উত্তর কোরিয়ায় অস্ত্র পাঠানোয় চীনা নাগরিককে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  উত্তর কোরিয়ায় অবৈধভাবে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাচারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত এক চীনা নাগরিককে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, অভিযুক্ত ৪২ বছর বয়সী শেংহুয়া ওয়েন উত্তর কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চোরাইপথে এসব সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন এবং এর বিনিময়ে পেয়েছিলেন প্রায় ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

 

ওয়েন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অন্টারিও শহরের বাসিন্দা এবং তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আটক রয়েছেন। চলতি বছরের জুনে তিনি ‘আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন’ লঙ্ঘন ও ‘বিদেশি সরকারের বেআইনি এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ স্বীকার করেন।

বিচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন ওয়েন। কিন্তু ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করে যান। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগেই তিনি চীনে উত্তর কোরিয়ার একটি দূতাবাসে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখান থেকেই তাকে অস্ত্র সংগ্রহ ও পাচারের কাজে যুক্ত করা হয়।

 

২০২২ সালে উত্তর কোরিয়ার দুই কর্মকর্তা ওয়েনের সঙ্গে অনলাইন মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম পাচারের পরিকল্পনা শুরু করেন। ২০২৩ সালে ওয়েন অন্তত তিনটি কন্টেইনার চীনের উদ্দেশে পাঠান, যার চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল উত্তর কোরিয়া। কন্টেইনারে ভুয়া তথ্য দিয়ে চালান করা হয়—যেমন, একটিতে ফ্রিজ উল্লেখ থাকলেও সেটি ছিল অস্ত্রভর্তি।

 

তদন্তে উঠে আসে, ওয়েন টেক্সাসের হিউস্টনে উত্তর কোরিয়ার অর্থায়নে একটি অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনা করতেন। সেখান থেকে কেনা অস্ত্র নিজেই গাড়িতে করে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিয়ে যান এবং পরে সেগুলো চোরাপথে পাঠান। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রায় ৬০ হাজার রাউন্ড ৯ মিমি গুলি কিনেছিলেন, যা উত্তর কোরিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল।

 

এছাড়াও ওয়েন রাসায়নিক হুমকি শনাক্তকরণ যন্ত্র এবং হ্যান্ডহেল্ড ব্রডব্যান্ড রিসিভারের মতো সংবেদনশীল প্রযুক্তিও সংগ্রহ করেছিলেন, যা উত্তর কোরিয়ার কাছে পাচার করা হয়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ওয়েন পুরোপুরি জানতেন তার কর্মকাণ্ড বেআইনি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিধিনিষেধ অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ায় যেকোনো ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে আলাদা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

 

তবে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়া বিভিন্ন মাধ্যমে এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করে আসছে।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে প্যানেল ঘোষণা উমামার

» ইসলামের পক্ষের লোকরাই সামনের নির্বাচনে ক্ষমতায় যাবে: চরমোনাই পীর

» নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই: আসিফ মাহমুদ

» মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে আটকে থাকবে না বাংলাদেশ: আসিফ নজরুল

» বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষণা হলো ইসলামপুরে ৪ ইউনিয়ন

» বড়াইগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও জনসভা

» আগৈলঝাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বৃক্ষরোপণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রা

» প্রাইম ব্যাংক ও বাংলামার্ক মোটরটেক-এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

» ইসলামপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপযাপন

» ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা অ্যাপে মিলবে মেটলাইফের বিমা সুবিধা

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

উত্তর কোরিয়ায় অস্ত্র পাঠানোয় চীনা নাগরিককে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক :  উত্তর কোরিয়ায় অবৈধভাবে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাচারের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত এক চীনা নাগরিককে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, অভিযুক্ত ৪২ বছর বয়সী শেংহুয়া ওয়েন উত্তর কোরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চোরাইপথে এসব সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন এবং এর বিনিময়ে পেয়েছিলেন প্রায় ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

 

ওয়েন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অন্টারিও শহরের বাসিন্দা এবং তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে আটক রয়েছেন। চলতি বছরের জুনে তিনি ‘আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন’ লঙ্ঘন ও ‘বিদেশি সরকারের বেআইনি এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ স্বীকার করেন।

বিচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন ওয়েন। কিন্তু ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করে যান। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগেই তিনি চীনে উত্তর কোরিয়ার একটি দূতাবাসে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেখান থেকেই তাকে অস্ত্র সংগ্রহ ও পাচারের কাজে যুক্ত করা হয়।

 

২০২২ সালে উত্তর কোরিয়ার দুই কর্মকর্তা ওয়েনের সঙ্গে অনলাইন মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম পাচারের পরিকল্পনা শুরু করেন। ২০২৩ সালে ওয়েন অন্তত তিনটি কন্টেইনার চীনের উদ্দেশে পাঠান, যার চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল উত্তর কোরিয়া। কন্টেইনারে ভুয়া তথ্য দিয়ে চালান করা হয়—যেমন, একটিতে ফ্রিজ উল্লেখ থাকলেও সেটি ছিল অস্ত্রভর্তি।

 

তদন্তে উঠে আসে, ওয়েন টেক্সাসের হিউস্টনে উত্তর কোরিয়ার অর্থায়নে একটি অস্ত্র ব্যবসা পরিচালনা করতেন। সেখান থেকে কেনা অস্ত্র নিজেই গাড়িতে করে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিয়ে যান এবং পরে সেগুলো চোরাপথে পাঠান। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি প্রায় ৬০ হাজার রাউন্ড ৯ মিমি গুলি কিনেছিলেন, যা উত্তর কোরিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল।

 

এছাড়াও ওয়েন রাসায়নিক হুমকি শনাক্তকরণ যন্ত্র এবং হ্যান্ডহেল্ড ব্রডব্যান্ড রিসিভারের মতো সংবেদনশীল প্রযুক্তিও সংগ্রহ করেছিলেন, যা উত্তর কোরিয়ার কাছে পাচার করা হয়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, ওয়েন পুরোপুরি জানতেন তার কর্মকাণ্ড বেআইনি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিধিনিষেধ অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ায় যেকোনো ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে আলাদা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

 

তবে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর কোরিয়া বিভিন্ন মাধ্যমে এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করে আসছে।  সূত্র: বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com