রিং-বাইপাস পরবর্তী চিকিৎসা ও যত্ন

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. এম শমশের আলী :আমাদের দেশে এমন লাখ লাখ রোগী আছে যারা বিগত সময়ে হার্ট ব্লকের জন্য রিং পরেছে অথবা বাইপাস অপারেশন (ওপেন হার্ট সার্জারি) করিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ আবার এসব অপারেটিভ চিকিৎসা একাধিকবার নিয়েছে, কেউ রিং পরার পর আবারও ব্লক দেখা দেওয়ায় দ্বিতীয়বার রিং পরেছে অথবা বাইপাস অপারেশন করিয়েছে। কেউ কেউ আবার তিন-চার বারে এসব অপারেটিভ চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।

 

এখন প্রশ্ন হলো কেন এসব হচ্ছে? একই বয়সের অন্য অনেক ব্যক্তি কখনো হার্ট ব্লক সমস্যায় ভুগছে না। এখানে বলে রাখা ভালো, প্রবণতা বলে একটি কথা আছে। সমাজে মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের প্রবণতা দেখা যায়-কারও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার প্রবণতা, শ্বাসকষ্ট হওয়ার প্রবণতা, কারও সহজে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা ইত্যাদি। যাদের একবার ব্লক হয়েছে সেটা যদি অল্প বয়সে হয়ে থাকে তবে তাকে বারবার ব্লকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তার মানে সে হার্ট ব্লকের প্রবণতায় ভুগছে। যার ফলে বারবার হার্ট ব্লকে আক্রান্ত হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে-তবে কি এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই? হ্যাঁ, এর থেকে রেহাই পাওয়ার বেশ কিছু উপায়ও বিদ্যমান আছে। অনেকে জেনে থাকবেন হার্ট একটি মাংসের থলি, এর মাঝখানে থাকা রক্তকে বাইরের অংশের মাংসপেশি চাপ প্রয়োগ করে থলে থেকে রক্ত বের করে দেয়; আবার অন্য দিক থেকে রক্ত গ্রহণ করে দ্বিতীয় চাপের মাধ্যমে রক্ত একই দিকে পাঠিয়ে হার্ট পাম্পের কাজ সম্পন্ন করে। তাই হার্টকে একটি বায়োলজিক্যাল পাম্প বলা হয়।

 

হার্টের মাংসপেশিতে রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে অক্সিজেন ও রসদ (খাদ্যকণা) পৌঁছে দিতে বড় বড় তিনটি রক্তনালি রয়েছে। এদের শাখাপ্রশাখা-উপশাখা ও আরও অনেক ছোট রক্তনালির মাধ্যমে এ বৃহৎ কর্মকান্ডটি (কর্মযজ্ঞ) সম্পন্ন হয়ে থাকে। হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকায় হার্টের মাংসপেশি কোনো অংশ খাদ্যাভাবে মারা যায়, কোনো অংশ কাজ থেকে বিরত থেকে কোনোমতে বেঁচে থাকে। যার ফলে হার্টের পাম্পিং কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয় এবং রোগী অনেক ধরনের জটিলতায় পতিত হয়। হার্ট ব্লক কীজন্য হয়? যদিও তার সব কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি।

 

তবে যেসব কারণে হার্ট ব্লক হয় সেগুলো হচ্ছে-বয়স বৃদ্ধি, পুরুষ মানুষ, ধূমপান ও অন্যান্য নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, টেনশন, দুশ্চিন্তা, অলস (কায়িক শ্রম) জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, ভেজাল খাদ্য গ্রহণ, রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল-জাতীয় চর্বি বিদ্যমান থাকা। ওপরোল্লিখিত অবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট ব্লক হওয়া থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা সম্ভব।

 

মূলত মেডিসিন, খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক শ্রম, জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমেও এখন প্রতিরোধমূলক অনেক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসবের মাধ্যমে অনেক রোগীকে রিং, বাইপাস না করিয়েও সুস্থজীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকে সুস্থজীবন যাপন করতে পারছে। তবে যেসব রোগী এসব চিকিৎসায়ও সুস্থ হতে পারে না তাদের ইসিপি থেরাপি দেওয়া হয়।

 

এর মাধ্যমে হার্টের মাংসপেশিতে অবস্থিত অকেজো রক্তনালি সচল করা হয়, চুপসানো রক্তনালি খুলে দেওয়ার ফলে রক্ত ব্লককে বাইপাস করে ভিন্ন পথে মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন ও রসদ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। আগে রিং ও বাইপাস করা রোগীদের জন্যও এ থেরাপি একটি উপযুক্ত ও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই এসব বিষয়ে আমাদের যত্নবান হতে হবে।

লেখক: চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ

» বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে বিএনপির শুভেচ্ছা

» আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তিতাসের সতর্কবার্তা

» জুলাই আন্দোলন দমাতে ব্যবহৃত হয় শুটিং ফেডারেশনের অস্ত্র: ক্রীড়া উপদেষ্টা

» ৭১ এর রাজনীতি ভুল ছিল বলেই চব্বিশ ঘটেছে : উপদেষ্টা শারমীন

» একজন মুসল্লির মতো এলেন জীর্ণশীর্ণ দেখতে, এমন শাসক আর শাসনই আমাদের স্বপ্নময় ছিল! : প্রেস সচিব

