রাজনীতিকে ‘অলাভজনক’ করাই হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার

সংগৃহীত ছবি

 

নূরে আলম সিদ্দিকী  : জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে চিরদিনের জন্য বদলে ফেলার একটি দুর্লভ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হওয়া দুটি তরুণ প্রজন্ম চরম অপমানজনকভাবে রুখে দিয়েছে বহুল সমালোচিত স্বৈরাচারী শাসনের অগ্রযাত্রাকে। এই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল তরুণ প্রজন্ম। তাদের এই অবিস্মরণীয় অর্জন আজ সমগ্র বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট ২০২৪ সালে বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নির্বাচিত করেছে।

 

সঠিক গণতন্ত্রের অভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে আছে কেবল ক্ষমতা ভোগ ও লুটপাট। অথচ রাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনকল্যাণ, কিন্তু তা আজ ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতিকে ‘অলাভজনক’ করে তোলা এবং সেই সঙ্গে মন্ত্রী, এমপিদের সব ধরনের অনৈতিক আর্থিক ফায়দা লাভের সুযোগ বন্ধ করাই হবে দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় সংস্কার।

রাজনীতিতে এ ধরনের আমূল পরিবর্তন আনার মাধ্যমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। তবে এই পরিবর্তন আনতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সময়, ধৈর্য, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, কার্যকর নীতিমালা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে এই লক্ষ্যে সুচিন্তিত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

বাংলাদেশে রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন, পদায়ন এবং সরকারি সুবিধাগুলোকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহারের প্রবণতা স্বাধীনতার পর থেকেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে। ফলে দুর্নীতি বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে সীমাহীনভাবে। রাজনীতিবিদদের অনেকে সরকারি প্রকল্প ও উন্নয়ন কার্যক্রমের আড়ালে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পন্থা খুঁজে পান।

 

যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অনৈতিক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হবে না, তখন দুর্নীতি করার প্রবণতাও কমবে। জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি রাজনীতিবিদদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। প্রশাসন হবে কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। রাজনীতিতে এই পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে প্রথমেই নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন  এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন। রাজনীতিবিদদের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
দলীয় তহবিল ও নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য স্বচ্ছ ও নির্ধারিত নিয়ম থাকা এবং সেগুলো যাতে কঠোরভাবে মেনে চলা হয়, তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অর্থের অপব্যবহার রোধ করতে দলগুলোর তহবিল পরিচালনা নিয়মিত নিরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে রাজনীতিবিদদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা সীমিত করা উচিত। সরকারি সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও তা কার্যকর করতে হবে। সর্বোপরি রাজনীতিতে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ও মনোযোগ বাড়াতে হবে। যখন জনগণ রাজনীতির প্রতি সচেতন হবে, তখন তারা সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের প্রত্যাখ্যান করবে।

 

এই প্রক্রিয়ার অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেসব রাজনীতিবিদ রাজনীতিকে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাঁরা কখনো এই পরিবর্তন মেনে নেবেন না। তাঁদের বিরোধিতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে তারই প্রতিফলন ঘটছে। তা ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলা সময়সাপেক্ষ। সর্বোপরি যেসব প্রতিষ্ঠান রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ছাড়া রাজনীতিকে অলাভজনক করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে সরকারি পদায়ন ও অনৈতিক সুবিধা বন্ধ করতে হবে।

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিজেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ব্যাপক সংস্কার এনে এই কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও কার্যকর দুর্নীতি দমন নিশ্চিত করতে হবে। বিচারব্যবস্থায় সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতিতে ও সমাজে নৈতিকতা এবং স্বচ্ছতার গুরুত্ব নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, যাতে তারা অনৈতিক কার্যকলাপ উদঘাটন করতে পারে। শিক্ষিত ও দক্ষ নেতাদের রাজনীতিতে উৎসাহিত করতে হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক পদে থাকা ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা এবং বিশেষাধিকার সীমিত করতে হবে। সরকারি প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাব এবং অবৈধ সুবিধা অর্জনের পথ বন্ধ করতে হবে।

 

নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রেকর্ড করতে হবে, যেন যেকোনো অনিয়ম চিহ্নিত করা যায়। ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

 

এসব পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারকে গ্রহণ করতে হবে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে। এসব কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নই রাজনীতিকে অলাভজনক ও জনকল্যাণমুখী করার পথে একটি মাইলফলক হতে পারে। আর রাজনীতিকে অলাভজনক করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক সংস্কার নয়, বরং একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেরও সূচনা। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।

লেখক : ব্যাংকার ও কলামিস্ট।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» একসঙ্গে খেলেন তিন শিশু, এখন কবরে পাশাপাশি

» বিমান বিধ্বস্তে নিহত শিক্ষিকা নিপুর দাফন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্পন্ন

» এক ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকা গণতন্ত্রের জন্য হুঁমকি: আখতার

» ‘তোমার সাথে আর দেখা হবে না’: স্বামীকে বলে যাওয়া শেষ কথা শিক্ষিকা মাহেরিন চৌধুরীর

