রমজানের আগেই তৎপর জাল নোটের কারবারিরা

রমজান আসার আগেই জাল নোটের কারবারিরা তৎপরতা শুরু করেছে। গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের কারণে ঈদ বাজারে টাকার ছড়াছড়ি কম ছিল। তাই তারা  তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। এজন্য এবারের ঈদকে ঘিরে বড় ধরনের পরিকল্পনা করে মাঠে নামছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে জাল নোট চক্রের একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। জব্দ করা হয়েছে কোটি টাকার জাল নোট। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা রমজান ও ঈদকে ঘিরে পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাল নোট চক্রের সদস্যরা রমজানের আগেই তৎপরতা শুরু করলেও তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

যেকোনো বড় উৎসবের আগে তাদের তৎপরতা বাড়ে। এ সময়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানও বেশি হয়। বিগত বছরগুলোতে জাল নোট তৈরির অনেক বড় বড় কারখানা অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছে তারা জামিনে বের হয়ে কি করছে সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া চক্রে এখন উচ্চ শিক্ষিতরা জড়াচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা নোট তৈরির নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করছে। অ্যাপ ব্যবহার করে নোট তৈরি করছে কেউ কেউ। বড় নোটের বিষয়ে মানুষ সতর্ক থাকে তাই তাদের ছোট নোট তৈরিতে আগ্রহ বাড়ছে।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ঢাকায় জাল নোট তৈরির কত চক্র কাজ করছে তার হিসাব নাই। তবে জাল নোট তৈরিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কারবারিরা যুক্ত হচ্ছে। অনেকেই কাজ শেখার জন্য যুক্ত হয় বড় কারবারিদের সঙ্গে। পরে কৌশল আয়ত্ত করে তারা নিজেই নোট তৈরির কারখানা খুলে বসে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অভিযানে চক্রের অনেক সদস্যকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়। জামিনে বের হয়ে পরে তারা আবার একই কাজ শুরু করে। গত দুই বছরে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অনেকেই এর আগেও জাল নোট তৈরি ও বিক্রির অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিল।

জাল নোট তৈরির চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন সদস্যরা জানিয়েছেন, জাল নোট তৈরি ও বিক্রি একটি লাভজনক ব্যবসা। কারখানায় ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতে যে খরচ হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভে সেগুলো এজেন্টদের কাছে বিক্রি করেন কারখানা মালিক। এজেন্টরা প্রতি লাখ ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যায়। তারপর তারাও কিছু লাভ রেখে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেয়। খুচরা বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে কাপড়ের বাজার থেকে শুরু করে মাছ বাজার, মাংস বাজার, পশুর হাট, সবজি বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কৌশলে ১/২ টি করে নোট টাকার বান্ডিলে ঢুকিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেপ্তারকৃতের নাম সালমা বেগম। ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মান্না দে জানান, জাল টাকার ওই ব্যবসায়ী রমনা থানার বড় মগবাজার এলাকার ভর্তা ভাত রেস্তরাঁর সামনে জাল নোট লেনদেন করছেন এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালায় স্মাগলিং অ্যান্ড ফেইক কারেন্সি টিম। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় সালমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট উদ্ধার করা হয়।

মগবাজারের ঘটনার একদিন আগে সোমবার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে জাল নোটসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। তার নাম মো. সেলিম ওরফে হানিফ। পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানার পশ্চিম রসুলপুর এলাকা হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে ৭ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট ও জালটাকা ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গত সপ্তাহে ডেমরা এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডেমরা থানা এলাকার সারুলিয়া টেংরার, ১২৯/৪-এ দেলোয়ার হোসেনের তিনতলা বাড়ির নিচতলায় পূর্ব পাশের রুম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকার জাল নোটের ২৪টি বান্ডিল পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুইটি ক্যানন প্রিন্টার, একটি ল্যাপটপ, একটি হাতুড়ি, একটি পেপার কাটার, একটি এন্টি কাটার, একটি স্ক্রিন প্রিন্ট মেশিন, ওয়ালপেপার, দুইটি স্প্রে পেইন্ট, সোনালি রঙের ঘোড়া ২০০ গ্রাম, দুটি কালো রঙের হ্যান্ড ব্যাগ, ২০টি ৫০ টাকার জাল নোটের প্রিন্টেড কাগজ, এ-ফোর সাইজের কাগজ ১০৪ পিস এবং ৫২ পিস পাতলা সাদা কাগজ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এসব জাল নোট তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো অ্যাপ। যে অ্যাপে নির্ধারিত টাকার সাইজ, ফরম্যাট, ছাপ সবকিছু ঠিক করা ছিল। পরে প্রিন্টারে বেরিয়ে আসতো নির্ধারিত টাকার নোট। বড় নোট জাল করে ধরা পড়ার আশঙ্কা বেশি, তাই চক্রটি শুধু ৫০ টাকার নোট জাল করতো। পুলিশ জানায়, চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত। এ অভিযোগে এর আগেও তারা গ্রেপ্তার হয়েছিল। আর সে সময় ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতো তারা। বড় নোটের বিষয়ে সবাই একটু যাচাই-বাছাই করে, সেজন্য আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ৫০ টাকার নোট তৈরি করে। রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে দেশের বাজারে ২ কোটি টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

