এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখে প্রথম প্রহরে, যখন দেশজুড়ে চলছে আনন্দ-উৎসব আর মঙ্গল শোভাযাত্রার রঙে রাঙা সকাল, ঠিক তখনই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে বাগেরহাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়া এই শোভাযাত্রাটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় ব্যানার, প্ল্যাকার্ড এবং নানা রঙের সাজসজ্জায় অংশ নেয় জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। উৎসবমুখর পরিবেশে বর্ণিল এই আয়োজন দেখতে রাস্তার দুই পাশে ভিড় জমায় হাজারো মানুষ।
শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে ৭ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় অংশ নিতে আসা শহরের কলেজছাত্রী তাসনিম বলেন, “প্রতিবছরই এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি। বৈশাখী মেলার আয়োজন আমাদের সংস্কৃতিকে ছুঁয়ে যায়। আজকের শোভাযাত্রা ছিল চোখ ধাঁধানো।”
দর্শনার্থী আব্দুল হান্নান বলেন, “এই রকম উৎসব আগে শুধু ঢাকায় দেখতাম। এখন বাগেরহাটেও এমন আয়োজন হয় দেখে খুব ভালো লাগছে। নাতি-নাতনিকে নিয়ে এসেছি, ওরাও খুব উপভোগ করছে।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে আমাদের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে চাই।
বাগেরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির জানান, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে খুশির জোয়ারে বাগেরহাটের মানুষকে আনন্দ দিতে আমরা এবারের মেলাকে আরও বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময় করেছি।নতুন বছরের সূর্য উঠতেই নতুন প্রাণের আগমনে খুশির জোয়ার বইল গোটা বাগেরহাটে । বর্ণিল আয়োজনে উপজেলার সবুজ চত্বর থেকে শুরু হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় শোভাযাত্রার সূচনা হয়। এতে অংশ নিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলা সবুজ চত্বর ছিল উৎসবের রঙে রাঙানো। ভোরের আলো ফুটতেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জমতে শুরু করে।
শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন মোরেলগঞ্জ লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসা,এসিলাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মোরেলগঞ্জ মডেল একাডেমি, জে কে একাডেমী, লাইসিয়াম একাডেমি, বারইখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোরেলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোরেলগঞ্জ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল আজিজ মেমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, রওশনারা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়,সহ উপজেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এর নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের অফিসার বৃন্দসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাংবাদিকবৃন্দ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
শোভাযাত্রায় মুখোশ, পাপেট, বাঁশের তৈরি বাঘ, পাখি, মাছসহ নানা বিশালাকৃতির শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতিনির্ভর মানুষের সংগ্রামের রূপ।
এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় হলুদ, লাল, সবুজ ও কমলা রঙের পোশাকে সেজেছেন সবাই। নারীদের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন চুড়ি এবং শিশুদের মুখে উচ্ছ্বাস-সব মিলিয়ে ছিল প্রাণবন্ত পরিবেশ। ছোট ছোট মুখোশ পরে এবং হাতে পতাকা নিয়ে আনন্দ মিছিলে অংশ নেয় তারা।
আনন্দ মিছিল শেষে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলামের পরিচালনায় প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্ধ বক্তৃতা, আবৃত্তি, একক অভিনয়, দলীয় নৃত্য , এককনৃত্যসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নির্দেশ মোতাবেক উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্ষবরণ উদযাপন করা হয়। সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ চত্বরে বাঙালির ঐতিহ্য কে ধরে রাখার জন্য কলেজ চত্বরে শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয় পহেলা বৈশাখ পালন করেন। সকাল ১০ টায় মোরেলগঞ্জ পুরাতন কৃষি ব্যাংক রোডস্থ উদিচী কার্যালয় থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতি বছর এই শোভাযাত্রার জন্য অপেক্ষা করি। এটি আমাদের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ও ঐক্যের প্রতীক।
শারমিন আকতার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এত মানুষ একসঙ্গে হওয়ার আনন্দই সবচেয়ে বড়। ঐতিহ্যকে এভাবে উদযাপন করার অনুভূতি অন্যরকম।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য ও আনন্দঘন এ শোভাযাত্রাটি পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মোংলা পৌর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তারা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার আয়োজন করে।
শোভাযাত্রায় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক স ম ফরিদ, সদস্য সচিব আ: মান্নান হাওলাদার, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রুস্তম আলী, পৌর বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব জুলফিকর আলী, সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান মানিক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মো: খোরশেদ আলম সহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখ দেশের সবচেয়ে বর্ণিল উৎসবগুলোর একটি, যেখানে বাঙালি জাতি পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে বরণ করে নতুন বছরকে। জাতির ঐক্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতীক এই উৎসব ধর্ম, গোত্র, শ্রেণি বা মত নির্বিশেষে সবাই উদযাপন করে।