ঘুষের রেট তিন গুণ, তবু নড়ে না ফাইল

ছবি সংগৃহীত

 

গোলাম মাওলা রনি :নিবন্ধের শুরুতে একটি বাস্তব ঘটনার কথা বলি। সম্প্রতি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পরিচয়ে জনৈক তরুণ ব্যবসায়ী ফোন করলেন। বয়স ত্রিশের নিচে হলেও ব্যবসার বয়স ১০ বছরের মতো। চার বন্ধুকে নিয়ে প্রযুক্তি খাতে ব্যবসা করেন। দেশিবিদেশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন এবং ইতোমধ্যেই সুনাম-সুখ্যাতি অর্থবিত্তের ঈর্ষণীয় এক অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন। হাল আমলে ব্যবসাপাতি কেমন চলছে জিজ্ঞাসা করতেই মনে হলো টেলিফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠ ক্ষণিকের তরে কেঁপে উঠল। তাঁর আবেগ-উচ্ছ্বাস এবং সফলতার গল্প হোঁচট খেল। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, এতক্ষণ যা বললাম তা অতীত কাহিনি। বর্তমানে সংসার চলছে না, কয়েক শ প্রযুক্তিবিদ নিয়ে গড়া কোম্পানিটি যেকোনো সময়ে বন্ধ হতে পারে।

 

তরুণের কণ্ঠের বিষাদ আমাকেও আহত করল। কারণ আমার নিজের ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা কী, তা বলে আপনাদের বিরক্তি উৎপাদন করতে চাই না। তবে করোনার ধাক্কা-বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেক ছোটবড় ব্যবসায়ীর মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। ব্যাংকগুলোর দেউলিয়াত্ব অর্থদানব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের রক্তপ্রবাহ থমকে গেছে। তাদের শিরা-উপশিরায় ব্লাড ক্যান্সারের জীবাণু এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে জরুরি চিকিৎসাসেবা অর্থাৎ আইসিইউতে নিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করা না হলে সমগ্র বাংলাদেশের করপোরেট হাউস বলে পরিচিত গ্রুপ অব কোম্পানিগুলোর একটিও টিকবে না।

 

দেশের ব্যবসাবাণিজ্য, রাজনীতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সরকারি বিধিব্যবস্থার সঙ্গে যৎসামান্য পরিচিতির কারণে প্রতিদিনই দেশকালসমাজের টাটকা খবর পেয়ে যাই। অতীতের সাংবাদিকতা পেশার কারণে আমার নিকট তথ্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং তা সংগ্রহের জন্য আমার চেষ্টা-তদবির অবিরত। এ কারণে আমি তরুণের কাছে তাঁর ব্যবসাবাণিজ্যের দুর্গতির কারণ জানতে চাইলাম। তিনি অকপটে জানালেন, সরকারি অফিসে আদিকালে শতকরা ৫ থেকে ৭ শতাংশ ঘুষ দিলে কাজ মিলত, এখন তা বেড়ে শতকরা ২৫ শতাংশে ঊর্ধ্বগামী হয়েছে। ঘুষের টাকা অগ্রিম। কিন্তু বিল পরিশোধের কোনো গ্যারান্টি নেই। আইটি সেক্টরে এত উচ্চ হার তো দূরের কথা ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে কোনো কাজকর্ম হচ্ছে না।

 

আমি উচ্চহারে ঘুষের কারণ এবং কেন কেউ ঘুষ দিয়ে কাজ নিচ্ছে না, তার কারণ জানতে চাইলে তরুণ জানালেন যে সাবেক সরকারের পতনের পর কিছু লোভনীয় পদে ঘুষের রেটরীতিমতো টেন্ডার দিয়ে নয়া দুর্নীতিবাজদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ফলে একজন অপরজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যে নিয়োগ বাণিজ্যের বেসাতি করে চেয়ার পেয়েছে, তারা বিনিয়োগ উশুল করার জন্য ঘুষের রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘুষখোরদের চেয়ারের অতীত রেকর্ড, কাজকর্ম, ঘুষ লেনদেন এবং ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঘুষ প্রদানকারীদের রয়েছে দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, ফলে তারা নয়া ঘুষখোরদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে না। ফলে পুরো কাজকর্মে এমন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি।

