সম্পত্তি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত সন্তানেরা, ১৬ ঘণ্টা উঠানে পড়ে ছিল বাবার মরদেহ

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা না হওয়া পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফন করতে দেননি সন্তানেরা। আটকে দেওয়া হয় কবর খননের কাজও। একপর্যায়ে সালিশে মৃতের ছোট স্ত্রী নিজের নামের সম্পত্তির একটি বড় অংশ বড় স্ত্রীর সন্তানদের নামে লিখে দেবেন বলে মুচলেকা দিলে ১৬ ঘণ্টা পর দাফন করা হয় মৃতকে।

 

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৬ মার্চ) যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কোটা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান হবি বিশ্বাস (৭০) বুধবার সকাল ৬টায় মারা যান। তার চারজন স্ত্রী এবং নয় সন্তান। মৃত্যুর পর সন্তানদের মধ্যে কয়েকজন বাবার দাফনের জন্য কবর খননের কাজ শুরু করতে চাইলে চার সন্তান আতাউর, সুমন, আনোয়ার ও হাফিজুর বাধা দেন।

 

তারা দাবি করেন, মৃত্যুর আগে বাবা তাদের কম সম্পত্তি দিয়ে ছোট মাকে বেশি সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। সেই সম্পত্তি তাদের নামে লিখে না দিলে তারা মরদেহ দাফন করতে দেবেন না।

 

এলাকাবাসী তাদের কয়েক দফা তাগাদা দেওয়ার পরও তারা কোনো কাজ করতে দেননি। বাড়ির উঠানে বাবার মরদেহ রেখে জমির দাবির প্রতি অনড় থাকেন সন্তানেরা।

 

একপর্যায়ে স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে বিকেলে সব সন্তানকে নিয়ে সালিশে বসেন। সেখানে ছোট স্ত্রী তার নামে থাকা ৮৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৫০ শতাংশ আট সন্তানের নামে সমানভাবে লিখে দেবেন বলে মুচলেকা দেন। এরপর রাত ১০টার দিকে অর্থাৎ ১৬ ঘণ্টা পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় হাবিবুর রহমান হবিকে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমান হবি ছোট স্ত্রী ও তার ছেলে সোহেল বিশ্বাসের সঙ্গেই থাকতেন। এ স্ত্রী-সন্তান তাকে ভালোভাবে দেখভাল করতেন বলে তিনি অন্যদের কাছে যেতে চাইতেন না।

 

জীবদ্দশায় হাবিবুর রহমান হবি সস্পত্তি ভাগাভাগির সময় ছোট স্ত্রীর নামে ওই ৮৩ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন। এটি নিয়েও কয়েক দফা সালিশ হয়েছে তখন। কিন্তু, তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।

 

সন্তান সোহেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মা নিজের সম্পত্তি লিখে না দেওয়া পর্যন্ত সৎ ভাইয়েরা বাবার মরদেহ কবরস্থ করতে দেননি।

 

চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বিষয়টিকে দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ৮৩ শতক জমি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে এলাকাবাসী সালিশ করে একটা সমাধান করে দিয়েছেন। তবে, মরদেহ উঠানে রেখে সম্পত্তি ভাগাভাগি করাটা ভালো হয়নি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» জব্বার মন্ডলের নামে একাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি, থানায় জিডি

» ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

» আমি একটা সংগঠন করতাম, যেটা বলতে এখন লজ্জা হয়: জামায়াত আমির

» ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারের ঈদ আনন্দমুখর হয়ে উঠেছে: প্রিন্স

» সংস্কার সংস্কারের মতো, নির্বাচন নির্বাচনের মতো চলবে: মির্জা ফখরুল

» কলকাতাকে হারিয়ে যে রেকর্ড গড়লো মুম্বাই

» অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

» হার্ট ভালো রাখতে যে ৫ ফল খাবেন

» আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করার সবুজ সংকেত দেননি শেখ হাসিনা

» চীনের যুদ্ধ বিমানে বাংলার আকাশ রক্ষা

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

সম্পত্তি ভাগাভাগিতে ব্যস্ত সন্তানেরা, ১৬ ঘণ্টা উঠানে পড়ে ছিল বাবার মরদেহ

ছবি সংগৃহীত

 

ডেস্ক রিপোর্ট : সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা না হওয়া পর্যন্ত বাবার মরদেহ দাফন করতে দেননি সন্তানেরা। আটকে দেওয়া হয় কবর খননের কাজও। একপর্যায়ে সালিশে মৃতের ছোট স্ত্রী নিজের নামের সম্পত্তির একটি বড় অংশ বড় স্ত্রীর সন্তানদের নামে লিখে দেবেন বলে মুচলেকা দিলে ১৬ ঘণ্টা পর দাফন করা হয় মৃতকে।

 

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৬ মার্চ) যশোরের অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কোটা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান হবি বিশ্বাস (৭০) বুধবার সকাল ৬টায় মারা যান। তার চারজন স্ত্রী এবং নয় সন্তান। মৃত্যুর পর সন্তানদের মধ্যে কয়েকজন বাবার দাফনের জন্য কবর খননের কাজ শুরু করতে চাইলে চার সন্তান আতাউর, সুমন, আনোয়ার ও হাফিজুর বাধা দেন।

 

তারা দাবি করেন, মৃত্যুর আগে বাবা তাদের কম সম্পত্তি দিয়ে ছোট মাকে বেশি সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। সেই সম্পত্তি তাদের নামে লিখে না দিলে তারা মরদেহ দাফন করতে দেবেন না।

 

এলাকাবাসী তাদের কয়েক দফা তাগাদা দেওয়ার পরও তারা কোনো কাজ করতে দেননি। বাড়ির উঠানে বাবার মরদেহ রেখে জমির দাবির প্রতি অনড় থাকেন সন্তানেরা।

 

একপর্যায়ে স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে বিকেলে সব সন্তানকে নিয়ে সালিশে বসেন। সেখানে ছোট স্ত্রী তার নামে থাকা ৮৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৫০ শতাংশ আট সন্তানের নামে সমানভাবে লিখে দেবেন বলে মুচলেকা দেন। এরপর রাত ১০টার দিকে অর্থাৎ ১৬ ঘণ্টা পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় হাবিবুর রহমান হবিকে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমান হবি ছোট স্ত্রী ও তার ছেলে সোহেল বিশ্বাসের সঙ্গেই থাকতেন। এ স্ত্রী-সন্তান তাকে ভালোভাবে দেখভাল করতেন বলে তিনি অন্যদের কাছে যেতে চাইতেন না।

 

জীবদ্দশায় হাবিবুর রহমান হবি সস্পত্তি ভাগাভাগির সময় ছোট স্ত্রীর নামে ওই ৮৩ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন। এটি নিয়েও কয়েক দফা সালিশ হয়েছে তখন। কিন্তু, তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন।

 

সন্তান সোহেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মা নিজের সম্পত্তি লিখে না দেওয়া পর্যন্ত সৎ ভাইয়েরা বাবার মরদেহ কবরস্থ করতে দেননি।

 

চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বিষয়টিকে দুঃখজনক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ৮৩ শতক জমি নিয়ে সন্তানদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে এলাকাবাসী সালিশ করে একটা সমাধান করে দিয়েছেন। তবে, মরদেহ উঠানে রেখে সম্পত্তি ভাগাভাগি করাটা ভালো হয়নি।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com