জুনেই বাজেট পেশ, রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার আশা : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : আসন্ন ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট আগামী জুন মাসেই পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭/৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

 

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

রোজা সামনে রেখে অর্থ উপদেষ্টার কাছে মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো কোনো খবর আছে কি না, এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কাছে আশ্বস্ত করার খবর হলো আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোজার সময় যে নিত্য প্রয়োজনীয়… রোজা ছাড়াও মানুষের কনজাম্পশন প্যাকেজে যে জিনিসগুলো আছে সেটা এনশিওর করতে। সেজন্য আমরা নিরলসভাবে চাল, ডাল, চিনির সরবরাহ নিশ্চিত করছি। এখন তো চিনির দাম অনেকটাই রিজনেবল অবস্থায় এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি বাকিগুলো যাতে রিজনেবল দামে আসে। প্রথমত সরবরাহটা নিশ্চিত করা। সরবরাহ নিশ্চিত করলে অনেক সময় সঠিক দামে ভোক্তারা পায় না। এখানে আবার মার্কেট ডায়নামিকস আছে।

 

তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন আগে বলেছি, মজুত যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। দরকার হলে সেটা আমরা রিপিট করবো। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া অন্যান্য যে এজেন্সি আছে… সয়াবিন গুদামে, বেজমেন্টে রেখে দিয়েছে কি না! কিছুটা তারতম্য হতে পারে। কিন্তু একটা ক্রাইসিস হয়ে যাবে সেটা হওয়ার কথা নয়।

 

‘আমরা চেষ্টা করছি রোজার সময় যাতে কোনো রকমভাবে দাম না বাড়ে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য আমাদের উদ্দেশ্য রয়েছে। এক পার্সেন্ট কমেছে। যাতে ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। বাজেট দেওয়ার সময় এটা যাতে রিজনেবল অবস্থায় আছে। কারণ এটা আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ।

 

উপদেষ্টা আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি হলেই জীবনযাপনের মান কমে যায়। এবার বড় একটি (পণ্যের) অংশ আমাদের আমদানি করতে হয়েছে। এটা আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

 

রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭/৮ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিস্কুটের ওপর ভ্যাট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন কেউ লেখে না যে বিস্কুট কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। আরও দু-একটা পণ্যের কথা আমাকে বলেছে, রোজার সময় এ পণ্যগুলো একটু দরকার। আমি দেখবো এটা যতটা কমানো যায়।

 

বাজেট চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। বাজেটটা জুনের পরে কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে। কোনো সময়ই বাজেট অপেক্ষা করেনি। রিভাইস বাজেট তো আমাদের করতেই হবে। বাজেটটা আমরা জুনের মধ্যেই দেবো।

 

বাজেট প্রণয়নে প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা জানিয়ে দেবো তারা যদি মনে করে রিভাইজ করবে, তাহলে তারা রিভাইজ করবে। আমরা এখন আগের সরকারের বাজেট রিভাইজ করছি না?

‘আমরা যদি বাজেট না দেই, তবে দাতাদের প্রজেকশন আছে, কত কি হবে সেটা আমরা মিস করতে পারবো না।

 

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি হয়তো কোথাও বক্তৃতা দিয়ে বাজেট পেশ করবো। অ্যাপ্রুভাল নেওয়ার তো বিভিন্ন স্টেজ আছে।

 

ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন এলসি খোলার ক্ষেত্রে তারা ডলার পান না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীদের আপনারা ভালো করে চেনেন। আমি তো আরও ভালো করে চিনি ব্যবসায়ীদের। তারা কিন্তু অনেক সময় একপেশে কথাবার্তা বলে। এক গ্রুপে এসে বলবে স্যার আপনি তো এটার ওপর ট্যাক্স দিয়েছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। আরেক গ্রুপ এসে বলবে স্যার আপনি কমাইয়েন না, যা দিয়েছেন ঠিকই আছে। সুতরাং আমাকে চিন্তা-ভাবনা করে করতে হয়। বাজারে কিন্তু ডলারের সংকট নেই। আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। সেটা আমরা জানছি কারণ আমাদের ক্যাশ ইনসেনটিভ দিতে হয়।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, এখন কারেন্ট ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট পজিটিভ এসেছে। ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, এটা ধরে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা দরকার, এটা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। যদিও এটা আমার বিষয় না।

 

‘আমি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলি, তারা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফ্যাক্টরি, মূল্যবান জিনিসপত্র, গুদামের নিরাপত্তা না দিতে পারলে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি অনুভব করবে না। এ বিষয়ে আমরা একমত এবং এটার দ্রুত সমাধান করার জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে কিছু টাকা পাঠানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশে কোথায় কীভাবে এ টাকাটা খরচ হয়েছে, এ বিষয়ে আপনি কোনো তদন্ত করবেন কি না, এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা যদি আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়, কারো মোটিভেটেড কোনো ইস্যুতে এটা ব্যবহার করে সেটা দেখার বিষয়। আমরা দেখবো ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের মোটিভেশনাল কাজে টাকা না আসে।

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সহধর্মিনীর চিকিৎসায় সিঙ্গাপুর গেলেন মির্জা ফখরুল

» ২ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার

» ১২ সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে ছাত্রশিবিরের জয়

» ভুল ত্রুটি হলে শিক্ষার্থীরা আমাকে শুধরে দেবেন: ফরহাদ

» ভিপি নির্বাচিত হয়ে যে বার্তা দিলেন সাদিক কায়েম

» শিক্ষার্থীরা এটিকে তাদের রায় মনে করলে সম্মান জানাই : হামিম

» ডাকসুর ভিপি সাদিক, জিএস ফরহাদ

» প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার লিগে তাইজুল

» খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত

» সংসদীয় আসন কমানোর প্রতিবাদে বাগেরহাটে চলছে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