 

তরুণের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি স্মরণ করার চেষ্টা করলাম, গত ছয় মাসে একনেকে কয়টি প্রকল্প পাস হয়েছে। এডিবির কত টাকা খরচ হয়েছে এবং কত টাকা কাটছাঁট হয়েছে। গত ছয় মাসে বেসরকারি দেশিবিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে- ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি হয়েছে কিনা অথবা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বা বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে কী পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয়েছে? আমার জানা তত্ত্বমতে, উল্লিখিত খাতগুলোতে যে হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ঘটেনি। সুতরাং কীভাবে চলছে, কীভাবে সরকারের দৈনন্দিন খরচ এবং মাসিক বার্ষিক দায় মেটানো হচ্ছে? রাষ্ট্রের দেশিবিদেশি দায় কীভাবে মেটানো হচ্ছে তা চিন্তা করলে যেকোনো অর্থনীতিবিদের হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে যদি সে বিদেশি দালাল এবং দেশদ্রোহী প্রকৃতির মানুষ না হয়ে থাকেন।

 

আমি তরুণকে প্রশ্ন করলাম, সরকারি কাজ বাদে আপনারা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করতেন সেগুলোর খবর কী! তিনি কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপের উল্লেখ করে জবাব দিলেন এবং জানালেন যে দেশের প্রথম শ্রেণির পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও করপোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে তাঁর যে ব্যবসা ছিল শূন্যের কোঠায় নেমেছে। কেউ নতুন করে তাদের অ্যাপগুলো কিনছে না। একটি প্রতিষ্ঠান শুধু পাওনা টাকা পরিশোধ করেছে, বাকিরা কেউ পরিশোধ করতে পারছে না। সুতরাং বিদেশি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে তাদের যেসব ব্যবসা ছিল বিশেষত আউট সোর্সিং, ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যে আয় হয়, তা দিয়ে মাসিক খরচের ২৫ ভাগ মেটানো সম্ভব নয়। দায় মেটানোর জন্য তাঁরা গত ছয়-সাত মাসে সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন। এখন কোম্পানি বন্ধ করে তাঁরা বিদেশি ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর অথবা দুবাই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

আমি ভারি অবাক হয়ে তাঁর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলাম। তিনি বিষণ্ন মনে জানালেন যে, তাঁকে বর্তমান অফিস ছেড়ে ছোট একটি অফিস ভাড়া করতে হবে,  অফিসের ৯৫ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে হচ্ছে।  আবাসিক-ব্যক্তিগত খরচ কম করে হলেও অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। গত ১০ বছরে শূন্য থেকে ঊর্ধ্বগামী হতে হতে তিনি তাঁর অভ্যাস-দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, রুচি, সামাজিক জীবন এবং খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন এনেছিলেন, যা তাঁর কাছে এত দিন ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বলে মনে হতো। তা এখন তাঁর জন্য এমন লায়াবিলিটি হয়ে পড়েছে যা বহন করা সম্ভব নয়। আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে দারিদ্র্যতা মেনে তাঁকে জীবনযুদ্ধ করতে হচ্ছে, তা ঢাকার আলোবাতাসে সম্ভব হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি হয়েছে। তিনি যখন সবকিছু সফলভাবে চালাতেন তখন মনে হতো সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে তাঁর বুদ্ধিশুদ্ধি ও যোগ্যতা আছে এবং তাঁর সেই মনোভাবের কারণে শরীরে অজানা শক্তি তাঁকে কর্মে প্রেরণা দিত, মনকে প্রফুল্ল রাখত এবং তাঁর চিন্তার জগৎ খুলে দিত। ফলে তিনি অসম্ভবের ভিতরেও সম্ভাবনা খুঁজে পেতেন। কিন্তু বর্তমানে সবকিছু তাঁর জন্য বুমেরাং হয়ে পড়েছে।

