নবদম্পতি

মহিউল ইসলাম মিঠু : একটা বিরাট মাংস কাটার দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লামিয়া। মেয়েটা যা করতে চাচ্ছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছিল রাফসান। তাকে একটা পাটাতনের উপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। নড়া-চড়া করার চেষ্টা করছে প্রাণপণ, কিন্তু এক চুলও নড়তে পারছে না। শ্বাস দ্রুত হয়ে উঠেছে, আর নড়াচড়া করতে না পাড়ার অক্ষম ক্ষোভে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে।
রাফসান স্পষ্ট বুঝতে পারছে, এখনই চকচক করতে থাকা মাংস কাটার অস্ত্র তার গলা বরাবর নেমে আসবে। মাথাটাকে ধর থেকে আলাদা করে ফেলবে। এই সুন্দর মেয়েটার কাছ থেকে এরকম কিছু পাবে কোনোদিন ভাবতেও পারেনি। অথচ আজ সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কিছু করবার নেই রাফসানের। প্রচণ্ড আফসোস, অবিশ্বাস, আর হতাশায় ভেতরটা মুচড়ে উঠছে। কিন্তু অনুভূতিগুলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারল না। কারণ, লামিয়ার হাতের চকচকে মাংস কাটার দাটা সাঁই করে নেমে এল রাফসানের গলা বরাবর।

ঝট করে ঘুম ভেঙে গেল রাফসানের। দরদর করে ঘামছে। এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল ব্যাপারটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বিরক্তি ভর করল নিজের উপর। এসব কি স্বপ্ন দেখল সে!

লামিয়া ওর পাশেই শুয়ে আছে। মুখটা ওপাশে ফেরানো। কাত হয়ে হালকা কুঁকড়ে আছে। ঠাণ্ডা লাগছে বোধহয়। মায়ের বাড়ি থেকে আনা নকশিকাঁথাটা সরে গেছে গায়ের উপর থেকে। ঘরের ভেতর জ্বলতে থাকা ডিম লাইটের মৃদু আলোয় দেখল লামিয়ার চুলগুলো ঘুমের ঘোরে আলুথালু হয়ে ঢেকে দিয়েছে ফর্সা আদুরে মুখটা।

আরো পড়ুন : ‘রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’ গ্রন্থ প্রসঙ্গে

মেয়েটার দিকে তাকালেই আজকাল মন ভালো হয়ে যাচ্ছে রাফসানের। মাত্র সাতাশ দিন আগে বিয়ে করা নতুন বউয়ের গায়ে কাঁথাটা টেনে দিয়ে ঘাম মুছে আবার শুয়ে পড়ল রাফসান। শুতে শুতে ঘুমিয়েও পড়ল।

এদিকে রাফসান ঘুমাতেই চোখ খুলে গেল লামিয়ার। চোখে শ্বাপদের দৃষ্টি। তড়াক দিয়ে উঠে বসল মেয়েটা। জামার বোতাম গলা পর্যন্ত উঠে গেছে। শ্বাপদ দৃষ্টিটা যন্ত্রের মতো স্বামীর দিকে ফেরাল লামিয়া। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে রাফসান।

লাস্যময়ী আর দৃঢ় শরীরে একটা মৃদু ঢেউ তুলে রাফসানের দিকে এগিয়ে গেল মেয়েটা। তারপর হাত দিয়ে পাঁচ আঙুলে চেপে ধরল রাফসানের মাথাটা। সাথে সাথে মড়াৎ একটা শব্দ করে ঘুরিয়ে দিল উলটো দিকে।

বন্ধ চোখ দুটো খুলে গেছে রাফসানের। প্রাণহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে। দেখলে চিত হয়ে আছে ভেবে ভুল হয়, কিন্তু তা নয়, ধরটা আগের মতই উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।

উপুড় হয়ে থাকা ধরটার পিঠে মেয়েলি সোহাগে হাত একটু হাত বুলিয়ে দিল লামিয়া। তারপর আবার আগের মতো উলটো দিকে কাত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করল। ঘুমিয়ে পড়ল শান্তিতে। নিয়মিত আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করল।

কয়েক বছর পর ফাঁসি হয়ে গেল লামিয়ার।  সূূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ তুলে ধরলেন মাহফুজ আলম

» মাহফুজ-আসিফকে সরকার থেকে সরে যেতে বললেন এনসিপি নেত্রী

» শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শন করলেন ৩ উপদেষ্টা

» পলিটেকনিক খুললেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা

» সন্তান পেটে ৮-৯ মাস খুব কষ্ট পেতে হয়েছে: দীপিকা

» ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে জালিমরা বারবার ফিরে আসবে: জামায়াত আমির

» মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্যক্তির মৃত্যু

» খালাস চেয়ে জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের রায় ২৭ মে

» চাহালের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আইটেম গানে নাচলেন ধনশ্রী

» বাড়ির পাশে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : dhakacrimenewsbd@gmail.com

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

নবদম্পতি

মহিউল ইসলাম মিঠু : একটা বিরাট মাংস কাটার দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লামিয়া। মেয়েটা যা করতে চাচ্ছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছিল রাফসান। তাকে একটা পাটাতনের উপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। নড়া-চড়া করার চেষ্টা করছে প্রাণপণ, কিন্তু এক চুলও নড়তে পারছে না। শ্বাস দ্রুত হয়ে উঠেছে, আর নড়াচড়া করতে না পাড়ার অক্ষম ক্ষোভে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে।
রাফসান স্পষ্ট বুঝতে পারছে, এখনই চকচক করতে থাকা মাংস কাটার অস্ত্র তার গলা বরাবর নেমে আসবে। মাথাটাকে ধর থেকে আলাদা করে ফেলবে। এই সুন্দর মেয়েটার কাছ থেকে এরকম কিছু পাবে কোনোদিন ভাবতেও পারেনি। অথচ আজ সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কিছু করবার নেই রাফসানের। প্রচণ্ড আফসোস, অবিশ্বাস, আর হতাশায় ভেতরটা মুচড়ে উঠছে। কিন্তু অনুভূতিগুলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারল না। কারণ, লামিয়ার হাতের চকচকে মাংস কাটার দাটা সাঁই করে নেমে এল রাফসানের গলা বরাবর।

ঝট করে ঘুম ভেঙে গেল রাফসানের। দরদর করে ঘামছে। এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল ব্যাপারটা বোঝার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড বিরক্তি ভর করল নিজের উপর। এসব কি স্বপ্ন দেখল সে!

লামিয়া ওর পাশেই শুয়ে আছে। মুখটা ওপাশে ফেরানো। কাত হয়ে হালকা কুঁকড়ে আছে। ঠাণ্ডা লাগছে বোধহয়। মায়ের বাড়ি থেকে আনা নকশিকাঁথাটা সরে গেছে গায়ের উপর থেকে। ঘরের ভেতর জ্বলতে থাকা ডিম লাইটের মৃদু আলোয় দেখল লামিয়ার চুলগুলো ঘুমের ঘোরে আলুথালু হয়ে ঢেকে দিয়েছে ফর্সা আদুরে মুখটা।

আরো পড়ুন : ‘রাখাইন সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ’ গ্রন্থ প্রসঙ্গে

মেয়েটার দিকে তাকালেই আজকাল মন ভালো হয়ে যাচ্ছে রাফসানের। মাত্র সাতাশ দিন আগে বিয়ে করা নতুন বউয়ের গায়ে কাঁথাটা টেনে দিয়ে ঘাম মুছে আবার শুয়ে পড়ল রাফসান। শুতে শুতে ঘুমিয়েও পড়ল।

এদিকে রাফসান ঘুমাতেই চোখ খুলে গেল লামিয়ার। চোখে শ্বাপদের দৃষ্টি। তড়াক দিয়ে উঠে বসল মেয়েটা। জামার বোতাম গলা পর্যন্ত উঠে গেছে। শ্বাপদ দৃষ্টিটা যন্ত্রের মতো স্বামীর দিকে ফেরাল লামিয়া। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে রাফসান।

লাস্যময়ী আর দৃঢ় শরীরে একটা মৃদু ঢেউ তুলে রাফসানের দিকে এগিয়ে গেল মেয়েটা। তারপর হাত দিয়ে পাঁচ আঙুলে চেপে ধরল রাফসানের মাথাটা। সাথে সাথে মড়াৎ একটা শব্দ করে ঘুরিয়ে দিল উলটো দিকে।

বন্ধ চোখ দুটো খুলে গেছে রাফসানের। প্রাণহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে। দেখলে চিত হয়ে আছে ভেবে ভুল হয়, কিন্তু তা নয়, ধরটা আগের মতই উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।

উপুড় হয়ে থাকা ধরটার পিঠে মেয়েলি সোহাগে হাত একটু হাত বুলিয়ে দিল লামিয়া। তারপর আবার আগের মতো উলটো দিকে কাত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করল। ঘুমিয়ে পড়ল শান্তিতে। নিয়মিত আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করল।

কয়েক বছর পর ফাঁসি হয়ে গেল লামিয়ার।  সূূএ:ডেইলি বাংলাদেশ ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : dhakacrimenewsbd@gmail.com

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com