প্রার্থীদের জীবনঝুঁকি, নাশকতার বিস্তার : সরকারের অগ্নিপরীক্ষা

সংগৃহীত ছবি

 

মোস্তফা কামাল :বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুই মাস পর সুস্থ হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ফিরেছেন সেখানকার বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। পরিবার ও স্বজনদের তীব্র আপত্তি তাঁর নির্বাচনের মাঠে থাকা নিয়ে। এরশাদ উল্লাহকে হারানোর মারাত্মক ভয় ভর করেছে তাদের ওপর।

উদ্বেগের তালিকায় তফসিল ঘোষণার এক দিন পর যোগ হলেন খোদ রাজধানীতে মাথায় গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। এখনো হামলা বা গুলির শিকার না হওয়া প্রার্থীদের জন্যও পরিবেশটা আতঙ্কের। নির্বাচনপূর্ব সময়ে বরাবরই কিছু বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিচিত। এবারের আলামত আরেকটু নাজুক। নাশকতামূলক এমন তৎপরতা কঠোর হাতে দমনের বিকল্প নেই। সেই কঠিন পরীক্ষায় দেশ, সরকার।

এ পরীক্ষার মাঝেই যোগ হয়েছে কোনো ঘটনায় তাৎক্ষণিক কাউকে দোষারোপ বা দোষী সাব্যস্ত করে মববাজি। এক সাংবাদিককে হাদির খুনি আখ্যায়িত করে পিটুনি, এক প্রার্থীর দিকে আঙুল তুলে স্লোগান বা অপদস্থ করার চেষ্টা প্রকৃত দোষীদের জন্য সুবিধাজনক। ফ্যাসিবাদীদের জন্য তা লাভজনক।

আলামত বলছে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তাদের অরাজকতা তত বাড়বে। বরং এরশাদ উল্লাহ ও হাদির ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয় রয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকায় এই দুই ঘটনায়ই স্পষ্ট দুর্বৃত্তরা প্রার্থীদের ঘিরে ফেলছে কোনো না কোনোভাবে। থাকছে ধারেকাছেই। মানে টার্গেটে এগোচ্ছে।

আর টার্গেট কিলিং ঠেকানো অনেকটাই অসাধ্য। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও দিন কয়েক আগে বলেছেন, তা রোখার ম্যাজিক সরকারের হাতে নেই। অন-অফ করার সুইচ নেই। এমপি প্রার্থীরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে পারেন বলে প্রকাশ্যেই অভিযোগসহ শঙ্কা রয়েছে। তা গণমাধ্যমে আসছে, কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

 

নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, বিপ্লব-পরবর্তী দেড় বছরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বা আগে পরিস্থিতির ওপর যে ধরনের পর্যালোচনা বা অনুধাবনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে বেশ ঘাটতি। হারানো বা খোয়া যাওয়া বিপুলসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। তার ওপর নাশকতা, লাশ ফেলাসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রত্যক্ষ উসকানি চলছে নিয়মিত। তাই বলে নির্বাচন পেছানোর চিন্তাও করা যাবে না। নির্বাচন হবেই। এই পরীক্ষায় সরকারকে, দেশকে জিততেই হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। নির্বাচনই একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। সব শ্রেণির মানুষ অপেক্ষমাণ একটি নির্বাচনের জন্য। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ কেবল স্বাভাবিক নয়, সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের দিক থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা স্পষ্ট হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়েও বাঁচবে না। পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার লক্ষণ নির্মূল করার সাঁড়াশি পদক্ষেপ দৃশ্যমান হতে হবে। হেদায়েত, পিঠ মোছা দেওয়া আহবান আর নয়, দরকার অ্যাকশন। সুস্থ রাজনীতি করার মানসিকতাসম্পন্ন অনেক লোক দেশে আছেন। সেই পরিবেশ দেখলে তাঁরা সাহসী হবেন। দেশে ব্যবসা-বিনিয়োগের অনেক সুযোগও আছে। এ জন্য সামর্থ্যবান ও উপযুক্ত ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীও আছেন। কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক তরুণ রয়েছেন। তাঁদের আস্থা-ভরসা দেওয়ার স্টিয়ারিংয়ে সরকার। সরকারকেই দিতে হবে সেই কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির নিশ্চয়তা। সেখানে ঘাটতি-কমতির সুযোগটা নিচ্ছে নাশকতাকারীরা। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিচ্ছে নাশকতার জাল। ঘটাচ্ছে নানা নাশকতা। নির্বাচন সামনে রেখে তারা আরো তেজোদীপ্ত। সাধারণ মানুষ, দোকানদার, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নির্বাচনের প্রার্থীরাও এখন তাদের শিকার হচ্ছেন। প্রার্থীদের পেটে-মাথায় গুলি মারছে। নির্বাচন অফিসেও আগুন দিচ্ছে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে। নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে এটি কত বড় নাশকতা, ভাবা যায়? চট্টগ্রামে জনসংযোগকালে এরশাদ উল্লাহকে টার্গেট করে গুলি ছোড়া হয়েছে। ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে কিভাবে অবলীলায় চলে যায়—ভিডিও ফুটেজে তা দেখা গেছে।

বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের মাঝে কয়েক উপদেষ্টাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ জোর দিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিঃসংকোচে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির ওপরও জোর দিয়েছেন। বাস্তবে তা হয়নি। হয়ে চলছে উল্টো ঘটনা। এসব ঘটনাকে সাধারণ বা বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। এসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি অশনিসংকেত। অন্তর্বর্তী সরকারও এসব ঘটনাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার একটা চেষ্টা হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতির ভাষা পরিষ্কার—তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না।’

মানুষ তো তা-ই চায়। সেই অপেক্ষাই করছে। হাতে গোনা কিছু ছাড়া দেশের সব মানুষই চায় সরকার আর বরদাশত না করুক, অ্যাকশনে নামুক। প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতিদৃষ্টে এখন চাই পদক্ষেপ। নিশ্চয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে কেউ ‘না’ করেনি। বরং দেশের ছাত্র-জনতা সেই সমর্থন কবেই দিয়ে রেখেছে এ সরকারকে। ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দিব না। আঘাত যাই আসুক, যত ঝড়-তুফান আসুক, কোনো শক্তিই আগামী নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।’—শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের এ ঘোষণার বাস্তবায়ন হোক। তিনি নিজেই তা নিজের ওপর ফরজ করে দিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনবিরোধী শক্তি অরাজকতা করবে, নাশকতা করবে—সেটা ধারণার বাইরে নয়, বরং স্বাভাবিক। তা বিবেচনায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট

ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» যানবাহনের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

» ১৬ মাসে আ.লীগের পুনর্বাসন করা হয়েছে: রাশেদ খান

» মেসি কাণ্ডে মুখ খুললেন শুভশ্রী

» দাঁড়িয়ে থাকা বাসে হঠাৎ আগুন

» বিজয় দিবসে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টা

» রাবিতে বিজয় দিবস উদযাপিত

» নির্বাচন, রাজনীতি এবং মানুষের ক্লান্তি

» মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিজয় দিবস উদযাপিত

» ফ্যাসিস্ট শক্তি নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে : নাহিদ ইসলাম

» স্বাধীনতা বিরোধীদের চেষ্টা নস্যাৎ করে দেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে : মির্জা ফখরুল

 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

প্রার্থীদের জীবনঝুঁকি, নাশকতার বিস্তার : সরকারের অগ্নিপরীক্ষা

সংগৃহীত ছবি

 

মোস্তফা কামাল :বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুই মাস পর সুস্থ হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ফিরেছেন সেখানকার বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। পরিবার ও স্বজনদের তীব্র আপত্তি তাঁর নির্বাচনের মাঠে থাকা নিয়ে। এরশাদ উল্লাহকে হারানোর মারাত্মক ভয় ভর করেছে তাদের ওপর।

উদ্বেগের তালিকায় তফসিল ঘোষণার এক দিন পর যোগ হলেন খোদ রাজধানীতে মাথায় গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। এখনো হামলা বা গুলির শিকার না হওয়া প্রার্থীদের জন্যও পরিবেশটা আতঙ্কের। নির্বাচনপূর্ব সময়ে বরাবরই কিছু বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ পরিচিত। এবারের আলামত আরেকটু নাজুক। নাশকতামূলক এমন তৎপরতা কঠোর হাতে দমনের বিকল্প নেই। সেই কঠিন পরীক্ষায় দেশ, সরকার।

এ পরীক্ষার মাঝেই যোগ হয়েছে কোনো ঘটনায় তাৎক্ষণিক কাউকে দোষারোপ বা দোষী সাব্যস্ত করে মববাজি। এক সাংবাদিককে হাদির খুনি আখ্যায়িত করে পিটুনি, এক প্রার্থীর দিকে আঙুল তুলে স্লোগান বা অপদস্থ করার চেষ্টা প্রকৃত দোষীদের জন্য সুবিধাজনক। ফ্যাসিবাদীদের জন্য তা লাভজনক।

আলামত বলছে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তাদের অরাজকতা তত বাড়বে। বরং এরশাদ উল্লাহ ও হাদির ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয় রয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকায় এই দুই ঘটনায়ই স্পষ্ট দুর্বৃত্তরা প্রার্থীদের ঘিরে ফেলছে কোনো না কোনোভাবে। থাকছে ধারেকাছেই। মানে টার্গেটে এগোচ্ছে।

