শবে বরাতে রোজা রাখা কি সুন্নত?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক : হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। সহিহ বর্ণনা অনুযায়ী এ রাতে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ নাজিল হয় এবং অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন; অতঃপর তিনি তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, কেবল শিরককারী ও বিদ্বেষ-পোষণকারী ছাড়া। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩)

 

অনেকে শবে বরাত উপলক্ষে অন্যান্য আমলের পাশাপাশি ১৫ শাবান রোজা রাখেন। বিষয়টি শরিয়তসম্মত কি না কিংবা শবে বরাতে কয়টি রোজা রাখা উত্তম জানার কৌতূহল রয়েছে অনেকের। এ সম্পর্কে হাদিসের নির্যাস হলো- শবে বরাতের তারিখ আইয়ামে বিজের (প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখ) অন্তর্ভুক্ত। সেই হিসেবে ১৫ শাবান (শবে বরাতের দিন) রোজা রাখা সুন্নত। তবে, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে রোজার কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা হাদিসে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র একটি দুর্বল হাদিসে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখ’। এই একটি মাত্র দুর্বল হাদিসের ওপর ভিত্তি করে শবে বরাতে একটি রোজা রাখাকে সুন্নত বা মোস্তাহাব বলা যায় না।

তাই শবে বরাতের পরের দিনসহ আইয়ামে বিজের রোজা হিসেবে তিনটি রোজা রাখাই সর্বোত্তম। কেননা এই তিন রোজা সম্পর্কে হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখা সারাবছর রোজা রাখার সমান।’ (বুখারি: ১১৫৯, ১৯৭৫)

 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেন—এক. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুই. দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া, তিন. ঘুমের আগে বিতরের নামাজ পড়া।’ (সহিহ বুখারি: ১১৭৮)

 

অতএব, ১৫ শাবান তারিখে আইয়ামে বিজের একটি দিন হিসেবে রোজা রাখলে তা সুন্নত মনে করা যাবে। কিন্তু পৃথকভাবে শাবান মাসের ১৫ তারিখ বিশেষ দিন হিসেবে পৃথকভাবে এ দিনে রোজা রাখা সুন্নত―এমন ধারণা রাখা যাবে না।

শাইখুল ইসলাম মুফতি মুহাম্মাদ তাকি উসমানি (দা.বা) বলেন, ‘… শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোজাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মোস্তাহাব রোজার তালিকায় মহররমের ১০ তারিখ ও ইয়াওমে আরাফা (জিলহজের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যেকোনো দিনই রোজা রাখা উত্তম।

 

সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোজা রাখে, ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনের পৃথক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।’ (ইসলাহি খুতুবাত: ৪/২৬৭-২৬৮) সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» এই বিপ্লব সফল হয়েছে মানুষের রক্ত-ঘামের বিনিময়ে : আসিফ মাহমুদ

» ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিই জিতবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

» স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে তরুণীকে শ্বাসরোধে হত্যা

» আবারও ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বন্ধ ইসরায়েলি বিমানবন্দর

» দুর্বৃত্তের গুলিতে যুবদলকর্মী নিহত

» ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে দুটি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ৮ জন আহত

» হাসিনা পালানোর আগে স্বজনদের ক্ষুদেবার্তা পাঠান: আলাল

» বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১০০৩ জন আসামি গ্রেফতার

» মা হারালেন আমার দেশ সম্পাদক

» গ্লোবাল সুপার লিগে ডাক পেলেন সাকিব, খেলবেন রংপুরের বিপক্ষে

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শবে বরাতে রোজা রাখা কি সুন্নত?

সংগৃহীত ছবি

 

ধর্ম ডেস্ক : হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। একাধিক সহিহ হাদিসে এ রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। সহিহ বর্ণনা অনুযায়ী এ রাতে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ নাজিল হয় এবং অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন; অতঃপর তিনি তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, কেবল শিরককারী ও বিদ্বেষ-পোষণকারী ছাড়া। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩)

 

অনেকে শবে বরাত উপলক্ষে অন্যান্য আমলের পাশাপাশি ১৫ শাবান রোজা রাখেন। বিষয়টি শরিয়তসম্মত কি না কিংবা শবে বরাতে কয়টি রোজা রাখা উত্তম জানার কৌতূহল রয়েছে অনেকের। এ সম্পর্কে হাদিসের নির্যাস হলো- শবে বরাতের তারিখ আইয়ামে বিজের (প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখ) অন্তর্ভুক্ত। সেই হিসেবে ১৫ শাবান (শবে বরাতের দিন) রোজা রাখা সুন্নত। তবে, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে রোজার কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা হাদিসে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র একটি দুর্বল হাদিসে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখ’। এই একটি মাত্র দুর্বল হাদিসের ওপর ভিত্তি করে শবে বরাতে একটি রোজা রাখাকে সুন্নত বা মোস্তাহাব বলা যায় না।

তাই শবে বরাতের পরের দিনসহ আইয়ামে বিজের রোজা হিসেবে তিনটি রোজা রাখাই সর্বোত্তম। কেননা এই তিন রোজা সম্পর্কে হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা রাখা সারাবছর রোজা রাখার সমান।’ (বুখারি: ১১৫৯, ১৯৭৫)

 

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে তিনটি অসিয়ত করেছেন—এক. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুই. দুই রাকাত চাশতের নামাজ পড়া, তিন. ঘুমের আগে বিতরের নামাজ পড়া।’ (সহিহ বুখারি: ১১৭৮)

 

অতএব, ১৫ শাবান তারিখে আইয়ামে বিজের একটি দিন হিসেবে রোজা রাখলে তা সুন্নত মনে করা যাবে। কিন্তু পৃথকভাবে শাবান মাসের ১৫ তারিখ বিশেষ দিন হিসেবে পৃথকভাবে এ দিনে রোজা রাখা সুন্নত―এমন ধারণা রাখা যাবে না।

শাইখুল ইসলাম মুফতি মুহাম্মাদ তাকি উসমানি (দা.বা) বলেন, ‘… শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোজাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মোস্তাহাব রোজার তালিকায় মহররমের ১০ তারিখ ও ইয়াওমে আরাফা (জিলহজের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যেকোনো দিনই রোজা রাখা উত্তম।

 

সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোজা রাখে, ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনের পৃথক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।’ (ইসলাহি খুতুবাত: ৪/২৬৭-২৬৮) সূএ:ঢাকা মেইল ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com