রমজানের শেষ দশকে নারীরা যেভাবে ইতেকাফ করবেন

ছবি সংগৃহীত

 

ইসলাম ডেস্ক  :কোনো মসজিদে এক বা একাধিক দিন দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে অবসর নিয়ে সওয়াবের নিয়তে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। ইতেকাফ ইসলামে ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে নির্দেশ দিলাম, তোমরা আমার ঘরকে তওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু–সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সুরা বাকারা: ১২৫) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতেকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিনটি পরিখা সৃষ্টি করে দেবেন, যার একটির দূরত্ব আসমান জমিনের দূরত্বের চেয়ে বেশি। (তাবরানি ফিল আওসাত)

 

রমজানের শেষ দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল ইতেকাফ করা। নবিজি (সা.) প্রতি রমজানেই শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

 

আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করেছেন। এরপর তার স্ত্রীগণও (তার সুন্নত অনুসরণ করে রমজানের শেষ দশ দিন) ইতেকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

 

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করেছিলেন। এরপর তিনি মাঝের দশ দিন একটি তুর্কি তাবুতে ইতেকাফ করলেন, যার দরজায় একটি চাটাই ছিল। একদিন রাসুল (সা.) চাটাইটি হাতে নিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখলেন, তারপর মাথা বের করে লোকদের সাথে কথা বললেন। লোকেরা তার কাছে এগিয়ে গেলো। তিনি বললেন, আমি প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করেছি এই রাত (লাইলাতুল কদর) অনুসন্ধানের জন্য। এরপর আমি মাঝের দশ দিন ইতেকাফ করেছি। তারপর আমাকে জানানো হয়েছে যে, এটি (লাইলাতুল কদর) শেষ দশকে রয়েছে। তাই আপনাদের মধ্যে যারা ইতেকাফ করতে চান, তারা যেন ইতেকাফ করেন। এরপর লোকেরা তার সাথে ইতেকাফ করল। (সহিহ মুসলিম)

রমজানের শেষ দশকে পুরুষদের মতো নারীরাও মসজিদে ইতেকাফ করতে পারেন যদি নারীদের ইতেকাফ করার জন্য নিরাপদ ও উপযোগী মসজিদ পাওয়া যায়। এ রকম মসজিদ না পাওয়া গেলে নারীরা নিজেদের ঘরের নির্দিষ্ট ইবাদতের কক্ষে ইতিকাফে বসবেন। ইবাদতের নির্দিষ্ট কক্ষ না থাকলে ইতিকাফের জন্য একটি কক্ষ নির্দিষ্ট করে ইতেকাফের নিয়ত করবেন। খাওয়া-দাওয়া ওই কক্ষেই করবেন এবং শরিয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া ওই কক্ষ ছেড়ে অন্যত্র যাবেন না। ইতেকাফের জন্য যথাসম্ভব ছোট কক্ষ নির্ধারণ করা উচিত যা শুধু তার থাকা ও ইবাদতের জন্যই ব্যবহৃত হবে। এ রকম কক্ষ না পাওয়া গেলে বড় ঘরের কিছু জায়গাও নির্দিষ্ট করেও ইতেকাফের নিয়ত করা যায়।

 

ইতেকাফে বসার পর শরঈ ওজর ছাড়া ইতেকাফের কক্ষ বা জায়গা থেকে বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। প্রস্রাব-পায়খানা, অজু ও ফরজ গোসল গ্রহণযোগ্য ওজর; এসব প্রয়োজনে ইতেকাফের জায়গা থেকে বের হওয়া যাবে। ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার লোক না থাকলে খাবার আনার জন্য বাইরে যাওয়া যাবে। তবে পানাহার ইতিকাফের জায়গায়ই করতে হবে। বাইরে করা যাবে না। ইতেকাফের জায়গায় থেকে রান্না-বান্নার দিক নির্দেশনা দেওয়া যাবে। রান্না-বান্নার লোক না থাকলে ইতিকাফের স্থানে থেকে রান্না -বান্নার কাজ করা সম্ভব হলে করা যাবে। কিন্তু এ সব প্রয়োজনে ইতেকাফের জায়গা থেকে বের হওয়া যাবে না।

 

ইতেকাফরত অবস্থায় সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইতেকাফে বসার পর সহবাস করলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। তাই বিবাহিত নারীদের ইতেকাফে বসার আগে স্বামীর অনুমতি নিয়ে নেওয়া জরুরি। ইতেকাফের অনুমতি দিয়ে দেওয়ার পর স্ত্রীর ইতেকাফে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করার স্বামীর কর্তব্য।

ইতেকাফরত অবস্থায় রোজা রাখা জরুরি। কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে রোজা ভেঙে ফেলে বা কোনোভাবে রোজা ভেঙে যায়, তাহলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। যেমন কেউ যদি অসুস্থতার কারণে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। একইভাবে ইচ্ছাকৃত পানাহার, সহবাস বা জাগ্রত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত বীর্যস্খলন ঘটানোর কারণে কারো রোজা ভেঙে গেলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। ইতেকাফরত অবস্থায় নারীদের পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে তারেক রহমানের ৩১ দফা  বাস্তবায়ন করতে হবে : পলাশে বিএনপি নেতা জুয়েল 

» দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে: জি এম কাদের

» আ.লীগকে পুর্নবাসনের চেষ্টা করা হলে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দেব : ইশরাক হোসেন

» দলগুলো অন্তঃসংঘাত বন্ধ করলে সঠিক সময়ে নির্বাচন: উপদেষ্টা মাহফুজ

» বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল চায় এনসিপি

» জুলাই স্পিরিট আলোচনা জারি রাখার আহ্বান শিবির সভাপতির

» আওয়ামী লীগের কেউ বিএনপিতে ঢুকতে পারবে না: মোনায়েম মুন্না

» গণতন্ত্রের পথ উত্তরণে সবার দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে : মির্জা ফখরুল

