সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তী সরকার সংকটে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও টিভি উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, গত এক বছরে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে যেমন সংস্কারের কথা বলেছে, অন্যদিকে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, জাতীয় ঐক্য কমিশনের উদ্যোগ, প্রশাসনিক সংস্কারের ইঙ্গিত সব শোনা গেলেও বাস্তব অগ্রগতি ছিল সীমিত। এই সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ যেমন এসেছে নানা দলের দিক থেকে তেমনি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অংশ নিরাপত্তা বাহিনী, আমলাতন্ত্র এবং বিচার বিভাগ থেকেও এসেছে স্পষ্ট বার্তা।
সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে সেটি পুরনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার মতো হবে। আবার নির্বাচন না দিলে সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এই দ্বৈত সংকটে পড়েছে সরকার।
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই কোনো সাধারণ সময় ছিল না। ছাত্রসমাজ, পেশাজীবী, সাধারণ নাগরিক এমনকি রাষ্ট্রের একাংশ সবাই এক অদৃশ্য সংবেদনশীলতার বাঁধনে এক হয়ে গিয়েছিল। শেখ হাসিনার দীর্ঘকালীন শাসনের নিচে জমে থাকা ক্ষোভ, দুর্নীতি, বিচারহীনতা, নিপীড়ন এবং গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়েছিল সবকিছু। এই ভাঙনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছিল।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ এবং অস্থায়ী শাসন ব্যবস্থা গঠনের যে আশা দেখানো হয়েছিল তা প্রথমদিকে জনগণের একাংশের মধ্যে আশা সঞ্চার করেছিল। সেই আশার বাস্তব রূপ কেমন ছিল তা নিয়ে আজ অনেক প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম একটা অঙ্গীকার ছিল আইনের শাসন নিশ্চিত করা। কিন্তু এই ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি নেই। বিচার বিভাগের সংস্কার, পুলিশ বাহিনীর জবাবদিহিতা, আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা সবই এখনো কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ।
রাজপথে এখনো মবলিঞ্চিং চলছে। দুর্বল মানুষের নিরাপত্তা নেই। প্রাক্তন আমলাদের ওপর গণবিচার চালানো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতা যদি প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে ক্ষমতার পালাবদল বড়জোড় একটা ইভেন্ট হিসেবেই পরিচিত হবে, আন্দোলন নয়।’
জিল্লুর রহমান আরো বলেন, ‘আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক জটিলতাও আছে এই প্রেক্ষিতে। বাংলাদেশের অভ্যুত্থান এবং ক্ষমতার পরিবর্তন নিয়ে ভারত, চীন, আমেরিকা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে লক্ষ্য করেছে। প্রথমদিকে অনেকেই অপেক্ষায় ছিল এ সরকার কতটা টিকবে! এখন এক বছর পর তারা প্রশ্ন করছে, এ সরকার কী চায়? ভারতের পক্ষ থেকে কিছুটা অস্বস্তির বার্তা এসেছে। বিশেষত ট্রানজিট ইস্যু, সীমান্তে রোহিঙ্গা ও বাঙালি মুসলিমদের পুশব্যাক এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো ঘিরে। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোও তাদের কূটনৈতিক ভাষায় নির্বাচনের পূর্বশর্ত আর সংস্কারের গতি নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছে।’