বুকে ব্যথা নিয়ে কিছু কথা

সংগৃহীত ছবি

 

ডা. এম শমশের আলী  :বুকের খাঁচার মাংসপেশিতে প্রদাহ বা অন্য সমস্যায় বুকের ব্যথা হতে পারে। কারও কারও পিত্তথলির প্রদাহের জন্য বুকে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। অনেকের মেরুদণ্ডে সমস্যার কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। বুকের ব্যথার হাজারো কারণ থাকতে পারে; সুতরাং এককথায় বুকের ব্যথার কারণ বলাটা খুবই দুষ্কর

 

পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে যদি কারও বুকে ব্যথা দেখা দেয়, তবে বেশির ভাগ লোকজন সর্বপ্রথম গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের ব্যথা মনে করে তার প্রতিকার নেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। গ্যাসের ওষুধ সেবন করে অনেকেই সুস্থতা বোধ করেন। যার ফলে এটা তার মনে করাই স্বাভাবিক, এ ধরনের ব্যথা গ্যাসের জন্যই হয়ে থাকে। অনেক সময় এসব ব্যথার পিছনে কত রকম জটিলতা বা অসুখ-বিসুখ লুকিয়ে থাকে তা অনেকেই অনুধাবন করতে পারেন না। কারণ গ্যাসের ওষুধ খেয়ে দ্রুত সমাধান পেয়ে আর কোনো চিন্তাভাবনা থাকে না অনেকের। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যথা হতে পারে ভবিষ্যৎ কোনো জটিলতার উপসর্গ। বাংলাদেশে যত ধরনের ওষুধ বিক্রি হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ওষুধ হলো গ্যাসের ওষুধ। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো গ্যাসের ওষুধের কোনোরূপ তাৎক্ষণিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা কোনো ধরনের তাৎক্ষণিক জটিলতা হতে দেখা যায় না। এসব বিবেচনা করে ফার্মেসিম্যানরা নিঃসংকোচে গ্যাসের ওষুধ প্রদান করে থাকেন। তাহলে বুকের ব্যথা কেন হয়? বুকে ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ থাকে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় বুকের ব্যথা হতে পারে, শ্বাসনালি, ফুসফুসের অনেক অসুস্থতায় এবং হাঁপানিতে বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের পাঁজরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হলে বুকের ব্যথা হতে পারে। বুকের হাড়, মাংসপেশি ও জয়েন্টে অসুস্থতায়, বুক নড়াচড়া করলে, বড় নিঃশ্বাস নিলে বা কাশি দিলে ব্যথা বৃদ্ধি পাবে। বুকের খাঁচার মাংসপেশিতে প্রদাহ বা অন্য সমস্যায় বুকের ব্যথা হতে পারে। কারও কারও পিত্তপাথর ও পিত্তথলির প্রদাহের জন্য বুকে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। অনেকের মেরুদণ্ডে সমস্যার কারণে বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। বুকের ব্যথার হাজারো কারণ থাকতে পারে; সুতরাং এককথায় বুকের ব্যথার কারণ বলাটা খুবই দুষ্কর। অনেকে আমাকে এবং হয়তো অন্য চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তার বুকে ব্যথা হচ্ছে, কী কারণে হতে পারে এবং তিনি কী চিকিৎসা নেবেন? কখনো সরাসরি আবার কখনো টেলিফোনের মাধ্যমে জানতে চান, প্রায় সময়ই আমরা তার সদুত্তর দিতে পারি না। এখন হয়তো অনেকেই জানতে চাইবেন, তবে কী বুকের ব্যথা হলেই আমরা চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাব। উত্তর হবে, কারও যদি বুকে ব্যথা হয় তবে ব্যথার ধরন ও তীব্রতা কেমন, তা পর্যবেক্ষণ করুন। সেই অনুযায়ী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তবে এটাও ঠিক বুকের কোনো ব্যথাকেই অবহেলা করা ঠিক নয়। সাধারণ ব্যথা হলে প্রথমে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন দিনে দুই থেকে তিনবার, তার সঙ্গে গ্যাসের ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন দিনে দুই থেকে তিনবার। যদি এক-দুই দিনের মধ্যে ব্যথা নিরাময় না হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি কারও বুকব্যথার সঙ্গে কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেবেন। কারও কারও বুকে খুব অল্প সময়ের জন্য চিনচিন করে ব্যথা হয় বা চিমটি কাটা বা খোঁচা লাগার মতো ব্যথা হয় এবং তা দুই থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়, তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ অবস্থা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মানুষ সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠায় থাকে হার্টের অসুস্থতার জন্য, মানে বুকব্যথা হার্টের অসুস্থতার জন্য হচ্ছে কি না। আগেই বলেছি, হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ হয় বুকব্যথার মাধ্যমে। হার্টের মাংসপেশি এবং তার বহিঃআবরণের প্রদাহের ফলে লাগাতার বুকের ব্যথা হতে পারে এবং তার সঙ্গে অনেককেই জ¦রে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হার্টের ভাল্বের সমস্যা, হার্ট ফেলুর ইত্যাদি কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে, তবে এসব ব্যথা অবিরতভাবে হয় এবং ব্যথার তীব্রতা ওঠানামা না করে সব সময় প্রায় একই রকম থাকে। বুকব্যথার সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলো হার্ট ব্লকের কারণে হওয়া বুকব্যথা। বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হলো হার্টের অসুস্থতা, যার প্রায় পুরোটাই হার্ট ব্লক এবং হার্ট ব্লকের কারণে সৃষ্ট জটিলতা। প্রাথমিক অবস্থায় হার্ট ব্লকের কারণে মাঝেমধ্যে বুকে ব্যথা হয় তা বুকের মাঝখানে, বাম পাশে অথবা ডান পাশে যে কোনো অংশে দেখা দিতে পারে, তার সঙ্গে কারও কারও এক বা দুই বাহু বা হাত, ঘাড়, পেটের উপরিভাগ গলা, চোয়াল এবং পিঠ এসব যে কোনো অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। এ ধরনের সব ব্যথাই হার্ট ব্লকের কারণে হয়ে থাকে। আগেই বলেছি, এসব ব্যথা মাঝেমধ্যে দেখা দেয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনা-আপনি নিরাময় হয়ে যায় কোনো ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ ছাড়াই। যদি এ ধরনের অবস্থা প্রায়ই মানে ঘনঘন হতে থাকে এ ব্যথার তীব্রতা এবং পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে বুঝতে হবে যে হার্ট ব্লকের আকার এবং সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সময় ব্যথা পুরোপুরিভাবে নিরাময় হতে আগের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। হার্ট ব্লকের ব্যথা সাধারণত পরিশ্রমকালীন হতে দেখা যায় এবং ব্যক্তি যদি পরিশ্রমের মাত্রা কমিয়ে দেন বা বিশ্রাম গ্রহণ করেন তবে কিছু সময়ের মধ্যেই ব্যথা নিরাময় হয়ে ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যান। ব্যথার এসব ধরন এবং আচার-আচরণ দেখে মানুষ খুব সহজেই হার্ট ব্লকের ব্যথাকে শনাক্ত করতে পারবে। হার্ট ব্লকের ব্যথা হলে হার্ট স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হয়ে সুচিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক সময়ই বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।