আর টার্গেট কিলিং ঠেকানো অনেকটাই অসাধ্য। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও দিন কয়েক আগে বলেছেন, তা রোখার ম্যাজিক সরকারের হাতে নেই। অন-অফ করার সুইচ নেই। এমপি প্রার্থীরা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে পারেন বলে প্রকাশ্যেই অভিযোগসহ শঙ্কা রয়েছে। তা গণমাধ্যমে আসছে, কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

 

নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, বিপ্লব-পরবর্তী দেড় বছরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বা আগে পরিস্থিতির ওপর যে ধরনের পর্যালোচনা বা অনুধাবনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে বেশ ঘাটতি। হারানো বা খোয়া যাওয়া বিপুলসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। তার ওপর নাশকতা, লাশ ফেলাসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রত্যক্ষ উসকানি চলছে নিয়মিত। তাই বলে নির্বাচন পেছানোর চিন্তাও করা যাবে না। নির্বাচন হবেই। এই পরীক্ষায় সরকারকে, দেশকে জিততেই হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। নির্বাচনই একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। সব শ্রেণির মানুষ অপেক্ষমাণ একটি নির্বাচনের জন্য। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ কেবল স্বাভাবিক নয়, সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের দিক থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণভাবে করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা স্পষ্ট হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়েও বাঁচবে না। পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার লক্ষণ নির্মূল করার সাঁড়াশি পদক্ষেপ দৃশ্যমান হতে হবে। হেদায়েত, পিঠ মোছা দেওয়া আহবান আর নয়, দরকার অ্যাকশন। সুস্থ রাজনীতি করার মানসিকতাসম্পন্ন অনেক লোক দেশে আছেন। সেই পরিবেশ দেখলে তাঁরা সাহসী হবেন। দেশে ব্যবসা-বিনিয়োগের অনেক সুযোগও আছে। এ জন্য সামর্থ্যবান ও উপযুক্ত ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীও আছেন। কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক তরুণ রয়েছেন। তাঁদের আস্থা-ভরসা দেওয়ার স্টিয়ারিংয়ে সরকার। সরকারকেই দিতে হবে সেই কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির নিশ্চয়তা। সেখানে ঘাটতি-কমতির সুযোগটা নিচ্ছে নাশকতাকারীরা। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিচ্ছে নাশকতার জাল। ঘটাচ্ছে নানা নাশকতা। নির্বাচন সামনে রেখে তারা আরো তেজোদীপ্ত। সাধারণ মানুষ, দোকানদার, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নির্বাচনের প্রার্থীরাও এখন তাদের শিকার হচ্ছেন। প্রার্থীদের পেটে-মাথায় গুলি মারছে। নির্বাচন অফিসেও আগুন দিচ্ছে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে। নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে এটি কত বড় নাশকতা, ভাবা যায়? চট্টগ্রামে জনসংযোগকালে এরশাদ উল্লাহকে টার্গেট করে গুলি ছোড়া হয়েছে। ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে কিভাবে অবলীলায় চলে যায়—ভিডিও ফুটেজে তা দেখা গেছে।

বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের মাঝে কয়েক উপদেষ্টাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ জোর দিয়ে বলেছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নিঃসংকোচে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির ওপরও জোর দিয়েছেন। বাস্তবে তা হয়নি। হয়ে চলছে উল্টো ঘটনা। এসব ঘটনাকে সাধারণ বা বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। এসব ঘটনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি অশনিসংকেত। অন্তর্বর্তী সরকারও এসব ঘটনাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার একটা চেষ্টা হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতির ভাষা পরিষ্কার—তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না।’

মানুষ তো তা-ই চায়। সেই অপেক্ষাই করছে। হাতে গোনা কিছু ছাড়া দেশের সব মানুষই চায় সরকার আর বরদাশত না করুক, অ্যাকশনে নামুক। প্রধান উপদেষ্টার বিবৃতিদৃষ্টে এখন চাই পদক্ষেপ। নিশ্চয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে কেউ ‘না’ করেনি। বরং দেশের ছাত্র-জনতা সেই সমর্থন কবেই দিয়ে রেখেছে এ সরকারকে। ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দিব না। আঘাত যাই আসুক, যত ঝড়-তুফান আসুক, কোনো শক্তিই আগামী নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।’—শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের এ ঘোষণার বাস্তবায়ন হোক। তিনি নিজেই তা নিজের ওপর ফরজ করে দিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনবিরোধী শক্তি অরাজকতা করবে, নাশকতা করবে—সেটা ধারণার বাইরে নয়, বরং স্বাভাবিক। তা বিবেচনায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে ইতিহাসের সেরা ও স্মরণীয় নির্বাচন করা দূরে থাক, মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাও কঠিন হবে।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট

ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

সূএ : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,

ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,

নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন: ই-মেইল : [email protected],

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com