 

উপরিউক্ত অবস্থায় ইদানীং তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি যে অর্থসংকটে আছেন, তা বোধ হয় আশপাশের লোকজন টের পেয়ে গেছে। তাঁর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বোধ হয় আগের মতো তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। এমতাবস্থায় তাঁর পক্ষে হিজরত করাটাই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত তাঁর শতভাগ আয় যেহেতু এখন বিদেশ থেকে আসছে সেহেতু দেশের ব্যাংকিংব্যবস্থা বিশেষত তাঁর যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট তাদের প্রতি বিশ্বাস আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কোনো একটি লেনদেনে যদি হেরফের হয় অথবা ব্যাংকে যদি কোনো সমস্যা ঘটে, তবে তাঁর শেষ অবলম্বনটুকুও হাতছাড়া হয়ে যাবে।

 

তরুণের কথা শুনে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা বিশেষত সরকারি ব্যাংকগুলোর বেহাল দশা এবং সরকারি অফিস-আদালত দ্বারা ব্যবসাবাণিজ্যের কীভাবে সর্বনাশ ঘটছে, তার একটি বাস্তব ঘটনার কথা মনে পড়ল। বিষয়টি আপনাদের জানালেই বুঝতে পারবেন দেশের ব্যাংক-বিমার সরকারি অফিস, বিচারালয় ইত্যাদিতে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে এবং কীভাবে ফাইলে লালফিতার দৌরাত্ম্য অর্থনীতির সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। আজকে আমি আপনাদের যার ঘটনা বলব ধরুন তাঁর নাম রায়হান চৌধুরী। ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করেন এবং সততা, পরিশ্রম ও সফলতার দ্বারা তিনি এমন একটা ইমেজ তৈরি করেছেন, যা বাংলাদেশে বিরল। তো সেই ভদ্রলোক হঠাৎ বছরখানেক আগে তাঁর ব্যাংক থেকে ফোন পেলেন যে ওমুক সরকারি অফিস থেকে চিঠি এসেছে, আপনার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার।

 

ব্যাংক ম্যানেজারের কথা শুনে ভদ্রলোকের মাথায় বাজ পড়ল। তিনি ব্যাংকে গিয়ে জানলেন যে ১০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কোম্পানির অডিট আপত্তির সূত্রপাতে একটি সরকারি অফিস গোপনে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাট অঙ্কের জরিমানা করে তা আদায়ের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য ছুটেছে। বয়স্ক ভদ্রলোক তাঁর অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটলেন সেই সরকারি অফিসে। ফাইলপত্র দেখে নয়া বড় কর্তা বললেন, সবকিছু তো ঠিক আছে, আগের কর্তা কেন এমন করলেন। আর যেহেতু আগের কর্তা করেছেন সেহেতু আপনাকে আপিলে যেতে হবে। ভদ্রলোক উচ্চতর সরকারি অফিসে আপিল করলেন। তারা বলল, আপিলের সময়সীমা পার হয়েছে। সুতরাং তামাদি মওকুফ করার জন্য আপনাকে হাইকোর্টে যেতে হবে। ভদ্রলোক হাইকোর্টে গেলেন। শুনানির জন্য গৃহীত হলো কিন্তু যেভাবে সিরিয়াল পড়েছে, তাতে করে আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে শুনানি হবে কি না, সন্দেহ।

 

