বর্তমান সরকারের ম্যাজিকে মালয়েশিয়া যাবে ১২ লাখ কর্মী!

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা, প্রপাগান্ডা আর ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে শিগগিরই মালয়েশিয়ার দুয়ার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খুলতে যাচ্ছে। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের আন্তরিকতা আর কূটনৈতিক পারদর্শিতায় বৈঠকের তারিখ চূড়ান্ত করেছে মালয়েশিয়া সরকার। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় বসবে বহুল প্রতীক্ষিত দুই দেশের এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা।

 

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সদস্যরা এই উদ্যোগে শুভকামনা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, কর্মকর্তা ও সকল স্তরের কর্মচারীদের।

 

বায়রা সদস্যরা বলেন, সংগঠনটির কিছু নেতা ইউনূস সরকারকে বিতর্কিত আর বেকায়দায় ফেলতে কখনো সিন্ডিকেট, কখনো অনলাইন সিস্টেম এবং কখনো শ্রমচুক্তিকে দায়ী করছেন। শুধু গুটিকয়েক নেতার নিউজ মিডিয়াতে দায়িত্বহীন বক্তব্য আর বিভিন্ন শ্রমবাজার নিয়ে অহেতুক বিতর্কের কারণে বিদেশে সংকুচিত হচ্ছে শ্রমবাজার, প্রভাব পড়ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের। অভিযোগ আছে যে, সবই হচ্ছে পতিত হাসিনা সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ করে রেমিট্যান্সের গলা চেপে ধরাই প্রধান এজেন্ডা।

 

তারা বলেন, বায়রার সাধারণ সদস্যদের দাবি একটাই যে কোনো শর্তে শ্রমবাজার খুলে দেওয়া। শ্রমিক গ্রহণকারী দেশের সব শর্ত মানতে আমরা প্রস্তুত। একমাত্র ফ্যাসিস্টের দোসররাই শ্রমবাজার নিয়ে নানা শর্তজুড়ে দিচ্ছে। মালয়েশিয়া সরকার যেই ১৪টি দেশ থেকে ১২ লাখ কর্মী নেবে তার মধ্যে নিয়োগকর্তাদের প্রধান পছন্দ বাংলাদেশি কর্মীরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে জনশক্তি খাতের কিছু পরিচিত মুখের নিয়মিত নেতিবাচক প্রচরণা, সংবাদ সম্মেলনের কারণে অন্য ১৩টি দেশ শ্রমিক প্রেরণ শুরু করলেও বাংলাদেশ পারেনি।

 

সবার দাবি একটাই, শুধু সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোকে নিয়ে অযাচিত সমালোচনা এবং বিব্রতকর শর্ত আরোপ করা অনুচিত। যারা বিভিন্ন অজুহাতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মোচনের বিলম্ব করতে চায় তারাই এই সরকারের শত্রু, ফ্যসিস্টের প্রেতাত্মা। তাদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার না হলে দ্রুত এই সেক্টর ধ্বংস করে দেবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য কারা ইন্ধন দিচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়।

 

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে এই বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক নতুন নয়। ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় মালয়েশিয়া। ১৯৯৯ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফর করেন। এর পরের বছর প্রথম মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার মালয়েশিয়া সফরে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

 

নাজিব রাজাকের সফরের প্রায় ১১ বছর পর গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ়তার দিকে এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা।

 

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত করের বোঝা থেকে মুক্ত হতে চীন মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ বহুগুণে বাড়ানোর চিন্তা করছে। গত কয়েক দশকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে সুবিধাভোগী দেশগুলোর একটি হলো মালয়েশিয়া। বাণিজ্য যুদ্ধের সুবাদে মালয়েশিয়াতে চীনা মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে লাখ লাখ শ্রমিক চাহিদা যার প্রধান যোগানদাতা হতে পারে বাংলাদেশ।

 

উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। এ ছাড়া এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি সম্প্রতি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বাংলাদেশেরও লক্ষ্য উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া। উভয় দেশ তাই নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সম্প্রসারিত করছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বর্তমান সরকারের ম্যাজিকে মালয়েশিয়া যাবে ১২ লাখ কর্মী!

