সংগৃহীত ছবি
ধর্ম ডেস্ক :ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে সাধারণভাবে ফ্ল্যাট বা সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া এবং সেই বন্ধকি সম্পত্তি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। ইসলামিক স্কলাররা এটিকে সুদি লেনদেনের শামিল বলে সতর্ক করেছেন।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে সমস্যা
১. বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে ঋণ দিয়ে ফ্ল্যাট বন্ধক রাখা
২. সেই ফ্ল্যাট ব্যবহার করা বা ভাড়া দেওয়া
৩. ঋণের টাকার উপর অতিরিক্ত সুদ আদায়ের শর্ত করা
ইসলামিক স্কলারদের মতে, এ সবই সুদি লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি নামমাত্র ভাড়ার ছুতায় বন্ধকী সম্পত্তি ব্যবহার করাও জায়েজ নয়। এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে এসে বলেছিলেন, একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছেন এবং সে ঘোড়ায় আরোহণ করছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তখন বলেছিলেন- ‘তুমি উক্ত ঘোড়ার উপর যে পরিমাণ আরোহণ করেছ তা সুদ হয়েছে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ১৫০৭১)
ইমাম কাসানি (রহ.) বলেন, ‘বন্ধকি সম্পত্তি থেকে উপকার লাভ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ’ (বাদায়েউস সানায়ে: ৫/২১২) ইমাম তাহতাবি (রহ.) উল্লেখ করেন, ‘এটি সুদেরই একটি রূপ’ (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাদ্দুর ৪/২৩৬)। ইমাম ইবনে আবিদিন (রহ.) সতর্ক করেন, ‘এমনকি বন্ধকদাতার অনুমতি থাকলেও না।’ (রদ্দুল মুহতার: ৬/৪৮২)
শরয়ি সমাধান
তবে, এর কিছু শরয়ি সমাধান রয়েছে। ইসলামিক স্কলাররা তিনটি বৈধ পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।
১. বাইয়ে বিল ওয়াফা পদ্ধতি
প্রথমে ফ্ল্যাট বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। পরে আলাদা অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ থাকবে যে ঋণ পরিশোধের পর ফ্ল্যাট ফেরত দেওয়া হবে। দুই চুক্তি একসাথে বা শর্তসাপেক্ষে করা যাবে না। এ পদ্ধতিতে বন্ধক গ্রহীতা ফ্ল্যাট ব্যবহার করতে পারবেন।
২. মুজারাআ পদ্ধতি
এর পদ্ধতি হচ্ছে, বন্ধকি চুক্তি করার পর পরবর্তী মজলিসে বন্ধকগ্রহীতা বলবে, তুমি জমিটা আবাদ করার জন্য আমাকে দাও এতে যা শস্য আসবে তার অর্ধেক বা এক-চতুর্থাংশ আপনাকে দিব বাকিটা আমার। এক্ষেত্রেও শর্ত হচ্ছে মুজারাবার চুক্তিটা আলাদা চুক্তি হতে হবে এবং পূর্বের চুক্তির সাথে শর্তযুক্ত না হতে হবে।
৩. ইজারা/লিজ পদ্ধতি (সবচেয়ে উত্তম)
ফ্ল্যাট মালিকের প্রয়োজনীয় টাকা নির্ধারণ করতে হবে (যেমন ১ লক্ষ টাকা)। বার্ষিক ভাড়া নির্ধারণ করে মোট ভাড়া হিসাব করতে হবে (যেমন বার্ষিক ৫,০০০ টাকায় ২০ বছরের ভাড়া)।
দুটি শর্ত স্মরণ রাখতে হবে
ক. আগেই টাকা ফেরত দিলে অব্যবহৃত ভাড়া ফেরত দিতে হবে
খ. ভাড়া বাজারমূল্যের কাছাকাছি হতে হবে
বিশেষ সতর্কতা
প্রচলিত বন্ধক চুক্তি থাকলে তা প্রথমে বাতিল করতে হবে এবং নতুন চুক্তি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে করতে হবে। নামমাত্র ভাড়া শরিয়তসম্মত নয়। হানাফি মাজহাবমতে, নামমাত্র ভাড়ার লেনদেন ‘হিলা’ (ছলনা) হিসেবে গণ্য হয়। বাদায়েউস সানায়ে (৫/২১২)-এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে- ‘ঋণের বিনিময়ে যেকোনো সুবিধা সুদের শামিল।
সূত্র: ১. আহকামুল কুরআন লিল জাসাস: ১/৫৩১; রদ্দুল মুহতার; ১০/৮২; শরহুল মাজাল্লাহ; ২/১৮২); ফতোয়ায়ে উসমানি: ৩/৪২২)
সর্বশেষ পরামর্শ
যেকোনো লেনদেনে ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ নিন। চুক্তি সম্পাদনের সময় স্বচ্ছতা বজায় রাখুন। শরিয়তসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।