কলাম লেখক: আবু মুসা মোহন : বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই জনগণের সেবা—এটা আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। পাঠ্যবইতে পড়েছি, নেতারা নাকি জনগণের দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য রাজনীতি করেন। টিভি টকশোতেও শোনা যায়, রাজনীতি হচ্ছে জনগণের কল্যাণের একমাত্র হাতিয়ার।
কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন কথা বলে। রাজনীতি শুরু হয় মানুষের নামে, শেষ হয় কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থে। জনগণের উন্নয়নের কথা থাকে মঞ্চে, ব্যানারে আর নির্বাচনী ইশতেহারে; অথচ নির্বাচনের পর দেখা যায়—নতুন বিল্ডিং, নতুন গাড়ি, নতুন ব্যবসা, আর নেতাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নতুন শূন্যের (০) সংযোজন।
ভোটের সময় নেতারা আসেন সাধারণ মানুষের কুঁড়েঘরে। গরিবের খালি পাতিলে হাত দিয়ে ছবি তোলেন, ধুলায় মাখামাখি হয়ে শিশুদের কোলে নেন। তখন তারা বলেন—“আমি আপনাদের সন্তান।” ভোট শেষ হলে সেই সন্তানকে আর চিনতে পাওয়া যায় না। তখন তিনি জনগণের সন্তান নন, বরং জনগণের মাথার উপর অভিভাবক!
আজকের বাস্তবতায় দেখা যায়, রাজনীতি যেন এক ধরনের ব্যবসা। যেখানে বিনিয়োগ হয় ভোটে, আর মুনাফা তোলা হয় ক্ষমতায় গিয়ে। জনগণ সেখানে কেবল সিঁড়ি, যাদের পিঠ বেয়ে নেতারা ওপরে ওঠেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তখন রাজনৈতিক বক্তৃতার উপকরণ মাত্র।
রাজনীতি যদি সত্যিই মানুষের জন্য হতো, তবে গ্রামে-গঞ্জে এখনো রাস্তা ভেঙে যাওয়া থাকত না, হাসপাতালে গরিব রোগী ওষুধের জন্য কাঁদত না, শিক্ষিত যুবকেরা বেকারত্বে হতাশ হয়ে বসে থাকত না। বাস্তবে মানুষের উন্নয়ন হয় না, হয় কেবল নেতাদের ভাগ্য উন্নয়ন।
সচেতন মহল তাই ব্যঙ্গ করে বলছেন—আমাদের দেশে রাজনীতি আসলে “জনসেবা” নয়, বরং “নিজস্বেবা।” জনগণের নামে রাজনীতি হয়, কিন্তু জনগণের জন্য রাজনীতি হয় না।
তাহলে এখন প্রশ্ন—রাজনীতি কি সত্যিই জনগণের ভাগ্য বদলাচ্ছে, নাকি শুধু নেতাদের মোবাইল নম্বর, গাড়ির নম্বর আর ব্যাংক নম্বর বদলাচ্ছে?