এছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছিল জেলার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোনো কোনো স্কুলের শ্রেণিকক্ষেও পানি ঢুকেছে। এ কারণে লালমনিরহাট সদরের ৬টি ও আদিতমারীর ৬টি স্কুলে পাঠদান বন্ধ ছিল।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লিটন দাস বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। রবিবার পাঠদান যথারীতি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামে তিস্তার তীরে বসে কূলভাঙার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলেন কৃষক আকবর আলী (৬৫)। তার চোখে-মুখে পৈতৃক একখণ্ড জমি হারানোর শঙ্কা। তিস্তা নদীর পানিও কমছে, ভাঙনও বাড়ছে। বালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক মনছুর আলী বলেন, ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে আজ নিঃস্ব আমি।
তিস্তাপাড়ের অলিমা খাতুন (৪৫) আহাজারি করে বলেন, ‘হামাক বাঁচান ব্যাহে, হামার শোগ শ্যাষ। সব নদীত ভাঙিয়া গেইছে ব্যাহে। হামাক বাঁচান। হামরা কই যাম কী খামো, শোগ নদী ভাঙি নিয়া যাবার লাগছে।
তিস্তাপাড়ের অপর এক ভুক্তভোগী তসর উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘নদীর মাঝখানে আমার বাড়ি ছিল। বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে আজ যেখানে বাড়ি দেখতেছেন তার পাশ পর্যন্ত ভাঙন আসছে। আমার বাড়িটা যেকোনো সময় ভাঙতে পারে। নদীর কিনারত (কাছাকাছি) আসছে ভাঙন। সরকার শুধু হামাক বুঝ দেয়।’
তিস্তাপাড়ের আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা রিলিপ-টিলিপ কিছু চাই না বাহে, বালুর বাঁধ থাকি শুরু করি নদীর পাশে যদি বস্তা দিত তাহলে আর নদী ভাঙত না।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীতে এরকম প্রায় ২৫টি এলাকায় কমবেশি ভাঙন দেখা দিযেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ভাঙন প্রতিরোধে কিছু কিছু জায়গায় কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হবে।’
জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।