» বিচারের আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুযোগ নেই : মামুনুল হক

» ‘স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসনের সুযোগ পায়, এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না’

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

রমজানের শেষ দশকে নারীরা যেভাবে ইতেকাফ করবেন

ছবি সংগৃহীত

 

ইসলাম ডেস্ক  :কোনো মসজিদে এক বা একাধিক দিন দুনিয়াবি কাজকর্ম থেকে অবসর নিয়ে সওয়াবের নিয়তে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে। ইতেকাফ ইসলামে ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে নির্দেশ দিলাম, তোমরা আমার ঘরকে তওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকু–সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। (সুরা বাকারা: ১২৫) আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতেকাফ করবে, আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিনটি পরিখা সৃষ্টি করে দেবেন, যার একটির দূরত্ব আসমান জমিনের দূরত্বের চেয়ে বেশি। (তাবরানি ফিল আওসাত)

 

রমজানের শেষ দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল ইতেকাফ করা। নবিজি (সা.) প্রতি রমজানেই শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

 

আয়েশা (রা.) বলেন, নবিজি (সা.) মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করেছেন। এরপর তার স্ত্রীগণও (তার সুন্নত অনুসরণ করে রমজানের শেষ দশ দিন) ইতেকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

 

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করেছিলেন। এরপর তিনি মাঝের দশ দিন একটি তুর্কি তাবুতে ইতেকাফ করলেন, যার দরজায় একটি চাটাই ছিল। একদিন রাসুল (সা.) চাটাইটি হাতে নিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখলেন, তারপর মাথা বের করে লোকদের সাথে কথা বললেন। লোকেরা তার কাছে এগিয়ে গেলো। তিনি বললেন, আমি প্রথম দশ দিন ইতেকাফ করেছি এই রাত (লাইলাতুল কদর) অনুসন্ধানের জন্য। এরপর আমি মাঝের দশ দিন ইতেকাফ করেছি। তারপর আমাকে জানানো হয়েছে যে, এটি (লাইলাতুল কদর) শেষ দশকে রয়েছে। তাই আপনাদের মধ্যে যারা ইতেকাফ করতে চান, তারা যেন ইতেকাফ করেন। এরপর লোকেরা তার সাথে ইতেকাফ করল। (সহিহ মুসলিম)

রমজানের শেষ দশকে পুরুষদের মতো নারীরাও মসজিদে ইতেকাফ করতে পারেন যদি নারীদের ইতেকাফ করার জন্য নিরাপদ ও উপযোগী মসজিদ পাওয়া যায়। এ রকম মসজিদ না পাওয়া গেলে নারীরা নিজেদের ঘরের নির্দিষ্ট ইবাদতের কক্ষে ইতিকাফে বসবেন। ইবাদতের নির্দিষ্ট কক্ষ না থাকলে ইতিকাফের জন্য একটি কক্ষ নির্দিষ্ট করে ইতেকাফের নিয়ত করবেন। খাওয়া-দাওয়া ওই কক্ষেই করবেন এবং শরিয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া ওই কক্ষ ছেড়ে অন্যত্র যাবেন না। ইতেকাফের জন্য যথাসম্ভব ছোট কক্ষ নির্ধারণ করা উচিত যা শুধু তার থাকা ও ইবাদতের জন্যই ব্যবহৃত হবে। এ রকম কক্ষ না পাওয়া গেলে বড় ঘরের কিছু জায়গাও নির্দিষ্ট করেও ইতেকাফের নিয়ত করা যায়।

 

ইতেকাফে বসার পর শরঈ ওজর ছাড়া ইতেকাফের কক্ষ বা জায়গা থেকে বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। প্রস্রাব-পায়খানা, অজু ও ফরজ গোসল গ্রহণযোগ্য ওজর; এসব প্রয়োজনে ইতেকাফের জায়গা থেকে বের হওয়া যাবে। ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার লোক না থাকলে খাবার আনার জন্য বাইরে যাওয়া যাবে। তবে পানাহার ইতিকাফের জায়গায়ই করতে হবে। বাইরে করা যাবে না। ইতেকাফের জায়গায় থেকে রান্না-বান্নার দিক নির্দেশনা দেওয়া যাবে। রান্না-বান্নার লোক না থাকলে ইতিকাফের স্থানে থেকে রান্না -বান্নার কাজ করা সম্ভব হলে করা যাবে। কিন্তু এ সব প্রয়োজনে ইতেকাফের জায়গা থেকে বের হওয়া যাবে না।

 

ইতেকাফরত অবস্থায় সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। ইতেকাফে বসার পর সহবাস করলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। তাই বিবাহিত নারীদের ইতেকাফে বসার আগে স্বামীর অনুমতি নিয়ে নেওয়া জরুরি। ইতেকাফের অনুমতি দিয়ে দেওয়ার পর স্ত্রীর ইতেকাফে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করার স্বামীর কর্তব্য।

ইতেকাফরত অবস্থায় রোজা রাখা জরুরি। কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে রোজা ভেঙে ফেলে বা কোনোভাবে রোজা ভেঙে যায়, তাহলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। যেমন কেউ যদি অসুস্থতার কারণে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। একইভাবে ইচ্ছাকৃত পানাহার, সহবাস বা জাগ্রত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত বীর্যস্খলন ঘটানোর কারণে কারো রোজা ভেঙে গেলে তার ইতেকাফও ভেঙে যাবে। ইতেকাফরত অবস্থায় নারীদের পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com