হঠাৎ বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

হঠাৎ করে গরমের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। ঢাকার আশপাশের জেলাতেও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি রোগী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি’) মহাখালী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রোগীদের সিংহভাগই বয়সে তরুণ। তারা তীব্র পানিশূন্যতা সহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালটিতে আসছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলের পর চলতি মাসে এত রোগী দেখছেন তারা।

চিকিৎসকরা বলছেন, চলমান তাপদাহের কারণে আমাদের শরীরে পানির চাহিদা বেড়েছে। তৃষ্ণা মেটাতে খোলা জায়গায় শরবত ও আখের রস পান করছেন অনেকেই। নোংরা পরিবেশে তৈরি করা এসব পানীয়তে ব্যবহার হচ্ছে দূষিত পানি।

এসব পান করার ফলে তরুণদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রোগী বাড়ায় আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালের বাইরে বসানো হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। এম্বুলেন্স, সিএনজি করে একের পর এক রোগী আসছেন। কাউকে স্ট্রেচারে করে এনে হাসপাতালে বিছানায় শোয়ানো হচ্ছে। কেউ বাইরে অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এবার রোগী সামলাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন ৫৭৫ জন রোগী। বুধবার এক হাজার ২৩৩ জন ও তার আগের দিন মঙ্গলবার এক হাজার ২৭২ জন রোগী ভর্তি হন। মার্চের শুরু থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ থাকলেও মধ্য মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গত ১৬শে মার্চ এক হাজার ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। ২০শে মার্চ এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ২১৬ জন। ১৬ থেকে ২৪শে মার্চ দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আইসিডিডিআর,বি’র সহযোগী গবেষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়ারিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। গরম বাড়ার কারণে খোলা জায়গার বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত খাচ্ছেন পথচারীরা। এই কারণে ডায়রিয়ার বিস্তারটা এবার ব্যাপক। তিনি বলেন, মার্চের শুরু থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৪শে মার্চ থেকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী আসছেন। গত কয়েক বছরে এত রোগী আমরা দেখিনি। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় তরুণ রোগী বেশি পাচ্ছি। তরুণ রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা হয়তো বাইরের খাবার বেশি খাচ্ছেন। খোলা জায়গার বা মুক্ত পরিবেশের খাবার খাচ্ছেন। এ কারণে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার অনেক বেশি মাত্রায় রোগী পাচ্ছি। রোগীরা মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। তারা সঠিক সময়ে যদি না আসতেন তাহলে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতো। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের বিকল্প নাই। সবচেয়ে ভালো করে তৈরি করা খাবার ও ফুটানো পানি খেতে হবে। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। কোন এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন- এমন প্রশ্নে ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, ঢাকার সব জায়গা থেকে রোগী আসছেন। তবে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, উত্তরখান, মানিকনগর, জুরাইন, মুগদা  এসব এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন। আর ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা থেকে প্রচুর রোগী আসছেন। আসলে যেসব জেলা থেকে ঢাকার সড়ক পথে দূরত্ব কম সে সব জেলা থেকে রোগী বেশি আসছেন।   সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» আশুলিয়ায় বিএনপির জনসভা শুরু

» যারা নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করছে, তারা স্বৈরাচারের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন

» জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা এগোচ্ছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে

» অতিরিক্ত সিম বন্ধ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত, ১ আগস্ট থেকে প্রক্রিয়া শুরু

» ৫ আগস্ট ঘিরে নিরাপত্তা হুমকি নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» আরও একজনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র, আশঙ্কাজনক ৩

» তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদ মেটাতে কমিটি হচ্ছে : ধর্ম উপদেষ্টা

» শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছে বাংলাদেশ

» ঝালমুড়ি বিক্রেতার এক মাসে বিদ্যুৎ বিল ১১ লাখ টাকা

» পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শহীদ মিনার থেকে সরিয়ে নেওয়ায় ছাত্রদলকে ধন্যবাদ জানান সারজিস

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

হঠাৎ বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

হঠাৎ করে গরমের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। ঢাকার আশপাশের জেলাতেও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি রোগী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি’) মহাখালী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রোগীদের সিংহভাগই বয়সে তরুণ। তারা তীব্র পানিশূন্যতা সহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালটিতে আসছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলের পর চলতি মাসে এত রোগী দেখছেন তারা।

চিকিৎসকরা বলছেন, চলমান তাপদাহের কারণে আমাদের শরীরে পানির চাহিদা বেড়েছে। তৃষ্ণা মেটাতে খোলা জায়গায় শরবত ও আখের রস পান করছেন অনেকেই। নোংরা পরিবেশে তৈরি করা এসব পানীয়তে ব্যবহার হচ্ছে দূষিত পানি।

এসব পান করার ফলে তরুণদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। রোগী বাড়ায় আইসিডিডিআর,বি’ হাসপাতালের বাইরে বসানো হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। এম্বুলেন্স, সিএনজি করে একের পর এক রোগী আসছেন। কাউকে স্ট্রেচারে করে এনে হাসপাতালে বিছানায় শোয়ানো হচ্ছে। কেউ বাইরে অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এবার রোগী সামলাতে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন ৫৭৫ জন রোগী। বুধবার এক হাজার ২৩৩ জন ও তার আগের দিন মঙ্গলবার এক হাজার ২৭২ জন রোগী ভর্তি হন। মার্চের শুরু থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ থাকলেও মধ্য মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। গত ১৬শে মার্চ এক হাজার ৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। ২০শে মার্চ এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ২১৬ জন। ১৬ থেকে ২৪শে মার্চ দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আইসিডিডিআর,বি’র সহযোগী গবেষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়ারিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। গরম বাড়ার কারণে খোলা জায়গার বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত খাচ্ছেন পথচারীরা। এই কারণে ডায়রিয়ার বিস্তারটা এবার ব্যাপক। তিনি বলেন, মার্চের শুরু থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৪শে মার্চ থেকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী আসছেন। গত কয়েক বছরে এত রোগী আমরা দেখিনি। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় তরুণ রোগী বেশি পাচ্ছি। তরুণ রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা হয়তো বাইরের খাবার বেশি খাচ্ছেন। খোলা জায়গার বা মুক্ত পরিবেশের খাবার খাচ্ছেন। এ কারণে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার অনেক বেশি মাত্রায় রোগী পাচ্ছি। রোগীরা মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। তারা সঠিক সময়ে যদি না আসতেন তাহলে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতো। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের বিকল্প নাই। সবচেয়ে ভালো করে তৈরি করা খাবার ও ফুটানো পানি খেতে হবে। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। কোন এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন- এমন প্রশ্নে ডা. লুবাবা শাহরিন বলেন, ঢাকার সব জায়গা থেকে রোগী আসছেন। তবে যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, উত্তরখান, মানিকনগর, জুরাইন, মুগদা  এসব এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছেন। আর ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা থেকে প্রচুর রোগী আসছেন। আসলে যেসব জেলা থেকে ঢাকার সড়ক পথে দূরত্ব কম সে সব জেলা থেকে রোগী বেশি আসছেন।   সূএ: মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com