সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : বৃষ্টির মধ্যেই অষ্টম দিনের মতো ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকরা।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়ে সরেজমিন দেখা যায়, কাকরাইল মোড় থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে সড়কের ডান পাশে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। বৃষ্টিও তাদের কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসায় নতুন এই কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা ।
এদিকে, এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী সমিতি। নগর ভবনের সামনে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।একইসঙ্গে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, ময়লা পরিবহন কার্যক্রম, নাগরিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ কর্মসূচি পালন করছেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র। পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে সোয়া চার লাখ ভোট পেয়েছিলেন তাপস। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ডিএসসিসির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন আদালত। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করল না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।
পরে হাইকোর্টে রিট করেন মামুনুর রশিদ। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
আজ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে এবং শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চেয়ে রিটের ওপর আদেশ দেবেন হাইকোর্ট।