উত্তরাখণ্ডজুড়ে ১৭০ মা’দ’রা’সা সিলগালা, ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মুসলিম

ছবি সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হলদোয়ানি জেলায় সাতটি মাদ্রাসা সিল করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। অননুমোদিত ও অনিবন্ধিতভাবে পরিচালিত হওয়ার অভিযোগে রোববার এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে চলতি বছরে রাজ্যটিতে মোট অন্তত ১৭০টি মাদ্রাসা সিল করা হলো।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোববার জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ দল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বনভুলপুরা এলাকায় ‘বিশেষ পরিদর্শন অভিযান’ চালায়। অভিযানে নিবন্ধনবিহীন ও সরকারি নিয়ম লঙ্ঘনকারী মাদ্রাসাগুলোর কার্যক্রম পরীক্ষা করা হয়।

 

অন্যদিকে পুরো ভারত জুড়ে চলছে মাদ্রাসা ভাঙ্গা ও সিলগালার মহাযজ্ঞ। ভারতের ওয়াকফ আইনের আলোকে পান্না জেলার একটি পুরনো মাদ্রাসাকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে প্রশাসনের উপস্থিতিতেই। মাদরাসাটিকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে ‘স্বেচ্ছায়’ সেটি ভাঙা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ধর্মীয় বৈষম্যের এমন ঘৃণ্য নজির পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। এই ধারাবাহিক মাদ্রাসা ভাঙার ঘটনা ও এর সঙ্গে জড়িত সহিংসতা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা এটিকে ধর্মীয় বৈষম্য ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।

 

মুসলিমদের কে হয়রানি করা, বাড়িঘরে হামলা করা এখন ভারতের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কয়েকদিন আগে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একজন মুসলিম নারীর হিজাব জোর করে খুলে ফেলছেন কয়েকজন হিন্দু যুবক। একই সাথে ওই নারীর সাথে থাকা পুরুষকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়। সবচেয়ে বেশি মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে। সম্প্রতি একটি দাঙ্গা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন মুসলিমরা। পুলিশ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে তারা আর মুসলিমদের কোনরকম নিরাপত্তা দিতে পারবেন না যে কারণে বাধ্য হয়েই বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সেখানকার স্থানীয় মুসলমানরা।

 

হলদোয়ানির সিটি ম্যাজিস্ট্রেট এ.পি. বাজপেয়ী বলেন, “আমরা একটি বিশেষ অভিযান চালাচ্ছি। বেশ কিছু মাদ্রাসা যথাযথ নিবন্ধন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিল। ইতিমধ্যে সাতটি মাদ্রাসা সিল করে দেওয়া হয়েছে।”

 

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বনভুলপুরা এলাকায় একটি মাদ্রাসা ভাঙা হয় ‘দখলবিরোধী অভিযান’-এর অংশ হিসেবে। ওই ঘটনায় স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে পুলিশের তীব্র সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন তখন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় এবং স্থানীয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

 

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মাদ্রাসাগুলোকে ঘিরে প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» মুক্তিযোদ্ধা বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন 

» অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম এখন সর্বোচ্চ

» এক ইলিশ বিক্রি হলো ১০ হাজার টাকায়

» ‘নির্বাচনে জোরপূর্বক জয় ছিনিয়ে নেওয়ার সংস্কৃতি আর চাই না’

» তলানির দিকে যাচ্ছে বিএনপি, সংসদ নির্বাচনে ১০০’র বেশি আসন পাবে না: এনসিপি

» বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লাকে বিভাগ করা হবে : খোন্দকার মোশাররফ

» এয়ারটেল গেমিং এরেনা-এর যাত্রা শুরু, ‘পাবজি মোবাইল’ এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ঘোষণা

» দুর্গাপূজায় ব্র্যাক ব্যাংক কার্ডে পাওয়া যাচ্ছেসর্বোচ্চ ৫৫% ডিসকাউন্ট

» নরসিংদীতে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় তিন আসামীকে কারাগারে

» দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে রেস্টুরেন্ট ও লাইফস্টাইল পণ্য কেনাকাটায় নগদের আকর্ষণীয় ক্যাশব্যাক

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

উত্তরাখণ্ডজুড়ে ১৭০ মা’দ’রা’সা সিলগালা, ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন মুসলিম

ছবি সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হলদোয়ানি জেলায় সাতটি মাদ্রাসা সিল করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। অননুমোদিত ও অনিবন্ধিতভাবে পরিচালিত হওয়ার অভিযোগে রোববার এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে চলতি বছরে রাজ্যটিতে মোট অন্তত ১৭০টি মাদ্রাসা সিল করা হলো।

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোববার জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ দল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বনভুলপুরা এলাকায় ‘বিশেষ পরিদর্শন অভিযান’ চালায়। অভিযানে নিবন্ধনবিহীন ও সরকারি নিয়ম লঙ্ঘনকারী মাদ্রাসাগুলোর কার্যক্রম পরীক্ষা করা হয়।

 

অন্যদিকে পুরো ভারত জুড়ে চলছে মাদ্রাসা ভাঙ্গা ও সিলগালার মহাযজ্ঞ। ভারতের ওয়াকফ আইনের আলোকে পান্না জেলার একটি পুরনো মাদ্রাসাকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে প্রশাসনের উপস্থিতিতেই। মাদরাসাটিকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে ‘স্বেচ্ছায়’ সেটি ভাঙা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ধর্মীয় বৈষম্যের এমন ঘৃণ্য নজির পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। এই ধারাবাহিক মাদ্রাসা ভাঙার ঘটনা ও এর সঙ্গে জড়িত সহিংসতা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা এটিকে ধর্মীয় বৈষম্য ও সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।

 

মুসলিমদের কে হয়রানি করা, বাড়িঘরে হামলা করা এখন ভারতের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কয়েকদিন আগে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একজন মুসলিম নারীর হিজাব জোর করে খুলে ফেলছেন কয়েকজন হিন্দু যুবক। একই সাথে ওই নারীর সাথে থাকা পুরুষকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়। সবচেয়ে বেশি মুসলিম নির্যাতন হচ্ছে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে। সম্প্রতি একটি দাঙ্গা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন মুসলিমরা। পুলিশ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে তারা আর মুসলিমদের কোনরকম নিরাপত্তা দিতে পারবেন না যে কারণে বাধ্য হয়েই বাড়িঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সেখানকার স্থানীয় মুসলমানরা।

 

হলদোয়ানির সিটি ম্যাজিস্ট্রেট এ.পি. বাজপেয়ী বলেন, “আমরা একটি বিশেষ অভিযান চালাচ্ছি। বেশ কিছু মাদ্রাসা যথাযথ নিবন্ধন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিল। ইতিমধ্যে সাতটি মাদ্রাসা সিল করে দেওয়া হয়েছে।”

 

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বনভুলপুরা এলাকায় একটি মাদ্রাসা ভাঙা হয় ‘দখলবিরোধী অভিযান’-এর অংশ হিসেবে। ওই ঘটনায় স্থানীয় মুসলমানদের সঙ্গে পুলিশের তীব্র সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন তখন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় এবং স্থানীয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।

 

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে মাদ্রাসাগুলোকে ঘিরে প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com