জুনেই বাজেট পেশ, রোজার পর মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার আশা : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি সংগৃহীত

 

অনলাইন ডেস্ক : আসন্ন ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট আগামী জুন মাসেই পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭/৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

 

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

রোজা সামনে রেখে অর্থ উপদেষ্টার কাছে মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো কোনো খবর আছে কি না, এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কাছে আশ্বস্ত করার খবর হলো আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোজার সময় যে নিত্য প্রয়োজনীয়… রোজা ছাড়াও মানুষের কনজাম্পশন প্যাকেজে যে জিনিসগুলো আছে সেটা এনশিওর করতে। সেজন্য আমরা নিরলসভাবে চাল, ডাল, চিনির সরবরাহ নিশ্চিত করছি। এখন তো চিনির দাম অনেকটাই রিজনেবল অবস্থায় এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি বাকিগুলো যাতে রিজনেবল দামে আসে। প্রথমত সরবরাহটা নিশ্চিত করা। সরবরাহ নিশ্চিত করলে অনেক সময় সঠিক দামে ভোক্তারা পায় না। এখানে আবার মার্কেট ডায়নামিকস আছে।

 

তিনি বলেন, আমি কয়েকদিন আগে বলেছি, মজুত যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান। দরকার হলে সেটা আমরা রিপিট করবো। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ছাড়া অন্যান্য যে এজেন্সি আছে… সয়াবিন গুদামে, বেজমেন্টে রেখে দিয়েছে কি না! কিছুটা তারতম্য হতে পারে। কিন্তু একটা ক্রাইসিস হয়ে যাবে সেটা হওয়ার কথা নয়।

 

‘আমরা চেষ্টা করছি রোজার সময় যাতে কোনো রকমভাবে দাম না বাড়ে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য আমাদের উদ্দেশ্য রয়েছে। এক পার্সেন্ট কমেছে। যাতে ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। বাজেট দেওয়ার সময় এটা যাতে রিজনেবল অবস্থায় আছে। কারণ এটা আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ।

 

উপদেষ্টা আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি হলেই জীবনযাপনের মান কমে যায়। এবার বড় একটি (পণ্যের) অংশ আমাদের আমদানি করতে হয়েছে। এটা আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

 

রোজার পর মূল্যস্ফীতি ৭/৮ শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বিস্কুটের ওপর ভ্যাট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এখন কেউ লেখে না যে বিস্কুট কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। আরও দু-একটা পণ্যের কথা আমাকে বলেছে, রোজার সময় এ পণ্যগুলো একটু দরকার। আমি দেখবো এটা যতটা কমানো যায়।

 

বাজেট চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। বাজেটটা জুনের পরে কারো জন্য অপেক্ষা করে না। অনেকগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েছে। কোনো সময়ই বাজেট অপেক্ষা করেনি। রিভাইস বাজেট তো আমাদের করতেই হবে। বাজেটটা আমরা জুনের মধ্যেই দেবো।

 

বাজেট প্রণয়নে প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমরা জানিয়ে দেবো তারা যদি মনে করে রিভাইজ করবে, তাহলে তারা রিভাইজ করবে। আমরা এখন আগের সরকারের বাজেট রিভাইজ করছি না?

‘আমরা যদি বাজেট না দেই, তবে দাতাদের প্রজেকশন আছে, কত কি হবে সেটা আমরা মিস করতে পারবো না।

 

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি হয়তো কোথাও বক্তৃতা দিয়ে বাজেট পেশ করবো। অ্যাপ্রুভাল নেওয়ার তো বিভিন্ন স্টেজ আছে।

 

ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন এলসি খোলার ক্ষেত্রে তারা ডলার পান না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীদের আপনারা ভালো করে চেনেন। আমি তো আরও ভালো করে চিনি ব্যবসায়ীদের। তারা কিন্তু অনেক সময় একপেশে কথাবার্তা বলে। এক গ্রুপে এসে বলবে স্যার আপনি তো এটার ওপর ট্যাক্স দিয়েছেন বা কমিয়ে দিয়েছেন। আরেক গ্রুপ এসে বলবে স্যার আপনি কমাইয়েন না, যা দিয়েছেন ঠিকই আছে। সুতরাং আমাকে চিন্তা-ভাবনা করে করতে হয়। বাজারে কিন্তু ডলারের সংকট নেই। আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। সেটা আমরা জানছি কারণ আমাদের ক্যাশ ইনসেনটিভ দিতে হয়।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, এখন কারেন্ট ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট পজিটিভ এসেছে। ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট পজিটিভ, এটা ধরে রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা দরকার, এটা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। যদিও এটা আমার বিষয় না।

 

‘আমি যখন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলি, তারা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফ্যাক্টরি, মূল্যবান জিনিসপত্র, গুদামের নিরাপত্তা না দিতে পারলে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি অনুভব করবে না। এ বিষয়ে আমরা একমত এবং এটার দ্রুত সমাধান করার জন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে কিছু টাকা পাঠানোর কথা বলেছেন। বাংলাদেশে কোথায় কীভাবে এ টাকাটা খরচ হয়েছে, এ বিষয়ে আপনি কোনো তদন্ত করবেন কি না, এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা যদি আমাদের দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়, কারো মোটিভেটেড কোনো ইস্যুতে এটা ব্যবহার করে সেটা দেখার বিষয়। আমরা দেখবো ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের মোটিভেশনাল কাজে টাকা না আসে।

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com