অর্থ পাচারের টাকায় বিদেশে বাপবেটার ‘বাড়ি বিলাস’

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : দুবাইয়ে অর্থ পাচার করে বাড়ি বিলাস সিলেটের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্ণধার বাপ-ছেলে। এই দুই ব্যক্তি হলেন- ফকর ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তার ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।

 

প্রথমে কয়লা ও পাথর আমদানির আড়ালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টাকা পাচার করেছেন এবং সেই টাকায় কিনেছেন দেশটির গোল্ডেন ভিসা। এরপর জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল অট্টালিকা। আবার দেশেও সম্পদের প্রকৃত তথ্য আয়কর নথিতে গোপন করে অর্ধশত কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে (প্লট নং-৬৮১৬৪৮১) এক ৯৫০ স্কয়ার মিটার জায়গার ওপর ৩৩ তলাবিশিষ্ট সাফায়া ৩২ নামে একটি ভবন নির্মাণ করে দার আল কারামা নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এই কোম্পানির মালিকানায় আছেন ফকর উদ্দিন ও তার ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।

 

এই ভবনে ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার সিঙ্গেল বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা থেকে শুরু।

 

অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়ায় ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট (সিআইসি) পিতাপুত্রের কর ফাঁকি ও দেশের সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফকর ব্রাদার্স সংশ্লিষ্ট ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে সিআইসির উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত দল দুবাইয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অর্থ পাচার অনুসন্ধানে যায়। ওই তদন্ত দল, ফকর ব্রাদার্সসহ শতাধিক ব্যক্তির অর্থ পাচারের প্রমাণ পায়। ইতোমধ্যে একাধিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।

 

সিআইসির প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সম্পদ ও বিনিয়োগের তথ্য গোপন করে ফকর ব্রাদার্সের ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ফয়েজ হাসান ফেরদৌস, ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান কর ফাঁকি দিয়েছেন। এই করদাতারা নিজ নামে পাথর ও কয়লা আমদানি করে তা তাদের অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথিতে ২০১৭-১৮ করবর্ষ হতে প্রদর্শনের মাধ্যমে শুধু সারচার্জ ও এ সংক্রান্ত জরিমানা বাবদ ৫০ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

এছাড়া আলোচ্য করদাতারা নিজ নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমি ক্রয় ও ওই জমিতে স্পোর্টস কমপ্লেক্স হতে ভাড়ার আয় গোপন করেছেন। পাশাপাশি গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় এবং দামি গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত বিনিয়োগের তথ্য গোপনের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

এছাড়াও তাদের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের নামে গুলশানে কমার্শিয়াল স্পেস ক্রয়ে প্রকৃত বিনিয়োগ গোপনের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। এ সংক্রান্ত আয়কর এবং জরিমানা বাবদ ৮ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

এতে বলা হয়েছে, ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও ফকরুস সালেহীন নাহিয়ান দুবাইতে (৩২, জেভিসি ডিস্ট্রিক্ট ১২ জুমেইরাহ ভিলেজ সার্কেল, আল বারসা) নির্মাণাধীন ৩৩ তলা বিশিষ্ট টাওয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। সাফায় ৩২ নামের প্রকল্পটিতে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট, ১ বেডরুম, ২ বেডরুম এবং ৩ বেডরুম অ্যাপার্টমেন্ট মিলে সর্বমোট ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই ভবনে কমন স্পেস, জিম, সুইমিংপুলসহ নাগরিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই প্রকল্পে বিনিয়োগের তথ্য তাদের কর নথিতে দেখানো হয়নি।

 

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ফকর ব্রাদার্সের কর ফাঁকি অনুসন্ধান শুরু করা হয়। প্রাথমিকভাবে কর ফাঁকির প্রমাণও পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানের হাত থেকে বাঁচতে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির অনসুন্ধান বন্ধ করতে ইতোমধ্যে জাতীয় দলের সাবেক একজন ক্রিকেটার, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা, সাবেক সেনাসদস্য, আয়কর ও কাস্টমস কর্মকর্তা, এমনকি একজন গার্মেন্টস মালিকও সিআইসি এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছেন।