উল্লিখিত ভদ্রলোক আবার সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসে গেলেন। নয়া বড় কর্তাকে বললেন, আপনি কি আমার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বলেছেন। ভদ্রলোক বললেন, না তো। আমরা কেবল আপনার যে ব্যাংকে অভিযুক্ত কোম্পানির অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেটা ফ্রিজ করতে বলেছি। ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ব্যাংক ম্যানেজার তো আপনার ভয়ে আমার ব্যক্তিগত এবং অন্যান্য কোম্পানির নামে থাকা সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রেখেছেন। আপনি কি একটু দয়া করে ম্যানেজারকে ফোন করে আসল কথাটি বলবেন? বড় কর্তা মুখ বাঁকা করে বললেন, এটা আপনার আর ওই ব্যাংক ম্যানেজারের বিষয়। আপনার অন্য কোনো ব্যাংকে যদি সমস্যা না হয় তবে তো আমাদের দায়ী করতে পারেন না। আর আমরা কেন আপনার অন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বলব, এটা তো কেবল আদালত পারেন। সুতরাং ব্যাংক ম্যানেজার কথা না শুনলে আপনি আদালতে যান।

 

ভদ্রলোক ব্যাংকে ফিরে এলেন। ম্যানেজারকে অনেক বোঝালেন, ৩০-৩৫ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট শাখার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের দোহাই দিলেন। সব শুনে ম্যানেজার মুচকি হেসে বললেন, বোঝেনই তো, একটু অপেক্ষা করেন। দেখি কী করা যায়। ভদ্রলোক হতাশ হয়ে ফিরে এলেন এবং এভাবেই এক বছর চলে গেছে ব্যবসাবাণিজ্য সব লাটে উঠেছে, আর ভদ্রলোক মরার জন্য সহজসরল উপায়ের খোঁজে আল্লাহর কাছে সকালবিকাল আকুতি জানাচ্ছেন।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক । সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» শাপলা চত্বর ও সাঈদী রায় পরবর্তী গণহত্যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত: প্রেস সচিব

» প্রাথমিকে তৃতীয় ধাপে নির্বাচিত ৬৫৩১ শিক্ষকের যোগদানের তারিখ ঘোষণা

» মঙ্গলবার দুই কর্মসূচি দিল জাতীয় নাগরিক পার্টি

» আগামী নির্বাচনে যে কোন মূল্যে ইসলামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম চাই: মামুনুল হক

» সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি : রিজভী

» রাজধানীতে ছিঁচকে চুরি-ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র সচিব

» বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা

» রোহিঙ্গাদের জন্য ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে ইইউ

» ‘ক্ষমতা পেলেই লুটেপুটে খাওয়ার মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে’

» সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ৭০০ কোটি টাকা মূলধন বাড়ালো ব্র্যাক ব্যাংক

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঘুষের রেট তিন গুণ, তবু নড়ে না ফাইল

ছবি সংগৃহীত

 

গোলাম মাওলা রনি :নিবন্ধের শুরুতে একটি বাস্তব ঘটনার কথা বলি। সম্প্রতি আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পরিচয়ে জনৈক তরুণ ব্যবসায়ী ফোন করলেন। বয়স ত্রিশের নিচে হলেও ব্যবসার বয়স ১০ বছরের মতো। চার বন্ধুকে নিয়ে প্রযুক্তি খাতে ব্যবসা করেন। দেশিবিদেশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন এবং ইতোমধ্যেই সুনাম-সুখ্যাতি অর্থবিত্তের ঈর্ষণীয় এক অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন। হাল আমলে ব্যবসাপাতি কেমন চলছে জিজ্ঞাসা করতেই মনে হলো টেলিফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠ ক্ষণিকের তরে কেঁপে উঠল। তাঁর আবেগ-উচ্ছ্বাস এবং সফলতার গল্প হোঁচট খেল। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, এতক্ষণ যা বললাম তা অতীত কাহিনি। বর্তমানে সংসার চলছে না, কয়েক শ প্রযুক্তিবিদ নিয়ে গড়া কোম্পানিটি যেকোনো সময়ে বন্ধ হতে পারে।

 