» হুয়াওয়ে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার ২০২৫ বাংলাদেশ’-এর নিবন্ধন শুরু

» লোকসাহিত্য গবেষক ও কবি অ আ আবীর আকাশ এর জন্মদিনে বিভিন্ন মহলের উষ্ণ অভ্যর্থনা

» প্রাইম ব্যাংকের অগ্রযাত্রার ৩০ বছর: টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার

» বাগেরহাটের বলভদ্রপুর বাস-ইজিবাইক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রিং-বাইপাস পরবর্তী চিকিৎসা ও যত্ন

ছবি সংগৃহীত

 

ডা. এম শমশের আলী :আমাদের দেশে এমন লাখ লাখ রোগী আছে যারা বিগত সময়ে হার্ট ব্লকের জন্য রিং পরেছে অথবা বাইপাস অপারেশন (ওপেন হার্ট সার্জারি) করিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ আবার এসব অপারেটিভ চিকিৎসা একাধিকবার নিয়েছে, কেউ রিং পরার পর আবারও ব্লক দেখা দেওয়ায় দ্বিতীয়বার রিং পরেছে অথবা বাইপাস অপারেশন করিয়েছে। কেউ কেউ আবার তিন-চার বারে এসব অপারেটিভ চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।

 

এখন প্রশ্ন হলো কেন এসব হচ্ছে? একই বয়সের অন্য অনেক ব্যক্তি কখনো হার্ট ব্লক সমস্যায় ভুগছে না। এখানে বলে রাখা ভালো, প্রবণতা বলে একটি কথা আছে। সমাজে মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের প্রবণতা দেখা যায়-কারও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার প্রবণতা, শ্বাসকষ্ট হওয়ার প্রবণতা, কারও সহজে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা ইত্যাদি। যাদের একবার ব্লক হয়েছে সেটা যদি অল্প বয়সে হয়ে থাকে তবে তাকে বারবার ব্লকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়, তার মানে সে হার্ট ব্লকের প্রবণতায় ভুগছে। যার ফলে বারবার হার্ট ব্লকে আক্রান্ত হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে-তবে কি এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই? হ্যাঁ, এর থেকে রেহাই পাওয়ার বেশ কিছু উপায়ও বিদ্যমান আছে। অনেকে জেনে থাকবেন হার্ট একটি মাংসের থলি, এর মাঝখানে থাকা রক্তকে বাইরের অংশের মাংসপেশি চাপ প্রয়োগ করে থলে থেকে রক্ত বের করে দেয়; আবার অন্য দিক থেকে রক্ত গ্রহণ করে দ্বিতীয় চাপের মাধ্যমে রক্ত একই দিকে পাঠিয়ে হার্ট পাম্পের কাজ সম্পন্ন করে। তাই হার্টকে একটি বায়োলজিক্যাল পাম্প বলা হয়।

 

হার্টের মাংসপেশিতে রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে অক্সিজেন ও রসদ (খাদ্যকণা) পৌঁছে দিতে বড় বড় তিনটি রক্তনালি রয়েছে। এদের শাখাপ্রশাখা-উপশাখা ও আরও অনেক ছোট রক্তনালির মাধ্যমে এ বৃহৎ কর্মকান্ডটি (কর্মযজ্ঞ) সম্পন্ন হয়ে থাকে। হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকায় হার্টের মাংসপেশি কোনো অংশ খাদ্যাভাবে মারা যায়, কোনো অংশ কাজ থেকে বিরত থেকে কোনোমতে বেঁচে থাকে। যার ফলে হার্টের পাম্পিং কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয় এবং রোগী অনেক ধরনের জটিলতায় পতিত হয়। হার্ট ব্লক কীজন্য হয়? যদিও তার সব কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি।

 

তবে যেসব কারণে হার্ট ব্লক হয় সেগুলো হচ্ছে-বয়স বৃদ্ধি, পুরুষ মানুষ, ধূমপান ও অন্যান্য নেশাজাতীয় বস্তু গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, টেনশন, দুশ্চিন্তা, অলস (কায়িক শ্রম) জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, ভেজাল খাদ্য গ্রহণ, রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল-জাতীয় চর্বি বিদ্যমান থাকা। ওপরোল্লিখিত অবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট ব্লক হওয়া থেকে অনেকাংশেই মুক্ত থাকা সম্ভব।

 

মূলত মেডিসিন, খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক শ্রম, জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমেও এখন প্রতিরোধমূলক অনেক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসবের মাধ্যমে অনেক রোগীকে রিং, বাইপাস না করিয়েও সুস্থজীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। এ ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকে সুস্থজীবন যাপন করতে পারছে। তবে যেসব রোগী এসব চিকিৎসায়ও সুস্থ হতে পারে না তাদের ইসিপি থেরাপি দেওয়া হয়।

 

এর মাধ্যমে হার্টের মাংসপেশিতে অবস্থিত অকেজো রক্তনালি সচল করা হয়, চুপসানো রক্তনালি খুলে দেওয়ার ফলে রক্ত ব্লককে বাইপাস করে ভিন্ন পথে মাংসপেশিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন ও রসদ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। আগে রিং ও বাইপাস করা রোগীদের জন্যও এ থেরাপি একটি উপযুক্ত ও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই এসব বিষয়ে আমাদের যত্নবান হতে হবে।

লেখক: চিফ কনসালট্যান্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা। সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com