» ফ্যাসিবাদী আ’লীগকে প্রতিহত করতে নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন: রিজভী

» নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশে জনস্রোত, মঞ্চে গান-আন্দোলনের ছোঁয়া

» গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে চারজন দগ্ধ

» শ্রমিকের ন্যায্য স্বীকৃতি ও সুরক্ষা নিশ্চিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

» দুই পুত্রবধূসহ সোমবার দেশে ফেরার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার

» জামায়াত ক্ষমতায় এলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে বেশি নিরাপদ থাকবে: শফিকুর রহমান

» নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিক-মালিকদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দরকার: শ্রম সচিব

» শ্রমিক-মালিকের যৌথ প্রচেষ্টাই আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা

» আগামী সাত মাসেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের ভাগ্য: শফিকুল আলম

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

বর্তমান সরকারের ম্যাজিকে মালয়েশিয়া যাবে ১২ লাখ কর্মী!

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা, প্রপাগান্ডা আর ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে শিগগিরই মালয়েশিয়ার দুয়ার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খুলতে যাচ্ছে। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের আন্তরিকতা আর কূটনৈতিক পারদর্শিতায় বৈঠকের তারিখ চূড়ান্ত করেছে মালয়েশিয়া সরকার। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় বসবে বহুল প্রতীক্ষিত দুই দেশের এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা।

 

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সদস্যরা এই উদ্যোগে শুভকামনা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, কর্মকর্তা ও সকল স্তরের কর্মচারীদের।

 

বায়রা সদস্যরা বলেন, সংগঠনটির কিছু নেতা ইউনূস সরকারকে বিতর্কিত আর বেকায়দায় ফেলতে কখনো সিন্ডিকেট, কখনো অনলাইন সিস্টেম এবং কখনো শ্রমচুক্তিকে দায়ী করছেন। শুধু গুটিকয়েক নেতার নিউজ মিডিয়াতে দায়িত্বহীন বক্তব্য আর বিভিন্ন শ্রমবাজার নিয়ে অহেতুক বিতর্কের কারণে বিদেশে সংকুচিত হচ্ছে শ্রমবাজার, প্রভাব পড়ছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের। অভিযোগ আছে যে, সবই হচ্ছে পতিত হাসিনা সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ করে রেমিট্যান্সের গলা চেপে ধরাই প্রধান এজেন্ডা।

 

তারা বলেন, বায়রার সাধারণ সদস্যদের দাবি একটাই যে কোনো শর্তে শ্রমবাজার খুলে দেওয়া। শ্রমিক গ্রহণকারী দেশের সব শর্ত মানতে আমরা প্রস্তুত। একমাত্র ফ্যাসিস্টের দোসররাই শ্রমবাজার নিয়ে নানা শর্তজুড়ে দিচ্ছে। মালয়েশিয়া সরকার যেই ১৪টি দেশ থেকে ১২ লাখ কর্মী নেবে তার মধ্যে নিয়োগকর্তাদের প্রধান পছন্দ বাংলাদেশি কর্মীরা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে জনশক্তি খাতের কিছু পরিচিত মুখের নিয়মিত নেতিবাচক প্রচরণা, সংবাদ সম্মেলনের কারণে অন্য ১৩টি দেশ শ্রমিক প্রেরণ শুরু করলেও বাংলাদেশ পারেনি।

 

সবার দাবি একটাই, শুধু সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোকে নিয়ে অযাচিত সমালোচনা এবং বিব্রতকর শর্ত আরোপ করা অনুচিত। যারা বিভিন্ন অজুহাতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মোচনের বিলম্ব করতে চায় তারাই এই সরকারের শত্রু, ফ্যসিস্টের প্রেতাত্মা। তাদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার না হলে দ্রুত এই সেক্টর ধ্বংস করে দেবে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য কারা ইন্ধন দিচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হয়।

 

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে এই বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক নতুন নয়। ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় মালয়েশিয়া। ১৯৯৯ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ সফর করেন। এর পরের বছর প্রথম মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৩ সালের নভেম্বরে সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বার মালয়েশিয়া সফরে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

 

নাজিব রাজাকের সফরের প্রায় ১১ বছর পর গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর করে গেলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ়তার দিকে এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা।

 

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত করের বোঝা থেকে মুক্ত হতে চীন মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ বহুগুণে বাড়ানোর চিন্তা করছে। গত কয়েক দশকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সবচেয়ে সুবিধাভোগী দেশগুলোর একটি হলো মালয়েশিয়া। বাণিজ্য যুদ্ধের সুবাদে মালয়েশিয়াতে চীনা মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে লাখ লাখ শ্রমিক চাহিদা যার প্রধান যোগানদাতা হতে পারে বাংলাদেশ।

 

উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। এ ছাড়া এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি সম্প্রতি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বাংলাদেশেরও লক্ষ্য উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া। উভয় দেশ তাই নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রগুলো ক্রমশ সম্প্রসারিত করছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com