» শোকের সময়ে পাশে বিএনপি, সরাসরি উদ্ধার তদারকিতে তারেক রহমান

» নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে নৌকা চালাতে পারে না, ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে ধান কাটতে পারে না

» আহতদের পাশে রাষ্ট্রকে আজীবন থাকতে হবে: রিজভী

» অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ঠেকাতে ব্যর্থ: হেফাজত

» ঘুষ নেওয়ার হাত অবশ করে দেওয়া হবে: জামায়াত আমির

» বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে: নাহিদ ইসলাম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রাজনীতিকে ‘অলাভজনক’ করাই হবে সবচেয়ে বড় সংস্কার

সংগৃহীত ছবি

 

নূরে আলম সিদ্দিকী  : জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে চিরদিনের জন্য বদলে ফেলার একটি দুর্লভ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হওয়া দুটি তরুণ প্রজন্ম চরম অপমানজনকভাবে রুখে দিয়েছে বহুল সমালোচিত স্বৈরাচারী শাসনের অগ্রযাত্রাকে। এই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল তরুণ প্রজন্ম। তাদের এই অবিস্মরণীয় অর্জন আজ সমগ্র বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট ২০২৪ সালে বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নির্বাচিত করেছে।

 

সঠিক গণতন্ত্রের অভাবে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে আছে কেবল ক্ষমতা ভোগ ও লুটপাট। অথচ রাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনকল্যাণ, কিন্তু তা আজ ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতিকে ‘অলাভজনক’ করে তোলা এবং সেই সঙ্গে মন্ত্রী, এমপিদের সব ধরনের অনৈতিক আর্থিক ফায়দা লাভের সুযোগ বন্ধ করাই হবে দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় সংস্কার।

রাজনীতিতে এ ধরনের আমূল পরিবর্তন আনার মাধ্যমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। তবে এই পরিবর্তন আনতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সময়, ধৈর্য, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, কার্যকর নীতিমালা এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে এই লক্ষ্যে সুচিন্তিত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

বাংলাদেশে রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন, পদায়ন এবং সরকারি সুবিধাগুলোকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহারের প্রবণতা স্বাধীনতার পর থেকেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়েছে। ফলে দুর্নীতি বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে সীমাহীনভাবে। রাজনীতিবিদদের অনেকে সরকারি প্রকল্প ও উন্নয়ন কার্যক্রমের আড়ালে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পন্থা খুঁজে পান।

 

যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অনৈতিক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হবে না, তখন দুর্নীতি করার প্রবণতাও কমবে। জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজের প্রতি রাজনীতিবিদদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। প্রশাসন হবে কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। রাজনীতিতে এই পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে প্রথমেই নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন  এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন। রাজনীতিবিদদের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
দলীয় তহবিল ও নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য স্বচ্ছ ও নির্ধারিত নিয়ম থাকা এবং সেগুলো যাতে কঠোরভাবে মেনে চলা হয়, তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অর্থের অপব্যবহার রোধ করতে দলগুলোর তহবিল পরিচালনা নিয়মিত নিরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে রাজনীতিবিদদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা সীমিত করা উচিত। সরকারি সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও তা কার্যকর করতে হবে। সর্বোপরি রাজনীতিতে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ও মনোযোগ বাড়াতে হবে। যখন জনগণ রাজনীতির প্রতি সচেতন হবে, তখন তারা সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের প্রত্যাখ্যান করবে।

 

এই প্রক্রিয়ার অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেসব রাজনীতিবিদ রাজনীতিকে ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাঁরা কখনো এই পরিবর্তন মেনে নেবেন না। তাঁদের বিরোধিতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে তারই প্রতিফলন ঘটছে। তা ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত নয়। তাদের শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলা সময়সাপেক্ষ। সর্বোপরি যেসব প্রতিষ্ঠান রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ছাড়া রাজনীতিকে অলাভজনক করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে সরকারি পদায়ন ও অনৈতিক সুবিধা বন্ধ করতে হবে।

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিজেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। ব্যাপক সংস্কার এনে এই কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও কার্যকর দুর্নীতি দমন নিশ্চিত করতে হবে। বিচারব্যবস্থায় সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতিতে ও সমাজে নৈতিকতা এবং স্বচ্ছতার গুরুত্ব নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, যাতে তারা অনৈতিক কার্যকলাপ উদঘাটন করতে পারে। শিক্ষিত ও দক্ষ নেতাদের রাজনীতিতে উৎসাহিত করতে হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক পদে থাকা ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা এবং বিশেষাধিকার সীমিত করতে হবে। সরকারি প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাব এবং অবৈধ সুবিধা অর্জনের পথ বন্ধ করতে হবে।

 

নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রেকর্ড করতে হবে, যেন যেকোনো অনিয়ম চিহ্নিত করা যায়। ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

 

এসব পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারকে গ্রহণ করতে হবে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে। এসব কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নই রাজনীতিকে অলাভজনক ও জনকল্যাণমুখী করার পথে একটি মাইলফলক হতে পারে। আর রাজনীতিকে অলাভজনক করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক সংস্কার নয়, বরং একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেরও সূচনা। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও জনগণের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।

লেখক : ব্যাংকার ও কলামিস্ট।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com