 

আয়কর আইনে বাংলাদেশি করদাতাদের বিদেশে রক্ষিত সম্পদ রিটার্নে প্রদর্শনের বাধ্য-বাধকতা আছে। যদি রিটার্নে সম্পদ প্রদর্শন করা না হয় তাহলে জরিমানার বিধান রয়েছে।

 

আয়কর আইনের ২১ ধারায় বলা আছে, কোনো বাংলাদেশি করদাতার রিটার্নে অপ্রদর্শিত বিদেশে থাকা সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেলে এবং সম্পত্তি অর্জনের উৎস বা প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা উপস্থাপনে তিনি ব্যর্থ হলে অথবা ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে ওই সম্পত্তির বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায় করবেন উপ-কর কমিশনার। তবে জরিমানা আরোপের ক্ষেত্রে করদাতাকে যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ দিতে হবে। জরিমানার টাকা করদাতার কোনো পরিসম্পদ বা করদাতার পক্ষে অন্য কেউ কোনো পরিসম্পদ অর্জন করলে তা বিক্রি বা বাজেয়াপ্ত করে আদায় করা যাবে। বিদেশে থাকা সম্পত্তির বিষয়ে দেশে ও বিদেশে অনুসন্ধান ও তদন্ত করা যাবে। প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে অনুসন্ধানকারীরা সম্পত্তি ও সম্পত্তির এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন।

 

এ বিষয়ে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান বলেন, দুবাইতে সাফায়া ৩২ নামে যেই প্রোপার্টির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে একটি ইন্টিলেকচুয়্যাল প্রোপার্টি। এই ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির পার্টনার হয়েছি। যেটার চুক্তি ২০২৪ সালের ২ জুলাই করা হয়েছে। সেই চুক্তিনামা আমাদের কাছে আছে। অর্থাৎ আয়কর আইন অনুযায়ী এখনো প্রোপার্টির বিস্তারিত আয়কর আইনে দেখানোর সুযোগ আছে। তাই এটিকে এখনই কর ফাঁকি বলা যাবে না।

 

তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরায় আমাদের জমিতে দ্য স্টেডিয়াম নামে যেই খেলার মাঠের আয় দেখানো হচ্ছে, তার সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। জায়গাটি আমাদের কয়েকজন কর্মচারীকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তারা এটিকে সামান্য ডেভেলপ করে বাচ্চাদের ফুটবল খেলার মাঠ হিসাবে রূপান্তর করেছে। এখান থেকে যে আয় হয়, সেটিও তারা নেয়।

 

কর ফাঁকি দেওয়া প্রসঙ্গে নাহিয়ান বলেন, আমরা ব্যবসা করি। আইন-কানুন কম জানি। আমাদের ভুল হতেই পারে। কিন্তু এনবিআর আমাদের ফার্ম ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসাবে ট্যাক্স কার্ড দিলেও তারাই এখন আবার বলছে, আমাদের ব্যবসার ধরন প্রোপাইটারশিপ। ভুল আমরা করলেও ভুল তো তাদেরও আছে। আমাদের ভুলের শাস্তি তারা দিচ্ছে, তাদের ভুলের শাস্তি কে দেবে?  সূূএ :বার্তা বাজার ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জব্বার মন্ডলের নামে একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি, থানায় জিডি

» ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

» আমি একটা সংগঠন করতাম, যেটা বলতে এখন লজ্জা হয়: জামায়াত আমির

» ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারের ঈদ আনন্দমুখর হয়ে উঠেছে: প্রিন্স

» সংস্কার সংস্কারের মতো, নির্বাচন নির্বাচনের মতো চলবে: মির্জা ফখরুল

» কলকাতাকে হারিয়ে যে রেকর্ড গড়লো মুম্বাই

» অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

» হার্ট ভালো রাখতে যে ৫ ফল খাবেন

» আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করার সবুজ সংকেত দেননি শেখ হাসিনা

