ফাইল ফটো
অনলাইন ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে নিয়ে নানা কৌতূহল শুরু হয়েছে। বারবার রাজনীতির জন্য আলোচনায় আসা এই নারী আদৌ রাজনীতিতে ফিরছে কিনা বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জোবাইদা রহমান প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী নন। তবে জন্ম থেকেই তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। বাবার পরিবার এবং স্বামীর পরিবার দুই জায়গার অন্তরালে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আগামীতে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বার্তা পেলে রাজনীতিতে ফিরবেন এমন গুঞ্জন এখনও রাজনীতির মাঠে রয়েছে। তবে আপাতত খালেদা জিয়া মা, শাশুড়ি ও মামলার মোকাবিলা করতে দেশে এসেছেন বলেই দলের বিশ্বস্ত সূত্রগুলোর ভাষ্য।
ডা. জোবাইদা রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন (এমবিবিএস) করে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর (এমএসসি) ডিগ্রি নেন।
চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে চলে যান তিনি। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে চলে যান যুক্তরাজ্যে। তার পরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আওয়ামী লীগের অপতৎপরতার কারণে আর দেশে ফেরা হয়নি তার। দীর্ঘ ১৭ বছর পর অবশেষে গত মঙ্গলবার সকালে তিনি শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরে এসেছেন। দেশে ফিরে ডা. জোবাইদা রহমান তার বাবার ধানমন্ডির বাসায় থাকছেন। এজন্য ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডে তার বাবার বাড়ি মাহবুব ভবনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার হাত ধরে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরে এসেছেন তিনি।
স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যাওয়া নেতাকর্মীদের হাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাশাপাশি জোবাইদা রহমানের ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও তিনি এখন দলটির কোনো সাধারণ সদস্য নন। এরপরও পরিবারের রাজনৈতিক সদস্যদের সঙ্গে জোবাইদা রহমানের ছবি দেখা যাওয়ায় সর্ব মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়। তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের পূর্বে তিনি মাঠে নামবেন কিনা রাজনৈতিক মাঠে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। বহুদিন ধরে গুঞ্জন ছিল তিনি সিলেট থেকে নির্বাচন করতে পারেন। এবার সেই আলোচনা আরও জোরালো হতে শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর সেই থেকে তারেক রহমান বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে সুসংগঠিত রেখেছেন। দলকে ভাঙার জন্য নানা ষড়যন্ত্র হলেও নেতাকর্মীদের যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন।
২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর তারুণ্যের নয়া রাজনীতি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে অতীতের মতো জোবাইদা রহমানের নাম আবারও উঠে আসে। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, জোবাইদা রহমানের স্বামী তারেক রহমান; শ্বশুর লে. জেনারেল এবং বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান; শাশুড়ী বাংলাদেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া; পিতা সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান; তার চাচা জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানীসহ অন্য দুই চাচাও ছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তি। পরিবারের অন্য আরও সদস্যরাও রাজনীতি এবং ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরে প্রভাবশালী ছিলেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জোবাইদা রহমান চাকরির পাশাপাশি রাজনীতিতে ফিরলে পুরো বাংলাদেশ উপকৃত হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল, জোবাইদা রহমান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। উনার ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত সকল পরিবেশ ছিল রাজনৈতিক পরিবারে থাকা। এখন রাজনীতিতে বাংলাদেশে একজন আলোচিত ব্যক্তি। তারুণ্যের নেতৃবৃন্দের কাছে তিনি এখন রাজনীতির জন্য স্টার। উনি মেধা এবং যোগ্যতায় অনন্য উচ্চতায় চলে গেছেন। উনি চাকরিতে ফিরলে এবং পাশাপাশি রাজনীতিতে সময় দিলে পুরো বাংলাদেশ উপকৃত হবে। মনে রাখতে হবে সময় নেতৃত্ব তৈরি করে। উনার শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার যে ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে বাংলাদেশকে নতুনভাবে সাজানোর জন্য উনাকে অনেক বেশি প্রয়োজন। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে নিশি রাতের ভোটের আয়োজনে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ মনে করেছিল বিএনপির নেতৃত্বকে শেষ করে দেবে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে চমৎকারভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তার এই নেতৃত্বের অন্যতম একজন ছিলেন জোবাইদা রহমান।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী জাহিলিয়াত সময়ে দিনের পর দিন কারাবরণকারী আপোসহীন নেত্রী। এখন চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসায় দলের নেতাকর্মীদের ছাড়াও সারাদেশের মানুষের মধ্যে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। তিনি তার দুই পুত্রবধূকে নিয়ে দেশে ফিরে আসায় পুরো ঢাকাবাসী তাকে অভিনন্দন জানাতে রাজপথে নেমে আসেন। জোবাইদা রহমান এবং শর্মিলা দুজনেই তারুণ্য নেতৃবৃন্দের কাছে অনেক শ্রদ্ধা ও সম্মানের। বিশেষ করে সম্প্রতি জোবাইদা রহমানকে নিয়ে অনেক গণমাধ্যমে নিউজ এসেছে, তিনি তার চাকরিতে ফেরত যাবেন। কিন্তু রাজনীতিতে ফেরত আশা প্রকাশ্যে আসার বিষয়টি অবশ্যই আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান ও এ দেশের লাখো কোটি মানুষের বিশ্বস্ত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বার্তা দেবেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি জোবাইদা রহমান অবশ্যই রাজনীতির মধ্যে রয়েছেন। স্ত্রী এবং পুত্রবধূ হয়ে রাজনীতির বাইরে নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে ফিরবেন কিনা এখনো তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে জোবাইদা রহমান দেশের লাখো কোটি তারুণ্যের কাছে জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি বলে যোগ করেন।