তরুণের কণ্ঠের বিষাদ আমাকেও আহত করল। কারণ আমার নিজের ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা কী, তা বলে আপনাদের বিরক্তি উৎপাদন করতে চাই না। তবে করোনার ধাক্কা-বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেক ছোটবড় ব্যবসায়ীর মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। ব্যাংকগুলোর দেউলিয়াত্ব অর্থদানব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের রক্তপ্রবাহ থমকে গেছে। তাদের শিরা-উপশিরায় ব্লাড ক্যান্সারের জীবাণু এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে জরুরি চিকিৎসাসেবা অর্থাৎ আইসিইউতে নিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করা না হলে সমগ্র বাংলাদেশের করপোরেট হাউস বলে পরিচিত গ্রুপ অব কোম্পানিগুলোর একটিও টিকবে না।

 

দেশের ব্যবসাবাণিজ্য, রাজনীতি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং সরকারি বিধিব্যবস্থার সঙ্গে যৎসামান্য পরিচিতির কারণে প্রতিদিনই দেশকালসমাজের টাটকা খবর পেয়ে যাই। অতীতের সাংবাদিকতা পেশার কারণে আমার নিকট তথ্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং তা সংগ্রহের জন্য আমার চেষ্টা-তদবির অবিরত। এ কারণে আমি তরুণের কাছে তাঁর ব্যবসাবাণিজ্যের দুর্গতির কারণ জানতে চাইলাম। তিনি অকপটে জানালেন, সরকারি অফিসে আদিকালে শতকরা ৫ থেকে ৭ শতাংশ ঘুষ দিলে কাজ মিলত, এখন তা বেড়ে শতকরা ২৫ শতাংশে ঊর্ধ্বগামী হয়েছে। ঘুষের টাকা অগ্রিম। কিন্তু বিল পরিশোধের কোনো গ্যারান্টি নেই। আইটি সেক্টরে এত উচ্চ হার তো দূরের কথা ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে কোনো কাজকর্ম হচ্ছে না।

 

আমি উচ্চহারে ঘুষের কারণ এবং কেন কেউ ঘুষ দিয়ে কাজ নিচ্ছে না, তার কারণ জানতে চাইলে তরুণ জানালেন যে সাবেক সরকারের পতনের পর কিছু লোভনীয় পদে ঘুষের রেটরীতিমতো টেন্ডার দিয়ে নয়া দুর্নীতিবাজদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ফলে একজন অপরজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যে নিয়োগ বাণিজ্যের বেসাতি করে চেয়ার পেয়েছে, তারা বিনিয়োগ উশুল করার জন্য ঘুষের রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘুষখোরদের চেয়ারের অতীত রেকর্ড, কাজকর্ম, ঘুষ লেনদেন এবং ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ঘুষ প্রদানকারীদের রয়েছে দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, ফলে তারা নয়া ঘুষখোরদের পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে না। ফলে পুরো কাজকর্মে এমন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি।

 

তরুণের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমি স্মরণ করার চেষ্টা করলাম, গত ছয় মাসে একনেকে কয়টি প্রকল্প পাস হয়েছে। এডিবির কত টাকা খরচ হয়েছে এবং কত টাকা কাটছাঁট হয়েছে। গত ছয় মাসে বেসরকারি দেশিবিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে- ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি হয়েছে কিনা অথবা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বা বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে কী পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয়েছে? আমার জানা তত্ত্বমতে, উল্লিখিত খাতগুলোতে যে হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ঘটেনি। সুতরাং কীভাবে চলছে, কীভাবে সরকারের দৈনন্দিন খরচ এবং মাসিক বার্ষিক দায় মেটানো হচ্ছে? রাষ্ট্রের দেশিবিদেশি দায় কীভাবে মেটানো হচ্ছে তা চিন্তা করলে যেকোনো অর্থনীতিবিদের হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে যদি সে বিদেশি দালাল এবং দেশদ্রোহী প্রকৃতির মানুষ না হয়ে থাকেন।

 

