ছবি সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর মৌচাক এলাকায় প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। পুলিশ বলছে, গাড়িটির আশপাশের প্রায় ৩২ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। ফুটেজে দেখা যায়নি কেউ গাড়িতে প্রবেশ করেছে বা বের হয়েছে—এমন কোনো দৃশ্যও নেই। ফলে কীভাবে এবং কখন তাদের মৃত্যু হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে এখন তারা ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। ওই দুই যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ঢামেকে গিয়ে নিহত দুইজন—মিজানুর রহমান ও জাকির হোসেনের মরদেহ শনাক্ত করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। শনাক্ত করতে এসে নিহত জাকিরের বাবা আবু তাহের অভিযোগ করেন, এ ঘটনার সঙ্গে একটি ট্রাভেল এজেন্সি জড়িত থাকতে পারে।
আবু তাহের বলেন, তার ছেলে জাকির পল্টনের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য ২৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তাকে বিদেশে পাঠানোর নামে শ্রীলঙ্কা থেকে ঘুরিয়ে আনেন এবং ছয় মাস ধরে ঘুরাতে থাকেন। এরপর যখন জাকির বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইতেন, তখন তারা বিভিন্ন সময় তাকে হুমকি দিতেন।
তিনি আরও বলেন, টাকা ফেরত চাইলে কয়েকজন মিরাজ, বজলু, ইমন, রাশেদ ও ফরহাদ নামে লোকজন আমার ছেলেকে মারধর করে। সর্বশেষ রোববার ট্রাভেল এজেন্সিটি জাকিরকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। সেই টাকা নিতে সে ঢাকায় এসেছিল। কিন্তু পরদিনই তার এবং তার বন্ধুর মরদেহ গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হলো। আমি বিশ্বাস করি, ওই ট্রাভেল এজেন্সিই পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার সকাল ৫টা ৩২ মিনিটে একটি হাসপাতাল থেকে রোগী নিতে আসে গাড়িটি। সঙ্গে ছিলেন গাড়ির মালিক জোবায়ের আহমেদ সৌরভ। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন জাকির। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু মিজান।
গাড়ি পার্ক করে জাকির নিচের বেজমেন্টে যান। গাড়ির মালিক ও মিজান কিছুক্ষণ হাসপাতালে থাকেন। রিসিপশনে গিয়ে কথা বলেন। এরপর গাড়ির মালিক হাসপাতাল ত্যাগ করেন, আর মিজান যান গাড়ির কাছে।
সিসিটিভি ফুটেজে এরপর আর কিছু অসংলগ্ন বা অস্বাভাবিক কিছু দেখা যায়নি। ফুটেজে দেখা যায়নি কেউ গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করছে বা বের হচ্ছে। ফলে মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য।
পুলিশের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, নিহতরা ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে নিতে এসেছিলেন। সেই রোগীর নাম জোবায়ের, যিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা। তার বাবা হুমায়ুন কবির জানান, তার ছেলের অপারেশন হয়েছিল হাসপাতালে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের এলাকার মনির নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, যেন হাসপাতালে ছাড়পত্র দিলে আমাদের চাটখিল নিয়ে যায়। পরে ছাড়পত্র না পেয়ে তাকে নিষেধ করি। কিন্তু এরই মধ্যে ওই গাড়িটি হাসপাতালে চলে আসে। আমরা তখনো জানতাম না তারা আসছে। ওদের সঙ্গে আমাদের কোনো কথা হয়নি। পরে খবর পাই, তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে নিহত মিজানুর রহমান সম্পর্কে তার মামা জাহেদ আহমেদ বলেন, মিজানুর মাছের খামার করতেন। তার কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
জাহেদ আরও জানান, ড্রাইভিং শেখার সময় মিজানুরের সঙ্গে জাকিরের বন্ধুত্ব হয়। জাকির প্রাইভেটকার চালাতেন, প্রায়ই মিজানকে সঙ্গে নিতেন। গত শনিবার রাতে তারা গ্রামের এক আত্মীয়—যিনি মালিকের স্ত্রীর ভাইকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি ওই রাতে বিদেশ চলে যান।
পরদিন তারা একটি রোগীকে দেখতে হাসপাতাল যান। এরপর কী ঘটেছে, কেউ জানে না। জাহেদ জানান, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, আমরা ৩২ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেছি। সেখানে কোনো অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। গাড়ির সামনে বা ভেতর কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এসির বিষক্রিয়া, না কি অন্য কোনো কারণে মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পেলে বলা যাবে।
জাকিরের বাবার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি একটি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমরা সবগুলো দিক মাথায় রেখে তদন্ত করছি। পুলিশ এখন মরদেহের ফরেনসিক রিপোর্ট এবং ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগসহ সম্ভাব্য সব তথ্য যাচাই করে দেখছে। সূএ: ঢাকা মেইল ডটকম