পুলিশ জানায়, চলতি মাসে সারুলিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেয় তারা। ইন্টারনেট ব্যবসার কথা বলে বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোটের কারখানা খুলে বসে চক্রটি। এই জাল নোট চক্রের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ নাবিল হোসেন। সে পলাতক রয়েছে। মিরপুর, উত্তরা, লালবাগ, ডেমরা এলাকায় তাদের এজেন্ট রয়েছে। তারা মূলত রাতে জাল নোট তৈরি করতো। প্রতি রাতে দুই লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট তৈরি করতে পারতো। প্রতি লাখ জালটাকা তারা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো।

ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই চক্রের মূলহোতা নাবিলসহ আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছে। জাল নোট তৈরির জন্য তারা যে অ্যাপটি ব্যবহার করে আসছিল সেটির বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিকুলাম প্রণয়নের আহ্বান

» উপজেলা নির্বাচন : ৩ দিনের জন্য বন্ধ হচ্ছে বাইক চলাচল

» তীব্র দাবদাহ মোকাবিলায় দেশব্যপী বাংলালিংক-এর বিনামূল্যে পানি ও স্যালাইন বিতরণ

» শিগগিরই অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের বিধিমালা জারি – সংসদীয় কমিটিকে ভূমি মন্ত্রণালয়

» ক্র্যাব (CRAB) থেকে আবারও ব্র্যাক ব্যাংকের ‘এএএ’ ক্রেডিট রেটিং অর্জন

» নারীদের মধ্যে কেন বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি

» সোমবার থেকে শাহজালালে ৩ ঘণ্টা করে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ

» বরিশালে বাস চলাচল শুরু

» বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ভোটের অংশ: হানিফ

» চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে যা জানালেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী

উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রমজানের আগেই তৎপর জাল নোটের কারবারিরা

রমজান আসার আগেই জাল নোটের কারবারিরা তৎপরতা শুরু করেছে। গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের কারণে ঈদ বাজারে টাকার ছড়াছড়ি কম ছিল। তাই তারা  তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। এজন্য এবারের ঈদকে ঘিরে বড় ধরনের পরিকল্পনা করে মাঠে নামছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে জাল নোট চক্রের একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। জব্দ করা হয়েছে কোটি টাকার জাল নোট। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা রমজান ও ঈদকে ঘিরে পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাল নোট চক্রের সদস্যরা রমজানের আগেই তৎপরতা শুরু করলেও তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

যেকোনো বড় উৎসবের আগে তাদের তৎপরতা বাড়ে। এ সময়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানও বেশি হয়। বিগত বছরগুলোতে জাল নোট তৈরির অনেক বড় বড় কারখানা অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছে তারা জামিনে বের হয়ে কি করছে সেদিকে নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া চক্রে এখন উচ্চ শিক্ষিতরা জড়াচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা নোট তৈরির নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করছে। অ্যাপ ব্যবহার করে নোট তৈরি করছে কেউ কেউ। বড় নোটের বিষয়ে মানুষ সতর্ক থাকে তাই তাদের ছোট নোট তৈরিতে আগ্রহ বাড়ছে।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ঢাকায় জাল নোট তৈরির কত চক্র কাজ করছে তার হিসাব নাই। তবে জাল নোট তৈরিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কারবারিরা যুক্ত হচ্ছে। অনেকেই কাজ শেখার জন্য যুক্ত হয় বড় কারবারিদের সঙ্গে। পরে কৌশল আয়ত্ত করে তারা নিজেই নোট তৈরির কারখানা খুলে বসে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অভিযানে চক্রের অনেক সদস্যকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়। জামিনে বের হয়ে পরে তারা আবার একই কাজ শুরু করে। গত দুই বছরে যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অনেকেই এর আগেও জাল নোট তৈরি ও বিক্রির অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিল।

