কাঁধ ব্যথার সঙ্গে কাঁধের সন্ধি জ্যামে চিকিৎসা

সংগৃহীত ছবি

 

অধ্যাপক ডা. মো.নজরুল ইসলাম :মানব দেহে ব্যথা-বেদনা এ যেনো এক অতিপরিচিত সমস্যা। তবে কিছু কিছু ব্যথা যেমন অস্বস্তিকর ও পীড়াদায়ক, তেমনি ভোগায় আজীবন। ঘাড় ও বাহুর সংযোগস্থলের ব্যথা তেমনই। এ ব্যথা ‘কাঁধের সন্ধি’ বা ‘সোল্ডার জয়েন্টের ব্যথা’ নামে পরিচিত। নানা কারণে এ জায়গায় ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন আঘাত, লিগামেন্ট ইনজুরি বা ছিঁড়ে যাওয়া, সংক্রমণ, টিউমার, হাড়ক্ষয় ইত্যাদি।

 

এছাড়া অন্য রোগের কারণে সৃষ্ট ব্যথাও মাঝেমধ্যে কাঁধে অনুভূত হয়। এর মধ্যে হৃদরোগের কারণে ব্যথা, ঘাড়ব্যথা অন্যতম। তবে সোল্ডার জয়েন্টের ব্যথার প্রধানতম কারণ হলো ফ্রোজেন সোল্ডার। এতে কাঁধব্যথার সঙ্গে কাঁধের সন্ধি জ্যাম হয়ে গিয়েছে বলে অনুভূত হয় বা কাঁধ নাড়াতে কষ্ট হয়। সময় মতো চিকিৎসা না নিলে কষ্ট আরও বাড়ে।

যে কারণে হয় : সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের ফ্রোজেন সোল্ডার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস রোগীদের এ সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও অপেক্ষাকৃত বেশি। এছাড়া স্থূলতা, অতিরিক্ত চর্বি বা হাইপারলিপিডেমিয়া, হৃদরোগ, স্ট্রোকের রোগীদের এ সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।

 

দীর্ঘদিন কোনো কারণে কাঁধ নড়াচড়া বন্ধ থাকলে বা আঘাতের কারণে এ ব্যথা হতে পারে। প্রথমে ব্যথা দিয়ে শুরু হলেও ক্রমে কাঁধের সন্ধির নড়াচড়া সীমিত হতে থাকে। সন্ধির ভেতরকার সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বা তরল পদার্থ কমে গেলে ওপরকার সাইনোভিয়াল ক্যাপসল বা আবরণ সংকুচিত হতে পারে। ক্রমে পেশিগুলো শক্ত হয়ে যায়। ফলে সন্ধি নড়াচড়া করায় সমস্যা দেখা দেয়। রোগীর ইতিহাস শুনে এবং শারীরিক পরীক্ষা করে ফ্রোজেন সোল্ডার শনাক্ত করা হয়। তবে ঝুঁকি নির্ণয় ও অন্যান্য রোগ সম্পর্কে জানতে কিছু পরীক্ষা করা দরকার হতে পারে।

 

করণীয় : ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক গ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ওজন বেশি থাকলে তাও কমাতে হবে।

 

ফিজিওথেরাপি : এ ব্যথায় আরাম পেতে ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম খুব কার্যকর চিকিৎসা। মূল চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে সুগার নিয়ন্ত্রণে এনে জয়েন্টে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিতে পারেন। সন্ধির নড়াচড়া একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অনেক সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে নড়াচড়া করার ব্যবস্থা করে থাকেন।

 

চিকিৎসা : ফ্রোজেন সোল্ডারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। সারতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কাজেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ধৈর্য ধরে ব্যায়াম ও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। সুস্থ দেহ-প্রশান্ত মন কর্মচঞ্চল জীবন।

লেখক : অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার  । সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকার-প্রশাসন দায় এড়াতে পারবে না: গোলাম পরওয়ার

» ঢাবিতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মুখোমুখি স্লোগান-মিছিল

» কারফিউ শুরু, গোপালগঞ্জ শহর থমথমে

» ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোপালগঞ্জসহ সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম

» শুক্রবার রাজধানীর সব থানার সামনে মানববন্ধনের ঘোষণা এনসিপির

» ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির

» গোপালগঞ্জ থেকে খুলনায় পৌঁছেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা

» আগে গোপালগঞ্জ ঠিক হবে তারপর নির্বাচন : গোলাম মাওলা রনি

» ‘গোপালগঞ্জকে স্বাধীন’ করার দাবিতে শাহবাগ থানায় ইনকিলাব মঞ্চ

» সেনা-পুলিশ পাহারায় গোপালগঞ্জ ছাড়লেন নাহিদ-সারজিসরা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কাঁধ ব্যথার সঙ্গে কাঁধের সন্ধি জ্যামে চিকিৎসা

সংগৃহীত ছবি

 

অধ্যাপক ডা. মো.নজরুল ইসলাম :মানব দেহে ব্যথা-বেদনা এ যেনো এক অতিপরিচিত সমস্যা। তবে কিছু কিছু ব্যথা যেমন অস্বস্তিকর ও পীড়াদায়ক, তেমনি ভোগায় আজীবন। ঘাড় ও বাহুর সংযোগস্থলের ব্যথা তেমনই। এ ব্যথা ‘কাঁধের সন্ধি’ বা ‘সোল্ডার জয়েন্টের ব্যথা’ নামে পরিচিত। নানা কারণে এ জায়গায় ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন আঘাত, লিগামেন্ট ইনজুরি বা ছিঁড়ে যাওয়া, সংক্রমণ, টিউমার, হাড়ক্ষয় ইত্যাদি।

 

এছাড়া অন্য রোগের কারণে সৃষ্ট ব্যথাও মাঝেমধ্যে কাঁধে অনুভূত হয়। এর মধ্যে হৃদরোগের কারণে ব্যথা, ঘাড়ব্যথা অন্যতম। তবে সোল্ডার জয়েন্টের ব্যথার প্রধানতম কারণ হলো ফ্রোজেন সোল্ডার। এতে কাঁধব্যথার সঙ্গে কাঁধের সন্ধি জ্যাম হয়ে গিয়েছে বলে অনুভূত হয় বা কাঁধ নাড়াতে কষ্ট হয়। সময় মতো চিকিৎসা না নিলে কষ্ট আরও বাড়ে।

যে কারণে হয় : সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের ফ্রোজেন সোল্ডার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস রোগীদের এ সমস্যা হওয়ার ঝুঁকিও অপেক্ষাকৃত বেশি। এছাড়া স্থূলতা, অতিরিক্ত চর্বি বা হাইপারলিপিডেমিয়া, হৃদরোগ, স্ট্রোকের রোগীদের এ সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।

 

দীর্ঘদিন কোনো কারণে কাঁধ নড়াচড়া বন্ধ থাকলে বা আঘাতের কারণে এ ব্যথা হতে পারে। প্রথমে ব্যথা দিয়ে শুরু হলেও ক্রমে কাঁধের সন্ধির নড়াচড়া সীমিত হতে থাকে। সন্ধির ভেতরকার সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বা তরল পদার্থ কমে গেলে ওপরকার সাইনোভিয়াল ক্যাপসল বা আবরণ সংকুচিত হতে পারে। ক্রমে পেশিগুলো শক্ত হয়ে যায়। ফলে সন্ধি নড়াচড়া করায় সমস্যা দেখা দেয়। রোগীর ইতিহাস শুনে এবং শারীরিক পরীক্ষা করে ফ্রোজেন সোল্ডার শনাক্ত করা হয়। তবে ঝুঁকি নির্ণয় ও অন্যান্য রোগ সম্পর্কে জানতে কিছু পরীক্ষা করা দরকার হতে পারে।

 

করণীয় : ব্যথা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক গ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ওজন বেশি থাকলে তাও কমাতে হবে।

 

ফিজিওথেরাপি : এ ব্যথায় আরাম পেতে ফিজিওথেরাপি ও ব্যায়াম খুব কার্যকর চিকিৎসা। মূল চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে সুগার নিয়ন্ত্রণে এনে জয়েন্টে স্টেরয়েড ইনজেকশন দিতে পারেন। সন্ধির নড়াচড়া একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে অনেক সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে নড়াচড়া করার ব্যবস্থা করে থাকেন।

 

চিকিৎসা : ফ্রোজেন সোল্ডারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। সারতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কাজেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ধৈর্য ধরে ব্যায়াম ও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। সুস্থ দেহ-প্রশান্ত মন কর্মচঞ্চল জীবন।

লেখক : অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার  । সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com