (পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) হ্রাস এবং সরলীকরণ) লক্ষ্যে কাজ করছে মোদি সরকার।
কর ছাড়ের ফলে ভোক্তা নির্ভর খাতগুলোর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন- স্কুটার, ছোট গাড়ি, পোশাক এবং সিমেন্টের মতো পণ্য।
সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও, বেশিরভাগ বিশ্লেষক ধারণা করছেন, কম জিএসটির কারণে যে রাজস্ব ক্ষতি হবে তা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজেটের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দ্বারা পূরণ করা হবে।
সুইস বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএসের মতে, জিএসটি কমানোর এই সিদ্ধান্তটি মোদির আগের নেয়া, কর্পোরেট এবং আয়কর কমানোর তুলনায় বড় প্রভাব ফেলবে, কারণ এগুলো ‘ক্রয়ের সময় সরাসরি ভোগকে প্রভাবিত করে’।
মোদির কর ছাড়পত্র ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক সুদের হার আরও কমানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা গত কয়েক মাসে এক শতাংশ হারে কমানো হয়েছে। এছাড়া ঋণ প্রদানকে আরও উৎসাহিত করতে পারে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আগামী বছরের শুরুতে প্রায় পাঁচ লাখ সরকারি কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে, এটি ভারতের অর্থনীতিকে তার প্রবৃদ্ধির গতি ধরে রাখতে সাহায্য করবে, তারা বলছেন। ভারতের শেয়ার বাজারগুলো এই ঘোষণায় উল্লাস করেছে।
বাণিজ্য অনিশ্চয়তার কারণে সৃষ্ট আতঙ্ক সত্ত্বেও, এই মাসের শুরুতে, ভারত ১৮ বছর পর এস এন্ড পি গ্লোবাল থেকে একটি বিরল সার্বভৌম রেটিং আপগ্রেড পেয়েছে। কোনো সরকারকে ঋণ দেওয়া বা কোনো দেশে বিনিয়োগ করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এই বিষয়ে সার্বভৌম রেটিং পরিমাপ করে।
বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি সরকারের ঋণ গ্রহণের খরচ কমাতে পারে এবং দেশে, বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতি উন্নত করতে পারে।
অনেকদিন ধরে আটকে থাকা সংস্কারগুলো নিয়ে তাড়াহুড়ো করলেও, কয়েক বছর আগে দেখা ভারতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আট শতাংশের স্তর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে গেছে এবং বহিরাগত সংকটে এর ভাটা পড়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
দিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে বাগযুদ্ধ, বিশেষ করে রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি ক্রয় নিয়ে, কেবল তীব্রতর হয়েছে এবং এই সপ্তাহের শুরুতে শুরু হওয়া বাণিজ্য আলোচনাও বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বিশ্বের বৃহত্তম এবং দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো-এটি এমন একটি পরিস্থিতি যা মাত্র কয়েক মাস আগেও কল্পনা করা যেত না। সূত্র : বিবিসি বাংলা