» চীনের যুদ্ধ বিমানে বাংলার আকাশ রক্ষা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অর্থ পাচারের টাকায় বিদেশে বাপবেটার ‘বাড়ি বিলাস’

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : দুবাইয়ে অর্থ পাচার করে বাড়ি বিলাস সিলেটের ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ফকর ব্রাদার্সের দুই কর্ণধার বাপ-ছেলে। এই দুই ব্যক্তি হলেন- ফকর ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও তার ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।

 

প্রথমে কয়লা ও পাথর আমদানির আড়ালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টাকা পাচার করেছেন এবং সেই টাকায় কিনেছেন দেশটির গোল্ডেন ভিসা। এরপর জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল অট্টালিকা। আবার দেশেও সম্পদের প্রকৃত তথ্য আয়কর নথিতে গোপন করে অর্ধশত কোটি টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ভিলেজ সিটিতে (প্লট নং-৬৮১৬৪৮১) এক ৯৫০ স্কয়ার মিটার জায়গার ওপর ৩৩ তলাবিশিষ্ট সাফায়া ৩২ নামে একটি ভবন নির্মাণ করে দার আল কারামা নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এই কোম্পানির মালিকানায় আছেন ফকর উদ্দিন ও তার ছেলে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান।

 

এই ভবনে ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার সিঙ্গেল বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা থেকে শুরু।

 

অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়ায় ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ইউনিট (সিআইসি) পিতাপুত্রের কর ফাঁকি ও দেশের সম্পদের তথ্য খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ফকর ব্রাদার্স সংশ্লিষ্ট ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে সিআইসির উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত দল দুবাইয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অর্থ পাচার অনুসন্ধানে যায়। ওই তদন্ত দল, ফকর ব্রাদার্সসহ শতাধিক ব্যক্তির অর্থ পাচারের প্রমাণ পায়। ইতোমধ্যে একাধিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।

 

সিআইসির প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সম্পদ ও বিনিয়োগের তথ্য গোপন করে ফকর ব্রাদার্সের ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ, ফালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ফয়েজ হাসান ফেরদৌস, ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান কর ফাঁকি দিয়েছেন। এই করদাতারা নিজ নামে পাথর ও কয়লা আমদানি করে তা তাদের অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের আয়কর নথিতে ২০১৭-১৮ করবর্ষ হতে প্রদর্শনের মাধ্যমে শুধু সারচার্জ ও এ সংক্রান্ত জরিমানা বাবদ ৫০ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

এছাড়া আলোচ্য করদাতারা নিজ নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমি ক্রয় ও ওই জমিতে স্পোর্টস কমপ্লেক্স হতে ভাড়ার আয় গোপন করেছেন। পাশাপাশি গুলশানে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় এবং দামি গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকৃত বিনিয়োগের তথ্য গোপনের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

এছাড়াও তাদের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের নামে গুলশানে কমার্শিয়াল স্পেস ক্রয়ে প্রকৃত বিনিয়োগ গোপনের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। এ সংক্রান্ত আয়কর এবং জরিমানা বাবদ ৮ কোটি টাকার আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন।

 

এতে বলা হয়েছে, ফকর উদ্দিন আলী আহমেদ ও ফকরুস সালেহীন নাহিয়ান দুবাইতে (৩২, জেভিসি ডিস্ট্রিক্ট ১২ জুমেইরাহ ভিলেজ সার্কেল, আল বারসা) নির্মাণাধীন ৩৩ তলা বিশিষ্ট টাওয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। সাফায় ৩২ নামের প্রকল্পটিতে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট, ১ বেডরুম, ২ বেডরুম এবং ৩ বেডরুম অ্যাপার্টমেন্ট মিলে সর্বমোট ২২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই ভবনে কমন স্পেস, জিম, সুইমিংপুলসহ নাগরিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই প্রকল্পে বিনিয়োগের তথ্য তাদের কর নথিতে দেখানো হয়নি।

