সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। তিনজনই প্রায় সমবয়সী। একসঙ্গে স্কুলে যেতো, একসঙ্গে খেলতো। গত সোমবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিদিনের মতো ওইদিনও তারা একসঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল। বাসায়ও ফেরার কথা ছিল একসঙ্গে। কিন্তু একটি বিমান দুর্ঘটনায় তাদের জীবন প্রদীপ অকালে নিভে গেল। তারা এখন কবরে শুয়ে আছে পাশাপাশি।
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এ শিক্ষার্থীদের করুণ মৃত্যুতে স্বজন ও এলাকাবাসীও শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছে। ঘটনার দিন গত সোমবার স্কুল শেষে চলছিল কোচিংয়ের ক্লাস। ক্লাস শেষে তাদের ঘরে ফেরার কথা ছিল। ঘরে ফিরেছেও তারা, কিন্তু এবারের ফেরাটা সবাইকে কাঁদিয়ে। হাশিখুশি মুখগুলো নিথর দেহ হয়ে পৌঁছেছে স্বজনদের কাছে।
জানা যায়, তারা একই বংশের সদস্য। উত্তরার দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ এলাকায় এক সঙ্গেই বেড়ে উঠছিল, তাদের মৃত্যুও একই ঘটনায়।
মঙ্গলবার ওই এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেল শোকের আবহ। দুদিন আগেও যে আঙিনায় একসঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থাকতো এই শিশুরা সেখানেই আজ পাশাপাশি কবরে ঘুমিয়ে আছে তারা।
চোখের জলে পরিবারের কনিষ্ঠ তিন সদস্যকে বিদায় জানালেন স্বজনেরা। পুরো এলাকায় যেন শোকস্তব্ধ। অঝোরে কেঁদেছেন বন্ধু, সহপাঠী আর প্রতিবেশীরাও। তারা বলছেন, ‘এ বিদায় কষ্টের, এ বিদায় মেনে নেওয়ার মতো নয়।
মাইলস্টোন স্কুল থেকে কিছুটা দূরেই দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদ। যেখানে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন দশ বছরের শিশু আরিয়ান এবং নয় বছরের বাপ্পি ও হুমায়ের। সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা হলেও কাছাকাছি বয়স হওয়ায় তারা ছিল বন্ধু, সহপাঠী, খেলার সাথী।
সোমবারের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজনই। দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।
তারারটেক মসজিদের পাশেই পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। আলাদা তিনটি বাড়িতে থাকলেও তারা একই পরিবারের সদস্য, সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বাপ্পি ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু শাহিনের সন্তান এবং একই ক্লাসের হুমায়ের তার ভাইয়ের ছেলে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ১০ বছরের আরিয়ান শাহিনের চাচাতো ভাই।
সন্তানের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন শোকার্ত এই মানুষটি। পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন প্রতিবেশী আর স্বজনরা।
ঘটনার দিন সকালে প্রতিদিনের মতো একসাথেই স্কুলে গিয়েছিল এই তিনজন। বেলা ১১টায় স্কুল শেষে অংশ নিয়েছিল কোচিংয়ের ক্লাসে। বেলা দেড়টায় ক্লাস শেষ হওয়ার কথা ছিল।
ওইদিন জোহরের নামাজ শেষে বাপ্পিকে আনতে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন শাহিন। এক সঙ্গেই ফেরার কথা ছিল তার ভাই আরিয়ান ও ভাতিজা হুমায়েরও।
কিন্তু পথেই শুনতে পান বিকট আওয়াজ। কিছুটা এগোতেই ধোঁয়ার কুণ্ডুলী দেখে দৌড়ে পৌছান স্কুল প্রাঙ্গণে। ‘কিন্তু ততোক্ষণে সব শেষ’- বলছিলেন শাহিন।
তিনি বলেন, আমার ছেলে যে ক্লাসে পড়ে তার আগের ক্লাসটায় বিমানটা ঢুকছে। দেখে তখনি বুঝজি যে আমার ছেলে আর নাই।’
আহত হলেও দুর্ঘটনাস্থল থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল তার সন্তান বাপ্পি এবং ভাই আরিয়ান। তবে এর কিছুক্ষণ পরে মারা যায় হুমায়ের।
তিনি বলেন, গত (সোমবার) রাত তিনটা বাজে হাসপাতালে আমার ভাইটা মারা গেছে। আমার ছেলে বাপ্পি মারা গেছে সবার পরে।
দুর্ঘটনার সময় ক্লাসে না থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন আরিয়ানের সহপাঠী রাইয়ান আফনান। বন্ধুকে শেষ বিদায় জানাতে বাবার সঙ্গে জানাজায় অংশ নিয়েছিল সে। আফনান বলেন, ওই দিন আমিও স্কুলে ছিলাম। কিন্তু ওই সময় বাইরের লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম। আমি যখন মেইন গেট পার হয়েছি তখনই বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম।
মাইলস্টোন স্কুলের বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ওই এলাকায় আরও দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন পরিবারের সদস্যরা। হঠাৎ এমন ভয়াবহ ঘটনায় হতবাক এলাকার বাসিন্দারা।
ওই এলাকার বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, মাত্র একদিন আগে যে শিশুদের একসঙ্গে স্কুলে যেতে অথবা খেলে বেড়াতে দেখলাম, তারা আজ নেই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা