বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক আচরণের মুখেও শান্ত ছিলেন রামাফোসা

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন বিশ্ব নেতাদের বুঝে যাওয়া উচিত যে ওভাল হাউজে আমন্ত্রণ পাওয়া মানেই সম্মানজনক নয়। বরং, ওই আমন্ত্রণের সঙ্গে থাকে প্রকাশ্যে অপমানিত হওয়ার ঝুঁকিও।

 

হোয়াইট হাউজের বৈঠক মাঝে মাঝেই উস্কানি ও বিব্রতকর মুহূর্তে গিয়ে ঠেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠক এর চূড়ান্ত উদাহরণ। গতকাল বুধবারের ওই বৈঠকটি যেন ছিল তাকে হেনস্তা করার জন্য আগেভাগে প্রস্তুত করা সুসজ্জিত এক মঞ্চ।

 

তবে এবারের পর্বে বাড়তি অনুষঙ্গ হিসাবে ছিল হঠাৎ আলো নিভিয়ে ফেলা, বড় স্ক্রিনে দীর্ঘ ভিডিও চালানো আর পুরনো খবরের কাটিংয়ের স্তূপ এনে হাজির করা। পুরো প্রস্তুতি থেকে এটি স্পষ্ট যে এই দৃশ্যপাটের পুরোটাই আগেভাগে তৈরি করা।

 

টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক আলাপচারিতা চলছিলো। এরমধ্যেই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বাস করানো যাবে যে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘হোয়াইট জেনোসাইড’ (শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যা)-এর ঘটনা ভিত্তিহীন?

এই প্রশ্নের উত্তর প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট-ই দেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ের সত্যতা যাচাই করার জন্য ট্রাম্পকে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের কথা শুনতে হবে। তখনই ডোনাল্ড ট্রাম্প সহকারীকে নির্দেশ দিলেন, লাইট নেভাও, টিভি চালাও। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা রামাফোসাকে কিছু বিষয় দেখাতে চেয়েছিলেন।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ধনকুবের, এই পুরোটা সময় পেছনের সোফায় নীরব দর্শক হয়ে বসে ছিলেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের কথিত নিপীড়ন নিয়ে একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং সুসজ্জিত অভিযোগ সামনে আনা হয়।

 

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও হোয়াইট হাউজে ডেকে একই ঢঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়েছিলো। এবার এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই পর্বে ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর নির্যাতন নিয়ে একের পর এক ভিডিও এবং ছবি প্রদর্শন করতে থাকেন।

 

বড় স্ক্রিনে চালানো ভিডিওতে দেখা যায় যে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকজন নেতা ‘শুট দ্য বুর’ (শ্বেত চাষিদের মারো) গান গাইছে। যদিও এই গানটি মূলত বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ের একটি প্রতীক। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তা শ্বেতাঙ্গ-বিদ্বেষের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প সাধারণত গণমাধ্যমকে অবিশ্বাস করেন। কিন্তু এবার তিনি ওই প্রতিবেদনকেই খুশিমনে ‘প্রমাণ’ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে এই তথাকথিত গণকবর কোথায়? উত্তরে তিনি শুধু বলেন, সাউথ আফ্রিকা। তিনি আরও ধরে নেন যে ভিডিওতে যাদেরকে দেখা গেছে তারা সকলে সরকারে আছেন এবং তারা শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এটি আদৌ সত্য না।

 

রামাফোসা অবশ্য চলতি বছর একটি বিতর্কিত আইন অনুমোদন করেছেন, যা ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে এখনও সেই আইন বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া, ভিডিওতে যেসব আলোচিত রাজনৈতিক ভাষণ দেখানো হয়েছে, সেগুলো থেকেও তিনি প্রকাশ্যে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছেন। তবে এই বৈঠকে তিনি প্রস্তুত ছিলেন।

 

তিনি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নন, বরং দেশটির বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তিনি সেই আলোচক যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেত সংখ্যালঘু শাসনের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই অন্যদেশের নেতাদের কৌশলগত প্রশংসাবাক্য বুঝতে পারেন না। আর এবার এই বিষয়টিই কাজে লাগিয়েছেন সিরিল রামাফোসা।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প গলফ খেলতে পছন্দ করেন, এ কথা সবাই জানে। তাই সিরিল রামাফোসা যখন কূটনীতি ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে আলোচনার টেবিলে দুই শীর্ষ গলফার এর্নি এলস ও রেটিফ গুসেনকে নিয়ে এসেছেন, তখন এটিকে আর ছকে বাঁধা কোনো আলোচনা বলে মনে হয়নি।

 

আর, পুরনো খবর বের করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের ওপর চড়াও হলেও হোয়াইট হাউসে এই দুই শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান গলফারের উপস্থিতি যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করেছে, তা বৈঠকে উপস্থিত কারোরই চোখ এড়ায়নি।

 

বৈঠকে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা এই দুই গলফার যতটুকু সময় ধরে অভিমত দিয়েছেন, প্রায় সমান সময় ধরে কথা বলেছেন দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নিজে। যদিও রামাফোসা বেশিরভাগ সময় সংযত থেকেছেন, ভেবেচিন্তে অল্প কথা বলেছেন। তবে এটিই ছিল রামাফোসার কৌশল। তিনি হয়তো এমনটাই চেয়েছিলেন।

 

ওই দুই গলফার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষিমন্ত্রী, যিনি নিজেই একটি বিরোধী দলের সদস্য এবং বর্তমানে জাতীয় ঐক্য সরকারে আছেন, এই তিনজনের উপস্থিতিই যেন রামাফোসার চারপাশে এক ধরনের কূটনৈতিক ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি করেছিলো এবং সেটিই কাজ করেছে।

 

তবে ট্রাম্প বারবার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের আলোচনায় ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, অনেক কৃষককে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে জায়গা দিয়েছেন। তবে রামাফোসা এসবের কোনো উস্কানিতেই সাড়া দেননি।

এক পর্যায়ে গলফার ও কৃষিমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, আফ্রিকায় যদি সত্যিই শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যা চলতো, তাহলে তারা আজ এখানে থাকতেন না। আমি আপনাকে হলফ করে এ কথা বলছি।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প রামাফোসাকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও উল্টো দিক থেকে কোনো প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাতে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ বলা যাবে না। এই অভিনয়ধর্মী কূটনীতির ধরনটি ওভাল অফিসে সদ্য আগত অতিথির উদ্দেশ্যে যতটা, ততটাই বা তার চেয়েও বেশি যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া দর্শকদের লক্ষ্য করে করা।

 

‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ মিশনের অন্যতম মূলমন্ত্র হলো জনগণের ক্ষোভ ও অভিযোগকে চাঙ্গা রাখা। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানেন যে তার সমর্থকরা কী দেখতে চায়। তবে এখন যেহেতু কিছু বিদেশি নেতা এই কৌশল সামলাতে শিখে ফেলেছেন, তাই এখন হয়তো ট্রাম্পকে আগের মতোই প্রভাব ধরে রাখার জন্য পরিকল্পনায় কিছুটা বদল আনতে হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ঐক্যের ডাকে রাজুতে নতুন কর্মসূচি

» ডা. জুবাইদা রহমানের আপিলের পরবর্তী শুনানি সোমবার

» আরেকটা এক-এগারো চাই না, আর চুপ থাকব না : রিফাত রশিদ

» প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত আমির

» আসিফ, মাহফুজ, হাসনাত কিংবা হান্নান সবাইকেই টার্গেট করা হয়েছে: হান্নান মাসউদ

» আমরা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাই না : গয়েশ্বর চন্দ্র

» ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে: খন্দকার মোশাররফ

» প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে নাহিদের বৈঠক

» দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য, আগের বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ মাহফুজের

» ইসলামপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক আচরণের মুখেও শান্ত ছিলেন রামাফোসা

সংগৃহীত ছবি

 

অনলাইন ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন বিশ্ব নেতাদের বুঝে যাওয়া উচিত যে ওভাল হাউজে আমন্ত্রণ পাওয়া মানেই সম্মানজনক নয়। বরং, ওই আমন্ত্রণের সঙ্গে থাকে প্রকাশ্যে অপমানিত হওয়ার ঝুঁকিও।

 

হোয়াইট হাউজের বৈঠক মাঝে মাঝেই উস্কানি ও বিব্রতকর মুহূর্তে গিয়ে ঠেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠক এর চূড়ান্ত উদাহরণ। গতকাল বুধবারের ওই বৈঠকটি যেন ছিল তাকে হেনস্তা করার জন্য আগেভাগে প্রস্তুত করা সুসজ্জিত এক মঞ্চ।

 

তবে এবারের পর্বে বাড়তি অনুষঙ্গ হিসাবে ছিল হঠাৎ আলো নিভিয়ে ফেলা, বড় স্ক্রিনে দীর্ঘ ভিডিও চালানো আর পুরনো খবরের কাটিংয়ের স্তূপ এনে হাজির করা। পুরো প্রস্তুতি থেকে এটি স্পষ্ট যে এই দৃশ্যপাটের পুরোটাই আগেভাগে তৈরি করা।

 

টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক আলাপচারিতা চলছিলো। এরমধ্যেই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বাস করানো যাবে যে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘হোয়াইট জেনোসাইড’ (শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যা)-এর ঘটনা ভিত্তিহীন?

এই প্রশ্নের উত্তর প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট-ই দেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ের সত্যতা যাচাই করার জন্য ট্রাম্পকে দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের কথা শুনতে হবে। তখনই ডোনাল্ড ট্রাম্প সহকারীকে নির্দেশ দিলেন, লাইট নেভাও, টিভি চালাও। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা রামাফোসাকে কিছু বিষয় দেখাতে চেয়েছিলেন।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্ক, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ধনকুবের, এই পুরোটা সময় পেছনের সোফায় নীরব দর্শক হয়ে বসে ছিলেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের কথিত নিপীড়ন নিয়ে একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং সুসজ্জিত অভিযোগ সামনে আনা হয়।

 

গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও হোয়াইট হাউজে ডেকে একই ঢঙ্গে আক্রমণাত্মক আচরণ করা হয়েছিলো। এবার এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ওই পর্বে ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর নির্যাতন নিয়ে একের পর এক ভিডিও এবং ছবি প্রদর্শন করতে থাকেন।

 

বড় স্ক্রিনে চালানো ভিডিওতে দেখা যায় যে দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকজন নেতা ‘শুট দ্য বুর’ (শ্বেত চাষিদের মারো) গান গাইছে। যদিও এই গানটি মূলত বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ের একটি প্রতীক। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তা শ্বেতাঙ্গ-বিদ্বেষের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প সাধারণত গণমাধ্যমকে অবিশ্বাস করেন। কিন্তু এবার তিনি ওই প্রতিবেদনকেই খুশিমনে ‘প্রমাণ’ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে এই তথাকথিত গণকবর কোথায়? উত্তরে তিনি শুধু বলেন, সাউথ আফ্রিকা। তিনি আরও ধরে নেন যে ভিডিওতে যাদেরকে দেখা গেছে তারা সকলে সরকারে আছেন এবং তারা শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এটি আদৌ সত্য না।

 

রামাফোসা অবশ্য চলতি বছর একটি বিতর্কিত আইন অনুমোদন করেছেন, যা ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে এখনও সেই আইন বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া, ভিডিওতে যেসব আলোচিত রাজনৈতিক ভাষণ দেখানো হয়েছে, সেগুলো থেকেও তিনি প্রকাশ্যে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছেন। তবে এই বৈঠকে তিনি প্রস্তুত ছিলেন।

 

তিনি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নন, বরং দেশটির বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তিনি সেই আলোচক যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেত সংখ্যালঘু শাসনের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই অন্যদেশের নেতাদের কৌশলগত প্রশংসাবাক্য বুঝতে পারেন না। আর এবার এই বিষয়টিই কাজে লাগিয়েছেন সিরিল রামাফোসা।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প গলফ খেলতে পছন্দ করেন, এ কথা সবাই জানে। তাই সিরিল রামাফোসা যখন কূটনীতি ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে আলোচনার টেবিলে দুই শীর্ষ গলফার এর্নি এলস ও রেটিফ গুসেনকে নিয়ে এসেছেন, তখন এটিকে আর ছকে বাঁধা কোনো আলোচনা বলে মনে হয়নি।

 

আর, পুরনো খবর বের করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের ওপর চড়াও হলেও হোয়াইট হাউসে এই দুই শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান গলফারের উপস্থিতি যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করেছে, তা বৈঠকে উপস্থিত কারোরই চোখ এড়ায়নি।

 

বৈঠকে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা এই দুই গলফার যতটুকু সময় ধরে অভিমত দিয়েছেন, প্রায় সমান সময় ধরে কথা বলেছেন দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নিজে। যদিও রামাফোসা বেশিরভাগ সময় সংযত থেকেছেন, ভেবেচিন্তে অল্প কথা বলেছেন। তবে এটিই ছিল রামাফোসার কৌশল। তিনি হয়তো এমনটাই চেয়েছিলেন।

 

ওই দুই গলফার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষিমন্ত্রী, যিনি নিজেই একটি বিরোধী দলের সদস্য এবং বর্তমানে জাতীয় ঐক্য সরকারে আছেন, এই তিনজনের উপস্থিতিই যেন রামাফোসার চারপাশে এক ধরনের কূটনৈতিক ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি করেছিলো এবং সেটিই কাজ করেছে।

 

তবে ট্রাম্প বারবার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের আলোচনায় ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, অনেক কৃষককে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে জায়গা দিয়েছেন। তবে রামাফোসা এসবের কোনো উস্কানিতেই সাড়া দেননি।

এক পর্যায়ে গলফার ও কৃষিমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, আফ্রিকায় যদি সত্যিই শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যা চলতো, তাহলে তারা আজ এখানে থাকতেন না। আমি আপনাকে হলফ করে এ কথা বলছি।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প রামাফোসাকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও উল্টো দিক থেকে কোনো প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাতে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ বলা যাবে না। এই অভিনয়ধর্মী কূটনীতির ধরনটি ওভাল অফিসে সদ্য আগত অতিথির উদ্দেশ্যে যতটা, ততটাই বা তার চেয়েও বেশি যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া দর্শকদের লক্ষ্য করে করা।

 

‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ মিশনের অন্যতম মূলমন্ত্র হলো জনগণের ক্ষোভ ও অভিযোগকে চাঙ্গা রাখা। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানেন যে তার সমর্থকরা কী দেখতে চায়। তবে এখন যেহেতু কিছু বিদেশি নেতা এই কৌশল সামলাতে শিখে ফেলেছেন, তাই এখন হয়তো ট্রাম্পকে আগের মতোই প্রভাব ধরে রাখার জন্য পরিকল্পনায় কিছুটা বদল আনতে হবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com