আমি তরুণকে প্রশ্ন করলাম, সরকারি কাজ বাদে আপনারা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করতেন সেগুলোর খবর কী! তিনি কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপের উল্লেখ করে জবাব দিলেন এবং জানালেন যে দেশের প্রথম শ্রেণির পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও করপোরেট হাউসগুলোর সঙ্গে তাঁর যে ব্যবসা ছিল শূন্যের কোঠায় নেমেছে। কেউ নতুন করে তাদের অ্যাপগুলো কিনছে না। একটি প্রতিষ্ঠান শুধু পাওনা টাকা পরিশোধ করেছে, বাকিরা কেউ পরিশোধ করতে পারছে না। সুতরাং বিদেশি ক্লায়েন্টদের সঙ্গে তাদের যেসব ব্যবসা ছিল বিশেষত আউট সোর্সিং, ইউটিউব ও অন্যান্য সামাজিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যে আয় হয়, তা দিয়ে মাসিক খরচের ২৫ ভাগ মেটানো সম্ভব নয়। দায় মেটানোর জন্য তাঁরা গত ছয়-সাত মাসে সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন। এখন কোম্পানি বন্ধ করে তাঁরা বিদেশি ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর অথবা দুবাই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

আমি ভারি অবাক হয়ে তাঁর দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলাম। তিনি বিষণ্ন মনে জানালেন যে, তাঁকে বর্তমান অফিস ছেড়ে ছোট একটি অফিস ভাড়া করতে হবে,  অফিসের ৯৫ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে হচ্ছে।  আবাসিক-ব্যক্তিগত খরচ কম করে হলেও অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। গত ১০ বছরে শূন্য থেকে ঊর্ধ্বগামী হতে হতে তিনি তাঁর অভ্যাস-দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, বিশ্বাস, রুচি, সামাজিক জীবন এবং খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন এনেছিলেন, যা তাঁর কাছে এত দিন ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বলে মনে হতো। তা এখন তাঁর জন্য এমন লায়াবিলিটি হয়ে পড়েছে যা বহন করা সম্ভব নয়। আবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে দারিদ্র্যতা মেনে তাঁকে জীবনযুদ্ধ করতে হচ্ছে, তা ঢাকার আলোবাতাসে সম্ভব হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি হয়েছে। তিনি যখন সবকিছু সফলভাবে চালাতেন তখন মনে হতো সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে তাঁর বুদ্ধিশুদ্ধি ও যোগ্যতা আছে এবং তাঁর সেই মনোভাবের কারণে শরীরে অজানা শক্তি তাঁকে কর্মে প্রেরণা দিত, মনকে প্রফুল্ল রাখত এবং তাঁর চিন্তার জগৎ খুলে দিত। ফলে তিনি অসম্ভবের ভিতরেও সম্ভাবনা খুঁজে পেতেন। কিন্তু বর্তমানে সবকিছু তাঁর জন্য বুমেরাং হয়ে পড়েছে।

 

উপরিউক্ত অবস্থায় ইদানীং তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি যে অর্থসংকটে আছেন, তা বোধ হয় আশপাশের লোকজন টের পেয়ে গেছে। তাঁর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বোধ হয় আগের মতো তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। এমতাবস্থায় তাঁর পক্ষে হিজরত করাটাই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত তাঁর শতভাগ আয় যেহেতু এখন বিদেশ থেকে আসছে সেহেতু দেশের ব্যাংকিংব্যবস্থা বিশেষত তাঁর যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট তাদের প্রতি বিশ্বাস আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কোনো একটি লেনদেনে যদি হেরফের হয় অথবা ব্যাংকে যদি কোনো সমস্যা ঘটে, তবে তাঁর শেষ অবলম্বনটুকুও হাতছাড়া হয়ে যাবে।

 