জাল নোট তৈরির চক্রের বিরুদ্ধে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন সদস্যরা জানিয়েছেন, জাল নোট তৈরি ও বিক্রি একটি লাভজনক ব্যবসা। কারখানায় ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতে যে খরচ হয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লাভে সেগুলো এজেন্টদের কাছে বিক্রি করেন কারখানা মালিক। এজেন্টরা প্রতি লাখ ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যায়। তারপর তারাও কিছু লাভ রেখে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেয়। খুচরা বিক্রেতারা সুযোগ বুঝে কাপড়ের বাজার থেকে শুরু করে মাছ বাজার, মাংস বাজার, পশুর হাট, সবজি বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কৌশলে ১/২ টি করে নোট টাকার বান্ডিলে ঢুকিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেপ্তারকৃতের নাম সালমা বেগম। ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মান্না দে জানান, জাল টাকার ওই ব্যবসায়ী রমনা থানার বড় মগবাজার এলাকার ভর্তা ভাত রেস্তরাঁর সামনে জাল নোট লেনদেন করছেন এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালায় স্মাগলিং অ্যান্ড ফেইক কারেন্সি টিম। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় সালমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট উদ্ধার করা হয়।

মগবাজারের ঘটনার একদিন আগে সোমবার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে জাল নোটসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ। তার নাম মো. সেলিম ওরফে হানিফ। পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানার পশ্চিম রসুলপুর এলাকা হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে ৭ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট ও জালটাকা ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গত সপ্তাহে ডেমরা এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডেমরা থানা এলাকার সারুলিয়া টেংরার, ১২৯/৪-এ দেলোয়ার হোসেনের তিনতলা বাড়ির নিচতলায় পূর্ব পাশের রুম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকার জাল নোটের ২৪টি বান্ডিল পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দুইটি ক্যানন প্রিন্টার, একটি ল্যাপটপ, একটি হাতুড়ি, একটি পেপার কাটার, একটি এন্টি কাটার, একটি স্ক্রিন প্রিন্ট মেশিন, ওয়ালপেপার, দুইটি স্প্রে পেইন্ট, সোনালি রঙের ঘোড়া ২০০ গ্রাম, দুটি কালো রঙের হ্যান্ড ব্যাগ, ২০টি ৫০ টাকার জাল নোটের প্রিন্টেড কাগজ, এ-ফোর সাইজের কাগজ ১০৪ পিস এবং ৫২ পিস পাতলা সাদা কাগজ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এসব জাল নোট তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো অ্যাপ। যে অ্যাপে নির্ধারিত টাকার সাইজ, ফরম্যাট, ছাপ সবকিছু ঠিক করা ছিল। পরে প্রিন্টারে বেরিয়ে আসতো নির্ধারিত টাকার নোট। বড় নোট জাল করে ধরা পড়ার আশঙ্কা বেশি, তাই চক্রটি শুধু ৫০ টাকার নোট জাল করতো। পুলিশ জানায়, চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে জাল নোট তৈরির সঙ্গে জড়িত। এ অভিযোগে এর আগেও তারা গ্রেপ্তার হয়েছিল। আর সে সময় ৫০০ ও ১০০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতো তারা। বড় নোটের বিষয়ে সবাই একটু যাচাই-বাছাই করে, সেজন্য আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ৫০ টাকার নোট তৈরি করে। রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে দেশের বাজারে ২ কোটি টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

পুলিশ জানায়, চলতি মাসে সারুলিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেয় তারা। ইন্টারনেট ব্যবসার কথা বলে বাসা ভাড়া নিয়ে জাল নোটের কারখানা খুলে বসে চক্রটি। এই জাল নোট চক্রের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ নাবিল হোসেন। সে পলাতক রয়েছে। মিরপুর, উত্তরা, লালবাগ, ডেমরা এলাকায় তাদের এজেন্ট রয়েছে। তারা মূলত রাতে জাল নোট তৈরি করতো। প্রতি রাতে দুই লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট তৈরি করতে পারতো। প্রতি লাখ জালটাকা তারা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো।

ডেমরা থানার ওসি খন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই চক্রের মূলহোতা নাবিলসহ আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছে। জাল নোট তৈরির জন্য তারা যে অ্যাপটি ব্যবহার করে আসছিল সেটির বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সূএ:মানবজমিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



উপদেষ্টা – মো: মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। (দপ্তর সম্পাদক)  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com