‘তোমার সাথে আর দেখা হবে না’: স্বামীকে বলে যাওয়া শেষ কথা শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরীর

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জীবন দিয়ে বহু শিক্ষার্থীকে রক্ষা করেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কো-অর্ডিনেটর মাহেরিন চৌধুরী। হৃদয়বিদারক এই ঘটনার বিস্তারিত জানালেন তার স্বামী।

 

মাহরিন চৌধুরী দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন। একসময় তিনি শিক্ষকতা থেকে প্রশাসনিক দায়িত্বে যোগ দেন এবং বর্তমানে যেই ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেই ভবনের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন তিনি।

 

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ এর মধ্যে, বিভিন্ন সেকশনের ভিত্তিতে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে। প্রতিদিনের মতোই শিক্ষকরা বাচ্চাদের প্যারেন্টদের কাছে হস্তান্তরের জন্য মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময়ই বিমানটি ক্র্যাশ ল্যান্ড করে ঠিক ওই প্রবেশমুখেই, যেখানে শিশুরা বাইরে আসছিল।

 

বিমানটি বিস্ফোরিত হয়ে স্কুল ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এতে কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেও মাহেরিন মিস সাহসিকতার পরিচয় দেন। কিছু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসেন তিনি। নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেও আবার ভিতরে ঢুকে পড়েন আরো শিশুদের বাঁচাতে।

 

তার স্বামী জানান, “আমি আইসিইউতে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাকে বললাম, তুমি কেন এমন করলা? সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার বাচ্চারা আমার চোখের সামনে পুড়তেছে, আমি কি করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি? আমি চেষ্টা করছি বাঁচাতে। কিছু বাচ্চা বের করছি। আবার গেছিলাম আরো বের করতে। তখনই আরেকটা ভয়ানক বিস্ফোরণ হইল, তারপর আর কিছু জানি না।”

 

তার শরীরের শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব পোড়া। শুধু চুল একটু ছিল এবং সামান্য কথা বলার শক্তি। স্বামী আরও জানান, “লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে সে আমাকে বলল ডান হাতটা শক্ত করে ধরো। আমি ধরলাম। সব পোড়া। বুকের মাঝখানে হাত রেখে বলল তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।”

 

ভেন্টিলেশনে নেওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পৃথিবী থেকে বিদায় নেন সাহসিনী এই শিক্ষক।

 

স্বামী কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “আমার দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে। মাহেরিন চলে গেল। আমি বললাম, তুমি তোমার বাচ্চাদের এতিম করে ফেললা? সে বলল ওরাও তো আমার বাচ্চা ছিল। আমি কী করতাম?”

 

এই আত্মত্যাগ শুধু একটি স্কুল নয়, গোটা জাতিকে কাঁদিয়েছে। মাহরিন চৌধুরীর সাহসিকতা ও ভালোবাসা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গণমাধ্যমকর্মীদের নীতিমালা জারি ভোটকক্ষ থেকে সরাসির সম্প্রচার করা যাবে না : ইসি

» নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির একক সিদ্ধান্ত চায় না এনসিপি

» জাতীয় স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

» আরও ১৩ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা

» সিসিটিভি ফুটেজে বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য, দিগ্বিদিক ছুটাছুটি শুরু করে মাঠে থাকা শিক্ষার্থীরা

» আরও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আনিসুল ও ইনু

» গতানুগতিক-লোক দেখানো তদন্ত আমরা চাই না: সারজিস আলম

» সন্তানদের বিষয়ে তথ্য গোপন করার ইচ্ছা নেই: আইএসপিআর পরিচালক

» শিক্ষিকা মাহেরীনের জীবন উৎসর্গেই বুঝা যায়, শেখ পরিবার আর জিয়া পরিবারের পার্থক্য : পিনাকী

» মাদক ও সন্ত্রাস দমনে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

‘তোমার সাথে আর দেখা হবে না’: স্বামীকে বলে যাওয়া শেষ কথা শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরীর

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জীবন দিয়ে বহু শিক্ষার্থীকে রক্ষা করেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কো-অর্ডিনেটর মাহেরিন চৌধুরী। হৃদয়বিদারক এই ঘটনার বিস্তারিত জানালেন তার স্বামী।

 

মাহরিন চৌধুরী দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন। একসময় তিনি শিক্ষকতা থেকে প্রশাসনিক দায়িত্বে যোগ দেন এবং বর্তমানে যেই ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, সেই ভবনের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন তিনি।

 

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ এর মধ্যে, বিভিন্ন সেকশনের ভিত্তিতে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে। প্রতিদিনের মতোই শিক্ষকরা বাচ্চাদের প্যারেন্টদের কাছে হস্তান্তরের জন্য মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময়ই বিমানটি ক্র্যাশ ল্যান্ড করে ঠিক ওই প্রবেশমুখেই, যেখানে শিশুরা বাইরে আসছিল।

 

বিমানটি বিস্ফোরিত হয়ে স্কুল ভবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এতে কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেও মাহেরিন মিস সাহসিকতার পরিচয় দেন। কিছু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসেন তিনি। নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেও আবার ভিতরে ঢুকে পড়েন আরো শিশুদের বাঁচাতে।

 

তার স্বামী জানান, “আমি আইসিইউতে তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাকে বললাম, তুমি কেন এমন করলা? সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার বাচ্চারা আমার চোখের সামনে পুড়তেছে, আমি কি করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি? আমি চেষ্টা করছি বাঁচাতে। কিছু বাচ্চা বের করছি। আবার গেছিলাম আরো বের করতে। তখনই আরেকটা ভয়ানক বিস্ফোরণ হইল, তারপর আর কিছু জানি না।”

 

তার শরীরের শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব পোড়া। শুধু চুল একটু ছিল এবং সামান্য কথা বলার শক্তি। স্বামী আরও জানান, “লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে সে আমাকে বলল ডান হাতটা শক্ত করে ধরো। আমি ধরলাম। সব পোড়া। বুকের মাঝখানে হাত রেখে বলল তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।”

 

ভেন্টিলেশনে নেওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পৃথিবী থেকে বিদায় নেন সাহসিনী এই শিক্ষক।

 

স্বামী কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “আমার দুইটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে। মাহেরিন চলে গেল। আমি বললাম, তুমি তোমার বাচ্চাদের এতিম করে ফেললা? সে বলল ওরাও তো আমার বাচ্চা ছিল। আমি কী করতাম?”

 

এই আত্মত্যাগ শুধু একটি স্কুল নয়, গোটা জাতিকে কাঁদিয়েছে। মাহরিন চৌধুরীর সাহসিকতা ও ভালোবাসা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com