আসাদ হোসেন রিফাতঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অপরূপ সৌন্দর্য প্রায় তেরশত বছর আগের প্রাচীনকালের কেরামতিয়া বড় মসজিদ। যা এলাকায় ভাঙ্গা মসজিদ নামে পরিচিত। এটি হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। যেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এক জমায়েতে নামাজ আদায় করেন। এখানে বিভিন্ন নারী-পুরুষ মনের নেক বাসনা নিয়ে মানত করে দান-সদগা দেন এবং তাদের বিশ্বাস আল্লাহর রহমতে তাদের মনের বাসনা পূর্ন হয়।
ভারত-বাংলাদেশে সীমান্তের অপরূপ সৌন্দর্য বড়খাতা কেরামতিয়া বড় মসজিদ। ভারতের কুচবিহারের শিতলকুচি ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া সীমান্তে অবস্থিত কেরামতিয়া বড় মসজিদ। যা এলাকায় ভাঙ্গা মসজিদ নামে পরিচিত। হাতীবান্ধার ঐতিহাসিক নিদর্শন এ মসজিদের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। স্থাপত্য নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। ইতিহাসবিদরা ধারনা করছেন, তেরশত বছর আগের এই মসজিদটি, আবার অনেকে বলছেন, প্রাচীনতম এ মসজিদটি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি-র শাসন আমলে তৈরী। এ মসজিদে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এক জমায়েতে আলাদা আলাদাভাবে নামাজ আদায় করেন।
জানাগেছে, প্রতœতত্ত্ববীদদের পরিক্ষা নিরিক্ষা অনুযায়ী মূল মসজিদটির নির্মাণকাল আনুমানিক তেরশত বছর আগের। মহনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আমলে আরব থেকে ওই সময় হয়তোবা সাহাবীগণ ইসলামের দাওয়াতের জন্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন, তাদের মধ্যে কেউ এসে এ ধর্মীয় স্থাপত্য নির্মাণ করেন। অনেকের ধারনা উপ মহাদেশে ইসলামের প্রতিষ্ঠা হয় ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি-র বাংলাজয়ের মাধ্যমে, এই অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে এবং তার শাসন আমলে এই প্রাচীন মসজিদ নির্মান হয়।
স্থানীয়দের ধারনা, বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া সীমান্ত এলাকায় মোগল আমলে কেরামতিয়া হজুর নামে এক দরবেশ বসবাস করতেন। তার সহযোগিতায় সেখানে সেসময় একটি ছোট মসজিদ নির্মাণ হয়। তার মৃত্যুর পর মসজিদের পাশেই দাফন করা হয়। পরে একটি টিনশেড মসজিদ নির্মাণ হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় মসজিদ ও মাজারটি দুই দেশের জিরো পয়েন্টে পড়ে যায়। নামাজ ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কেরামতিয়া হুজুরের মাজার ও প্রাচীন আমলের মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রতি শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ নানা নিয়তে আসেন নামাজ আদায় করতে। কিন্তু স্থান সংকুলান হতো না। মসজিদটি পুণঃনির্মাণের কাজ শুরু হলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনের অজুহাতে মসজিদ নির্মাণে বাঁধা দেয় ভারতীয় বিএসএফ।
তাই ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ে মসজিদের নকশা অনুমোদন হওয়ার পর ওই বছরে স্থানীয় এমপি’র সহযোগিতায় বিভিন্নজনের অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন দোতলা মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং কোটি টাকা ব্যয়ে এ মসজিদটির পুনর্র্নিমাণ হয়। এর ভিতরে রাখা হয়েছে প্রাচীন মসজিদটির নির্দশন। মসজিদটি দেওয়ালের ওপর চিনামাটির থালার ও কাচের ভগ্নাংশ বসিয়ে কারুকাজ করা হয়েছে,যার কারনে কারুকার্য মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করেছে। নির্মাণের পর থেকেই দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের কারুকার্য এক নজর দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটি আসেন হাজার হাজার পর্যটক মুসল্লী। দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য সম্পন্ন মসজিদটি সবার মন কাড়বে।
বর্তমানে মসজিদটির নাম রাখা হয়েছে বড়খাতা কেরামতিয়া বড় মসজিদ। মসজিদের বারান্দা ও মহিলা ওজুখানা মূল সীমান্তে পরেছে। প্রাচীন মসজিদটিতে মাত্র কয়েকজন নামাজ পড়তে পারতো, বর্তমানে মসজিদটিতে ছয় থেকে আট হাজার নারী-পুরুষ এক জমায়েতে আলাদা আলাদাভাবে নামাজ আদায় করতে পারে।
মসুল্লী মোশারফ হোসেন, নজরুল ইসলাম সহ অনেকে বলেন, জন্মের পর থেকেই দেখছি কেরামতিয়া হুজুরের মাজার ও মসজিদকে ঘিরে এখানে প্রতি শুক্রবার হাজার হাজার নারী-পুরুষ আলাদা আলাদাভাবে নামাজে সমাবেত হন। এখানে বিভিন্ন নারী-পুরুষ মনের নেক বাসনা নিয়ে মানত করে দান-সদগা দেন,তাদের বিশ্বাস আল্লাহর রহমতে তাদেও মনের বাসনা পূর্ন হয়।
মসজিদের ইমাম আবু সাইদ বলেন, প্রাচীনতম এ মসজিদটির বিভিন্ন নির্মান সামগ্রী প্রতœতত্ত্ববীদদের পরিক্ষা নিরিক্ষা অনুযায়ী মূল মসজিদটির নির্মাণকাল আনুমানিক তেরশত বছর আগের। এটি প্রাচীন কালের মসজিদ। বর্তমানে মসজিদটিতে ছয় থেকে আট হাজার নারী-পুরুষ এক জমায়েতে আলাদা আলাদাভাবে নামাজ আদায় করতে পারে।
Facebook Comments Box