ওপরে উল্লিখিত ব্যথার ধরনের সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, বুকে অত্যধিক চাপের জন্য দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়, বমি বমি ভাব বা বমি হয়-তবে এসবকে অবশ্যই হার্ট অ্যাটাক বলে ধরে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে, বিশেষ করে যেসব হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা হয়ে থাকে। ওই সময় গাফিলতির জন্য রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই বুকে ব্যাথা নিয়ে অবহেলা করা ঠিক নয়। এসব বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ

» ৩ দিন বন্ধ থাকার পর ভোলার ১০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

» সিরাজগঞ্জে বিএনপির উদ্যোগে শহীদ রঞ্জু স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন

» ২০ শতাংশ শুল্ক সরকারের আরেকটি সফলতা : আসিফ নজরুল

» কোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প

» গুলশানে চাঁদাবাজি, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

» সুলতানগঞ্জ নদীবন্দর নিয়ে কোনো টানাপড়েন হবে না : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

» জুলাই গণঅভ্যুত্থান উদযাপনে ঢাকায় বাইসাইকেল শোভাযাত্রা

» আটক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন

» বাংলাদেশের শুল্ক আলোচক দলকে অভিনন্দন উপ-প্রেস সচিবের

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বুকে ব্যথা নিয়ে কিছু কথা

সংগৃহীত ছবি

 

ডা. এম শমশের আলী  :বুকের খাঁচার মাংসপেশিতে প্রদাহ বা অন্য সমস্যায় বুকের ব্যথা হতে পারে। কারও কারও পিত্তথলির প্রদাহের জন্য বুকে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। অনেকের মেরুদণ্ডে সমস্যার কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। বুকের ব্যথার হাজারো কারণ থাকতে পারে; সুতরাং এককথায় বুকের ব্যথার কারণ বলাটা খুবই দুষ্কর

 

পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে যদি কারও বুকে ব্যথা দেখা দেয়, তবে বেশির ভাগ লোকজন সর্বপ্রথম গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাসের ব্যথা মনে করে তার প্রতিকার নেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। গ্যাসের ওষুধ সেবন করে অনেকেই সুস্থতা বোধ করেন। যার ফলে এটা তার মনে করাই স্বাভাবিক, এ ধরনের ব্যথা গ্যাসের জন্যই হয়ে থাকে। অনেক সময় এসব ব্যথার পিছনে কত রকম জটিলতা বা অসুখ-বিসুখ লুকিয়ে থাকে তা অনেকেই অনুধাবন করতে পারেন না। কারণ গ্যাসের ওষুধ খেয়ে দ্রুত সমাধান পেয়ে আর কোনো চিন্তাভাবনা থাকে না অনেকের। অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যথা হতে পারে ভবিষ্যৎ কোনো জটিলতার উপসর্গ। বাংলাদেশে যত ধরনের ওষুধ বিক্রি হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত ওষুধ হলো গ্যাসের ওষুধ। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো গ্যাসের ওষুধের কোনোরূপ তাৎক্ষণিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা কোনো ধরনের তাৎক্ষণিক জটিলতা হতে দেখা যায় না। এসব বিবেচনা করে ফার্মেসিম্যানরা নিঃসংকোচে গ্যাসের ওষুধ প্রদান করে থাকেন। তাহলে বুকের ব্যথা কেন হয়? বুকে ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ থাকে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় বুকের ব্যথা হতে পারে, শ্বাসনালি, ফুসফুসের অনেক অসুস্থতায় এবং হাঁপানিতে বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের পাঁজরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হলে বুকের ব্যথা হতে পারে। বুকের হাড়, মাংসপেশি ও জয়েন্টে অসুস্থতায়, বুক নড়াচড়া করলে, বড় নিঃশ্বাস নিলে বা কাশি দিলে ব্যথা বৃদ্ধি পাবে। বুকের খাঁচার মাংসপেশিতে প্রদাহ বা অন্য সমস্যায় বুকের ব্যথা হতে পারে। কারও কারও পিত্তপাথর ও পিত্তথলির প্রদাহের জন্য বুকে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। অনেকের মেরুদণ্ডে সমস্যার কারণে বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। বুকের ব্যথার হাজারো কারণ থাকতে পারে; সুতরাং এককথায় বুকের ব্যথার কারণ বলাটা খুবই দুষ্কর। অনেকে আমাকে এবং হয়তো অন্য চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তার বুকে ব্যথা হচ্ছে, কী কারণে হতে পারে এবং তিনি কী চিকিৎসা নেবেন? কখনো সরাসরি আবার কখনো টেলিফোনের মাধ্যমে জানতে চান, প্রায় সময়ই আমরা তার সদুত্তর দিতে পারি না। এখন হয়তো অনেকেই জানতে চাইবেন, তবে কী বুকের ব্যথা হলেই আমরা চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাব। উত্তর হবে, কারও যদি বুকে ব্যথা হয় তবে ব্যথার ধরন ও তীব্রতা কেমন, তা পর্যবেক্ষণ করুন। সেই অনুযায়ী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তবে এটাও ঠিক বুকের কোনো ব্যথাকেই অবহেলা করা ঠিক নয়। সাধারণ ব্যথা হলে প্রথমে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন দিনে দুই থেকে তিনবার, তার সঙ্গে গ্যাসের ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন দিনে দুই থেকে তিনবার। যদি এক-দুই দিনের মধ্যে ব্যথা নিরাময় না হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি কারও বুকব্যথার সঙ্গে কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেবেন। কারও কারও বুকে খুব অল্প সময়ের জন্য চিনচিন করে ব্যথা হয় বা চিমটি কাটা বা খোঁচা লাগার মতো ব্যথা হয় এবং তা দুই থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়, তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এ অবস্থা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মানুষ সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠায় থাকে হার্টের অসুস্থতার জন্য, মানে বুকব্যথা হার্টের অসুস্থতার জন্য হচ্ছে কি না। আগেই বলেছি, হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ হয় বুকব্যথার মাধ্যমে। হার্টের মাংসপেশি এবং তার বহিঃআবরণের প্রদাহের ফলে লাগাতার বুকের ব্যথা হতে পারে এবং তার সঙ্গে অনেককেই জ¦রে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হার্টের ভাল্বের সমস্যা, হার্ট ফেলুর ইত্যাদি কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে, তবে এসব ব্যথা অবিরতভাবে হয় এবং ব্যথার তীব্রতা ওঠানামা না করে সব সময় প্রায় একই রকম থাকে। বুকব্যথার সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলো হার্ট ব্লকের কারণে হওয়া বুকব্যথা। বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হলো হার্টের অসুস্থতা, যার প্রায় পুরোটাই হার্ট ব্লক এবং হার্ট ব্লকের কারণে সৃষ্ট জটিলতা। প্রাথমিক অবস্থায় হার্ট ব্লকের কারণে মাঝেমধ্যে বুকে ব্যথা হয় তা বুকের মাঝখানে, বাম পাশে অথবা ডান পাশে যে কোনো অংশে দেখা দিতে পারে, তার সঙ্গে কারও কারও এক বা দুই বাহু বা হাত, ঘাড়, পেটের উপরিভাগ গলা, চোয়াল এবং পিঠ এসব যে কোনো অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। এ ধরনের সব ব্যথাই হার্ট ব্লকের কারণে হয়ে থাকে। আগেই বলেছি, এসব ব্যথা মাঝেমধ্যে দেখা দেয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনা-আপনি নিরাময় হয়ে যায় কোনো ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ ছাড়াই। যদি এ ধরনের অবস্থা প্রায়ই মানে ঘনঘন হতে থাকে এ ব্যথার তীব্রতা এবং পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে বুঝতে হবে যে হার্ট ব্লকের আকার এবং সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সময় ব্যথা পুরোপুরিভাবে নিরাময় হতে আগের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। হার্ট ব্লকের ব্যথা সাধারণত পরিশ্রমকালীন হতে দেখা যায় এবং ব্যক্তি যদি পরিশ্রমের মাত্রা কমিয়ে দেন বা বিশ্রাম গ্রহণ করেন তবে কিছু সময়ের মধ্যেই ব্যথা নিরাময় হয়ে ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যান। ব্যথার এসব ধরন এবং আচার-আচরণ দেখে মানুষ খুব সহজেই হার্ট ব্লকের ব্যথাকে শনাক্ত করতে পারবে। হার্ট ব্লকের ব্যথা হলে হার্ট স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হয়ে সুচিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক সময়ই বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।

ওপরে উল্লিখিত ব্যথার ধরনের সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, বুকে অত্যধিক চাপের জন্য দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়, বমি বমি ভাব বা বমি হয়-তবে এসবকে অবশ্যই হার্ট অ্যাটাক বলে ধরে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে, বিশেষ করে যেসব হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা হয়ে থাকে। ওই সময় গাফিলতির জন্য রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই বুকে ব্যাথা নিয়ে অবহেলা করা ঠিক নয়। এসব বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com