তরুণের কথা শুনে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা বিশেষত সরকারি ব্যাংকগুলোর বেহাল দশা এবং সরকারি অফিস-আদালত দ্বারা ব্যবসাবাণিজ্যের কীভাবে সর্বনাশ ঘটছে, তার একটি বাস্তব ঘটনার কথা মনে পড়ল। বিষয়টি আপনাদের জানালেই বুঝতে পারবেন দেশের ব্যাংক-বিমার সরকারি অফিস, বিচারালয় ইত্যাদিতে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে এবং কীভাবে ফাইলে লালফিতার দৌরাত্ম্য অর্থনীতির সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। আজকে আমি আপনাদের যার ঘটনা বলব ধরুন তাঁর নাম রায়হান চৌধুরী। ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করেন এবং সততা, পরিশ্রম ও সফলতার দ্বারা তিনি এমন একটা ইমেজ তৈরি করেছেন, যা বাংলাদেশে বিরল। তো সেই ভদ্রলোক হঠাৎ বছরখানেক আগে তাঁর ব্যাংক থেকে ফোন পেলেন যে ওমুক সরকারি অফিস থেকে চিঠি এসেছে, আপনার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার।

 

ব্যাংক ম্যানেজারের কথা শুনে ভদ্রলোকের মাথায় বাজ পড়ল। তিনি ব্যাংকে গিয়ে জানলেন যে ১০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কোম্পানির অডিট আপত্তির সূত্রপাতে একটি সরকারি অফিস গোপনে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাট অঙ্কের জরিমানা করে তা আদায়ের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য ছুটেছে। বয়স্ক ভদ্রলোক তাঁর অসুস্থ শরীর নিয়ে ছুটলেন সেই সরকারি অফিসে। ফাইলপত্র দেখে নয়া বড় কর্তা বললেন, সবকিছু তো ঠিক আছে, আগের কর্তা কেন এমন করলেন। আর যেহেতু আগের কর্তা করেছেন সেহেতু আপনাকে আপিলে যেতে হবে। ভদ্রলোক উচ্চতর সরকারি অফিসে আপিল করলেন। তারা বলল, আপিলের সময়সীমা পার হয়েছে। সুতরাং তামাদি মওকুফ করার জন্য আপনাকে হাইকোর্টে যেতে হবে। ভদ্রলোক হাইকোর্টে গেলেন। শুনানির জন্য গৃহীত হলো কিন্তু যেভাবে সিরিয়াল পড়েছে, তাতে করে আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে শুনানি হবে কি না, সন্দেহ।

 

উল্লিখিত ভদ্রলোক আবার সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসে গেলেন। নয়া বড় কর্তাকে বললেন, আপনি কি আমার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বলেছেন। ভদ্রলোক বললেন, না তো। আমরা কেবল আপনার যে ব্যাংকে অভিযুক্ত কোম্পানির অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেটা ফ্রিজ করতে বলেছি। ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ব্যাংক ম্যানেজার তো আপনার ভয়ে আমার ব্যক্তিগত এবং অন্যান্য কোম্পানির নামে থাকা সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে রেখেছেন। আপনি কি একটু দয়া করে ম্যানেজারকে ফোন করে আসল কথাটি বলবেন? বড় কর্তা মুখ বাঁকা করে বললেন, এটা আপনার আর ওই ব্যাংক ম্যানেজারের বিষয়। আপনার অন্য কোনো ব্যাংকে যদি সমস্যা না হয় তবে তো আমাদের দায়ী করতে পারেন না। আর আমরা কেন আপনার অন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে বলব, এটা তো কেবল আদালত পারেন। সুতরাং ব্যাংক ম্যানেজার কথা না শুনলে আপনি আদালতে যান।

 

ভদ্রলোক ব্যাংকে ফিরে এলেন। ম্যানেজারকে অনেক বোঝালেন, ৩০-৩৫ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট শাখার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের দোহাই দিলেন। সব শুনে ম্যানেজার মুচকি হেসে বললেন, বোঝেনই তো, একটু অপেক্ষা করেন। দেখি কী করা যায়। ভদ্রলোক হতাশ হয়ে ফিরে এলেন এবং এভাবেই এক বছর চলে গেছে ব্যবসাবাণিজ্য সব লাটে উঠেছে, আর ভদ্রলোক মরার জন্য সহজসরল উপায়ের খোঁজে আল্লাহর কাছে সকালবিকাল আকুতি জানাচ্ছেন।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক । সূএ: বাংলাদেশ  প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com