গর্ভকালীন ডায়াবেটিস : মা ও নবজাতাকের অসুস্থতা কিভাবে

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট :গর্ভাবস্থায় মায়েরা সাধারণত যে সকল শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয় তার মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অন্যতম একটি সমস্যা। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েরা নানা ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে- যেমন উচ্চরক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, কিডনীর সমস্যা, এমনকি পরবর্তী জীবনে এই ডায়াবেটিস থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মার নবজাতকের বিশেষ ধরনের শারীরিক লক্ষণ এবং জটিলতা দেখতে পাওয়া যায়। যা সময়মত চিকিৎসা প্রদান করা জরুরি।

 

ডায়াবেটিক মায়ের নবজাতকের লক্ষণ সমূহ:

১. গোল চেহারা এবং ওজন বেশি হয়।
২. রক্তের আধিক্য থাকার জন্য নবজাতককে লাল বর্ণ দেখায়।
৩. কানে বেশি লোম থাকে যা অন্যান্য স্বাভাবিক নবজাতকের কানে দেখতে পাওয়া যায় না।

নবজাতকের জটিলতাঃ

১. অনেক ক্ষেত্রে সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে ফলে নবজাতকের ফুসফুস পরিণত না হওয়ায় শ্বাসজনিত জটিলতা দেখা যায়।
২. ওজন বেশি থাকার জন্য জন্মের সময় বিভিন্ন প্রসব জনিত জটিলতা যেমন কণ্ঠের হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, মুখের স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতা, কাধের মাংস পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৩. বাচ্চা জন্মের পর দেরি করে কাঁদতে পারে।

৪. নবজাতকের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে।

৫. কখনও কখনও রক্তে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে গিয়ে নবজাতকের খিচুনী হতে পারে।
৬. রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে।
৭. জন্মগত বিভিন্ন ত্রুটির সম্ভাবনা অন্যান্য নবজাতকের চাইতে বেশি থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন হৃৎপিণ্ড, কিডনী, স্নায়ুতন্ত্র, খাদ্যনালীর বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি দেখা যেতে পারে।
৮. নবজাতকের জন্মের ওজন বেশি থাকায় পরবর্তীতে ওজন বেড়ে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবং ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।

করণীয়ঃ

১. নবজাতককে এমন হাসপাতাল বা স্থানে ডেলিভারি করাতে হবে যেখানে নিবিড় ভাবে বাচ্চা পর্যবেক্ষণের সুযোগ রয়েছে।
২. রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখতে হবে এবং শিশু জন্মের পর পর অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি কমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ইঞ্জেকশন স্যালাইনের মাধ্যমে গ্লুকোজ সরবরাহ করে শিশুর মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
৩. প্রয়োজনে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে।
৪. গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রক্তের গ্লুকোজ সঠিক নিয়ম এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তাহলে নবজাতকের এসব জটিলতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

লেখক: শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, এমডি পেডিয়াট্রিক, আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর।

সূূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ন্যুনতম খাবারও দেওয়া হচ্ছে না ফিলিস্তিনি বন্দিদের

» ঘুম থেকে উঠে দেখি ফেসবুক আইডি ডিজেবল: ভিপি প্রার্থী আবিদ

» সুপ্রভাত বিষন্নতা

» প্রয়োজন ৩০ বিলিয়ন ডলার, ২ বিলিয়ন আনতেই ‘জান বের হয়ে যায়’

» পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে একটি গোষ্ঠী সাইবার অ্যাটাক দিচ্ছে : ছাত্রদল

» শ্বাসকষ্ট বেড়েছে নুরের, হাসপাতালে ভিড় না করার অনুরোধ

» বিশেষ অভিযানে মোট ১ হাজার ৬৭৭ জন গ্রেফতার

» ট্রাম্পের ‘শেষ সতর্কবার্তার’ পর আলোচনায় আগ্রহী হামাস

» ডাকসু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই: ডিএমপি

» আজানের মতো ইকামতেরও কি জবাব দিতে হয়?

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস : মা ও নবজাতাকের অসুস্থতা কিভাবে

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট :গর্ভাবস্থায় মায়েরা সাধারণত যে সকল শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয় তার মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অন্যতম একটি সমস্যা। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েরা নানা ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে- যেমন উচ্চরক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, কিডনীর সমস্যা, এমনকি পরবর্তী জীবনে এই ডায়াবেটিস থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মার নবজাতকের বিশেষ ধরনের শারীরিক লক্ষণ এবং জটিলতা দেখতে পাওয়া যায়। যা সময়মত চিকিৎসা প্রদান করা জরুরি।

 

ডায়াবেটিক মায়ের নবজাতকের লক্ষণ সমূহ:

১. গোল চেহারা এবং ওজন বেশি হয়।
২. রক্তের আধিক্য থাকার জন্য নবজাতককে লাল বর্ণ দেখায়।
৩. কানে বেশি লোম থাকে যা অন্যান্য স্বাভাবিক নবজাতকের কানে দেখতে পাওয়া যায় না।

নবজাতকের জটিলতাঃ

১. অনেক ক্ষেত্রে সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করে ফলে নবজাতকের ফুসফুস পরিণত না হওয়ায় শ্বাসজনিত জটিলতা দেখা যায়।
২. ওজন বেশি থাকার জন্য জন্মের সময় বিভিন্ন প্রসব জনিত জটিলতা যেমন কণ্ঠের হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, মুখের স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতা, কাধের মাংস পেশির দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৩. বাচ্চা জন্মের পর দেরি করে কাঁদতে পারে।

৪. নবজাতকের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে।

৫. কখনও কখনও রক্তে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে গিয়ে নবজাতকের খিচুনী হতে পারে।
৬. রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে নবজাতকের জন্ডিস হতে পারে।
৭. জন্মগত বিভিন্ন ত্রুটির সম্ভাবনা অন্যান্য নবজাতকের চাইতে বেশি থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন হৃৎপিণ্ড, কিডনী, স্নায়ুতন্ত্র, খাদ্যনালীর বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি দেখা যেতে পারে।
৮. নবজাতকের জন্মের ওজন বেশি থাকায় পরবর্তীতে ওজন বেড়ে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবং ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।

করণীয়ঃ

১. নবজাতককে এমন হাসপাতাল বা স্থানে ডেলিভারি করাতে হবে যেখানে নিবিড় ভাবে বাচ্চা পর্যবেক্ষণের সুযোগ রয়েছে।
২. রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখতে হবে এবং শিশু জন্মের পর পর অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি কমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ইঞ্জেকশন স্যালাইনের মাধ্যমে গ্লুকোজ সরবরাহ করে শিশুর মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
৩. প্রয়োজনে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে।
৪. গর্ভকালীন সময়ে মায়ের রক্তের গ্লুকোজ সঠিক নিয়ম এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, তাহলে নবজাতকের এসব জটিলতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

লেখক: শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, এমডি পেডিয়াট্রিক, আলোক মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর।

সূূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com