‘মানচিত্র বদলাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে‘

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর হুমকি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল ধ্বংস এবং জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে তার মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতে পারে।

 

সোমবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে (ডিএসসিএসসি) ‘জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

 

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শতকের মাঝামাঝি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি হলে ২১টি উপকূলীয় জেলা ডুবে যেতে পারে। কোটি মানুষ গৃহহীন হবে। কৃষি ও মাছ চাষে ব্যবহৃত নদীগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন মানে শুধু মিঠা পানি লবণাক্ত হয়ে যাওয়া নয়; এর মানে আমাদের ভূখণ্ড হারানো, জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়া।

 

তিনি আরও বলেন, ২১০০ সালের মধ্যে ৫২টি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র, যেমন: মালদ্বীপ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। দেশের ৬৫% মানুষ প্রোটিনের জন্য মিঠা পানির মাছের ওপর নির্ভরশীল। লবণাক্ততা এই জীবনরেখা ধ্বংস করে দিতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরার কারণে জিডিপির ১% হারাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এ হার দ্বিগুণ হতে পারে। ফসলহানি, পানির সংকট ও গণ-বাস্তুচ্যুতি সংঘাত সৃষ্টি করবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

 

তেলসমৃদ্ধ দেশের কৌশলগত বিরোধিতা, কিয়োটো চুক্তির ব্যর্থতা ও প্যারিস চুক্তির দুর্বল বাস্তবায়ন নিয়েও সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে গেলে, বাকি দুই-তৃতীয়াংশে প্রচণ্ড চাপ পড়বে। অস্থিরতা তখন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। বিশ্বের ৮০% গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে জি-২০ দেশগুলো। অথচ বাংলাদেশ, জলবায়ু ঝুঁকিতে সপ্তম অবস্থানে থাকা একটি দেশ, সবচেয়ে বেশি ভুগছে।

 

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সাল ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। সমুদ্রের উষ্ণতা ও হিমবাহ গলনের হার দ্বিগুণ হয়েছে। বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা আমাদের মতো দেশের জন্য মৃত্যুদণ্ড। সব দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়বে— যা মানবজাতির জন্য সহনশীল মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে ১১টি জলবায়ু ‘চাপ অঞ্চল’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

 

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শুধু অর্থ নয়, উন্নয়নের ধরনই পাল্টাতে হবে। যেমন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি। ভবন নির্মাণেও প্রাকৃতিক বায়ুপথ ও প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসঙ্গে পরিবেশ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

 

তিনি আরও বলেন, আমি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিলে তারা বলে, সারাদেশের জন্য মাত্র ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। এ কারণে পরিবেশ দূষণ বিরোধী অভিযানগুলোতে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করছি।

 

এসময় ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী, ডেপুটি-কমান্ড্যান্ট কমোডোর মোস্তাক আহমেদ এবং চিফ ইন্সট্রাক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসানসহ ২০২৫ ব্যাচের অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ফ্যাসিবাদী প্রকল্প’র ঐক্য এনসিপি করবে না: মাহবুব আলম

» বাংলার মাটিতে চাঁদাবাজদের কবর রচনা করা হবে: রেজাউল করীম

» কারও বিচার করতে হলে তা বিএনপি করবে: আমীর খসরু

» শাপলার গণহত্যার সমর্থক শাহবাগীদেরও বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম

» দিল্লি নয় পিন্ডি নয় সবার আগে বাংলাদেশ: তারেক রহমান

» আমরা নাকি কোনো কোনো দেশের এজেন্ট: সালাহউদ্দিন আহমেদ

» এই সরকার বেশিদিন থাকলে আ. লীগের চেয়ে খারাপ হবে : মির্জা আব্বাস

» সব মামলা থেকে দণ্ড ও সাজা মুক্ত হলেন তারেক রহমান

» প্রতি সপ্তাহে দুই দিন দর্শনার্থীর জন্য বন্ধ থাকবে সচিবালয়

» যেকোনো পরিস্থিতিতে ছাব্বিশের জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

‘মানচিত্র বদলাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে‘

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর হুমকি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল ধ্বংস এবং জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে তার মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতে পারে।

 

সোমবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে (ডিএসসিএসসি) ‘জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

 

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শতকের মাঝামাঝি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি হলে ২১টি উপকূলীয় জেলা ডুবে যেতে পারে। কোটি মানুষ গৃহহীন হবে। কৃষি ও মাছ চাষে ব্যবহৃত নদীগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন মানে শুধু মিঠা পানি লবণাক্ত হয়ে যাওয়া নয়; এর মানে আমাদের ভূখণ্ড হারানো, জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়া।

 

তিনি আরও বলেন, ২১০০ সালের মধ্যে ৫২টি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র, যেমন: মালদ্বীপ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। দেশের ৬৫% মানুষ প্রোটিনের জন্য মিঠা পানির মাছের ওপর নির্ভরশীল। লবণাক্ততা এই জীবনরেখা ধ্বংস করে দিতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরার কারণে জিডিপির ১% হারাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এ হার দ্বিগুণ হতে পারে। ফসলহানি, পানির সংকট ও গণ-বাস্তুচ্যুতি সংঘাত সৃষ্টি করবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

 

তেলসমৃদ্ধ দেশের কৌশলগত বিরোধিতা, কিয়োটো চুক্তির ব্যর্থতা ও প্যারিস চুক্তির দুর্বল বাস্তবায়ন নিয়েও সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে গেলে, বাকি দুই-তৃতীয়াংশে প্রচণ্ড চাপ পড়বে। অস্থিরতা তখন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। বিশ্বের ৮০% গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে জি-২০ দেশগুলো। অথচ বাংলাদেশ, জলবায়ু ঝুঁকিতে সপ্তম অবস্থানে থাকা একটি দেশ, সবচেয়ে বেশি ভুগছে।

 

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সাল ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। সমুদ্রের উষ্ণতা ও হিমবাহ গলনের হার দ্বিগুণ হয়েছে। বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা আমাদের মতো দেশের জন্য মৃত্যুদণ্ড। সব দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়বে— যা মানবজাতির জন্য সহনশীল মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, যেখানে ১১টি জলবায়ু ‘চাপ অঞ্চল’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

 

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শুধু অর্থ নয়, উন্নয়নের ধরনই পাল্টাতে হবে। যেমন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি। ভবন নির্মাণেও প্রাকৃতিক বায়ুপথ ও প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। সেইসঙ্গে পরিবেশ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

 

তিনি আরও বলেন, আমি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিলে তারা বলে, সারাদেশের জন্য মাত্র ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। এ কারণে পরিবেশ দূষণ বিরোধী অভিযানগুলোতে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করছি।

 

এসময় ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী, ডেপুটি-কমান্ড্যান্ট কমোডোর মোস্তাক আহমেদ এবং চিফ ইন্সট্রাক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসানসহ ২০২৫ ব্যাচের অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com