সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, গত ১৫ বছর ধরে আমরা অব্যাহতভাবে লড়াই করে যাচ্ছি। অসংখ্য মানুষ গুম-খুন হয়েছে। তাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের দায়বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের দাবি এবং লড়াই কখনো শেষ হবে না। আজকে যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলো যদি সমাধান করা হয় তাহলে এক-দুই বছর পর আবার নতুন সমস্যা তৈরি হবে। বিবর্তন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন চাহিদা কিংবা দাবি আসবেই। তবে সেগুলোর সমাধানের জন্য আমাদের সবসময়ই চেষ্টা করে যেতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।
তিনি বলেন, আজকের যে দাবিগুলো তুলে ধরে হয়েছে, সেসব অত্যন্ত যুক্তিসংগত। কিন্তু সব যুক্তিসংগত দাবি অর্জন হয় না। আমি যদি ন্যায্যভাবে ১০ টাকার অধিকারী হই, তাহলে যিনি টাকাটা দেবেন তার পকেটে টাকাটা কমে যায়। যে আইনের সংশোধন সংকট মোচনে সাহায্য করে, সে আইন সংশোধনেও অনেকের আগ্রহ থাকে না। অথচ শ্রমজীবী মানুষ এদেশের প্রত্যেকটা আন্দোলন-লড়াইয়ে জীবন দিয়েছে। কিন্তু তাদের জীবনদানকে কখনো মূল্যায়ন করা হয়নি। কারণ আমরা যারা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করি, আমরাই তো অর্জন করতে পারিনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা যারা নেতৃত্বে রয়েছি, তাদের সেসব বিষয়ে খেয়াল করতে হবে। শ্রমজীবী মানুষরা কেবল সম্পদ উৎপাদনই করে না, প্রত্যেকটা বিজয় ও লড়াইয়ে তারা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং তাদের দাবি মানা এখন সময়ের দাবি। অন্তর্বর্তী সরকার একটি সংস্কার কমিটি করেছে এবং কমিটি থেকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ কতটুকু বাস্তবায়িত হবে, আমার জানা নেই। কিন্তু আমাদের চাপ সবসময় অব্যাহত রাখতে হবে।
কনভেনশনে যেসব দাবি দাওয়া উপস্থাপন করা হয় সেগুলো হলো-
১. প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক সব খাতের জন্য মালিকানা নির্বিশেষে ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ঘোষণা করা। খাত, অঞ্চল এবং পেশাভিত্তিক নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা।
২. আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮-এর আলোকে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথ দরকষাকষির অধিকারসহ গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা। সব শ্রমিককে শ্রম আইনের সুরক্ষা দেওয়া। ইপিজেডসহ সব ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা।
৩. আন্দোলনে শ্রমিক হত্যার বিচার করা। শ্রমিক ছাঁটাই-হয়রানি, মিথ্যা মামলা, অজ্ঞাতনামা আসামি করার প্রক্রিয়া বন্ধ করা।
৪. কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধ করা। আইএলও কনভেনশন ১৮৯, ১৯০ অনুসমর্থন করা। মজুরি ও মাতৃত্বকালীন বৈষম্য দূর করা।
৫. পাটকল, চিনিকলসহ বন্ধ সব কারখানা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চালু করা, ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তরিত কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা।
৬. দুর্ঘটনা, পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে আইএলও কনভেনশন ১২১,১৫৫ ও ১৮৭ অনুসমর্থন করা। কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুতে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সব শ্রমিকের জন্য কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বিমা চালু করা। অবহেলাজনিত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মালিক ও সরকারি কর্মচারীদের শান্তি নিশ্চিত করা।
৭. শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্য সেবা, রেশন-আবাসন, পেনশন-গ্রাচ্যুইটি ও বেকার ভাতা চালু করা। নতুন শিল্পের প্রয়োজনে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. আউট সোর্সিং, স্থায়ী কাজে অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করা। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির পদে শ্রমিকদের স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া, ঠিকাদার কর্তৃক শ্রমিক নিয়োগ চলবে না। ব্যাটারিচালিত যানবাহন, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক ‘গিগ’ ওয়ার্কারদের আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।