 

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ফকর ব্রাদার্সের কর ফাঁকি অনুসন্ধান শুরু করা হয়। প্রাথমিকভাবে কর ফাঁকির প্রমাণও পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানের হাত থেকে বাঁচতে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির অনসুন্ধান বন্ধ করতে ইতোমধ্যে জাতীয় দলের সাবেক একজন ক্রিকেটার, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা, সাবেক সেনাসদস্য, আয়কর ও কাস্টমস কর্মকর্তা, এমনকি একজন গার্মেন্টস মালিকও সিআইসি এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করছেন।

 

আয়কর আইনে বাংলাদেশি করদাতাদের বিদেশে রক্ষিত সম্পদ রিটার্নে প্রদর্শনের বাধ্য-বাধকতা আছে। যদি রিটার্নে সম্পদ প্রদর্শন করা না হয় তাহলে জরিমানার বিধান রয়েছে।

 

আয়কর আইনের ২১ ধারায় বলা আছে, কোনো বাংলাদেশি করদাতার রিটার্নে অপ্রদর্শিত বিদেশে থাকা সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেলে এবং সম্পত্তি অর্জনের উৎস বা প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা উপস্থাপনে তিনি ব্যর্থ হলে অথবা ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে ওই সম্পত্তির বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায় করবেন উপ-কর কমিশনার। তবে জরিমানা আরোপের ক্ষেত্রে করদাতাকে যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ দিতে হবে। জরিমানার টাকা করদাতার কোনো পরিসম্পদ বা করদাতার পক্ষে অন্য কেউ কোনো পরিসম্পদ অর্জন করলে তা বিক্রি বা বাজেয়াপ্ত করে আদায় করা যাবে। বিদেশে থাকা সম্পত্তির বিষয়ে দেশে ও বিদেশে অনুসন্ধান ও তদন্ত করা যাবে। প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে অনুসন্ধানকারীরা সম্পত্তি ও সম্পত্তির এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন।

 

এ বিষয়ে ফকরুস সালেহিন নাহিয়ান বলেন, দুবাইতে সাফায়া ৩২ নামে যেই প্রোপার্টির কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে একটি ইন্টিলেকচুয়্যাল প্রোপার্টি। এই ভবন নির্মাণে বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা শুধু অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির পার্টনার হয়েছি। যেটার চুক্তি ২০২৪ সালের ২ জুলাই করা হয়েছে। সেই চুক্তিনামা আমাদের কাছে আছে। অর্থাৎ আয়কর আইন অনুযায়ী এখনো প্রোপার্টির বিস্তারিত আয়কর আইনে দেখানোর সুযোগ আছে। তাই এটিকে এখনই কর ফাঁকি বলা যাবে না।

 

তিনি আরও বলেন, বসুন্ধরায় আমাদের জমিতে দ্য স্টেডিয়াম নামে যেই খেলার মাঠের আয় দেখানো হচ্ছে, তার সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। জায়গাটি আমাদের কয়েকজন কর্মচারীকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া হয়েছিল। তারা এটিকে সামান্য ডেভেলপ করে বাচ্চাদের ফুটবল খেলার মাঠ হিসাবে রূপান্তর করেছে। এখান থেকে যে আয় হয়, সেটিও তারা নেয়।

 

কর ফাঁকি দেওয়া প্রসঙ্গে নাহিয়ান বলেন, আমরা ব্যবসা করি। আইন-কানুন কম জানি। আমাদের ভুল হতেই পারে। কিন্তু এনবিআর আমাদের ফার্ম ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসাবে ট্যাক্স কার্ড দিলেও তারাই এখন আবার বলছে, আমাদের ব্যবসার ধরন প্রোপাইটারশিপ। ভুল আমরা করলেও ভুল তো তাদেরও আছে। আমাদের ভুলের শাস্তি তারা দিচ্ছে, তাদের ভুলের শাস্তি কে দেবে?  সূূএ :বার্তা বাজার ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com